বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী অভিনেত্রী ‘সুনয়না সুচন্দা’ জন্মদিনের শুভেচ্ছা

- আপডেট সময় : ০৯:৩২:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২৮ বার পড়া হয়েছে
আমিনুল হক
ষাটের দশ থেকে সেলুলয়েডের জগতের বাসিন্দা তিনি। ছোট দুই বোন সফল নায়িকার। এরমধ্যে একজন আবার আন্তর্জাতি পর্যায়ে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
সময়টা ১৯৬৫ সাল। প্রখ্যাত অভিনেতা কাজী খালেকের একটা প্রামাণ্যচিত্রে অভিনয় দিয়ে রূপালি ভুবনে অভিষেক ঘটে। এরপর ১৯৬৬ সালে সুভাষ দত্ত পরিচালিত কাগজের নৌকা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। ১৯৬৭ সালে হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী নিয়ে জহির রায়হানের চলচ্চিত্র বেহুলায় অভিনয় করেন।

এরপর ১৯৬৭ সালে জহির রায়হান নির্মিত আনোয়ারা চলচ্চিত্রে অভিনয় তার জীবনে মাইল ফলক। এরপর বাকীটা ইতিহাস। চলচ্চিত্র জগতের সংশ্লিষ্টরা তাকে স্বর্ণযুগের রাণী হিসেবে মনে করেন।
উল্লেখযোগ্য ও চলচ্চিত্র জগতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছায়াছবি জহির রায়হানের জীবন থেকে নেয়া তার জীবনে উল্লেখযোগ্য স্মারক। ষাটের দশকে বাংলা চলচ্চিত্রে আলো ঝলমলে আকাশের ধ্রুব তারা তিনি।
সে সময়ের উদীয়মান নায়ক আজিমের বিপরীতে নয়নতারা, রাজ্জাকের বিপরীতে সুয়োরানী দুয়োরানী, মনের মত বউ, প্রতিশোধ, এবং সত্তরের দশকে যে আগুনে পুড়ি, কাঁচের স্বর্গ এবং চাওয়া পাওয়া তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র।
বাংলার চলচ্চিত্রে এই অপ্রতিদ্বন্দ্বী কাজল নয়না হরিণীখ্যত নায়িকা সুন্দন্দা তথা কোহিনূর আক্তার। জন্ম ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ সালে, যশোরে। পিতা এ এস এম নিজামউদ্দিন ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। মা বেগম জাহানারা ছিলেন হোমিওপ্যাথি ডাক্তার। সুচন্দার কৈশোরের স্মৃতি বিজরিত যশোর।
১৯৬০ এর দশকে অভিনয় জীবন শুরু করেন। তার ছোট বোন ববিতা ও চম্পা ঢালিউডের বিখ্যাত দুই অভিনেত্রি। অভিনেতা রিয়াজ তার চাচাত ভাই।

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র ১৯৬৬ সালে সুভাষ দত্তের কাগজের নৌকা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। সাথে ছিলেন আখতার হোসেন এবং সৈয়দ হাসান ইমাম। পরবর্তীকালে ১৯৬৭ সালে হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী নিয়ে জহির রায়হানের চলচ্চিত্র বেহুলায় অভিনয় করেন। তার বিপরীতে ছিলেন নবাগত নায়ক রাজ্জাক।
অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজনাও করেছেন। জহির রায়হানের জীবদ্দশায় টাকা আনা পাই ও প্রতিশোধ চলচ্চিত্র দুটি প্রযোজনা করেন।
এছাড়াও তিনকন্যা, বেহুলা লখিন্দর, বাসনা ও প্রেমপ্রীতি চলচ্চিত্রগুলো প্রযোজনা করেছেন সুচন্দা।
সবুজ কোট কালো চশমা তার পরিচালিত প্রথম সিনেমা। ২০০৫ সালে স্বামী জহির রায়হানের ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসের আলোকে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন এবং সেরা প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
হাজার বছর ধরে চলচ্চিত্র নির্মাণের ইচ্ছের কথা আমাদের আলোচনা হয়েছিলো তথ্য মন্ত্রণালয়ে বসে। তার আগে নিউ ইস্কাটনের বাসায় দীর্ঘ সময় আলাপ-আলোচনা এবং খাওয়া-দাওয়া হয়েছে। আকাশ মনা এই অভিনেত্রী একজন সমাজসেবীও বটে।

১৯৬৭ সালে জহির রায়হানের বেহুলা ছবিতে অভিনয় করার সময় সাথে দু’জনের ব্যক্তিগত আলাপ এবং একই বছরে বিয়ে করেন তারা। আরাফাত রহমান অপু ও তপু রায়হান নামে দুই পুত্র সন্তান আছে তাদের। অপু একজন ব্যাংকার এবং তপু ব্যবসায়ি।
জহির রায়হানের জন্ম ১৯ আগস্ট ১৯৩৫। তিনি একজন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালকই ছিলেন না, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, সাংবাদিক এবং মুক্তিযুদ্ধের অগ্রসেনানী ছিলেন। ১৯৫৭ সালে জাগো হুয়া সাভেরা উর্দু চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে সিনেমার জগতে আগমন। ১৯৬১ সালে কখনো আসেনি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে যাত্রা শুরু করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় তথ্যচিত্র নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। জহির রায়হান।
দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি জহির রায়হান তার বড় ভাই প্রতিযশা সাংবাদিক, সাহিত্যিক শহীদুল্লাহ কায়সারকে মিরপুরে খুঁজতে গিয়ে নিখোঁজ হন। পরবর্তীতে অনেক প্রতীক্ষার পর অবশেষে সুচন্দা ১৯৭৬ সালে বিশিষ্ট ব্যবসায়ি এম রেজাউল মালিককে বিয়ে করেন। রাফাইয়াৎ মালিক ও রাফাইয়া মালিক নামের দুই কন্যা সন্তান রয়েছে।