ঢাকা ১০:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ২১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ফুঁসে ওঠছে চারজেলার নদ-নদী, ৪ জেলায় বন্যার পদধ্বনী বিএডিসি কৃষিবিদ সমিতির নির্বাচনে সভাপতি হুমায়ুন, সম্পাদক আকিক সচিবালয় একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ: পরিবেশ উপদেষ্টা কুমিল্লার হোমনা ভবানীপুরে বজ্রপাতে তিন জনের মৃত্যু উপদেষ্টাদের অনেকেই নিজেদের সেফ এক্সিটের কথা ভাবছেন: নাহিদ ইসলাম ফিরোজ আলম মিলন-এর কবিতা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হেলেনা: একাত্তরের আকাশে মুক্তির দীপ্ত তারকা “যুদ্ধবিমানের ধ্বংসস্তূপের নিচেই ভারতকে কবর দেয়া হবে” পাকিস্তান প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কড়া প্রতিক্রিয়া আগস্টে ডলারের বিপরীতে শক্তিশালী টাকার মান গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারে সম্মতি দিয়েছে ইসরায়েল : দাবি ট্রাম্পের

মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ, অবৈধ মাছ আহরণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

আমিনুল হক ভূইয়া, ঢাকা
  • আপডেট সময় : ০৫:৫৪:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ৯৪ বার পড়া হয়েছে

মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ অবৈধ মাছ আহরণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আমিনুল হক ভূইয়া 

ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিধান  এবং দেশে ইলিশের প্রাপ্যতা, মূল্য ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উদেষ্টা ফরিদা আখতারের  বক্তব্য

অভিযান কালে ২২দিন জলসীমার বাইরে মাছ ধরা ট্রলারের অনুপ্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। নদীতে ড্রেজিং সম্পূর্ণতারে বন্ধ রাখা হবে। একই সাথে সমুদ্র, উপকূল ও মোহনায়ও প্রধান প্রজনন মৌসুমে ২২ দিন ইলিশ আহরণ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে।

ইলিশের স্থায়ীত্বশীল উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মৎস্য সংরক্ষণ আইন-১৯৫০ (১৯৮৫-এর ধারা ১৩ অনুযায়ী) পরিপক্ক ইলিশ যাতে করে নিরাপদে ডিম ছাড়তে পারে তা নিশ্চিত করতে সারাদেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

২০২৫ সালের ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ১৯ আশ্বিন থেকে ১ কার্তিক ১৪৩২ (৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর) পর্যন্ত মা ইলিশ রক্ষায় বিশেষ অভিধান পরিচালনা করা হবে। আশ্বিনী পূর্ণিমার পূর্বের ৪ দিন এবং অমাবস্যার পরের ৩ দিনকে অন্তর্ভুক্ত করে মোট ২২ দিন এই অভিযান চলবে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিএফআরআই) এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা, বিশেষ করে মৎস্যজীবীদের মতামত অনুযায়ী এই সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।

মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ অবৈধ মাছ আহরণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
ইলিশের বাড়ি বাংলাদেশ, ইলিশের মোট উৎপাদনের ৮৫ ভাগই বাংলাদেশে হয়ে থাকে

প্রজনন মৌসুমের পূর্ণিমা ও অমাবস্যা উভয় সময়ই ডিম পাড়ার জন্য গুরুরপূর্ণ হওয়ায়, দুটি পর্যায় অন্তর্ভুক্ত করে সর্বোচ্চ প্রজনন নিশ্চিত করা হয়েছে। এই কর্মসূচি মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৫ নামে পরিচিত। এই সময় নদীতে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বিক্রি, মজুদ ও বিনিময় সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে।

