ব্যবহৃত সকল ছবি সুবল কুমার দে’র সৌজন্যে
‘মানবতার কণ্ঠ ‘সুবল কুমার দে’ একটি স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ। জীবনের চড়াউ-উৎড়াই পেরিয়ে যেকোন বাধাকে অতিক্রম করা এক হার না মানা ভারতের প্রতিথযষা সম্পাদক তথা প্রবীণ সংবাদমাধ্যম ব্যক্তিত্ব সুবল বাবুর জীবনের সংগ্রাম এবং সাহসী সাংবাদিকতার নানা দিক তুলে এনেছেন উদয়ন চৌধুরী। যা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছে ‘ভয়েস একাত্তর’। শিঘ্রই এটি বই আকারে প্রকাশের প্রত্যাশা’
উদয়ন চৌধুরী
হিমালয়ের মতো মাতা উচু করা দুই দিক পালের সামনে বসে আছেন তিনি। মুখে স্মিত হাসি। বামপাশে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার পাশেই সাম্যদৃষ্টি মেলে স্বামী বিবেকানন্দ। দুজনেই বাঙালি তথা বাংলার সংস্কৃতির আবদানে আদর্শ। স্বামী বিবেকানন্দ এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমসাময়িক দুই কীর্তিমান পুরুষ। তাদের জন্ম কলকাতায় মাত্র বছর দেড়েকের ব্যবধানে। রবীন্দ্রনাথের জন্ম ১৮৬১ সালের ৭ মে জোড়াসাঁকোয় আর বিবেকানন্দের (নরেন্দ্রনাথ দত্ত) জন্ম সিমলায় ১৮৬৩ সালের ১২ জানুয়ারি। দু’জনের বেড়ে ওঠা কাছাকাছি পাড়ায়। দু’জনের জগৎ সম্পূর্ণ ভিন্ন হলেও মানুষকে হাঁটতে শিখিয়েছেন জাতি-ধর্ম বিভেদ ভুলে সত্যসুন্দর মঙ্গলালোকের পথে। যা আমাদের চলার পথে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে।
ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে
কক্ষে প্রবেশ করতেই একমুখ হাসি ছড়িয়ে বললেন এসো, কেমন আছো? তারপর চা এবং খাবার জল দিতে বললেন। চা খেতে খেতেই আলোচনা এগোয়। সময়টা তখন ১৯৭০। কলেজের শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন। পরবর্তীতে সিপিআইএমএল-এর ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত। চারুমজুমদারের নেতৃত্বে পিকিং পন্থি নিষিদ্দ পার্টি সিপিআইএমএল। পার্টির করার দায়ে সেই ৭০-ই তার মাথার দাম ঘোষিত হয় ১০ হাজার টাকা।
১৯৭১ সাল: পুর্ববঙ্গের আকাশে-বাতাসে বারুদের গন্ধ। সাধারণ মানুষের রক্তে ভিজে গিয়েছে শষ্যের জমিন। কোন আড়াল-আবডালে থেকে ভেসে আসছে নির্যাতিতা কোন মা-বোনের গোঙানির শব্দ। বর্বর পাকিস্তানি সৈনিকরূপী হায়েনার দল তাদের জীবনের পবিত্র সম্পদ কেড়ে নিয়েছে। বাক্যরুদ্ধ এসব মা-বোন। কি অন্যায় ছিলো বঙ্গের এই সাধারণ মানুষগুলোর? ভাবতে পারছে না সুবল বাবু। তার দু’চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।
মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বোলন
এমন সময় পার্টির তরফে এলো সেই বিস্ফোরক ফরমান। লিখিত নির্দেনায় বলা হলো মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে। বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন সুবল বাবু। আমার ভাইদের পাশে না দাঁড়িয়ে আর যাই হোক পিকিং-এর নির্দেশনা মানবে না সুবল দে! তাতে যা হবার তাই হবে। এমন বিশ্বাস ঘাতকতার জন্য সুবল কুমার দে’র জন্ম হয়নি। ফুঁসে ওঠেন সুবল বাবু।
