ঢাকা ০৩:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
মানবতাবিরোধী অপরাধে ১৫ সেনা কর্মকর্তা হেফাজতে : সেনা সদর দপ্তর জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা সম্মেলন, বিশ্ব শান্তির নতুন দিগন্তে ভারত ধানের শীষ নিয়ে টানাটানি কেন, প্রশ্ন মির্জা ফখরুলের নোবেল শান্তি পুরস্কার থেকে ট্রাম্পের নাম বাদ কেন? জানালো কমিটি সাহিত্যাঙ্গনে শোকের ছায়া: চলে গেলেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম প্রজননকালীন নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই পদ্মা পারে প্রকাশ্যে ইলিশ বিক্রির হাট! খুলনার দাকোপে বেড়িবাঁধ ভেঙে ৮ গ্রাম প্লাবিত সংকট, ক্ষতির শতকোটি টাকা ফিলিপাইনে ভূমিকম্প ও বিপর্যয়ের  এক বছরের চিত্র অন্তর্বর্তী সরকার কেন যুদ্ধবিমান কিনছে, চীনের ২০টি জে-১০ সিই ক্রয়ে বিতর্ক ১৫ অক্টোবর স্বাক্ষরিত হবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ ঐতিহাসিক দলিলে নেতৃত্ব দেবেন ড. ইউনূস

ইলিশ মিলবে আর মাত্র ৯দিন, ৩ অক্টোবর থেকে ২২দিনের নিষেধাজ্ঞা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:১৬:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ৭৮ বার পড়া হয়েছে

ইলিশ মিলবে আর মাত্র ৯দিন, ৩ অক্টোবর থেকে ২২দিনের নিষেধাজ্ঞা

ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ইলিশের আহরণে সঙ্গে ৭ লাখ জেলে সরাসরি জড়িত

৬টি জেলার ২৩টি উপজেলায় ৪০ হাজার জেলেকে
খাদ্য সহায়তা দেবে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প

নিষিদ্ধকালীন প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় নদীতে মাছ শিকার

নৌ-পুলিশকে ম্যানেজ করেই মাছ ধরার অভিযোগ

 

আমিনুল হক, ঢাকা

নদ-নদীতে নানা প্রতিবন্ধকতা, চর পড়ে মাছের স্বাভাবিক গতিপথ বাধাগ্রস্ত হওয়া, নদী থেকে অপরিকল্পিত বালি উত্তোলন, ময়লা-অবর্জনা এবং জলবায়ু-পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের জাতীয় মাছের উৎপাদন গত কয়েক বছরে কমছে। ফলে কয়েক বছর যাবত নদ-নদীতে মিলছে না কাঙ্খিত ইলিশ। ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় ৬টি অভয়াশ্রম ঘিরে মোটা বাজেটের কর্মসূচি হাতে নেয় মৎস্য অধিদপ্তরের ‘ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প। কিন্তু নিষিদ্ধকালীন নদীতে মা ইলিশ শিকার বন্ধে এই কল্পের কঠোর অবস্থান সত্ত্বেও মা ইলিশ রক্ষায় নৌ-পুলিশের তরফে তেমন জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না।

ফলে অবৈধ মৎস্য শিকারীরা মা ইলিশ নিধনে উৎসাহ পেয়ে থাকে বলে অভিযোগ মৎস্যজীবীদের। ৩ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ২৫ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত ২২ দিন নদী মাছ শিকআর নিষিদ্ধ। নিষিদ্ধকালীন সময়ে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল নৌ-পুলিশকে ম্যানেজ করেই ভাড়াটে জেলেদের দিয়ে অবাধে মা ইলিশ শিকার করে থাকে। এক্ষেত্রে নৌ-পুলিশের ভূমিকার দিকেই আঙ্গুল তোলেন মৎস্যজীবীরা।