অভিযান পরিচালনায় মৎস্য কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নৌ পুলিশ, কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীসহ সকল আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অংশগ্রহণ করবে। উদ্যোগের অংশ হিসেবে, ৩৭টি জেলার ১৬২টি উপজেলার ৬ লক্ষ ২০ হাজার ১৪০ জেলে পরিবারকে ভিজিএফ (চাল) দেওয়া হবে, পরিবার প্রতি বরাদ্দ থাকবে ২৫ কেজি করে চাল, যা পুরো কার্যক্রমে মোট ১৫ হাজার ৫০৩.৫০ মেট্রিক টন চাল প্রয়োজন হবে।

অভিযান কালে ২২দিন জলসীমার বাইরে মাছ ধরা ট্রলারের অনুপ্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। নদীতে ড্রেজিং সম্পূর্ণতারে বন্ধ রাখা হবে। একই সাথে সমুদ্র, উপকূল ও মোহনায়ও প্রধান প্রজনন মৌসুমে ২২ দিন ইলিশ আহরণ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে।

১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিনের অভিযানে ২,১৬৯টি মোবাইল কোর্ট ও ৯,৮১৩টি অভিযানের মাধ্যমে ৫৪.৮৬ মেটিক টন ইলিশ জব্দ, ৬১২.১১ লক্ষ মিটার জাল ধ্বংস এবং ৭৫.২৭ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছিল।

মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ অবৈধ মাছ আহরণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ অবৈধ মাছ আহরণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনন্টিটিউটের (বিএফআরআই) গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৪ সালের নিষেধাজ্ঞার ফলে ৫২.৫ শতাংশ মা ইলিশ নিরাপদে ডিম ছাড়ার সুযোগ পেয়েছে। তাতে ৪৪.২৫ হাজার কোটি জাটকা/রেণু ইলিশ পরিবারে যুক্ত হয়েছে। এই ডিম থেকে উৎপন্ন রেণু বা পোনা (জাটকা) ভবিষ্যতে পরিপক্ক ইলিশে পরিণত হবে। আমরা আশা করছি, ২০২৫ সালের মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের আগের বছরের তুলনায় আরও সংগঠিত ও কার্যকরভাবে পরিচালিত হবে।

২০২৫ সালের জুনের মাঝামাঝি সময়ে জাটকা ইলিশ আহরণের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর আশা করা হয়েছিল বাজারে ইলিশের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি পাবে। তবে মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযাযী, জুলাই ও আগস্ট মাসে ইলিশ আহরণ ২০২৪ সালের তুলনায় যথাক্রমে ৩৩.২০ শতাংশ এবং ৪৭.৩১ শতাংশ কম হয়েছে। এই দুই মাসে মোট আহরণ হয়েছে ৩৫,৯৯৩.৫০ মেট্রিক টন, যা ২০২৪ সালের তুলনায় ২২,৯৪১,৭৮ মেট্রিক টন (৩৮.১৩ শতাংশ) কম। সার্বিকভাবে, ২০২০-২১ থেকে ২০২৪-২৫ পর্যন্ত ইলিশ আহরণ ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছে।

২০২০-১১ অর্থ বছরে ইলিশের মোট আহরণ ৫৬৫,১৮৩ মেট্রিক টন। কিন্তু ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে মোট আহরণ ছিলো ৫১২,৮৫৮ মেট্রিক টন অর্থাৎ প্রায় ১০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২০২৪-২৫ সালে ইলিশ উৎপাদন ৫৩৮,০০০ থেকে ৫.৪৫,০০০ মেট্রিক টন হতে পারে। তবে উৎপাদন হ্রাসের প্রবণতা অব্যাহত থাকলে প্রকৃত উৎপাদন আরও কম হতে পারে।

মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ অবৈধ মাছ আহরণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ অবৈধ মাছ আহরণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

সাগর ও নদীতে ইলিশের উৎপাদন হ্রাসের পেছনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। ইলিশ মাছের জীবনচক্রের জন্য সমুদ্র ও নদী উভয় পরিবেশ অপরিহার্য। পরিপক্ক মা ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য সমুদ্র থেকে মোহনা হয়ে স্বাদুপানির নদীতে প্রবেশ করে। ডিম ফুটে লার্ভা বড় হয়ে সমুদ্রে ফিরে যায় এবং পরিপক্কতা অর্জন করে। জাতীয় উৎপাদনের প্রধান অংশ বরিশাল বিভাগ থেকে আসে, যা প্রতিবছর মোট উৎপাদনের ৮৫ শতাংশ এর বেশি অবদান রাখে।

ইলিশের টেকসই উৎপাদন নিশ্চিত করতে প্রাকৃতিক মাইগ্রেশন বুটসমূহ, যেমন মেঘনা-তেতুলিয়া মোহনা অক্ষুণ্ণ রাখা অত্যন্ত জরুরি। ভোলা-নোয়াখালী ও ভোলা-পটুয়াখালীর মধ্যবর্তী মোহনা ইলিশের বৃহত্তম প্রজনন ও মাইগ্রেশন পথ হিসেবে বিবেচিত। তবে এই মোহনায় অসংখ্য চর ও ডুবোচর রয়েছে, যেগুলোর অনেকের বয়স ২০-৩০ বছর। জোয়ারের সময় এগুলো ৪-৫ হাত পানির নিচে তলিয়ে যায় এবং ভাটার সময় জেগে ওঠে, যা নদীর নাব্যতা ও প্রজনন পরিবেশের জন্য চ্যালেঞ্জ। ডুবোচরে পলি জমার কারণে নদীর গভীরতা ০.৫ থেকে ৭৫ ফুট পর্যন্ত পরিবর্তনশীল হয়ে থাকে, যা নদীর নাব্যতা সংকটের স্পষ্ট প্রমাণ।

ইলিশ আহরণের অন্যতম প্রধান বাধা হচ্ছে অবৈধ জাল এবং স্থায়ী ফাঁদ জাল (ফিক্সড ইঞ্জিন) এর ব্যবহার। অবৈধ জালের মধ্যে কারেন্ট জাল, মশারী জাল, ফিক্সড ইঞ্জিন/ফাঁদ জাল ইত্যাদির ব্যবহার বেড়েছে, যার ফলে বিপুল পরিমাণ জাটকা নিধন করা হচ্ছে। মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন ১৯৫০ (সংশোধিত ২০২০) অনুযাযী কারেন্ট জাল ও ফিক্সড ইঞ্জিন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এই আইন প্রয়োগে জেলা প্রশাসন, মৎস্য দপ্তর, নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ড যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ জাল ও জাটকা জব্দ করছে। তবুও, সম্পূর্ণভাবে অবৈধ আহরণ বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ অবৈধ মাছ আহরণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ
অবৈধ মাছ আহরণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ১ মে থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত মোট ১৭,৩৭৪টি অভিযান পরিচালনা করেছে এবং এই সময় ৬৩১ জন জেলেকে আটক করে। উক্ত সময়ে ১১৭ কোটি ৩৮ লক্ষ মিটার বিভিন্ন ধরনের অবৈধ জাল, ৪ লক্ষ ৭৯ হাজার পিস বেহন্দি জাল, ১ লক্ষ ১৩ হাজার কেজি জাটকা ইলিশ, ২৮টি বোট এবং ১৬১টি ট্রলিং বোট জব্দ করা হয়েছে। এই সব অভিযান ও জব্দের ফলে ৩,৭০,৩৬৫ টন মাছ রক্ষা পেয়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ১৮,৫১৮ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা।

সার্বিকভাবে দেখা যাচ্ছে, দেশের ইলিশ আহরণ কমে যাওয়া প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট উভয় কারণের ফল। অভ্যন্তরীণ জলাশয়ের পরিবেশগত পরিবর্তন, বিশেষ করে বিভিন্ন নদ-নদীতে অপরিকল্লিত বাঁধ ও কালভার্ট-সেতু নির্মাণ, উজান থেকে পরিবাহিত পলি জমা এবং নদীর নাব্যতা হ্রাস ও জলজ পরিবেশ দূষণ ইলিশ আহরণের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ফলে ইলিশ মাছের পরিভ্রমণ পথ, প্রজননক্ষেত্র, বিচরণ ও চারণক্ষেত্র (ফিডিং এবং নার্সারি গ্রাউন্ড) দিন দিন পরিবর্তিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যার কারণে বাংলাদেশের নদ-নদীতে ইলিশের প্রাপ্যতা হ্রাস পাচ্ছে।

