নির্বাচন-রমাজানের কারণে একুশে বইমেলা এগিয়ে এলো ডিসেম্বরে

- আপডেট সময় : ০২:৩৮:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ৮০ বার পড়া হয়েছে
২৪-এর একুশে বই মেলায় ৬০ কোটি টাকার অধিক বই বিক্রি হয়েছে। আর নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে ৩ হাজার ৭৫১টি। মেলায় পহেলা মার্চ পর্যন্ত দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিলো ৬০ লাখের কাছাকাছি
আমিনুল হক, ঢাকা
২৬-এর ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে বাংরাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিগত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের বছরপূর্তির রাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করেন দেশটির প্রওধান উপদেষ্টা নোবেল জয়ী ড. ইউনূস। নির্বাচনের ঘোষণার আসার পরই দেশটির রাজনৈতিক দল ও নেতাদের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য দেখা দেয়। অনেক নেতার এলাকায় সাজ সাজ রব দেখা দেয়। কর্মীদের নির্বাচনী আমেজ ফিরে আসে।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ভাষামাস ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক অমর একুশে বইমেলা এগিয়ে আনতে হয়েছে। এবারের মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে ১৭ ডিসেম্বর থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি ইতিমধ্যে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাংলা একাডেমির সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়েছে সৃজনশীল বই প্রকাশক সমিতিও। তারা বলছে, ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচন এবং তৃতীয় সপ্তাহ থেকে রমজান শুরু হবে। এরপর বই মেলার আর কোন আমেজ থাকে না। তাই এবারের বইমেলা এগিয়ে আনাটা সুবিধাজনক বলছেন তারা।
গতবারের অমর একুশে বই মেলায় ৯শর বেশি স্টল ও ৬৭০টি প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছিলো। গত বছর নতুন বইয়ের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৭৩০টি।
১৯৮৪ সাল থেকে বাংলা একাডেমি সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ নাম দিয়ে ধারাবাহিকভাবে মেলা পরিচালনা করছে। ২০২১ সাল থেকে মেলার নামকরণ করা হয় অমর একুশে বইমেলা।
মেলা শুরুটা একাডেমি প্রাঙ্গণে হলেও ধীরে ধীরে এর পরিসর বাড়তে থাকায় জায়গার সংকট দেখা দেয়। এরপর বাংলা একাডেমির সামনের সড়কে বইমেলার সম্প্রসারিত হয়। কিন্তু তাতেও জায়গা হচ্ছি না।

পরবর্তীতে ২০১৪ সালে সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বরাদ্দ দেওয়া হয়। তাতে করে মেলার শ্রীবৃদ্ধি ঘটে এবং সর্বস্তরের পাঠক, অনুরাগীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ।
মেলার মূল মঞ্চ এবং তথ্যকেন্দ্র রাখা হয় একাডেমি প্রাঙ্গণে। বিগত এক দশক ধরে বাংলা একাডেমি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হচ্ছে বইমেলা।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, একাডেমির সচিব, পরিচালকরা এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিতে মেলার তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
১৯৮৩ সালে এরশাদের সময় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের কারণে একবার বইমেলা বন্ধ হয়েছিল। এরপর বইমেলা বন্ধ থাকার নজির নেই। আর কোভিড মহামারীর সময় ২০২১, ২০২২, ২০২৩ সালে বইমেলার সময় পরিবর্তন করে মার্চ মাসে নেওয়া হয়েছিল।
নয়মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির ফটকে চট বিছিয়ে অল্প কিছু বই বিক্রি শুরু করেন প্রকাশনা সংস্থা মুক্তধারার প্রতিষ্ঠাতা চিত্তরঞ্জন সাহা।
১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমির একুশের অনুষ্ঠানমালার সঙ্গে সংগতি রেখে একাডেমির ভেতরে ছোট একটি স্টল স্থাপন করে বই বেচে মুক্তধারা। ১৯৭৭ সালে মুক্তধারার সঙ্গে আরও অনেকে যোগ দেয়, সেই থেকে মূরল একুশে বইমেলার সূচনা।
১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী একাডেমিকে বইমেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত করেন। এর পরের বছরই বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি মেলার সঙ্গে যুক্ত হয়।
মনজুরে মওলা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকার সময় ১৯৮৩ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলা নামে মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হলেও তা করা যায়নি। পরের বছর থেকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সূচনা হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলার।