দিওয়ালিতে কার্বাইড গান বাজি ফেটে অন্ধ বহু শিশু-কিশোর
- আপডেট সময় : ০২:১২:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫ ৩৫ বার পড়া হয়েছে
আলো ঝলমলে উৎসব দিওয়ালি কিন্তু ভারতের অনেক পরিবারের জন্য এবারের দিওয়ালি পরিণত হয়েছে অন্ধকারে। নতুন এক ধরনের বাজি ‘কার্বাইড গান’ ফেটে চোখ হারিয়েছে শতাধিক শিশু ও কিশোর-কিশোরী।
ভারতের মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালের এক হাসপাতালের বিছানায় বসে আছে ১৫ বছর বয়সী আরিশ। কালো চশমার আড়ালে ঢাকা তার বাঁ চোখ, যেটি হারিয়েছে দিওয়ালির আনন্দে। কয়েক দিন আগে ঘরে বসেই মুখের সামনে ফেটে যায় নতুন কেনা বাজিটি। জরুরি অস্ত্রোপচার হলেও চিকিৎসকেরা এখনো নিশ্চিত নন—আরিশের দৃষ্টি কতটা ফিরবে।
ওর বাবা একজন মালি। সংসারে সাহায্য করতে টেলিভিশন সারাই করত আরিশ। এখন তার একটাই দুশ্চিন্তা—চোখ হারালে কাজে কীভাবে ফিরবে?
শিশু শ্রম ভারতে নিষিদ্ধ হলেও, বাস্তবে লক্ষ লক্ষ অপ্রাপ্তবয়স্ক কাজ করছে। আইন অনুযায়ী ১৪ বছরের বেশি শিশু ক্ষতিকর নয় এমন কাজে যুক্ত হতে পারে।
আরিশের মতোই উত্তর ভারতের অন্তত পাঁচটি রাজ্যে শত শত শিশু-কিশোর আহত হয়েছে একইভাবে। বিস্ফোরণের উৎস সেই নতুন বাজি কার্বাইড গান।
দিওয়ালির আগে সামাজিক মাধ্যমে ঘরে তৈরি এই বাজিটির ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। একটি সাধারণ প্লাস্টিকের পাইপে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ভরে দেওয়া হয়। তারপর হঠাৎ গুলির মতো শব্দ আর আলো। কিন্তু ভয়াবহ বিষয় হলো, কখন ফাটবে তা অনিশ্চিত।

অনেকেই বাজি না ফাটলে পাইপের ভেতর উঁকি দিচ্ছিল, ঠিক সেই সময়েই ঘটে বিস্ফোরণ। কর্মকর্তাদের মতে, এমন দুর্ঘটনাই শতাধিক শিশুর চোখ নষ্ট হওয়ার কারণ।
ক্যালসিয়াম কার্বাইড কেনা-বেচা ভারতে নিয়ন্ত্রিত হলেও কৃষক ও দোকানিরা এটি ব্যবহার করেন ফল পাকানোর জন্য। আবার জন্তু-জানোয়ার তাড়াতেও অনেক সময় এমন ঘরোয়া ‘কার্বাইড গান’ তৈরি হয়।
কিন্তু এবার তা পরিণত হয়েছে খেলনা থেকে মারণাস্ত্রে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কেবল গত সপ্তাহেই চোখে আঘাত পাওয়া রোগীদের ভিড় বেড়েছে বিভিন্ন রাজ্যের হাসপাতালে। পাটনার এক চিকিৎসক, ড. সিনহা, বলেন, আমার কাছে আসা এক রোগী ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। ইনস্টাগ্রাম ভিডিও দেখে নিজেই ‘কার্বাইড গান’ বানিয়ে ছিল। বিস্ফোরণে তার একটি চোখের দৃষ্টি চিরতরে চলে গেছে।
কার্বাইড গান শব্দটি সার্চ করলে ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবে এখনো পাওয়া যায় দশকেরও বেশি ভিডিও, যেখানে কিশোররা বাজিটি বানাচ্ছে ও ফাটাচ্ছে। অনেক ভিডিওতে দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞানের পরীক্ষা, এক্সপেরিমেন্ট ভিডিও বা ইউজফুল প্রজেক্ট ট্যাগ।
দামের কারণেও এই বিপজ্জনক বাজি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে মাত্র ১৫০ থেকে ২০০ রুপি। বেশি শব্দ, বেশি আলো আরও কুল মনে হয় কিশোরদের কাছে।
কিন্তু তার বিনিময়ে হারিয়ে যাচ্ছে বহু শিশুর দৃষ্টি আর অনেক পরিবারের উৎসবের আলো নিভে যাচ্ছে চিরতরে।

আরিশের মতোই উত্তর ভারতের অন্তত পাঁচটি রাজ্যের কয়েকশো শিশু-কিশোর দিওয়ালির সময়ে ওই নতুন ধরনের বাজি ফেটে চোখে আঘাত পেয়েছে। ‘কার্বাইড গান’ নামের এই নতুন বাজিটির কথা আগে কখনও শোনা যায়নি। দিওয়ালির কিছুদিন আগে থেকে সামাজিক মাধ্যমে ঘরে তৈরি এই বাজিটির ভিডিও সামনে আসে।
একটি সাধারণ প্লাস্টিকের পাইপের ভেতরে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ভরে দেওয়া হচ্ছে – তারপরেই গুলির আওয়াজের মতো শব্দ, সঙ্গে আলোর ঝলকানি।
তবে ঠিক কখন শব্দ হবে, তা অনিশ্চিত। অনেক সময়ে দেরিতেও ফাটছে এই ঘরোয়া বাজিটি। কেন বাজি ফাটছে না, সেটা দেখতে গিয়ে যখন বাচ্চারা পাইপের ভেতরে উঁকি দিচ্ছে – অনেক ক্ষেত্রে ঠিক সেই সময়েই বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন।
ক্যালসিয়াম কার্বাইড কেনা-বেচা ভারতে নিয়ন্ত্রিত, কিন্তু কৃষক আর দোকানদারেরা অনেক সময়েই কৃত্রিমভাবে ফল পাকানোর জন্য এই রাসায়নিক ব্যবহার করে থাকেন।
পুলিশ কর্মকর্তারা আরও বলছেন যে চাষের খেত থেকে জন্তু-জানোয়ারদের ভয় দেখিয়ে তাড়ানোর জন্যও এ ধরনের ঘরোয়াভাবে তৈরি বন্দুক ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
তবে গত সপ্তাহে এত বেশি সংখ্যায় আহত হওয়ার খবর প্রকাশিত হওয়ার আগে পর্যন্তও ভারতের বেশির ভাগ মানুষই এই ঘরোয়া বন্দুকের নামও শোনেননি। বিবিসি


















