ভেলায় চড়ে স্কুলে যাতায়ত শিক্ষার্থীদের
- আপডেট সময় : ০৯:৪৯:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৪ ৩৩৯ বার পড়া হয়েছে
ভেলায় চড়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করছে খুলনার কয়রা উপজেলার মঠবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছবি: ছবি সংগ্রহ
কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়ি গ্রামটিকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছে তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ২৫০ মিটার চওড়া খালটি
বছরের শুরুতে নতুন বই নিয়ে পড়ুয়ারা বাড়ি ফেরার পথে ভেলাটি উল্টে শিক্ষার্থীরা খালে পড়ে যায়! আশপাশের লোকজন শিশুদের উদ্ধার করলেও নতুন বইগুলো ভিজে যায়
ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক
কয়েকটি প্লাস্টিকের ড্রাম একত্রিত করে তৈরি করা ভেলায় চড়েই বিগত ১৪ বছর ধরে এ গ্রামের পড়ুয়াদের স্কুলে যাওয়া-আসা করতে হচ্ছে। কিঞ্চিত এদি ওদিক হলেই দুর্ঘটনা! বিপদের কথা জেনেও ভয়ে কাচুমাচু হয়ে কচিকাঁচার দল ভেলায় চড়ে স্কুলে যাচ্ছে। সন্তানকে স্কুলে পাঠিয়ে ফিরে না আসা পর্যন্ত মা-বাবার দুশ্চিন্তার শেষ নেই।
একবিংশ শতাব্দিতে বাংলাদেশ যখন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পথে তখন কেন স্কুল পড়ুয়ারা বিপদজ্জনক অবস্থায় ভেলায় চড়ে নদী পার হতে হবে?
বছরের শুরুতে নতুন বই নিয়ে পড়ুয়ারা বাড়ি ফেরার পথে ভেলাটি উল্টে শিক্ষার্থীরা খালে পড়ে যায়! আশপাশের লোকজন শিশুদের উদ্ধার করলেও নতুন বইগুলো ভিজে যায়।
ধরা গলায় এ কথা সংবাদমাধ্যমকে জানান, মঠবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কালাম আজাদ। এমন ধরনের দুর্ঘটনা বর্ষাকালে বেশি হয় বলে জানিয়ে তিনি বলেন, একটি সেতু নির্মাণ না হলে এখানকার দুর্ভোগ কমবে না।
খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়ি গ্রামটিকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছে প্রায় তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ২৫০ মিটার চওড়া একটি খাল। ২০০৯ সালে গ্রাম সংলগ্ন শাকবাড়িয়া নদীর বাঁধ ভেঙে জোয়ার-ভাটার প্রবল স্রোতে খালটি সৃষ্টি হয়। এক বছর পর বাঁধ মেরামত হলেও খালটি ভরাট হয়নি। বিগত ১৪ বছর ধরে গ্রামের মানুষ ভেলায় চড়ে পারাপার হচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খালটির পশ্চিম পাড়ে প্রতাপ স্মরণী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মঠবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানে রয়েছে একটি কমিউনিটি ক্লিনিকও। প্রথমদিকে খালের অন্যপাড় থেকে বিদ্যালয়গামী ছেলেমেয়েরা ডিঙি নৌকায় পারাপার হতো। কিন্তু নৌকা সব সময় পাওয়া যায় না।
জেলেরা নৌকা নিয়ে সুন্দরবনে চলে গেলে ভেলায় পারাপারই হচ্ছে। এতে ঝুঁকি তাকলেও বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় প্লাস্টিকের ড্রামের ওপর কাঠের তক্তা বিছিয়ে বানানো ভেলাই একমাত্র ভরসা।
শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রতিদিন ভেলায় খাল পার হয়ে বিদ্যালয়ে আসতে যেতে তাদের ভয় করে। ভেলা থেকে পড়ে গেলে বই, খাতা ভিজে যায়। অনেক সময় ভেলায় লোকজন বেশি উঠলে পার হওয়া যায় না। ফলে ঝুঁকি নিয়েই বিদ্যালয় দুটির অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
বাসিন্দাদের উপজেলা সদরে যেতে হয় ভেলায় খাল পেরিয়ে। প্রায় ৫ হাজার জনসংখ্যার বড় এ গ্রামটির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শাকবাড়িয়া নদী পেরিয়ে সুন্দরবন। রয়েছে একটি বাজার ও ফরেস্ট স্টেশন। খালের পূর্ব পাড়ে সুপেয় পানির সংকট থাকায় বাসিন্দারা ভেলায় খাল পেরিয়ে পশ্চিম পাড় থেকে খাবার পানি আনতে হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু সাইদ বলেন, খালের পাড়ে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পারাপারে ভোগান্তি লাঘবে খালের ওপর একটি সেতু হলে এই এলাকার কয়েক হাজার মানুষ নিরাপদ যোগাযোগের সুযোগ পাবেন।
মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মতে ইউনিয়ন পরিষদের বাজেট দিয়ে এতো বড় খালে সেতু বানানো সম্ভব নয়। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা পরিষদের সমন্বয় কমিটির সভায় আলোচনা করে দেখব।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের স্কুলে পৌঁছাতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে; এটা দুঃখজনক। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করেছি। আপাতত একটি ভাসমান সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।


