আনমনা হয়ে ওঠেন সুবল দে। চোখে মুখে তার জ্ঞানলব্ধ জ্যোতি বিচ্ছুরিত হচ্ছে। কি যেন ভাবতে গিয়ে হারিয়ে যান স্মৃতির গলিপথে। এসময় তার মনে যে একটা ঝড়ে বয়ে যাচ্ছে, তার কিছুটা অনুধাবন করা গেল। টেবিলের দিকে চোখ রেখে সুবল দে ফিরে আসেন এবং বলতে শুরু করলেন, জানো আমি তখন টগবগে যুবক। লেখাপড়া থেকে শুরু করে অগ্রসর চিন্তাভাবনা কাজ করছে আমার মধ্যে। একটি জাতির মুক্তির স্বপ্ন আমিও দেখেছি। নিষিদ্ধ পার্টি করি বিধায় টানা প্রায় দুই বছর বাড়িতে যেতে পারিনি। যখন এমন একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সময় অতিক্রম করছি, ঠিক তখনই পূর্ববঙ্গের মানুষের মুক্তির ডাক দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৭১ : সুবল দে এবারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তর নিলেন। পিকিং পন্থি দল ত্যাগ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে শক্ত অবস্থান নেবেন। একই বাতাস, একই আকাশের ছাদের তলায় তার শিকড়। তাকে কঠোর হতেই হবে। মৃত্যু ভয়কে পদদলিত করে সিদ্ধান্তে অটল থাকলেন সুবল বাবু।
আগরতলার কালিবাড়িতে পার্টির বৈঠক ডাকা হলো। সুবল দে’ও যথাসময়ে হাজির। তিনি পার্টির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক। বিশাল দায়িত্ব তার কাঁধে। তা জেনেও সেদিন মনে মনে যে সংকল্প নিয়ে পার্টি বৈঠকে হাজির হলেন, তা দলের কারো জানা ছিলো না। পার্টির বিরুদ্ধে সুবল দে এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, এমন ভাবনা কারো মধ্যে কাজ করেনি। সভায় উপস্থিত অসিম চ্যাটার্জি ও সুবল বলসহ অন্য যারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তাদের মাথার ওপর আচমকা ছাদ ভেঙ্গে পড়ার মতোই ঘটনা। সুবল দে ঘোষণা দিলেন, তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেবেন। পিতা ছিলেন অনুশীলন সমিতির অন্যতম সদস্য এবং ভারত উপমহাদেশের অন্যতম সস্ত্রস বিপ্লবী মাস্টার দা সূর্যসেনের অনুগামী। ছেলে রেড বুক-পিকিং রিভিউ পড়া পার্টির রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের এমন সিদ্ধান্তে সবাই স্তম্বিত। একি বলছেন সুবল বাবু? আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকী? পার্টি বিরুদ্ধে এমন সিদ্ধান্ত আপনি নিতে পারেন না। অনেকটা শাসানোর সুরেই উচ্চারণ করলেন অন্যরা।
সুবল দে তার সিদ্ধান্তে অটল। সাফ জানিয়ে দিলেন, প্রয়োজনে তিনি পার্টি ত্যাগ করবেন-কিন্তু তার সিদ্ধান্ত থেকে একচুলও নড়বেন না। তাকে অন্যরা বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। অগ্যতা একমাত্র সুবল দে ছাড়া অন্য সবাই চারুমজুমদারের নেতৃত্বে রয়েছে গেলেন। আর বিচ্ছিন্নতাবাদি দল ত্যাগ করে সুবল দে এসে দাঁড়ালেন মুক্তিকামী মানুষের কাতারে।
সকালের বৈঠক শেষ করে দুপুর নাগাদ বাড়িতে পা রাখেন। দুই দুইটি বছর এই বাড়িতে তিনি ঘুমাতে পারেননি। নিষিদ্ধ পার্টি করার অপরাধে মাথার ওপরে ফরমান ঝুলছিলো। সে সময়ে মাথার দাম হাকা হয়েছিলো ১০ হাজার টাকা। এমন কঠিন সময়ে জীবনে আরও একটি সিদ্ধান্ত নিলেন সুবল বাবু। সময় তখন ভোর তিনটে কি সাড়ে তিনটে। বাড়িতে পুলিশ হাজির! বাড়ি তল্লাশি করে তেমন কিছুই মেলেনি। যা পেলো তার মধ্যে রেডবুক আর পিকিং রিভিউ। এই দুর্বল আলামতসহ সুবল বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুই বছর মা-বাবার স্নেহ বঞ্চিত মানুষটি কোন প্রতিবাদ না করেই পুলিশের লরিতে চেপে বসেন। কারণ তিনি জানতেন, তাকে কারাবন্দি রাখার মতো রসদ প্রশাসনের কাছে নেই। তাকে দু’দিন আগে পরে মুক্তি দিতেই হবে।
ত্রিপুরার সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রবীন সম্পাদক সুবল বাবুর কাছ থেকে আর্শিবাদ নিচ্ছেন রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ‘বিপ্লালব কুমার দেব’
আগরতলার আকাশে নির্ভেজাল রোদ। উর্ধমুখি তাপমাত্রা। রাস্তা প্রায় ফাঁকা। কভিড নিয়ন্ত্রণে আসার পর মানুষের মধ্যে ব্যস্ততা বেড়েছে। ভারতের প্রান্তিক রাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার প্রাণকেন্দ্রে অন্যতম ‘দৈনিক স্যান্দন পত্রিকা’ কার্যালয়ে বসে এক প্রবীণ বুদ্ধিজীবীর স্মৃতিচারণ শুনছিলাম। তিনি রাজ্যের প্রবীণতম সম্পাদক ও সংবাদমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। আগরতলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি। স্যান্দন পত্রিকা ৫২’তে পা রেখেছে। যে ভবনটিতে স্যান্দন পথ চলা শুরু করেছিলো, বাহান্ন বছর পর আজও সেই জায়গাটিতে মাথা উঁচু করে আলো ছড়িয়ে চলেছে স্যান্দন। শুরু থেকে গণমানুষের কণ্ঠস্বর ছিলো স্যন্দন। আজও একই জায়গায় দৃঢ় অবস্থান।
দিল্লীর সর্বজন শ্রদ্ধেয় নিখিল চক্তবর্তীর সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক ছিলো সুবল দে’র। সর্বভারতী সম্পাদক সম্মেলনে তিনিই তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধির সঙ্গে সুবল বাবুর পরিচয় করিয়ে দেন। সুবল দে বলেন, তাতে করে ত্রিপুরা লাভবান হয়েছে। বিশেষ করে উপজাতি সম্প্রদায়। ওরা সংবিধানের ৬ষ্ঠ তপসিল পেয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে। তাছাড়া ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যিনিই আগরতলা সফর করেছেন, তাদের কেউ বাদ নেই যিনি সুবল বাবুর বাড়ি কিংবা স্যন্দন অফিসে পা রাখেননি।