নৌ-পুলিশের কর্মকান্ডে অতিষ্ট ভোলার মেঘনা পারের জেলেরা। তাদের মতে নদীতে প্রকৃত মৎস্যজীবীদের বেলায় নৌ-পুশিশের ভূমিকা হচ্ছে আজরাইলের মতো। যাকে-তাকে ধরে নিয়ে মামলা ঠুকে দিচ্ছে নৌ-পুলিশ। একারণে প্রান্তিক মৎস্যজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। তারপরও প্রশাসনের তরফে তেমন কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় মা ইলিশ নিধন এবং নিষিদ্ধকালীন মাছ শিকার বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ইলিশের উৎপাদন কমছে।

ইলিশ মিলবে আর মাত্র ৯দিন, ৩ অক্টোবর থেকে ২২দিনের নিষেধাজ্ঞা
মা ইলিশ

এবারে মৌসুমের শেষ প্রান্তে ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। মৎস্যজীবীরা বলছেন, নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধের আগ মুহূর্তে নানা সাইজের ইলিশ ধরা পড়ছে। মৌসুমের শেষ প্রান্তে এসে মাছ ধরা পড়ায় জেলেরা খুশি। আড়ত-বাজারে মাছের আমদানির কারণে দামও কিছুটা কমেছে। তবে তা মোকাম পর্যায়ে। ঢাকায় ইলিশের বেচাকেনা চলছে চড়া দামেই।

ভোলার ইলিশা ঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাইফুল বলেন, ২২দিনের নিষিদ্ধকালীন সময়ে আমাদের জেলেরা মাছ শিকার থেকে বিরত থাকে। কিন্তু কালীগঞ্জ থেকে উজানে মাছ ধরা হয়ে থাকে। ভোলার উজানে মেঘনায় এবং হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় মাছ ধরা হয়। বর্তমানে নদীতে মোটামোটি ইলিশ ধরা পড়ছে। দাম আগের তুলনায় কিছুটা নিম্নমুখী।

ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক মামুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প মা ইলিশ ও জাটকা (ছোট ইলিশ) সংরক্ষণ এবং অভয়াশ্রম ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি ও টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতের লক্ষ্যে মৎস্য নিরবচ্ছিন্ন কাজ করে চলেছে। এই প্রকল্পের আওতায় জেলেদের খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করে চলেছে। মামুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, আগামী মার্চ-এপ্রিলে ৫টি অভয়াশ্রমে মাছ ধরা নিষিদ্ধকালীন ৬টি জেলার ২৩টি উপজেলায় ৪০ হাজার জেলেকে খাদ্য সহায়তা দেবে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প। ইলিশ আহরণে সঙ্গে ৭ লাখ জেলে সরাসরি জড়িত এবং প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে আরও ২৫ লাখ মানুষ জড়িত বলে জানায় ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প।

ইলিশ মিলবে আর মাত্র ৯দিন, ৩ অক্টোবর থেকে ২২দিনের নিষেধাজ্ঞা
ঝটকা ইলিশ  : সংগৃহিত ছবি

বরিশাল জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র বলছে, জেলার ১০টি উপজেলায় ৮৬ হাজার ১৭৭ জন জেলে রয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৪ লাখ টন ইলিশ মাছ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ রয়েছে। এই জেলার ১৪৩টি ঘাটে ইলিশ বিক্রি হয়। এরই মধ্যে নদীতে ইলিশ আসতে শুরু করেছে এবং ধরাও পড়ছে। সেই সঙ্গে কয়েক দিন ধরে ইলিশের দাম কিছুটা নিম্নমুখী।

বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম বলেন, প্রজনন মৌসুমের কারণে নদীতে ইলিশ মাছ আসতে শুরু করেছে। বর্তমানে ছোট সাইজের মাছ আসছে। সমুদ্র থেকে মাছ উঠতে শুরু করেছে। দুই-তিন দিনের মধ্যে আরো মাছ আসবে। তবে বড় সাইজের মাছ একটু পরে আসা শুরু করবে।

মা ইলিশ রক্ষায় এবার ৩ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে শিকার নিষেধাজ্ঞার সময় শুরু হবে। ২৫ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত নদীতে সব ধরনের মাছ শিকার নিষিদ্ধ থাকবে। মেঘনা নদীর জেলে হিজলার ধুলখোলা বতুয়া গ্রামের মৎস্যজীবীরা নদীতে ইলিশ মাছ পেয়ে খুশি। এখন দিনভর জাল বেয়ে ২০০০-৩০০০ টাকা মাছ পাচ্ছেন তারা।

