১৭ কোটি মানুষের খাদ্যের যোগান দিচ্ছি, আশ্রয়ে রয়েছে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা

- আপডেট সময় : ০৪:১৫:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫ ৫৯ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ছোট ভূখণ্ডের দেশ হয়েও বাংলাদেশ ১৭ কোটি মানুষের খাদ্যের যোগান দিচ্ছে এবং পাশাপাশি আশ্রয় দিয়েছে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে। তিনি বলেন, ক্ষুধা দূরীকরণে বিশ্ব আজও ব্যর্থ, অথচ অস্ত্র কেনায় ব্যয় হচ্ছে বিপুল অর্থ।
গত ১৩ অক্টোবর ইতালির রাজধানী রোমে অনুষ্ঠিত বিশ্ব খাদ্য ফোরামের সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন ড. ইউনূস। সেখানে তিনি বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদনে আত্মনির্ভরতা ও কৃষি অগ্রগতির উদাহরণ তুলে ধরেন।
ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ আয়তনে ইতালির অর্ধেক। কিন্তু আমরা ১৭ কোটি মানুষের খাদ্যের যোগান দিচ্ছি, পাশাপাশি আশ্রয় দিয়েছি ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে, যারা মিয়ানমারে সহিংসতার মুখে পালিয়ে এসেছে।
ড. ইউনূস জানান, বাংলাদেশ এখন ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধান, শাকসবজি ও মিঠাপানির মাছ উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। আমাদের কৃষকরা ফসল চাষের ঘনত্ব ২১৪ শতাংশে উন্নীত করেছেন, এবং ১৩৩টি জলবায়ু-সহনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে, বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা ও দারিদ্র্যকে নৈতিক ব্যর্থতা হিসেবে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, সম্পদের অভাবে নয়, বরং আমাদের তৈরি অর্থনৈতিক কাঠামোর ত্রুটির কারণেই ক্ষুধা সৃষ্টি হয়েছে। ২০২৪ সালে পৃথিবীতে ৬৭৩ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধার্ত ছিল, অথচ আমরা পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন করি। এটি উৎপাদনের ব্যর্থতা নয়, এটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ব্যর্থতা—এটি এক নৈতিক ব্যর্থতা।
তিনি আরও বলেন, আমরা যখন ক্ষুধা দূর করতে কয়েক বিলিয়ন ডলারও জোগাড় করতে পারিনি, তখনই বিশ্ব অস্ত্রের পেছনে ২ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। এটি মানবতার পরাজয়।
ড. ইউনূস বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান, অস্ত্র প্রতিযোগিতা নয়—বরং খাদ্য, শিক্ষা ও টেকসই উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তার ভাষায়, ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়তে হলে আমাদের উন্নয়নের ধারণাকে বদলাতে হবে। উৎপাদন নয়, ন্যায্য বণ্টনই আজকের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
বিশ্ব খাদ্য ফোরামের এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল, সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা ও টেকসই কৃষি উন্নয়ন। বাংলাদেশের কৃষি খাতে উদ্ভাবন ও জলবায়ু সহনশীলতার উদাহরণ তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে—দারিদ্র্য ও ক্ষুধা মোকাবিলায় সৃজনশীলতা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টাই সবচেয়ে বড় শক্তি।