ইউজিসির হিট প্রকল্পের পরিচালক আসাদুজ্জামানের নিয়োগ স্থগিত

- আপডেট সময় : ০৬:০২:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৪৫ বার পড়া হয়েছে
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) আওতাধীন হায়ার এডুকেশন অ্যাকসেলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (হিট) প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে প্রফেসর আসাদুজ্জামানের নিয়োগ স্থগিত ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোলায়মান দাখিলকৃত রিট পিটিশনের শুনানী শেষে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মো. আশিফ হাসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বাস্তবায়নাধীন হায়ার এডুকেশন অ্যাকসেলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (হিট) প্রজেক্টের পরিচালক হিসেবে ২০২৪ সালের ১৩ মার্চ নিয়োগ পেয়েছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোলায়মান।
পরদিন ১৪ মার্চ তৎকালীণ শিক্ষা মন্ত্রী নওফেলের মৌখিক নির্দেশে সেই নিয়োগ আদেশটি বাতিল করা হয়। বিএনপি সমর্থক হওয়ায় তাকে বাদ দিয়ে একই দিনে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা প্রফেসর আসাদুজ্জামানকে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
নিয়োগ আদেশ বাতিলের পর প্রফেসর ড. আবুল হাসনাত মু. সোলায়মান সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীনে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করেন এবং আদালতকে জানান, এ সিদ্ধান্ত আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও প্রাকৃতিক ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।

৮ সেপ্টেম্বর পিটিশনার পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. আবদুল্লাহ আল হাদি জানান, বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মো. আশিফ হাসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে ওই রিট আবেদনের শুনানী শেষে হিট প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে প্রফেসর আসাদুজ্জামানের নিয়োগ স্থগিত করেছেন।
হাইকোর্ট রুল জারি করে প্রতিপক্ষকে চার সপ্তাহের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলেন, কেন প্রফেসর সোলায়মানের অপসারণকৃত স্মারকটি অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং কেন তাকে পুনর্বহাল করার নির্দেশ দেওয়া হবে না। একইসঙ্গে আদালত রুলের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রফেসর আসাদুজ্জামানের নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন আদালত।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি উন্নয়ন প্রকল্প যা বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রকল্পটি বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা, উদ্ভাবন ও আধুনিকায়ন কার্যক্রমকে গতিশীল করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু দলীয় সমর্থককে নিয়োগ দিতে কোন প্রকার আন্তঃকমিটির সভার সিদ্ধান্ত ছাড়াই এক দিনের ব্যবধানে নিয়োগ আদেশটি বাতিলের ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন আদালত।
আদালত পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেন, সরকারি প্রকল্প পরিচালকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে কাউকে অপসারণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা ও প্রক্রিয়াগত শুদ্ধতা বজায় রাখা আবশ্যক। আদালতের এ আদেশে আপাতত প্রকল্পের নেতৃত্বে পরিবর্তন স্থগিত হলো। যা উচ্চশিক্ষা খাতের শাসন ব্যবস্থায় জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচারের ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোলায়মান ইউজিসির টি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) পদে নিয়োগ পরীক্ষায় ৩২ জন প্রার্থীর মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন। এর ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০২৪ সালের ১৩ মার্চ তার নামে প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু একদিন পর ওই প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয় এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)’র অধ্যাপক আসাদুজ্জামানকে ওই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে একাডেমিক মহলে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।
এ বিষয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, আমরা যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে প্রার্থী বাছাই করেছিলাম। তবে সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল রাজনৈতিক বিবেচনায়। সরকার বা বিশ্বব্যাংক প্রকল্প পরিচালক বদল চাইলে আমাদের আপত্তি নেই।
রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে বঞ্চিত হয়েছেন বলে দাবি করেন অধ্যাপক সোলায়মান বলেন, আমার একমাত্র অপরাধ আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাদা দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। অথচ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগ বাতিল করার সময় আইনসিদ্ধ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। সাধারণত এ ধরনের সিদ্ধান্তে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা বাধ্যতামূলক হলেও তা মানা হয়নি।