বিশ্বের সবচেয়ে বড় মার্কিন রণতরী জেরাল্ড আর ফোর্ড ক্যারিবিয়ানে
- আপডেট সময় : ১২:৪২:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫ ৭৯ বার পড়া হয়েছে
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, লক্ষ্য মাদক পাচারকারীরা, মাদুরোর দাবি সরকার বদলের ষড়যন্ত্র
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সর্ববৃহৎ ও আধুনিকতম বিমানবাহী রণতরী ‘ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড’ ক্যারিবিয়ান সাগরে মোতায়েন করেছে। এতে যুক্ত হয়েছে পারমাণবিক সাবমেরিন ও এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, যা ওই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি আরও জোরদার করেছে।
ক্যারিবিয়ান সাগরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানবাহী রণতরী ‘ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড’ মোতায়েনের পর যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার মধ্যে নতুন উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো অভিযোগ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বানোয়াট যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করে দেশটির বিরুদ্ধে আগ্রাসনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ শুক্রবার জেরাল্ড আর ফোর্ড রণতরীকে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দেন। বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত এই যুদ্ধজাহাজটি প্রায় ৯০টি যুদ্ধবিমান বহন করতে সক্ষম এবং এতে রয়েছে পারমাণবিক শক্তিচালিত ব্যবস্থা, আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ফ্লাইট ডেক প্রযুক্তি।
মাদুরো রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমে বলেন, তারা নতুন এক চিরস্থায়ী যুদ্ধের বাহানা তৈরি করছে। একসময় তারা বলেছিল যুদ্ধ করবে না, অথচ এখন কৃত্রিম যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি করছে। তাঁর অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক প্রস্তুতি মূলত তাঁর সরকারকে অস্থিতিশীল করার কৌশল।

অন্যদিকে ওয়াশিংটন বলছে, এই অভিযান মাদক পাচার প্রতিরোধের অংশ। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ডের অধীনে পরিচালিত এই মিশনে যুদ্ধজাহাজ, পারমাণবিক সাবমেরিন ও এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান অংশ নিচ্ছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ জানান, শুক্রবার এক অভিযানে ‘ছয়জন মাদক সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। লক্ষ্যবস্তু ছিল ভেনেজুয়েলাভিত্তিক ত্রেন দে আরাগুয়া’ নামের একটি অপরাধী সংগঠনের জাহাজ।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব হামলার আইনি বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ। যুক্তরাজ্যের থিঙ্ক ট্যাংক চ্যাথাম হাউজের ল্যাটিন আমেরিকা বিষয়ক সিনিয়র ফেলো ড. ক্রিস্টোফার সাবাতিনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য কেবল মাদকবিরোধী অভিযান নয়; বরং ভেনেজুয়েলার সেনা ও মাদুরোর ঘনিষ্ঠদের ভয় দেখিয়ে সরকারবিরোধী অবস্থান নিতে বাধ্য করা।
পেন্টাগন জানিয়েছে, জেরাল্ড আর ফোর্ড এখন দক্ষিণ কমান্ডের অধীনে রয়েছে, যা মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের তত্ত্বাবধানে কাজ করে। মুখপাত্র সিয়ান পারনেল বলেন, “অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন মাদকবিরোধী সক্ষমতা বাড়াবে এবং প্রয়োজনে স্থলভাগে হামলার সুযোগ তৈরি করবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বলেন, আমরা এখন স্থলভাগের দিকেও তাকাচ্ছি, কারণ সাগর ইতিমধ্যে আমাদের নিয়ন্ত্রণে। সিএনএন জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন ভেনেজুয়েলার ভেতরে মাদক রুট ও কোকেন তৈরির স্থাপনাগুলোতে হামলার চিন্তাভাবনা করছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেই এই পদক্ষেপ নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান সদস্যরা বলেছেন, এসব হামলার আগে কংগ্রেসের অনুমোদন নেওয়া উচিত। গত ১০ সেপ্টেম্বর ২৫ জন ডেমোক্র্যাট সিনেটর হোয়াইট হাউসকে চিঠি দিয়ে এই অভিযানের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
ট্রাম্প অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁর কাছে এসব হামলার আইনি কর্তৃত্ব আছে। অন্যদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, যদি মাদকবাহী নৌকা ধ্বংস দেখতে না চান, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাঠানো বন্ধ করুন।
যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যমতে, ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে গত কয়েক সপ্তাহে অন্তত ১০টি হামলা চালানো হয়েছে, যাতে ৪৩ জন নিহত হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের বৃহত্তম রণতরী মোতায়েনের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র শুধু মাদকবিরোধী অভিযানই নয়, বরং ল্যাটিন আমেরিকায় সামরিক প্রভাব বিস্তারের নতুন অধ্যায় শুরু করেছে, যা ভেনেজুয়েলাসহ সমগ্র অঞ্চলে অস্থিরতা বাড়াতে পারে। সূত্র বিবিসি


















