ঢাকা ০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
জুলাই সনদ:  বাংলাদেশের ইতিহাস, আন্দোলন-গণতন্ত্রের নতুন মাইলফলক জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু: ড. ইউনূস ত্রিপুরায় তিন বাংলাদেশিকে পিটিয়ে হত্যায় ঘটনায় ঢাকার তীব্র নিন্দা জুয়েলার্স লুটের পেছনে পেশাদার চক্র, গোয়েন্দা জালে ৪ ভিসতা-ডিআরইউ ক্রীড়া উৎসব: নারী লুডুতে নাহিদ শিউলী চ্যাম্পিয়ন লালনের জীবনদর্শন ও সঙ্গীত ভারত-বাংলাদেশের হাজার বছরের সাংস্কৃতিক বন্ধন: প্রণয় ভার্মা তিন শর্ত না মানলে জুলাই সনদে সই নয়: এনসিপি ভারত-সমর্থিত ৩৪ সন্ত্রাসীকে হত্যা করলো পাকিস্তান চট্টগ্রাম ইপিজেডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, নিয়ন্ত্রণে ১৭ ইউনিট মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৫: আইনের কঠোর প্রয়োগে ব্যাপক সাফল্য

Sonali Kazi : আলোর মশাল হাতে দাঁড়িয়ে ‘সোনালী কাজী’

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:৫৫:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ৬৭৫ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

অনিরুদ্ধ

‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি: বিবিসি বাংলার জরিপে তৃতীয় স্থানে কাজী নজরুল ইসলাম-অসাম্প্রদায়িক মানবতার কবি’

কবির কর্মকাণ্ড নিয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করে চলেছেন সোনালী কাজী 

 

গাহি সাম্যের গান
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান্ ।
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,
সব দেশে সব কালে ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।

 

বিশ্ব মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তার কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার, সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ—

বল        বীর –
               বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি’ আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!
                 বল        বীর –
বল   মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি’
       চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি’
       ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া
       খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া,
       উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর!
 মম   ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!

মানুষকে বাচার পথ দেখিয়েছেন কবি। অসংখ্য তরুণ-যুবক কবির জীবন ও লেখা থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে নিজের ভাগ্যপরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে। শরতের ধবধবে মেঘমালার সঙ্গে যেমন কথা বলেছেন, তেমনি ভুখালাঙ্গা মানুষের পক্ষে দাড়িয়েছেন কবি। শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেছে কবির কলম। তিনি বিদ্রোহী। একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার। অগ্নিবীণা হাতে তার প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তার প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে বিদ্রোহী কবি। নজরুল ছিলেন, আপোষহীন কবি।

খানবাহাদুর, জমিদার, বারো ভূইয়া, রায়বাহাদুরের দলে না গিয়ে শোষিত মানুষকে জাগ্রত করতে গান-কবিতা লিখেছেন। মানুষে মানুষে বন্ধন দৃঢ় করতে নাটক, নিবন্ধন, রিপোর্ট লিখেছেন। দখলদার সাম্রজ্যবাদ শক্তির বিরুদ্ধে কলম ধরে কারাগারে গিয়েছেন। দিন যতই গড়াবে, বিদ্রোহী কবির প্রতি ততই মানুষের আগ্রহ আরও জাগ্রত হবে। কবি বলেন—

 

গাহি সাম্যের গান-

যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান

যেখানে মিশছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুস্‌লিম-ক্রীশ্চান।

গাহি সাম্যের গান!

কে তুমি?- পার্সী? জৈন? ইহুদী? সাঁওতাল, ভীল, গারো?

কন্‌ফুসিয়াস্‌? চার্বআখ চেলা? ব’লে যাও, বলো আরো!

বন্ধু, যা-খুশি হও,

পেটে পিঠে কাঁধে মগজে যা-খুশি পুঁথি ও কেতাব বও,

কোরান-পুরাণ-বেদ-বেদান্ত-বাইবেল-ত্রিপিটক-

জেন্দাবেস্তা-গ্রন্থসাহেব প’ড়ে যাও, য্ত সখ-

কিন্তু, কেন এ পন্ডশ্রম, মগজে হানিছ শূল?