এছাড়া, নির্বিচারে ক্ষতিকর জাল ব্যবহারের ফলে, যেমন: কারেন্ট জাল, চায়নাদুয়ারি, বেহন্দি জাল, বড় জাল, চরঘেরা জাল, মশারী জাল, পাইজাল, টানাজাল এবং অপরিকল্পিত যান্ত্রিক নৌযানের মাধ্যমে মাছ আহরণ ইলিশের উৎপাদন হ্রাসের অন্যতম কারণ। এই সকল সমস্যা সমাধানের জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় কার্যক্রম হাতে নেওয়া উচিৎ এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় অবিলম্বে উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে ২০১০-১১ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে সম্পন্ন হয়েছিল। ২০১০-১১ সালে ৮,৫৩৮.৭৭ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি করে ৩৫২.৪৯ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছিল। ২০১১-১২ সালে ৬১৭৩.৬৫ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি হয়। তাতে ২৯৪ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। তবে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার কারণে ২০১২ সালের ৩১ জুলাই থেকে অদ্যবধি ইলিশ রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।

মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ অবৈধ মাছ আহরণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে ইলিশ রপ্তানি

পরবর্তীতে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে দুর্গাপুজা উপলক্ষ্যে স্বল্প পরিসরে, শর্তসাপেক্ষে ভারতে ইলিশ রপ্তানি শুরু হয়, যা কেবল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্পন্ন হচ্ছে। তবে ইলিশের প্রাপ্যতা কম থাকায়, অনুমোদিত পরিমাণ ইলিশ রপ্তানি করতে রপ্তানিকারকরা সবসময় সক্ষম হননি। উদাহরণ স্বরূপ, ২০২৫ সালের দুর্গাপুজা উপলক্ষ্যে ভারতে ১,২০০ মেট্রিক টন ইলিশ রচানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে মোট মাত্র ৮১.৪৩৮ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে।

২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমোদনের ১,৮৭৫ মেট্রিক টন হলেও প্রকৃতভাবে রপ্তানি হয়েছিল ১,৮৭৫ মেট্রিক টন যার রপ্তানি মূল্য ১৫৪ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছর ৪,৬০০ মেট্রিক টনের মধ্যে রপ্তানি হয় ১,২১১ মেট্রিক টন। যার রপ্তানি মূল্য ১১৩ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানির জন্য অনুমোদনের পরিমাণ ৩,০০০ মেট্রিক টন অনুমোদন পেলেও রপ্তানি হয়েছে ১,৩৭৬ মেট্রিক টন যার রপ্তানি মূল্য ১৪৮ কোটি টাকা।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানির জন্য অনুমোদনের পরিমাণ ৩,৫৫০ মেট্রিক টনের মধ্যে রপ্তানি হয় ৬৬৫ মেট্রিক টন যার রপ্তানি মূল্য ৮৫ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রপ্তানির জন্য অনুমোদনের পরিমাণ ২,৪২০ মেট্রিক টন, রপ্তানি হয় ৫৭৪ মেট্রিক টন যার রপ্তানি মুল্য ৬৮ কোটি টাকা। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে রপ্তানির অনুমোদন পায় ১,২০০ মেট্রিক টন। চলতি বছর যেহেতু রপ্তানি চলমান তা প্রকৃত রপ্তানির পরিমাণ জানাতে পারেনি মন্ত্রণালয়।