আচ্ছা কারামুক্তির বিষয়ে জানা হলো না। একটু দম নিয়ে সুবল বাবু বলেন, না আমায় গ্রেপ্তারের পেছনে শক্ত কোন আলামত ছিলো না। তাছাড়া আমি তো কোন অন্যায় করিনি। আমার শিকড় যেখানে প্রোথিত সেই দেশের মানুষ বর্বর পাকিস্তানিদের হাতে বেঘোরে প্রাণ দিচ্ছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী জ্বালাও পোড়াও, হত্যা, ধর্ষন, লুটপাটে মেতে ওঠেছে। এমন বর্বর কর্মকান্ডকে আমি সমর্থন করতে পারিনি। যে কারণে পার্টি ত্যাগ করে মুক্তিকামী গণমানুষের কাতারে দাঁড়িয়েছি। এটাতো কোন ভুল সিদ্ধান্ত, বল? চারমাস পর আমি মুক্ত হই। তারপর পুরোপুরি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ শুরু করি।
৭১ সালে তো কাতারে কাতারে পুর্ববঙ্গের মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে পাঁজরঘেষা এই রাজ্যটিতে আশ্রয় নিয়েছে। এখানে শরণার্থী শিবির ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ছিলো। এখান থেকেই বিভিন্ন স্থানের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হতো। নির্ধারিত সময় প্রশিক্ষণ শেষে অস্ত্র তুলে দেওয়া হতো। রাজ্যের মেলাঘরে ছিলো মুক্তিযোদ্ধা হেডকোয়ার্টার।
আচ্ছা তখন রাজ্যের লোকসংখ্যা কত ছিলো? এই ধরো প্রায় ১৬ লাখের মতো জানালেন সুবল বাবু। আরও বলেন, তখন বর্তমান বাংলাদেশ থেকেও কিন্তু একই সংখ্যক অর্থাৎ প্রাং ১৫ থেকে ১৬ লাখ মানুষ এসে আশ্রয় নিয়েছিলো। সে সময় তার বাড়িতেই বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরা আসা সকল কমিউনিষ্ট নেতাদের থাকার ব্যবস্থা করেন।
শীততাপ কক্ষে বসে বাইরের তাপ তেমন একটা আঁচ করা না গেলোও, আকাশে সূর্য যে আগুন ছড়াচ্ছে তা অনুমান করা যাচ্ছে। দীর্ঘ দিন নয়, দীর্ঘ বছর ধরে সংবাদমাধ্যম নিয়ে কাজ করছেন। জনসেবার এই কাজটি করতে গিয়ে কোন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে? এমন প্রশ্নে ম্লান হাসলেন সুবল বাবু। বললেন দেখ, ‘ভারতের সংবিধানের ১৯ নম্বর ধারাবলে মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। এই ক্ষমতা বলেই ভারতীয় সংবাদমাধ্যম চলছে। কোন ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যম স্বাধীনতার সীমা লংঘন হলে ৫০০/৫০১ ধারায় মামলার বিধান রয়েছে। সুবল বাবু বলেন, সংবাদমাধ্যম যে দেশে যতটা স্বাধীন ও দায়িত্বশীল, সে দেশ ততটা উন্নয়ত এবং গণতন্ত্রও শক্তিশালী। তবে দুঃখের বিষয় কি জানো, সিপিএম আমলে আমার বিরুদ্ধে ৪২টি মামলা হয়েছে। দেশদ্রোহিতার অভিযোগও এনেও আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, মন্ত্রীদের তরফে কোটি কোটি টাকার মানহানির মামলা করা হয়েছিলো আমার বিরুদ্ধে। পরিতাপের বিষয়কি জানো, আমার হয়রানি হয়েছে, কিন্তু আদালতে একটি মামলায়ও আমি হারিনি।
