ঢাকা ০২:২২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ভারতীয় হাই কমিশন উদ্যোগে লালনের মানবতাবাদী দর্শনে আলোকিত ‘লালন সন্ধ্যা’ তিন শর্ত না মানলে জুলাই সনদে সই নয়: এনসিপি ভারত-সমর্থিত ৩৪ সন্ত্রাসীকে হত্যা করলো পাকিস্তান চট্টগ্রাম ইপিজেডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, নিয়ন্ত্রণে ১৭ ইউনিট মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৫: আইনের কঠোর প্রয়োগে ব্যাপক সাফল্য চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত ট্যারিফে শিপিং ব্যয় বাড়ছে, চাপ পড়বে ভোক্তার ওপর ত্রিপুরায় খোয়াই জেলায়ে তিন বাংলাদেশিকে নির্মমভাবে হত্যা হামাস শর্ত না মানলে গাজায় ফের অভিযান চালাবে ইসরায়েল : ট্রাম্প উচ্চ মাধ্যমিকের ফর প্রকাশ, পাসের হার এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন স্মরণ : প্রবাল চৌধুরী সুরের ধ্রুবতারা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা

ভারতীয় হাই কমিশন উদ্যোগে লালনের মানবতাবাদী দর্শনে আলোকিত ‘লালন সন্ধ্যা’

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:৪৮:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫ ২৭ বার পড়া হয়েছে

ভারতীয় হাই কমিশন উদ্যোগে লালনের মানবতাবাদী দর্শনে আলোকিত ‘লালন সন্ধ্যা’

ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

লালন শাহের মৃত্যুবার্ষিকীতে ভারত-বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বন্ধনের পুনরায় উচ্চারণ

আমিনুল হক ভূইয়া

সঙ্গীত, সাধনা ও মানবতার এক অনন্য প্রতীক ফকির লালন শাহ যিনি সীমান্তের বিভাজনকে অতিক্রম করে গড়ে তুলেছেন ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আত্মিক সংযোগ। ঠিক এমন এক ঐক্যতানের আবহে, ১৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে স্মরণ করে ‘লালন সন্ধ্যা’ শিরোনামে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক আয়োজন করল ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশন। ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় বৃহস্পতিবার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে ভাব ও বাণীর মিলনমেলা।

অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য ছিল লালনের জীবনদর্শন ও সঙ্গীতের মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশের হাজার বছরের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে উদযাপন করা। সন্ধ্যার শুরুতেই গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয় লালনের ভাবসঙ্গী ও খ্যাতিমান বাউলশিল্পী ফরিদা পারভীনকে, যিনি তাঁর কণ্ঠে লালনের গানকে আন্তর্জাতিক পরিসরে তুলে ধরেছেন।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন দুই দেশের খ্যাতিমান শিল্পী, গবেষক, সংস্কৃতিসেবী ও তরুণ সঙ্গীতপ্রেমীরা। দর্শক সারিতে ছিলেন নানা বয়স ও পেশার মানুষ, যারা সকলেই একাত্ম হয়ে উপভোগ করেন লালনের চিরন্তন গান যা জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ ও সকল প্রকার বৈষম্যের ঊর্ধ্বে উঠে মানবতার জয়গান গায়।

লালন শাহ তাঁর গান ও দর্শনের মধ্য দিয়ে সমাজে সম্প্রীতি, সহনশীলতা এবং অন্তর্ভুক্তির বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন, যা ভারতীয় ভক্তি আন্দোলন ও সুফি তত্ত্বের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়াতে জন্ম নেওয়া এই মরমী সাধক জীবনের সার্বজনীন সত্যকে খুঁজেছেন সাধনায়, আর তা প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর অসংখ্য বাউলগানে। এসব গান দুই বাংলার মানুষকে তাঁদের শিকড়, ইতিহাস ও অভিন্ন মূল্যবোধের কথা মনে করিয়ে দেয়।

ভারতীয় হাই কমিশন উদ্যোগে লালনের মানবতাবাদী দর্শনে আলোকিত ‘লালন সন্ধ্যা’
ভারতীয় হাই কমিশন উদ্যোগে লালনের মানবতাবাদী দর্শনে আলোকিত ‘লালন সন্ধ্যা’

ভারতীয় হাই কমিশনের এই আয়োজন ভারত-বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। লালনের গান এখানে শুধু সংগীত নয়, বরং একটি জীবন্ত দর্শন, যা সময় পেরিয়ে আজও মানুষকে একই সুতোয় গাঁথে।