চলতি বছরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি কেজি ইলিশের রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ করেছে ১২.৫০ ডলার। ২৫ সেপ্টেম্বর ডলারের ক্রয়মূল্য ছিল ১২১.৭২ টাকা। এই হিসাবে ৮১,৪৩৮ কেজি ইলিশের বাজার মূল্য দাঁড়াচ্ছে ১২ কোটি ৩৯ লাখ ৭ হাজার ১১৭ টাকা। আর আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ১৮ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ২২.২৬ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে, যার বর্তমান বাজার মূল্য দাঁড়ায় ৩ কোটি ৩৮ লাখ ১৫৪ টাকা।

তবে সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ইলিশের বাজারমূল্য বেশি থাকলেও রপ্তানি মূল্যের তুলনায় কম হওয়ায় রপ্তানিকারকরা যথাযথ লাভ করতে পারছেন না।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ, অবৈধ মাছ আহরণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

আপডেট সময় : ০৫:৫৪:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আমিনুল হক ভূইয়া 

ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিধান  এবং দেশে ইলিশের প্রাপ্যতা, মূল্য ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উদেষ্টা ফরিদা আখতারের  বক্তব্য

অভিযান কালে ২২দিন জলসীমার বাইরে মাছ ধরা ট্রলারের অনুপ্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। নদীতে ড্রেজিং সম্পূর্ণতারে বন্ধ রাখা হবে। একই সাথে সমুদ্র, উপকূল ও মোহনায়ও প্রধান প্রজনন মৌসুমে ২২ দিন ইলিশ আহরণ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে।

ইলিশের স্থায়ীত্বশীল উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মৎস্য সংরক্ষণ আইন-১৯৫০ (১৯৮৫-এর ধারা ১৩ অনুযায়ী) পরিপক্ক ইলিশ যাতে করে নিরাপদে ডিম ছাড়তে পারে তা নিশ্চিত করতে সারাদেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

২০২৫ সালের ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ১৯ আশ্বিন থেকে ১ কার্তিক ১৪৩২ (৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর) পর্যন্ত মা ইলিশ রক্ষায় বিশেষ অভিধান পরিচালনা করা হবে। আশ্বিনী পূর্ণিমার পূর্বের ৪ দিন এবং অমাবস্যার পরের ৩ দিনকে অন্তর্ভুক্ত করে মোট ২২ দিন এই অভিযান চলবে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিএফআরআই) এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা, বিশেষ করে মৎস্যজীবীদের মতামত অনুযায়ী এই সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।

মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ অবৈধ মাছ আহরণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
ইলিশের বাড়ি বাংলাদেশ, ইলিশের মোট উৎপাদনের ৮৫ ভাগই বাংলাদেশে হয়ে থাকে

প্রজনন মৌসুমের পূর্ণিমা ও অমাবস্যা উভয় সময়ই ডিম পাড়ার জন্য গুরুরপূর্ণ হওয়ায়, দুটি পর্যায় অন্তর্ভুক্ত করে সর্বোচ্চ প্রজনন নিশ্চিত করা হয়েছে। এই কর্মসূচি মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৫ নামে পরিচিত। এই সময় নদীতে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বিক্রি, মজুদ ও বিনিময় সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে।

অভিযান পরিচালনায় মৎস্য কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নৌ পুলিশ, কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীসহ সকল আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অংশগ্রহণ করবে। উদ্যোগের অংশ হিসেবে, ৩৭টি জেলার ১৬২টি উপজেলার ৬ লক্ষ ২০ হাজার ১৪০ জেলে পরিবারকে ভিজিএফ (চাল) দেওয়া হবে, পরিবার প্রতি বরাদ্দ থাকবে ২৫ কেজি করে চাল, যা পুরো কার্যক্রমে মোট ১৫ হাজার ৫০৩.৫০ মেট্রিক টন চাল প্রয়োজন হবে।

অভিযান কালে ২২দিন জলসীমার বাইরে মাছ ধরা ট্রলারের অনুপ্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। নদীতে ড্রেজিং সম্পূর্ণতারে বন্ধ রাখা হবে। একই সাথে সমুদ্র, উপকূল ও মোহনায়ও প্রধান প্রজনন মৌসুমে ২২ দিন ইলিশ আহরণ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে।