সুবল কুমার দে’র স্ত্রী পুর কাউন্সিলর শিক্ষাকর্মী শ্রীমতি কল্যাণী দে ছিলেন সুবল বাবুর শক্তি জোগানো ফুসফুস। স্ত্রীর নামে একটি ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছেন। এখান থেকে সামাজিক কর্মকান্ড পরিচালনা করা হয়। ফাউণ্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় একজন ডাক্তারী অপরজন আইন বিদ্যায় লেখপড়া করছে। স্যন্দনের কার্যালয়ে প্রতিদিন সময় করে উপস্থিত হন এবং কাজ করেন। স্যন্দন রয়েছে বিশাল কর্মীবাহিনী। সবার খোঁজখবর রাখেন সুবল দে।
এখানেই শেষ নয়, তিনি এই বয়সেও হাসি মুখে এতোটুকু বিরক্ত না হয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন সংগঠনের দায়িত্ব সামলান। নিয়ম করে চারটি চেম্বর করে থাকেন। ত্রিপুরা মিডিয়া জগতের অভিভাবক কর্মবীর মানুষটি একাধারে আগরতলা প্রেসক্লাবের সভাপতি, ত্রিপুরা নিউজপেপার সোসাইটির সভাপতি, অ্যাসেম্বলি অব জার্নালিস্ট-এর চেয়ারম্যান, ইউনাইটেড ফ্রেণ্ডস ক্লাবের সভাপতি এবং ভারত সরকারের ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের সদস্য। মিডিয়া জগতের অভিভাবক প্রতিদিন চারটি চেম্বার করেন।
সাহসী কলম যোদ্ধা সুবলবাবু
তাঁর সাহসী সাংবাদিকতার কংগ্রেস ও সিপিএম মিলিয়ে ৬জন মন্ত্রী বরখাস্ত হয়েছেন। চাকরী খোয়াতে হয়েছে দু’জন মুখ্যসচিবের। বহু শীর্ষ আমলার পদচ্যুতি ঘটেছে। বহু ধোঁকাবাজ বর্হিরাজ্যের ব্যবসায়ী ত্রিপুরা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। এ ব্যাপারে দু’টি হাসপাতালের কথা উল্লেখ করেন সুবল বাবু। তাঁর দাবি নিজের সৎ ও সাহসী সাংবাদিকতার শুধু ত্রিপুরা নয়, সারা ভারতে চিটফান্ড ব্যবসা বন্ধ হয়েছে। এই লড়াইয়ের জন্য ন্যাশনাল মিডিয়া ফাউণ্ডেশন সুবল বাবুকে ‘জাতীয় পুরষ্কারে’ ভূষিত করে। ২০০৯ সালে উত্তরপূর্ব রাজ্যের শ্রেষ্ঠ সম্পাদক জাতীয় সম্মানে সম্মানিত করা হয় তাঁকে। ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী পুরষ্কারে সম্মানিত করতে চেয়েছিলো। কিন্তু এটি সরকারী পুরষ্কার বলে তা প্রত্যাখান করেন নির্মোহ সুবল বাবু। ভারতের প্রেস কাউন্সি, ইন্ডিয়া নিউজ পেপার সোসাইটি, এডিটর গিল্ড অব ইন্ডিয়া সাহসী সাংবাদিকতায় তাকে পুরষ্কৃত করেছে। সাংবাদিকতা বিষয়ে ভারতের এমন কোন পুরষ্কার নেই, যা সুবল বাবুর ঝুড়িতে আসেনি। ন্যাশনাল মিডিয়া ফাউন্ডেশনের সহসভাপতি, স্যন্দন টিভির কর্ণধার সুবল বাবু এই বয়সেও দৈনিক ১৮ ঘন্টা কাজ করে চলেছেন।
সময় গড়িয়ে যাচ্ছে। ভেতরে ভেতরে তাড়া অনুভব করলাম। তাছাড়া আজকের মতো ওঠতে হবে। এই লব্ধজ্ঞান সম্পন্ন মানুষটির সঙ্গে একদিন কিছু সময় কথা বলে মন ভরবে না। সময়ে করে ফের আসাব বলে ওঠে গিয়ে প্রমাণ করলাম। পিতৃস্নেহে দু’বাহু বাড়িয়ে বুকে টেনে নিলেন। বললেন, এখানে তোমার একটি বাড়ি রয়েছে, এটা মনে করে যে কোন চলে আসবে। মনে মনে মানবতা কণ্ঠ সুবল কুমার দে’কে স্যালুট জানিয়ে বিদায় নিলাম।