মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত না মানলে ইসরায়েলকে আবারও গাজায় সামরিক অভিযান চালানোর অনুমতি দেওয়া হবে। ট্রাম্প বলেন, “হামাস যদি নিরস্ত্র না হয়, তাহলে আমি বললেই ইসরায়েল রাস্তায় ফিরে যাবে। ইসরায়েল যদি চায়, তারা ওদের একেবারে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। আমি-ই ওদের এখন পর্যন্ত থামিয়ে রেখেছি।”
বুধবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে জীবিত ২০ জন ইসরায়েলি বন্দির মুক্তিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পাশাপাশি হামাসকে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নিহত অন্যদের মরদেহ ফেরত দিতে হবে এবং তাদের হাতে থাকা সব অস্ত্র জমা দিতে হবে।
হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেডস অবশ্য পাল্টা বিবৃতিতে দাবি করেছে, তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী সব জীবিত বন্দিকে ইসরায়েলের হাতে তুলে দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, “যেসব মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, আমরা সেগুলোও হস্তান্তর করেছি। তবে বাকি মরদেহগুলো উদ্ধারে বিশেষ সরঞ্জাম ও সময় প্রয়োজন, এবং আমরা এ কাজ সম্পন্ন করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।”
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ এখন অনিশ্চয়তায় পড়েছে। প্রথম ধাপে ২০ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার পর গত মঙ্গলবার ট্রাম্প ঘোষণা দেন, “দ্বিতীয় পর্যায় এখন শুরু হচ্ছে। ২০ জন জিম্মি ফিরে এসেছে, যা একটি বড় অগ্রগতি। কিন্তু প্রতিশ্রুত মরদেহগুলো ফেরত দেওয়া হয়নি—এটা অগ্রহণযোগ্য।”
গাজায় চলমান এই সংঘাত ও শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও নতুন উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান ইসরায়েলের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং হামাসের প্রতি কঠোর। ফলে চুক্তি বাস্তবায়নের চাপ বাড়ছে গাজার কর্তৃপক্ষের ওপর।
হামাসের পটভূমি
হরকাত আল-মুকাওয়ামা আল-ইসলামিয়া (হামাস) ১৯৮৭ সালে প্রথম ইন্তিফাদার সময় প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডের একটি শাখা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আহমেদ ইয়াসিন ঘোষণা দিয়েছিলেন, হামাসের লক্ষ্য হলো আধুনিক ইসরায়েলসহ ফিলিস্তিনের সমগ্র ভূখণ্ডকে ইসরায়েলি দখল থেকে মুক্ত করা এবং সেখানে একটি ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।
১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের সাথে হামাসের সম্পৃক্ততা বাড়তে থাকে। ১৯৯৪ সাল থেকে দলটি ঘোষণা দেয়, ইসরায়েল যদি ১৯৬৭ সালের সীমান্তে ফিরে যায়, ক্ষতিপূরণ প্রদান করে, দখলকৃত অঞ্চলে অবাধ নির্বাচন হতে দেয় এবং ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের ফিরে আসার অধিকার দেয়, তবে তারা একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি বিবেচনা করবে।
নতুন উত্তেজনার আশঙ্কা
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য গাজা পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে তুলতে পারে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রকাশ্যে ইসরায়েলকে সমর্থন জানানোয় হামাসের অবস্থান আরও কঠোর হতে পারে।
অন্যদিকে, গাজায় মানবিক পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে উঠছে। জাতিসংঘের হিসাবে, চলমান সংঘাতে কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে, লাখো মানুষ গৃহহীন। আন্তর্জাতিক মহল শান্তি চুক্তি বজায় রাখার আহ্বান জানালেও উভয় পক্ষের পারস্পরিক অবিশ্বাস চুক্তির বাস্তবায়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যুদ্ধবিরতির এই নাজুক সময়ে ট্রাম্পের বক্তব্য মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। এখন নজর সবার—হামাস তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে কি না, আর ইসরায়েল আবারও গাজায় সামরিক অভিযান চালাতে প্রস্তুতি নেয় কি না।