ঢাকা ০৫:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

Dr. Birajlakshmi Ghosh : প্রকৃতি ও পরিবেশ শিশুর বিকাশকে প্রভাবিত করে!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:২১:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর ২০২২ ২৪৩ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

‘জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জলবায়ু পরিবর্তন রোধের লড়াইয়ে আমরা হেরে যাচ্ছি বলে সতর্ক করে দিয়েছেন। গুতেরেস বলছেন, বিশ্ব দ্রুতগতিতে নরকের মহাসড়কের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে’

 

নিজস্ব প্রতিনিধি

চতুর্থ শ্রেণীর পড়ুয়া জেবা বলছিল, পরিবেশ নিয়ে এক প্রতিবেদন করো। আমাদের স্কুলে যেতে প্রচণ্ড রকমের অসুবিধা হচ্ছে। শব্দ ও বায়ুদূষণে অস্থির। মানুষগুলো কোন না বুঝেই যানবাহনের হর্ণ বাজাতে থাকে। আমরা আর নিতে পারছি না!

‘প্রকৃতি শিশুর বিকাশকে কিভাবে প্রভাবিত করে’ শিক্ষাবিদ, গবেষক ও পরিবেশ সংগঠক ড. বিরাজলক্ষী ঘোষের লেখাটি হাতে পাবার পরই শিশু পড়ুয়া কথাটি মনে পড়ে গেল। শ’ শ’ জেবার কথা একটাই। কে দেখবে আগামীর ভবিষ্যত? বলতে পারব না।

স্কপ-২৭ সম্মেলনে ‘জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস

জেবার কথা এবং দিল্লীতে স্কুল বন্ধ ঘোষণা দুটোই পরিবেশ সংক্রান্ত। এই দরুণ দিল্লীর বিষয়টিতো খুবই ভয়ানক। বায়ুদূষণের মাত্রা কোন পর্যায়ে পৌঁছালে রাজধানী দিল্লীর সকল প্রাইমারী স্কুল বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয় সরকার?

মিসরের শারম-আল-শেখ এ কপ-২৭ জলবায়ু সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে বিশ্ব নেতা ও কূটনীতিকরা বৈশ্বিক উষ্ণতার বিরুদ্ধে লড়াইকে মানুষের বেঁচে থাকার যুদ্ধ বলে তুলে ধরেছেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জলবায়ু পরিবর্তন রোধের লড়াইয়ে আমরা হেরে যাচ্ছি বলে সতর্ক করে দিয়েছেন। গুতেরেস বলছেন, বিশ্ব দ্রুতগতিতে নরকের মহাসড়কের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

অস্বাভাবিক বায়ুদূষণের ফলে ভারতের রাজধানী দিল্লীতে প্রাথমিক স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ : ছবি সংগ্রহ

ঠিক এমন এক সময়ে প্রশ্ন তোলেন ভারতীয় শিক্ষাবিদ। বলেন, আমরা যা তাই কি প্রকৃতির (জীববিজ্ঞান এবং জেনেটিক্স) কারণে, নাকি লালন-পালনের কারণে (আমাদের পরিবেশ এবং সংস্কৃতি)? এই দীর্ঘস্থায়ী প্রশ্নটি মনোবিজ্ঞানে প্রকৃতি বনাম লালন বিতর্ক হিসাবে পরিচিত।

ড. বিরাজলক্ষীর ভাবনায়, মানুষ্য সৃষ্টি পরিবেশ দূষ ভয়ানকরূপ নিয়েছে। অথচ এখনও আমাদের বোধোদয় হচ্ছে না। নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে, খাল-বিল -ডোবানালায় আকাশমুখো ইটের দালান! একবার ভাবুন এই নগরায়নের প্রতিযোগিতায় পরিবেশের অবস্থা একেবারেই তলানীতে চলে এসেছে। যে কোন বালির পাহাড়ের মতো ভেঙ্গে পড়বে। তখন আর পালানোর পথ পাব না আমরা।

এই শিশুরা উপযুক্ত পরিবেশ চায় ‘শৈশবের প্রতিবাদ’

কোন কোন শিশু কখনও কখনও তাদের পিতামাতার মতো আচরণ করে থাকে। একদমই তাই। আর না করার মতো কিছু নেই। শিশুটি যে ঘরে যে পরিবেশে বড় হয়ে ওঠছে, তার মধ্যে পারিবারিকভাবেই পিতামাতার আচার-আচরণ প্রভাব ফেলছে। এটিকে আমরা জেনেটিক্স বা শৈশবকালীন পরিবেশের কারণে বা শিশু তাদের পিতামাতার কাছ থেকে কী শিখেছে তার কারণে হতে পারে।