দোকানে কেন এ দর কষাকষি? -পথে ফুটে তাজা ফুল!

তোমাতে রয়েছে সকল কেতাব সকল কালের জ্ঞান,

সকল শাস্র খুঁজে পাবে সখা, খুলে দেখ নিজ প্রাণ!

তোমাতে রয়েছে সকল ধর্ম, সকল যুগাবতার,

তোমার হৃষয় বিশ্ব-দেউল সকল দেবতার।

কেন খুঁজে ফের’ দেবতা ঠাকুর মৃত পুঁথি -কঙ্কালে?

হাসিছেন তিনি অমৃত-হিয়ার নিভৃত অন্তরালে!

বন্ধু, বলিনি ঝুট,

এইখানে এসে লুটাইয়া পড়ে সকল রাজমুকুট।

এই হৃদ্য়ই সে নীলাচল, কাশী, মথুরা, বৃন্দাবন,

বুদ্ধ-গয়া এ, জেরুজালেম্‌ এ, মদিনা, কাবা-ভবন,

মস্‌জিদ এই, মন্দির এই, গির্জা এই হৃদয়,

এইখানে ব’সে ঈসা মুসা পেল সত্যের পরিচয়।

এই রণ-ভূমে বাঁশীর কিশোর গাহিলেন মহা-গীতা,

এই মাঠে হ’ল মেষের রাখাল নবীরা খোদার মিতা।

এই হৃদয়ের ধ্যান-গুহা-মাঝে বসিয়া শাক্যমুনি

ত্যজিল রাজ্য মানবের মহা-বেদনার ডাক শুনি’।

এই কন্দরে আরব-দুলাল শুনিতেন আহবান,

এইখানে বসি’ গাহিলেন তিনি কোরানের সাম-গান!

মিথ্যা শুনিনি ভাই,

এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির-কাবা নাই।

পুস্পাঞ্জলি লায়ন্স ক্লাবের সদস্য ও সাংস্কৃতিক চেয়ারপারসন, রাজ্যর মানবাধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি, লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল সদস্য, সাংস্কৃতি সম্পাদক নজরুল একাডেমি এবং দোলনচাপা নজরুল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন সোনালী কাজী কবির কর্মকাণ্ড নিয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করে চলেছেন। এরই মধ্যে কবিকে ভালোবেসে যারা নিজেরদের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন, এমন ‘শত কবিতা’র একটি সংকলন প্রকাশ করেছেন।             চলবে 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

Sonali Kazi : আলোর মশাল হাতে দাঁড়িয়ে ‘সোনালী কাজী’

আপডেট সময় : ০৩:৫৫:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২

অনিরুদ্ধ

‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি: বিবিসি বাংলার জরিপে তৃতীয় স্থানে কাজী নজরুল ইসলাম-অসাম্প্রদায়িক মানবতার কবি’

কবির কর্মকাণ্ড নিয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করে চলেছেন সোনালী কাজী 

 

গাহি সাম্যের গান
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান্ ।
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,
সব দেশে সব কালে ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।

 

বিশ্ব মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তার কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার, সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ—

বল        বীর –
               বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি’ আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!
                 বল        বীর –
বল   মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি’
       চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি’
       ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া
       খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া,
       উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর!
 মম   ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!