উদ্বোধনী ভাষণে ভারতের হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মা ভারত ও বাংলাদেশের চিরন্তন আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের কথা তুলে ধরেন, যা ফকির লালন শাহের জীবন ও সঙ্গীতে গভীরভাবে প্রতিফলিত। তিনি বলেন, লালনের অন্তর্ভুক্তি, সম্প্রীতি, করুণা ও মানবতার দর্শন দুই জাতির অভিন্ন সাংস্কৃতিক যাত্রাকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। ফরিদা পারভীনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে হাই কমিশনার উল্লেখ করেন, তার সঙ্গীত প্রজন্ম ও জাতিকে সেতুবন্ধন করেছে, ভারত ও বাংলাদেশের অসংখ্য উৎসবে তার পরিবেশনা দুই দেশের মাঝে সাংস্কৃতিক সেতু রচনা করেছে।

হাইকমিশনার আরও বলেন, আজকের অনুষ্ঠান কেবল স্মৃতিচারণ নয়, বরং দুই দেশের ভাগ করা ঐতিহ্যের এক প্রাণবন্ত উদযাপন। ফরিদা পারভীনের প্রতি সঙ্গীত শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এতে লালন ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও জনপ্রিয়করণে তার অসামান্য অবদান স্মরণ করা হয়। পরিবেশনায় ছিল ভারতের প্রাক্তন হাই কমিশনার মুচকুন্দ দুবে অনূদিত তার গানের হিন্দি সংস্করণ, ফরিদা পারভীনের স্বামী একুশে পদকপ্রাপ্ত গাজী আব্দুল হাকিমের বাঁশি, শিষ্যা বিউটির কণ্ঠে তার গান এবং ওসিন পাখি কালচারাল একাডেমির শিক্ষার্থীদের সমবেত পরিবেশনা সব মিলিয়ে এটি ছিল এক আবেগঘন সাংস্কৃতিক শ্রদ্ধাঞ্জলি।

সাংস্কৃতিক বিভাগে চন্দনা মজুমদার এবং কিরণ চন্দ্র রায়ের মনোমুগ্ধকর ব্যক্তিগত পরিবেশনা অন্তর্ভুক্ত ছিল, যারা সমসাময়িক বাংলাদেশে লালন ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রশংসিত। কুষ্টিয়ার টুনটুন বাউল এবং তার দল খাঁটি বাউল সঙ্গীতের মাধ্যমে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে।

লালন বিশ্ব সংঘের প্রতিষ্ঠিত লেখক আবদেল মান্নান লালনের শিক্ষা, দর্শন, জীবন ও কর্ম এবং আজকের বিশ্বে এর প্রাসঙ্গিকতা কীভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে সে সম্পর্কে একটি অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ বক্তৃতা দেন।

সন্ধ্যাটি শেষ হয় সুমির নেতৃত্বে ব্যান্ড লালনের একটি প্রাণবন্ত ও আধুনিক পরিবেশনার মাধ্যমে, যেখানে লালনের বার্তা কীভাবে সময়ের সাথে সাথে বিকশিত হচ্ছে তা তুলে ধরা হয়েছিল।

বিখ্যাত অভিনেতা আফজাল হোসেন ছিলেন অনুষ্ঠানের প্রধান, সন্ধ্যার বিভিন্ন পরিবেশনায় লালনের জীবন ও বার্তার মূল্যবান মালা একত্রিত করে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ভারতীয় হাই কমিশন উদ্যোগে লালনের মানবতাবাদী দর্শনে আলোকিত ‘লালন সন্ধ্যা’

আপডেট সময় : ০৮:৪৮:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

লালন শাহের মৃত্যুবার্ষিকীতে ভারত-বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বন্ধনের পুনরায় উচ্চারণ

আমিনুল হক ভূইয়া

সঙ্গীত, সাধনা ও মানবতার এক অনন্য প্রতীক ফকির লালন শাহ যিনি সীমান্তের বিভাজনকে অতিক্রম করে গড়ে তুলেছেন ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আত্মিক সংযোগ। ঠিক এমন এক ঐক্যতানের আবহে, ১৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে স্মরণ করে ‘লালন সন্ধ্যা’ শিরোনামে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক আয়োজন করল ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশন। ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় বৃহস্পতিবার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে ভাব ও বাণীর মিলনমেলা।

অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য ছিল লালনের জীবনদর্শন ও সঙ্গীতের মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশের হাজার বছরের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে উদযাপন করা। সন্ধ্যার শুরুতেই গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয় লালনের ভাবসঙ্গী ও খ্যাতিমান বাউলশিল্পী ফরিদা পারভীনকে, যিনি তাঁর কণ্ঠে লালনের গানকে আন্তর্জাতিক পরিসরে তুলে ধরেছেন।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন দুই দেশের খ্যাতিমান শিল্পী, গবেষক, সংস্কৃতিসেবী ও তরুণ সঙ্গীতপ্রেমীরা। দর্শক সারিতে ছিলেন নানা বয়স ও পেশার মানুষ, যারা সকলেই একাত্ম হয়ে উপভোগ করেন লালনের চিরন্তন গান যা জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ ও সকল প্রকার বৈষম্যের ঊর্ধ্বে উঠে মানবতার জয়গান গায়।