বরিশাল পোর্ট রোডের মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েক দিন ধরে বাজারে ইলিশ মাছ ওঠছে। আগে যেখানে প্রতিদিন ৪০-৫০ মণ মাছ বিক্রি হত; সেখানে এখন ১৫০-২০০ মণ বিক্রি হয়। মঙ্গলবার পোর্ট রোড বাজারে দেড় কেজি আকারের ইলিশ মাছ প্রতি কেজি দুই হাজার ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এক কেজি ২০০ গ্রাম আকারের দুই হাজার ৩০০ টাকা কেজি, এক কেজি আকারের দুই হাজার ১৫০ টাকা, এলসি এক হাজার ৭৫০ টাকা, আধা কেজি আকারের এক হাজার ৪৫০ টাকা, ৪০০ গ্রাম আকারের এক হাজার ২০০ টাকা এবং ৩০০ গ্রাম আকারের প্রতি কেজি ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

ইলিশ মিলবে আর মাত্র ৯দিন, ৩ অক্টোবর থেকে ২২দিনের নিষেধাজ্ঞা
নদীতে জাটকা ইলিশ আহরণ : ছবি সংগ্রহ

ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প

ইলিশ উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প হলো বাংলাদেশ সরকার এবং মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক গৃহীত একটি কর্মসূচি, যা মা ইলিশ ও জাটকা (ছোট ইলিশ) সংরক্ষণ এবং অভয়াশ্রম ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি ও টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। এই প্রকল্পের আওতায় জেলেদের আর্থিক সহায়তা, বিকল্প কর্মসংস্থান, বিকল্প বৈধ জাল বিতরণ, এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মতো কাজ করা হয়।

মা ইলিশ ও জাটকা সংরক্ষণে মৎস্য সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়ন এবং অভয়াশ্রম ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মা ইলিশ ও জাটকা ধরা নিষিদ্ধ করে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি। জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা, লিফলেট, ব্যানার ইত্যাদির মাধ্যমে জেলে ও জনসাধারণ মানুষের মাঝে ইলিশ সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে জাটকা ও মা ইলিশ আহরণ ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা।

মাছ ধরা নিষিদ্ধকালীন ২৫টিরও বেশি জেলা এবং ১৩৪টি উপজেলায় জেলেদের জন্য ভিজিএফ সহায়তা হিসাবে চাল বিতরণ করা। এই প্রকল্পে বিশ্ব মৎস্যকেন্দ্র এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে জেলেদের সহযোগিতা প্রদান করে থাকে। এই সকল পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ইলিশ মিলবে আর মাত্র ৯দিন, ৩ অক্টোবর থেকে ২২দিনের নিষেধাজ্ঞা

আপডেট সময় : ০৭:১৬:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ইলিশের আহরণে সঙ্গে ৭ লাখ জেলে সরাসরি জড়িত

৬টি জেলার ২৩টি উপজেলায় ৪০ হাজার জেলেকে
খাদ্য সহায়তা দেবে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প

নিষিদ্ধকালীন প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় নদীতে মাছ শিকার

নৌ-পুলিশকে ম্যানেজ করেই মাছ ধরার অভিযোগ

 

আমিনুল হক, ঢাকা

নদ-নদীতে নানা প্রতিবন্ধকতা, চর পড়ে মাছের স্বাভাবিক গতিপথ বাধাগ্রস্ত হওয়া, নদী থেকে অপরিকল্পিত বালি উত্তোলন, ময়লা-অবর্জনা এবং জলবায়ু-পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের জাতীয় মাছের উৎপাদন গত কয়েক বছরে কমছে। ফলে কয়েক বছর যাবত নদ-নদীতে মিলছে না কাঙ্খিত ইলিশ। ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় ৬টি অভয়াশ্রম ঘিরে মোটা বাজেটের কর্মসূচি হাতে নেয় মৎস্য অধিদপ্তরের ‘ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প। কিন্তু নিষিদ্ধকালীন নদীতে মা ইলিশ শিকার বন্ধে এই কল্পের কঠোর অবস্থান সত্ত্বেও মা ইলিশ রক্ষায় নৌ-পুলিশের তরফে তেমন জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না।