আমরাদের বুঝতে হবে পরিবেশ এমন এক বিষযটি যে শৈশব থেকেই জীবনের সঙ্গে জুড়ে যায়। শিশুরা অনুকরণ প্রিয় হয় বলে, সমাজে যা দেখছে তাই শিখছে। শৈশব থেকে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ পেলে, শিশুটিও তাই শিখে নেয় এবং সেভাবেই সে বড় হতে থাকে। কখনও কেউ যদি স্কুলের ক্লাশ রুম বা বারান্দায় কোন কাগজের টুকরো ফেলে তা শিশু প্রত্যক্ষ করে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। কারণ সে শৈশব থেকে এমন কাজের সঙ্গে পরিচিত নয়।

‘শৈশবের প্রতিবাদ’ পরিবেশ রক্ষায় উদ্যোগী শিশুরা

এসব বিষয়গুলোর শিক্ষা পরিবার থেকেই অর্জন করে। ড. বিরাজ বলছিলেন, আমরা সকলেই আমাদের পিতামাতার কাছ থেকে উত্তরাধি কারসূত্রে প্রাপ্ত নির্দিষ্ট জেনেটিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করি, যেমন চোখের রঙ, উচ্চতা এবং নির্দিষ্ট ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য। আমাদের মৌলিক জিনোটাইপের বাইরে, তবে, আমাদের জিন এবং আমাদের পরিবেশের মধ্যে একটি গভীর মিথস্ক্রিয়া রয়েছে। আমাদের পরিবেশে আমাদের অনন্য অভিজ্ঞতাগুলি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলি কীভাবে প্রকাশ করা হয় এবং কীভাবে প্রকাশ করা হয় তা প্রভাবিত করে এবং একই সময়ে, আমাদের জিনগুলি প্রভাবিত করে যে আমরা কীভাবে আমাদের পরিবেশের সাথে যোগাযোগ করি (ডায়ামন্ড, ২০০৯; লোবো, ২০০৮)।

প্রকৃতি এবং লালন-পালনের মধ্যে একটি পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া রয়েছে। মানব শিশুর তথা অন্য যে কোনো শিশুর জীবনে তাই জিনগত বৈশিষ্ট্য ছাড়াও তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও অনেকটা ভূমিকা পালন করে থাকে। এ ক্ষেত্রে দেখা যায় ভিন্ন পরিবেশের সংস্পর্শে আশা মানুষের ধরন-ধারণ ও আচরণও ভিন্ন প্রকৃতির হয়ে থাকে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published.

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

Dr. Birajlakshmi Ghosh : প্রকৃতি ও পরিবেশ শিশুর বিকাশকে প্রভাবিত করে!

আপডেট সময় : ০৬:২১:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর ২০২২

‘জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জলবায়ু পরিবর্তন রোধের লড়াইয়ে আমরা হেরে যাচ্ছি বলে সতর্ক করে দিয়েছেন। গুতেরেস বলছেন, বিশ্ব দ্রুতগতিতে নরকের মহাসড়কের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে’

 

নিজস্ব প্রতিনিধি

চতুর্থ শ্রেণীর পড়ুয়া জেবা বলছিল, পরিবেশ নিয়ে এক প্রতিবেদন করো। আমাদের স্কুলে যেতে প্রচণ্ড রকমের অসুবিধা হচ্ছে। শব্দ ও বায়ুদূষণে অস্থির। মানুষগুলো কোন না বুঝেই যানবাহনের হর্ণ বাজাতে থাকে। আমরা আর নিতে পারছি না!

‘প্রকৃতি শিশুর বিকাশকে কিভাবে প্রভাবিত করে’ শিক্ষাবিদ, গবেষক ও পরিবেশ সংগঠক ড. বিরাজলক্ষী ঘোষের লেখাটি হাতে পাবার পরই শিশু পড়ুয়া কথাটি মনে পড়ে গেল। শ’ শ’ জেবার কথা একটাই। কে দেখবে আগামীর ভবিষ্যত? বলতে পারব না।

স্কপ-২৭ সম্মেলনে ‘জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস

জেবার কথা এবং দিল্লীতে স্কুল বন্ধ ঘোষণা দুটোই পরিবেশ সংক্রান্ত। এই দরুণ দিল্লীর বিষয়টিতো খুবই ভয়ানক। বায়ুদূষণের মাত্রা কোন পর্যায়ে পৌঁছালে রাজধানী দিল্লীর সকল প্রাইমারী স্কুল বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয় সরকার?

