কার্গো ভিলেজে আগুনে ছাই ১২ হাজার কোটি টাকার পণ্য, পুড়েছে স্বপ্নও

- আপডেট সময় : ১২:১৩:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫ ৫৯ বার পড়া হয়েছে
থমকে গেছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম
আমিনুল হক ভূইয়া, ঢাকা
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয়েছে শত শত টন আমদানি-রপ্তানি পণ্য। আগুনে শুধু পণ্যই নয়, পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বহু ব্যবসায়ীর স্বপ্নও। ইন্টারন্যাশনাল এয়ার এক্সপ্রেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি কবির আহমেদের মতে, এই অগ্নিকাণ্ডে আনুমানিক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ক্ষতি হয়েছে। প্রতি ডলার ১২২ টাকা ১৩ পয়সা হিসেবে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১২ হাজার ২১৪ কোটি টাকা।
শনিবার দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে আগুনের সূত্রপাত হয় বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো এলাকায়। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিটের পাশাপাশি সিভিল এভিয়েশন ও বিমান বাহিনীর অগ্নিনির্বাপণ ইউনিট যোগ দিয়ে প্রায় সাত ঘণ্টা পর রাত ৯টা ১৮ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। অগ্নিকাণ্ডে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ২৪টি ফ্লাইটের সময়সূচি বিপর্যস্ত হয়, কিছু ফ্লাইট চট্টগ্রাম ও সিলেটের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জানান, আগুন যেখানে লেগেছে তা সম্পূর্ণ আমদানি কার্গো এলাকা, রপ্তানি অংশ নিরাপদ রয়েছে। তবে আগুনে বিমানবন্দরের অবকাঠামো, ওয়্যারহাউজ, কার্গো এক্সপ্রেস অফিস, ও শুল্ক বিভাগের নথিপত্রের বড় ক্ষতি হয়েছে।
কার্গো ভিলেজ দেশের পণ্য আমদানি-রপ্তানির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এখানেই সংরক্ষিত থাকে রপ্তানির অপেক্ষমাণ তৈরি পোশাক, পচনশীল ফলমূল, শাকসবজি ও অন্যান্য মূল্যবান পণ্য। আমদানিকারকরা শুল্কায়ন শেষে এখান থেকে পণ্য খালাস করে থাকেন। ফলে এই অগ্নিকাণ্ডে দেশের সামগ্রিক বাণিজ্য কার্যক্রমে বড় ধরনের ধাক্কা লাগবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আরএমকে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জামান ইবনে আমিন সোহাইল সংবাদমাধ্যমকে জানান, অসংখ্য আমদানিকারকের পণ্য এই অগ্নিকাণ্ডে সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পরই প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ সম্ভব হবে, আর বিমা দাবির প্রক্রিয়া শুরু করতেও সময় লাগবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই বিপর্যয় বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি শৃঙ্খলে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে। রপ্তানিমুখী শিল্পে লিড টাইম সংকট তৈরি হবে এবং বৈদেশিক ক্রেতাদের আস্থা অর্জনেও সময় লাগবে। আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (ICAO) নিয়ম অনুযায়ী, বিমানবন্দরের পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা মূল্যায়ন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত নিয়মিত কার্যক্রম পুরোপুরি পুনরায় শুরু করা যাবে না।
এই অগ্নিকাণ্ড শুধু ব্যবসা নয়, দেশের অর্থনীতির গতি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চেইনে এক গভীর দগদগে ক্ষতচিহ্ন রেখে গেল।