১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিনের অভিযানে ২,১৬৯টি মোবাইল কোর্ট ও ৯,৮১৩টি অভিযানের মাধ্যমে ৫৪.৮৬ মেটিক টন ইলিশ জব্দ, ৬১২.১১ লক্ষ মিটার জাল ধ্বংস এবং ৭৫.২৭ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছিল।

মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ অবৈধ মাছ আহরণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ অবৈধ মাছ আহরণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনন্টিটিউটের (বিএফআরআই) গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৪ সালের নিষেধাজ্ঞার ফলে ৫২.৫ শতাংশ মা ইলিশ নিরাপদে ডিম ছাড়ার সুযোগ পেয়েছে। তাতে ৪৪.২৫ হাজার কোটি জাটকা/রেণু ইলিশ পরিবারে যুক্ত হয়েছে। এই ডিম থেকে উৎপন্ন রেণু বা পোনা (জাটকা) ভবিষ্যতে পরিপক্ক ইলিশে পরিণত হবে। আমরা আশা করছি, ২০২৫ সালের মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের আগের বছরের তুলনায় আরও সংগঠিত ও কার্যকরভাবে পরিচালিত হবে।

২০২৫ সালের জুনের মাঝামাঝি সময়ে জাটকা ইলিশ আহরণের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর আশা করা হয়েছিল বাজারে ইলিশের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি পাবে। তবে মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযাযী, জুলাই ও আগস্ট মাসে ইলিশ আহরণ ২০২৪ সালের তুলনায় যথাক্রমে ৩৩.২০ শতাংশ এবং ৪৭.৩১ শতাংশ কম হয়েছে। এই দুই মাসে মোট আহরণ হয়েছে ৩৫,৯৯৩.৫০ মেট্রিক টন, যা ২০২৪ সালের তুলনায় ২২,৯৪১,৭৮ মেট্রিক টন (৩৮.১৩ শতাংশ) কম। সার্বিকভাবে, ২০২০-২১ থেকে ২০২৪-২৫ পর্যন্ত ইলিশ আহরণ ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছে।

২০২০-১১ অর্থ বছরে ইলিশের মোট আহরণ ৫৬৫,১৮৩ মেট্রিক টন। কিন্তু ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে মোট আহরণ ছিলো ৫১২,৮৫৮ মেট্রিক টন অর্থাৎ প্রায় ১০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২০২৪-২৫ সালে ইলিশ উৎপাদন ৫৩৮,০০০ থেকে ৫.৪৫,০০০ মেট্রিক টন হতে পারে। তবে উৎপাদন হ্রাসের প্রবণতা অব্যাহত থাকলে প্রকৃত উৎপাদন আরও কম হতে পারে।

মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ অবৈধ মাছ আহরণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ অবৈধ মাছ আহরণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

সাগর ও নদীতে ইলিশের উৎপাদন হ্রাসের পেছনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। ইলিশ মাছের জীবনচক্রের জন্য সমুদ্র ও নদী উভয় পরিবেশ অপরিহার্য। পরিপক্ক মা ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য সমুদ্র থেকে মোহনা হয়ে স্বাদুপানির নদীতে প্রবেশ করে। ডিম ফুটে লার্ভা বড় হয়ে সমুদ্রে ফিরে যায় এবং পরিপক্কতা অর্জন করে। জাতীয় উৎপাদনের প্রধান অংশ বরিশাল বিভাগ থেকে আসে, যা প্রতিবছর মোট উৎপাদনের ৮৫ শতাংশ এর বেশি অবদান রাখে।