লালন শাহ তাঁর গান ও দর্শনের মধ্য দিয়ে সমাজে সম্প্রীতি, সহনশীলতা এবং অন্তর্ভুক্তির বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন, যা ভারতীয় ভক্তি আন্দোলন ও সুফি তত্ত্বের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়াতে জন্ম নেওয়া এই মরমী সাধক জীবনের সার্বজনীন সত্যকে খুঁজেছেন সাধনায়, আর তা প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর অসংখ্য বাউলগানে। এসব গান দুই বাংলার মানুষকে তাঁদের শিকড়, ইতিহাস ও অভিন্ন মূল্যবোধের কথা মনে করিয়ে দেয়।

ভারতীয় হাই কমিশন উদ্যোগে লালনের মানবতাবাদী দর্শনে আলোকিত ‘লালন সন্ধ্যা’
ভারতীয় হাই কমিশন উদ্যোগে লালনের মানবতাবাদী দর্শনে আলোকিত ‘লালন সন্ধ্যা’

ভারতীয় হাই কমিশনের এই আয়োজন ভারত-বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। লালনের গান এখানে শুধু সংগীত নয়, বরং একটি জীবন্ত দর্শন, যা সময় পেরিয়ে আজও মানুষকে একই সুতোয় গাঁথে।

উদ্বোধনী ভাষণে ভারতের হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মা ভারত ও বাংলাদেশের চিরন্তন আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের কথা তুলে ধরেন, যা ফকির লালন শাহের জীবন ও সঙ্গীতে গভীরভাবে প্রতিফলিত। তিনি বলেন, লালনের অন্তর্ভুক্তি, সম্প্রীতি, করুণা ও মানবতার দর্শন দুই জাতির অভিন্ন সাংস্কৃতিক যাত্রাকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। ফরিদা পারভীনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে হাই কমিশনার উল্লেখ করেন, তার সঙ্গীত প্রজন্ম ও জাতিকে সেতুবন্ধন করেছে, ভারত ও বাংলাদেশের অসংখ্য উৎসবে তার পরিবেশনা দুই দেশের মাঝে সাংস্কৃতিক সেতু রচনা করেছে।

হাইকমিশনার আরও বলেন, আজকের অনুষ্ঠান কেবল স্মৃতিচারণ নয়, বরং দুই দেশের ভাগ করা ঐতিহ্যের এক প্রাণবন্ত উদযাপন। ফরিদা পারভীনের প্রতি সঙ্গীত শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এতে লালন ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও জনপ্রিয়করণে তার অসামান্য অবদান স্মরণ করা হয়। পরিবেশনায় ছিল ভারতের প্রাক্তন হাই কমিশনার মুচকুন্দ দুবে অনূদিত তার গানের হিন্দি সংস্করণ, ফরিদা পারভীনের স্বামী একুশে পদকপ্রাপ্ত গাজী আব্দুল হাকিমের বাঁশি, শিষ্যা বিউটির কণ্ঠে তার গান এবং ওসিন পাখি কালচারাল একাডেমির শিক্ষার্থীদের সমবেত পরিবেশনা সব মিলিয়ে এটি ছিল এক আবেগঘন সাংস্কৃতিক শ্রদ্ধাঞ্জলি।

সাংস্কৃতিক বিভাগে চন্দনা মজুমদার এবং কিরণ চন্দ্র রায়ের মনোমুগ্ধকর ব্যক্তিগত পরিবেশনা অন্তর্ভুক্ত ছিল, যারা সমসাময়িক বাংলাদেশে লালন ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রশংসিত। কুষ্টিয়ার টুনটুন বাউল এবং তার দল খাঁটি বাউল সঙ্গীতের মাধ্যমে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে।

লালন বিশ্ব সংঘের প্রতিষ্ঠিত লেখক আবদেল মান্নান লালনের শিক্ষা, দর্শন, জীবন ও কর্ম এবং আজকের বিশ্বে এর প্রাসঙ্গিকতা কীভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে সে সম্পর্কে একটি অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ বক্তৃতা দেন।

সন্ধ্যাটি শেষ হয় সুমির নেতৃত্বে ব্যান্ড লালনের একটি প্রাণবন্ত ও আধুনিক পরিবেশনার মাধ্যমে, যেখানে লালনের বার্তা কীভাবে সময়ের সাথে সাথে বিকশিত হচ্ছে তা তুলে ধরা হয়েছিল।

বিখ্যাত অভিনেতা আফজাল হোসেন ছিলেন অনুষ্ঠানের প্রধান, সন্ধ্যার বিভিন্ন পরিবেশনায় লালনের জীবন ও বার্তার মূল্যবান মালা একত্রিত করে।