মানুষকে বাচার পথ দেখিয়েছেন কবি। অসংখ্য তরুণ-যুবক কবির জীবন ও লেখা থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে নিজের ভাগ্যপরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে। শরতের ধবধবে মেঘমালার সঙ্গে যেমন কথা বলেছেন, তেমনি ভুখালাঙ্গা মানুষের পক্ষে দাড়িয়েছেন কবি। শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেছে কবির কলম। তিনি বিদ্রোহী। একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার। অগ্নিবীণা হাতে তার প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তার প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে বিদ্রোহী কবি। নজরুল ছিলেন, আপোষহীন কবি।

খানবাহাদুর, জমিদার, বারো ভূইয়া, রায়বাহাদুরের দলে না গিয়ে শোষিত মানুষকে জাগ্রত করতে গান-কবিতা লিখেছেন। মানুষে মানুষে বন্ধন দৃঢ় করতে নাটক, নিবন্ধন, রিপোর্ট লিখেছেন। দখলদার সাম্রজ্যবাদ শক্তির বিরুদ্ধে কলম ধরে কারাগারে গিয়েছেন। দিন যতই গড়াবে, বিদ্রোহী কবির প্রতি ততই মানুষের আগ্রহ আরও জাগ্রত হবে। কবি বলেন—

 

গাহি সাম্যের গান-

যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান

যেখানে মিশছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুস্‌লিম-ক্রীশ্চান।

গাহি সাম্যের গান!

কে তুমি?- পার্সী? জৈন? ইহুদী? সাঁওতাল, ভীল, গারো?

কন্‌ফুসিয়াস্‌? চার্বআখ চেলা? ব’লে যাও, বলো আরো!

বন্ধু, যা-খুশি হও,

পেটে পিঠে কাঁধে মগজে যা-খুশি পুঁথি ও কেতাব বও,

কোরান-পুরাণ-বেদ-বেদান্ত-বাইবেল-ত্রিপিটক-

জেন্দাবেস্তা-গ্রন্থসাহেব প’ড়ে যাও, য্ত সখ-

কিন্তু, কেন এ পন্ডশ্রম, মগজে হানিছ শূল?

দোকানে কেন এ দর কষাকষি? -পথে ফুটে তাজা ফুল!

তোমাতে রয়েছে সকল কেতাব সকল কালের জ্ঞান,

সকল শাস্র খুঁজে পাবে সখা, খুলে দেখ নিজ প্রাণ!

তোমাতে রয়েছে সকল ধর্ম, সকল যুগাবতার,

তোমার হৃষয় বিশ্ব-দেউল সকল দেবতার।

কেন খুঁজে ফের’ দেবতা ঠাকুর মৃত পুঁথি -কঙ্কালে?

হাসিছেন তিনি অমৃত-হিয়ার নিভৃত অন্তরালে!

বন্ধু, বলিনি ঝুট,

এইখানে এসে লুটাইয়া পড়ে সকল রাজমুকুট।

এই হৃদ্য়ই সে নীলাচল, কাশী, মথুরা, বৃন্দাবন,

বুদ্ধ-গয়া এ, জেরুজালেম্‌ এ, মদিনা, কাবা-ভবন,

মস্‌জিদ এই, মন্দির এই, গির্জা এই হৃদয়,

এইখানে ব’সে ঈসা মুসা পেল সত্যের পরিচয়।

এই রণ-ভূমে বাঁশীর কিশোর গাহিলেন মহা-গীতা,

এই মাঠে হ’ল মেষের রাখাল নবীরা খোদার মিতা।

এই হৃদয়ের ধ্যান-গুহা-মাঝে বসিয়া শাক্যমুনি

ত্যজিল রাজ্য মানবের মহা-বেদনার ডাক শুনি’।

এই কন্দরে আরব-দুলাল শুনিতেন আহবান,

এইখানে বসি’ গাহিলেন তিনি কোরানের সাম-গান!

মিথ্যা শুনিনি ভাই,

এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির-কাবা নাই।

পুস্পাঞ্জলি লায়ন্স ক্লাবের সদস্য ও সাংস্কৃতিক চেয়ারপারসন, রাজ্যর মানবাধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি, লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল সদস্য, সাংস্কৃতি সম্পাদক নজরুল একাডেমি এবং দোলনচাপা নজরুল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন সোনালী কাজী কবির কর্মকাণ্ড নিয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করে চলেছেন। এরই মধ্যে কবিকে ভালোবেসে যারা নিজেরদের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন, এমন ‘শত কবিতা’র একটি সংকলন প্রকাশ করেছেন।             চলবে