৫১তম অঙ্গরাজ্যের বিতর্কে ফের আমেরিকা–ইসরায়েল সম্পর্ক
- আপডেট সময় : ০৮:৫৪:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫ ১৫ বার পড়া হয়েছে
গাজার যুদ্ধবিরতি নিয়ে তেল আবিবে ওয়াশিংটনের নজিরবিহীন চাপ নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে
গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তি রক্ষায় সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নজিরবিহীন চাপ নতুন এক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, ইসরায়েল কি তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ক্লায়েন্ট স্টেট’ বা নির্ভরশীল রাজ্যে পরিণত হয়েছে? কেউ কেউ আরও সরাসরি বলছেন, ইসরায়েল কি এখন যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য? আল জাজিরার সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে এই সম্পর্কের জটিলতা নতুনভাবে উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত কয়েক সপ্তাহে একের পর এক মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তার ইসরায়েল সফর অনেককেই বিস্মিত করেছে। প্রথমে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার ও বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ, এরপর ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, আর সবশেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সবার লক্ষ্য ছিল একটিই: গাজার যুদ্ধবিরতি টিকিয়ে রাখা এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অতি-ডানপন্থী সরকারকে যেকোনো অজুহাতে যুদ্ধ পুনরায় শুরু করা থেকে বিরত রাখা।
অনেক বিশ্লেষক এই ঘটনাকে ইসরায়েলি সরকারকে শিশুদের মতো দেখাশোনা করার সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র যখন কোনো নির্দেশ দেয়, তেল আবিবকে শেষ পর্যন্ত তা মানতেই হয়। এর পেছনে প্রধান কারণ আমেরিকার বিপুল সামরিক ও আর্থিক সহায়তা এবং জাতিসংঘে ইসরায়েলের পক্ষে দেওয়া একের পর এক ভেটো। ট্রাম্প প্রশাসন এবার সেই প্রভাব ব্যবহার করে ইসরায়েলকে নিজেদের কৌশল অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য করছে।
টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই বলেন, আমি নেতানিয়াহুকে গাজার যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া থেকে বিরত রেখেছি। ইসরায়েলি পার্লামেন্ট বা নেসেট যখন পশ্চিম তীর দখলের অনুমোদন দিতে যায়, তখন ট্রাম্প স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দেন, এমনটা হলে যুক্তরাষ্ট্রের সব সমর্থন হারাবে। ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স এই পদক্ষেপকে চরম বোকামি বলে আখ্যা দেন। এর পরপরই নেতানিয়াহুর কার্যালয় ভোটাভুটিকে “রাজনৈতিক উস্কানি হিসেবে ব্যাখ্যা করে।
চ্যাথাম হাউসের সিনিয়র ফেলো ইয়োসি মেকেলবার্গ আল জাজিরাকে বলেন, নেতানিয়াহুকে এবার স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, কী করতে হবে আর কী নয়, সব কিছুই ওয়াশিংটন ঠিক করে দিচ্ছে। তিনি মনে করেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন প্রকাশ্যে ইসরায়েলকে সমর্থন জানিয়ে ভেতরে ভেতরে চাপ প্রয়োগের নীতি নিলেও সেটি ব্যর্থ হয়েছিল।
কিন্তু ট্রাম্প সরাসরি মুখোমুখি কৌশল বেছে নিয়েছেন, যা বর্তমানে কার্যকর হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশ্লেষক অ্যালন পিংকাসের মতে, এসব ঘটনা নেতানিয়াহুকে বুঝিয়ে দিয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তার বিকল্প খুব সীমিত। ডেমোক্র্যাটরা তার প্রতি অনুকূল নয়, জনমতও নেতিবাচক, আর রিপাবলিকানদের ভেতরেও তাকে নিয়ে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। ফলে আগের মতো তিনি আর এক পক্ষের বিরুদ্ধে অন্য পক্ষকে ব্যবহার করতে পারছেন না।
অন্যদিকে, নেতানিয়াহু ইসরায়েলের স্বাধীনতা হারানোর অভিযোগকে সম্পূর্ণ ফালতু কথা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, এক সপ্তাহে তারা বলে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করে, পরের সপ্তাহে বলে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে নিয়ন্ত্রণ করে, দুটোই হাস্যকর।
তবুও গাজা যুদ্ধবিরতি, পশ্চিম তীর দখল ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অবস্থান আমেরিকা-ইসরায়েল সম্পর্কের ক্ষমতার ভারসাম্যে নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান নিয়ন্ত্রণমূলক নীতি এবং ইসরায়েলের বাধ্যতামূলক আনুগত্য, এই দুইয়ের সংমিশ্রণই এখন ইসরায়েল কি যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য? প্রশ্নটিকে আর নিছক রূপক না, বরং এক বাস্তব রাজনৈতিক আলোচনায় পরিণত করেছে।


















