টাইফয়েড টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত, পরীক্ষিত, নিরাপদ: কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা

- আপডেট সময় : ০৬:২৫:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫ ৮৬ বার পড়া হয়েছে
টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধ ও এ রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের টাইফয়েড টিকাদান শুরু হতে যাচ্ছে আগামী ১২ অক্টোবর
বাংলাদেশে বছরে অন্তত ৫ লাখের বেশি মানুষ টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়। যার প্রায় ৭০ ভাগই শিশু। টাইফয়েড জ¦রে প্রতিবছর কমপক্ষে ৬ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়
টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত, পরীক্ষিত, নিরাপদ ও কার্যকর
১২ অক্টোবর থেকে দেশজুড়ে টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু
আমিনুল হক ভূইয়া
বাংলাদেশে বছরে অন্তত ৫ লাখের বেশি মানুষ টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়। যার প্রায় ৭০ ভাগই শিশু। টাইফয়েড জ¦রে প্রতিবছর কমপক্ষে ৬ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়। টাইফয়েড থেকে শিশুদের রক্ষায় ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের বিনামূল্যে টাইফয়েডের টিকা নিশ্চিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। আগামী ১২ অক্টোবর থেকে এক ডোজের টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) বিনামূল্যে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু হবে। এক ডোজের এই টিকায় টাইফয়েড প্রতিরোধে ৯৫ শতাংশের বেশি সুরক্ষা দিতে সক্ষম। টিকাদান কর্মসূচি সফল করতে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন বলে মত সংশ্লিষ্টদের।

‘টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেই-২০২৫’ ‘টিসিভি টিকাদান অভিযান তথা টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিভিসি) প্রয়োগের মাধ্যমে টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধের জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি উপলক্ষ্যে সোমবার ইউনিসেফের সহায়তায় জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
ইউনিসেফ জানায়, বাংলাদেশ সরকার শিশুদের জন্য এই টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু করছে। যা কিনা ১২ অক্টোবর দেশজুড়ে থেকে অনুষ্ঠিত হবে। এই টিকাটি টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন নামে পরিচিত এবং এটি টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধের জন্য অত্যন্ত কার্যকর ও নিরাপদ। টাইফয়েড টিকাদাস ক্যাম্পেইন ইউনিসেফের সহায়তায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
ইউনিসেফ বালাদেশের সোশ্যাল অ্যান্ড বিহেভিয়ার চেঞ্জ স্পেশালিস্ট শেখ মাসুদুর রহমান বলেন, স্কুলগামী শিশুদের জন্য স্কুলের মাধ্যমে প্রথম ১০ দিন টিকাদান ক্যাম্প করা হবে। যারা স্কুলে যায় না, তাদের জন্য পরবর্তী আট দিন নির্ধারিত টিকাদান কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে। এটি টাইফয়েড প্রতিরোধের জন্য একটি কার্যকর টিকা, যা শরীরের টাইফয়েড প্রতিরোধকারী অ্যান্টিবডি তৈরি করে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই টিকা বাংলাদেশের শিশুদের ৮৫ শতাংশের বেশি সুরক্ষা দিতে সক্ষম এবং একটি মাত্র ডোজই টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধ করতে যথেষ্ট।
শিশুদের সকালের নাস্তা করিয়ে নির্ভয়ে টিকাদান কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। টিকা দেওয়ার পর অন্তত ৩০ মিনিট টিকাদান কেন্দ্রে বসে থাকা প্রয়োজন। টিকা দেওয়ার স্থানে সামান্য প্রতিক্রিয়া হতে পারে, যা অন্যান্য টিকার মতোই স্বাভাবিক। টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত, পরীক্ষিত, নিরাপদ ও কার্যকর।
জাতিসংঘের একটি বিশেষ সংস্থা ইউনিসেফ বাংলাদেশ। যা বিশ্বব্যাপী শিশুদের অধিকার রক্ষা, তাদের জীবন বাঁচানো এবং তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা বিকাশে কাজ করে চলেছে। ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটি জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক জরুরি শিশু তহবিল নামে পরিচিত ছিল, বর্তমানে জাতিসংঘ শিশু তহবিল।
মানবিক এই সংস্থাটির মাঠ পর্যায়ে অনুকরণীয় যেসব কর্মসূচি পরিচালনা করছে, তার মধ্যে শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা, জীবন রক্ষাকারী প্রতিষেধক (টিকা) প্রদান এবং পুষ্টি নিশ্চিত করা। মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ তৈরি এবং শিশুদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করা। নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা।
শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সহিংসতা, নির্যাতন এবং যেকোনো ধরনের শোষণ থেকে রক্ষা করা। যুদ্ধ, দুর্যোগ বা অন্যান্য জরুরি পরিস্থিতিতে শিশুদের ও তাদের পরিবারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা।
কর্মশালায় দেশের বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার ৭০ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। অংশগ্রহণকারীরা টিসিভি টিকার কার্যকারিতা, নিরাপত্তা, টিকাদানের সময়সূচি, লক্ষ্যভিত্তিক জনগোষ্ঠী এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির কার্যকর কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাভ করেন।