ইলিশের টেকসই উৎপাদন নিশ্চিত করতে প্রাকৃতিক মাইগ্রেশন বুটসমূহ, যেমন মেঘনা-তেতুলিয়া মোহনা অক্ষুণ্ণ রাখা অত্যন্ত জরুরি। ভোলা-নোয়াখালী ও ভোলা-পটুয়াখালীর মধ্যবর্তী মোহনা ইলিশের বৃহত্তম প্রজনন ও মাইগ্রেশন পথ হিসেবে বিবেচিত। তবে এই মোহনায় অসংখ্য চর ও ডুবোচর রয়েছে, যেগুলোর অনেকের বয়স ২০-৩০ বছর। জোয়ারের সময় এগুলো ৪-৫ হাত পানির নিচে তলিয়ে যায় এবং ভাটার সময় জেগে ওঠে, যা নদীর নাব্যতা ও প্রজনন পরিবেশের জন্য চ্যালেঞ্জ। ডুবোচরে পলি জমার কারণে নদীর গভীরতা ০.৫ থেকে ৭৫ ফুট পর্যন্ত পরিবর্তনশীল হয়ে থাকে, যা নদীর নাব্যতা সংকটের স্পষ্ট প্রমাণ।

ইলিশ আহরণের অন্যতম প্রধান বাধা হচ্ছে অবৈধ জাল এবং স্থায়ী ফাঁদ জাল (ফিক্সড ইঞ্জিন) এর ব্যবহার। অবৈধ জালের মধ্যে কারেন্ট জাল, মশারী জাল, ফিক্সড ইঞ্জিন/ফাঁদ জাল ইত্যাদির ব্যবহার বেড়েছে, যার ফলে বিপুল পরিমাণ জাটকা নিধন করা হচ্ছে। মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন ১৯৫০ (সংশোধিত ২০২০) অনুযাযী কারেন্ট জাল ও ফিক্সড ইঞ্জিন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এই আইন প্রয়োগে জেলা প্রশাসন, মৎস্য দপ্তর, নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ড যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ জাল ও জাটকা জব্দ করছে। তবুও, সম্পূর্ণভাবে অবৈধ আহরণ বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ অবৈধ মাছ আহরণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ
অবৈধ মাছ আহরণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ১ মে থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত মোট ১৭,৩৭৪টি অভিযান পরিচালনা করেছে এবং এই সময় ৬৩১ জন জেলেকে আটক করে। উক্ত সময়ে ১১৭ কোটি ৩৮ লক্ষ মিটার বিভিন্ন ধরনের অবৈধ জাল, ৪ লক্ষ ৭৯ হাজার পিস বেহন্দি জাল, ১ লক্ষ ১৩ হাজার কেজি জাটকা ইলিশ, ২৮টি বোট এবং ১৬১টি ট্রলিং বোট জব্দ করা হয়েছে। এই সব অভিযান ও জব্দের ফলে ৩,৭০,৩৬৫ টন মাছ রক্ষা পেয়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ১৮,৫১৮ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা।

সার্বিকভাবে দেখা যাচ্ছে, দেশের ইলিশ আহরণ কমে যাওয়া প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট উভয় কারণের ফল। অভ্যন্তরীণ জলাশয়ের পরিবেশগত পরিবর্তন, বিশেষ করে বিভিন্ন নদ-নদীতে অপরিকল্লিত বাঁধ ও কালভার্ট-সেতু নির্মাণ, উজান থেকে পরিবাহিত পলি জমা এবং নদীর নাব্যতা হ্রাস ও জলজ পরিবেশ দূষণ ইলিশ আহরণের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ফলে ইলিশ মাছের পরিভ্রমণ পথ, প্রজননক্ষেত্র, বিচরণ ও চারণক্ষেত্র (ফিডিং এবং নার্সারি গ্রাউন্ড) দিন দিন পরিবর্তিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যার কারণে বাংলাদেশের নদ-নদীতে ইলিশের প্রাপ্যতা হ্রাস পাচ্ছে।