ফলে অবৈধ মৎস্য শিকারীরা মা ইলিশ নিধনে উৎসাহ পেয়ে থাকে বলে অভিযোগ মৎস্যজীবীদের। ৩ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ২৫ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত ২২ দিন নদী মাছ শিকআর নিষিদ্ধ। নিষিদ্ধকালীন সময়ে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল নৌ-পুলিশকে ম্যানেজ করেই ভাড়াটে জেলেদের দিয়ে অবাধে মা ইলিশ শিকার করে থাকে। এক্ষেত্রে নৌ-পুলিশের ভূমিকার দিকেই আঙ্গুল তোলেন মৎস্যজীবীরা।

নৌ-পুলিশের কর্মকান্ডে অতিষ্ট ভোলার মেঘনা পারের জেলেরা। তাদের মতে নদীতে প্রকৃত মৎস্যজীবীদের বেলায় নৌ-পুশিশের ভূমিকা হচ্ছে আজরাইলের মতো। যাকে-তাকে ধরে নিয়ে মামলা ঠুকে দিচ্ছে নৌ-পুলিশ। একারণে প্রান্তিক মৎস্যজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। তারপরও প্রশাসনের তরফে তেমন কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় মা ইলিশ নিধন এবং নিষিদ্ধকালীন মাছ শিকার বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ইলিশের উৎপাদন কমছে।

ইলিশ মিলবে আর মাত্র ৯দিন, ৩ অক্টোবর থেকে ২২দিনের নিষেধাজ্ঞা
মা ইলিশ

এবারে মৌসুমের শেষ প্রান্তে ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। মৎস্যজীবীরা বলছেন, নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধের আগ মুহূর্তে নানা সাইজের ইলিশ ধরা পড়ছে। মৌসুমের শেষ প্রান্তে এসে মাছ ধরা পড়ায় জেলেরা খুশি। আড়ত-বাজারে মাছের আমদানির কারণে দামও কিছুটা কমেছে। তবে তা মোকাম পর্যায়ে। ঢাকায় ইলিশের বেচাকেনা চলছে চড়া দামেই।

ভোলার ইলিশা ঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাইফুল বলেন, ২২দিনের নিষিদ্ধকালীন সময়ে আমাদের জেলেরা মাছ শিকার থেকে বিরত থাকে। কিন্তু কালীগঞ্জ থেকে উজানে মাছ ধরা হয়ে থাকে। ভোলার উজানে মেঘনায় এবং হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় মাছ ধরা হয়। বর্তমানে নদীতে মোটামোটি ইলিশ ধরা পড়ছে। দাম আগের তুলনায় কিছুটা নিম্নমুখী।

ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক মামুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প মা ইলিশ ও জাটকা (ছোট ইলিশ) সংরক্ষণ এবং অভয়াশ্রম ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি ও টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতের লক্ষ্যে মৎস্য নিরবচ্ছিন্ন কাজ করে চলেছে। এই প্রকল্পের আওতায় জেলেদের খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করে চলেছে। মামুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, আগামী মার্চ-এপ্রিলে ৫টি অভয়াশ্রমে মাছ ধরা নিষিদ্ধকালীন ৬টি জেলার ২৩টি উপজেলায় ৪০ হাজার জেলেকে খাদ্য সহায়তা দেবে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প। ইলিশ আহরণে সঙ্গে ৭ লাখ জেলে সরাসরি জড়িত এবং প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে আরও ২৫ লাখ মানুষ জড়িত বলে জানায় ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প।

ইলিশ মিলবে আর মাত্র ৯দিন, ৩ অক্টোবর থেকে ২২দিনের নিষেধাজ্ঞা
ঝটকা ইলিশ  : সংগৃহিত ছবি