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব মুহম্মদ হিরুজ্জামান, এনডিসি। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও প্রকল্পের জাতীয় প্রকল্প পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলতাফ-উল-আলম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মোহাম্মদ আলতাফ-উল-আলম বলেন, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অনস্বীকার্য। বিশেষ করে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় টিসিভি টিকাদান কর্মসূচি একটি সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ। সংবাদমাধ্যমের সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া এই গুরুত্বপূর্ণ বার্তা জনগণের সর্বস্তরে পৌঁছানো সম্ভব নয়। ইউনিসেফ বাংলাদেশ এই কার্যক্রমে যে কারিগরি ও কৌশলগত সহায়তা প্রদান করছে, তার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব জনাব মুহম্মদ হিরুজ্জামান, এনডিসি বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে পোলিও, কলেরা ও অন্যান্য সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে যে সাফল্য অর্জন করেছে, তার পেছনে গণমাধ্যমের অগ্রণী ভূমিকা অনস্বীকার্য। আমি বিশ্বাস করি, টিসিভি টিকাদান কর্মসূচিও গণমাধ্যমের শক্তিশালী অংশগ্রহণ ও দায়িত্বশীল প্রচারণার মাধ্যমে একটি সফল জাতীয় উদ্যোগে পরিণত হবে। তিনি সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান, এই টিকাদান কার্যক্রমের গুরুত্ব ও বার্তাটি আরও বেশি প্রচারের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে, যাতে সবাই টিসিভি টিকাদানের সুফল সম্পর্কে সচেতন হতে পারেন।
রিসোর্স পারসন হিসেবে ছিলেন, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট পরিচালক (প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠান), ড. মো. মারুফ নাওয়াজ, ইউনিসেফের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সলোমান , ইপিআই ফোকাল পয়েন্ট ডা. রাজীব সরকার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডা. মো. শাহরিয়ার সাজ্জাদ। ইউনিসেফের টিকাদান কর্মসূচির ব্যবস্থাপক ডা. রিয়াদ মাহমুদ, ইউনিসেফের এস বি সি সেকশনের শেখ মাসুদুর রহমান প্রমূখ।
রিসোর্স পারসনগণ তাঁদের উপস্থাপনায় টিকাদান কর্মসূচির কারিগরি দিক, সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ, সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা এবং সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও ইতিবাচক বার্তা প্রচারের কৌশলসমূহ গুরুত্বসহকারে উপস্থাপন করেন।
শিশু, কিশোর-কিশোরী ও নারী উন্নয়নে সচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রম প্রকল্পের আওতায় জাতীয় পর্যায়ে সংবাদকর্মীদের নিয়ে টাইফয়েড টিকাদান বিষয়ক এক কনসালটেশন কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।