এছাড়া, নির্বিচারে ক্ষতিকর জাল ব্যবহারের ফলে, যেমন: কারেন্ট জাল, চায়নাদুয়ারি, বেহন্দি জাল, বড় জাল, চরঘেরা জাল, মশারী জাল, পাইজাল, টানাজাল এবং অপরিকল্পিত যান্ত্রিক নৌযানের মাধ্যমে মাছ আহরণ ইলিশের উৎপাদন হ্রাসের অন্যতম কারণ। এই সকল সমস্যা সমাধানের জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় কার্যক্রম হাতে নেওয়া উচিৎ এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় অবিলম্বে উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে ২০১০-১১ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে সম্পন্ন হয়েছিল। ২০১০-১১ সালে ৮,৫৩৮.৭৭ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি করে ৩৫২.৪৯ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছিল। ২০১১-১২ সালে ৬১৭৩.৬৫ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি হয়। তাতে ২৯৪ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। তবে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার কারণে ২০১২ সালের ৩১ জুলাই থেকে অদ্যবধি ইলিশ রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।

মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ অবৈধ মাছ আহরণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে ইলিশ রপ্তানি

পরবর্তীতে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে দুর্গাপুজা উপলক্ষ্যে স্বল্প পরিসরে, শর্তসাপেক্ষে ভারতে ইলিশ রপ্তানি শুরু হয়, যা কেবল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্পন্ন হচ্ছে। তবে ইলিশের প্রাপ্যতা কম থাকায়, অনুমোদিত পরিমাণ ইলিশ রপ্তানি করতে রপ্তানিকারকরা সবসময় সক্ষম হননি। উদাহরণ স্বরূপ, ২০২৫ সালের দুর্গাপুজা উপলক্ষ্যে ভারতে ১,২০০ মেট্রিক টন ইলিশ রচানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে মোট মাত্র ৮১.৪৩৮ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে।

২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমোদনের ১,৮৭৫ মেট্রিক টন হলেও প্রকৃতভাবে রপ্তানি হয়েছিল ১,৮৭৫ মেট্রিক টন যার রপ্তানি মূল্য ১৫৪ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছর ৪,৬০০ মেট্রিক টনের মধ্যে রপ্তানি হয় ১,২১১ মেট্রিক টন। যার রপ্তানি মূল্য ১১৩ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানির জন্য অনুমোদনের পরিমাণ ৩,০০০ মেট্রিক টন অনুমোদন পেলেও রপ্তানি হয়েছে ১,৩৭৬ মেট্রিক টন যার রপ্তানি মূল্য ১৪৮ কোটি টাকা।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানির জন্য অনুমোদনের পরিমাণ ৩,৫৫০ মেট্রিক টনের মধ্যে রপ্তানি হয় ৬৬৫ মেট্রিক টন যার রপ্তানি মূল্য ৮৫ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রপ্তানির জন্য অনুমোদনের পরিমাণ ২,৪২০ মেট্রিক টন, রপ্তানি হয় ৫৭৪ মেট্রিক টন যার রপ্তানি মুল্য ৬৮ কোটি টাকা। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে রপ্তানির অনুমোদন পায় ১,২০০ মেট্রিক টন। চলতি বছর যেহেতু রপ্তানি চলমান তা প্রকৃত রপ্তানির পরিমাণ জানাতে পারেনি মন্ত্রণালয়।

চলতি বছরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি কেজি ইলিশের রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ করেছে ১২.৫০ ডলার। ২৫ সেপ্টেম্বর ডলারের ক্রয়মূল্য ছিল ১২১.৭২ টাকা। এই হিসাবে ৮১,৪৩৮ কেজি ইলিশের বাজার মূল্য দাঁড়াচ্ছে ১২ কোটি ৩৯ লাখ ৭ হাজার ১১৭ টাকা। আর আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ১৮ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ২২.২৬ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে, যার বর্তমান বাজার মূল্য দাঁড়ায় ৩ কোটি ৩৮ লাখ ১৫৪ টাকা।

তবে সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ইলিশের বাজারমূল্য বেশি থাকলেও রপ্তানি মূল্যের তুলনায় কম হওয়ায় রপ্তানিকারকরা যথাযথ লাভ করতে পারছেন না।