বরিশাল জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র বলছে, জেলার ১০টি উপজেলায় ৮৬ হাজার ১৭৭ জন জেলে রয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৪ লাখ টন ইলিশ মাছ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ রয়েছে। এই জেলার ১৪৩টি ঘাটে ইলিশ বিক্রি হয়। এরই মধ্যে নদীতে ইলিশ আসতে শুরু করেছে এবং ধরাও পড়ছে। সেই সঙ্গে কয়েক দিন ধরে ইলিশের দাম কিছুটা নিম্নমুখী।

বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম বলেন, প্রজনন মৌসুমের কারণে নদীতে ইলিশ মাছ আসতে শুরু করেছে। বর্তমানে ছোট সাইজের মাছ আসছে। সমুদ্র থেকে মাছ উঠতে শুরু করেছে। দুই-তিন দিনের মধ্যে আরো মাছ আসবে। তবে বড় সাইজের মাছ একটু পরে আসা শুরু করবে।

মা ইলিশ রক্ষায় এবার ৩ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে শিকার নিষেধাজ্ঞার সময় শুরু হবে। ২৫ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত নদীতে সব ধরনের মাছ শিকার নিষিদ্ধ থাকবে। মেঘনা নদীর জেলে হিজলার ধুলখোলা বতুয়া গ্রামের মৎস্যজীবীরা নদীতে ইলিশ মাছ পেয়ে খুশি। এখন দিনভর জাল বেয়ে ২০০০-৩০০০ টাকা মাছ পাচ্ছেন তারা।

বরিশাল পোর্ট রোডের মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েক দিন ধরে বাজারে ইলিশ মাছ ওঠছে। আগে যেখানে প্রতিদিন ৪০-৫০ মণ মাছ বিক্রি হত; সেখানে এখন ১৫০-২০০ মণ বিক্রি হয়। মঙ্গলবার পোর্ট রোড বাজারে দেড় কেজি আকারের ইলিশ মাছ প্রতি কেজি দুই হাজার ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এক কেজি ২০০ গ্রাম আকারের দুই হাজার ৩০০ টাকা কেজি, এক কেজি আকারের দুই হাজার ১৫০ টাকা, এলসি এক হাজার ৭৫০ টাকা, আধা কেজি আকারের এক হাজার ৪৫০ টাকা, ৪০০ গ্রাম আকারের এক হাজার ২০০ টাকা এবং ৩০০ গ্রাম আকারের প্রতি কেজি ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

ইলিশ মিলবে আর মাত্র ৯দিন, ৩ অক্টোবর থেকে ২২দিনের নিষেধাজ্ঞা
নদীতে জাটকা ইলিশ আহরণ : ছবি সংগ্রহ

ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প

ইলিশ উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প হলো বাংলাদেশ সরকার এবং মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক গৃহীত একটি কর্মসূচি, যা মা ইলিশ ও জাটকা (ছোট ইলিশ) সংরক্ষণ এবং অভয়াশ্রম ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি ও টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। এই প্রকল্পের আওতায় জেলেদের আর্থিক সহায়তা, বিকল্প কর্মসংস্থান, বিকল্প বৈধ জাল বিতরণ, এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মতো কাজ করা হয়।

মা ইলিশ ও জাটকা সংরক্ষণে মৎস্য সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়ন এবং অভয়াশ্রম ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মা ইলিশ ও জাটকা ধরা নিষিদ্ধ করে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি। জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা, লিফলেট, ব্যানার ইত্যাদির মাধ্যমে জেলে ও জনসাধারণ মানুষের মাঝে ইলিশ সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে জাটকা ও মা ইলিশ আহরণ ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা।

মাছ ধরা নিষিদ্ধকালীন ২৫টিরও বেশি জেলা এবং ১৩৪টি উপজেলায় জেলেদের জন্য ভিজিএফ সহায়তা হিসাবে চাল বিতরণ করা। এই প্রকল্পে বিশ্ব মৎস্যকেন্দ্র এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে জেলেদের সহযোগিতা প্রদান করে থাকে। এই সকল পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।