মিসরের শারম-আল-শেখ এ কপ-২৭ জলবায়ু সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে বিশ্ব নেতা ও কূটনীতিকরা বৈশ্বিক উষ্ণতার বিরুদ্ধে লড়াইকে মানুষের বেঁচে থাকার যুদ্ধ বলে তুলে ধরেছেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জলবায়ু পরিবর্তন রোধের লড়াইয়ে আমরা হেরে যাচ্ছি বলে সতর্ক করে দিয়েছেন। গুতেরেস বলছেন, বিশ্ব দ্রুতগতিতে নরকের মহাসড়কের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

অস্বাভাবিক বায়ুদূষণের ফলে ভারতের রাজধানী দিল্লীতে প্রাথমিক স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ : ছবি সংগ্রহ

ঠিক এমন এক সময়ে প্রশ্ন তোলেন ভারতীয় শিক্ষাবিদ। বলেন, আমরা যা তাই কি প্রকৃতির (জীববিজ্ঞান এবং জেনেটিক্স) কারণে, নাকি লালন-পালনের কারণে (আমাদের পরিবেশ এবং সংস্কৃতি)? এই দীর্ঘস্থায়ী প্রশ্নটি মনোবিজ্ঞানে প্রকৃতি বনাম লালন বিতর্ক হিসাবে পরিচিত।

ড. বিরাজলক্ষীর ভাবনায়, মানুষ্য সৃষ্টি পরিবেশ দূষ ভয়ানকরূপ নিয়েছে। অথচ এখনও আমাদের বোধোদয় হচ্ছে না। নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে, খাল-বিল -ডোবানালায় আকাশমুখো ইটের দালান! একবার ভাবুন এই নগরায়নের প্রতিযোগিতায় পরিবেশের অবস্থা একেবারেই তলানীতে চলে এসেছে। যে কোন বালির পাহাড়ের মতো ভেঙ্গে পড়বে। তখন আর পালানোর পথ পাব না আমরা।

এই শিশুরা উপযুক্ত পরিবেশ চায় ‘শৈশবের প্রতিবাদ’

কোন কোন শিশু কখনও কখনও তাদের পিতামাতার মতো আচরণ করে থাকে। একদমই তাই। আর না করার মতো কিছু নেই। শিশুটি যে ঘরে যে পরিবেশে বড় হয়ে ওঠছে, তার মধ্যে পারিবারিকভাবেই পিতামাতার আচার-আচরণ প্রভাব ফেলছে। এটিকে আমরা জেনেটিক্স বা শৈশবকালীন পরিবেশের কারণে বা শিশু তাদের পিতামাতার কাছ থেকে কী শিখেছে তার কারণে হতে পারে।

আমরাদের বুঝতে হবে পরিবেশ এমন এক বিষযটি যে শৈশব থেকেই জীবনের সঙ্গে জুড়ে যায়। শিশুরা অনুকরণ প্রিয় হয় বলে, সমাজে যা দেখছে তাই শিখছে। শৈশব থেকে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ পেলে, শিশুটিও তাই শিখে নেয় এবং সেভাবেই সে বড় হতে থাকে। কখনও কেউ যদি স্কুলের ক্লাশ রুম বা বারান্দায় কোন কাগজের টুকরো ফেলে তা শিশু প্রত্যক্ষ করে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। কারণ সে শৈশব থেকে এমন কাজের সঙ্গে পরিচিত নয়।

‘শৈশবের প্রতিবাদ’ পরিবেশ রক্ষায় উদ্যোগী শিশুরা

এসব বিষয়গুলোর শিক্ষা পরিবার থেকেই অর্জন করে। ড. বিরাজ বলছিলেন, আমরা সকলেই আমাদের পিতামাতার কাছ থেকে উত্তরাধি কারসূত্রে প্রাপ্ত নির্দিষ্ট জেনেটিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করি, যেমন চোখের রঙ, উচ্চতা এবং নির্দিষ্ট ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য। আমাদের মৌলিক জিনোটাইপের বাইরে, তবে, আমাদের জিন এবং আমাদের পরিবেশের মধ্যে একটি গভীর মিথস্ক্রিয়া রয়েছে। আমাদের পরিবেশে আমাদের অনন্য অভিজ্ঞতাগুলি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলি কীভাবে প্রকাশ করা হয় এবং কীভাবে প্রকাশ করা হয় তা প্রভাবিত করে এবং একই সময়ে, আমাদের জিনগুলি প্রভাবিত করে যে আমরা কীভাবে আমাদের পরিবেশের সাথে যোগাযোগ করি (ডায়ামন্ড, ২০০৯; লোবো, ২০০৮)।

প্রকৃতি এবং লালন-পালনের মধ্যে একটি পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া রয়েছে। মানব শিশুর তথা অন্য যে কোনো শিশুর জীবনে তাই জিনগত বৈশিষ্ট্য ছাড়াও তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও অনেকটা ভূমিকা পালন করে থাকে। এ ক্ষেত্রে দেখা যায় ভিন্ন পরিবেশের সংস্পর্শে আশা মানুষের ধরন-ধারণ ও আচরণও ভিন্ন প্রকৃতির হয়ে থাকে।