ঢাকা ০৩:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, ১৪ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

Ambubachi :  অম্বুবাচী অলৌকিক নয়, লৌকিক

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:৪৯:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জুন ২০২২ ৬৪৯ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ড. বিরাজলক্ষী ঘোষ

আমাদের ধর্মে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক ক্রিয়া, ধর্মকৃত্য বা লৌকিক আচার উদযাপিত হয় যেমন বিভিন্ন ব্রত একটু খতিয়ে দেখলে দেখা যায় এগুলোর মধ্যে কিছু আচার বেশ বিজ্ঞান সম্মত।আমাদের মধ্যে অম্বুবাচী নিয়ে অনেকরই মনে প্রশ্ন আছে । অম্বুবাচী বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় অমাবতি নামেও পরিচিত

শাস্ত্রে পৃথিবীকে মাতৃস্থানীয় বা ধরিত্রী মাতা বলা হয় । বেদে এই রকমই বলা হয়েছে বসুন্ধরা আমাদের মা । পৌরাণিক যুগেও পৃথিবীকে ধরিত্রী মাতা বলা হত । আবার আক্ষরিক অর্থে পৃথিবী সকল উদ্ভিদ ও জীব কুলের মাতা, কারণ সেখানেই আমাদের জন্ম, শুধু আমাদের কেন- ফুল, পাখি, প্রকৃতি এক কথায় সবাই আমরা পৃথিবীর সন্তান ।

প্রাচীন কালে চাষ আবাদ বা কৃষিকাজ বিশেষ কিছু তিথি নক্ষত্র অনুসারে শুরু করা হতো।তার কারণ মানুষের কাছে তেমন কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ছিলনা। আষাঢ় মাসে মৃগশিরা নক্ষত্রের তৃতীয় পাদ অতীত হলে চতুর্থ পাদে আর্দ্রা নক্ষত্রের প্রথম পাদের মধ‍্যে ধরিত্রীদেবী ঋতুমতী হতেন বলে মনে করা হতো। অম্বুবাচী শব্দের অর্থ জল বৃদ্ধি। সূর্য আদ্রা নক্ষত্রে গমন করলে বর্ষাকাল শুরু হয়। এই সময়কে অম্বুবাচী বলে।
কারণ এই মাসের শুরুতে বসুমতি মাতা যখন বর্ষা ঋতুর জলে সিক্ত হয়ে ওঠেন, তখন তাকে এক ঋতুমতী নারী রূপে গণ্য করা হয়। ঋতুকালে নারীরা রজঃস্বলা হওয়ার পর সন্তানধারণে সক্ষম হয়, বসুমতী মাতাকেও সেইভাবে গণ্য করা হয়।কারণ সিক্ত ধরা সহজেই ফসল উৎপাদন করতে পারে।আবার জল ধরনের ফলে কৃষিকাজের ও সেচের প্রয়োজনীয় জল ও সহজেই সংগৃহীত হয় বাড়ত ভূগর্ভস্থ জলস্তর।

সেকারণে অম্বুবাচী কটা দিন প্রকৃত পক্ষে ধরণীকে আরো বেশি উর্বর হবার সুযোগ দেবার জন্য কৃষকরা কৃষিকাজ থেকে বিরত থাকেন। প্রকৃত পক্ষে গ্রীষ্মের প্রখর তাপ প্রবাহের পর শুষ্ক ধরিত্রী কে বর্ষার জলসিঞ্চন এর মাধ্যমে উর্বর করার জন্য কিছুদিন বিশ্রাম প্রদান করা হয়। মৃত্তিকা হয়ে ওঠে উর্বর । উর্বর মৃত্তিকাই প্রদান করতে পারে উৎকৃষ্ট মানের ফসলের। শস্য শ্যামল উর্বর পৃথিবীর জন্য সন্তানগণ ধরণী মায়ের নিকট এই তিনদিন প্রার্থনা করেন। যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তার বুক থেকে উৎপন্ন শস্য খাদ্য হিসাবের গ্রহণ করে দুধে ভাতে বেচে থাকতে পারে।এবং অম্বুবাচী নিবৃত্তির পরেই প্রাচীনকালে জমিতে চাষ আবাদ শুরু করা হত।

তবে বাকি যেসমস্ত আচারগুলি কালক্রমে এই তিথিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে তার তেমন কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বা ভিত্তি নেই।আসলে সাধারণ মানুষ ধর্মের কথা যতটা বোঝেন বিজ্ঞানের কথা তার থেকে অনেকটা কম উপলব্ধি করতে পারেন।তাই বৈজ্ঞানিক কারণ গুলিকে ধর্মীয় আচার দ্বারা অনেকক্ষেত্রেই অতিরঞ্জিত করা হয়েছে।তবে সবশেষে বলা যায় আষাঢ় মাসের এই সময়টি চাষ আবাদ ও গাছ লাগানোর প্রকৃষ্ট সময়।এমনিতেই যথেচ্ছ বৃক্ষচ্ছেদন এর ফলে আমাদের পরিবেশ বিপর্যস্ত।তাই আসুন আমরা বসুন্ধরা কে তার ঋণ কিছুটা ফিরিয়ে দেই বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে।

লেখক : ড. বিরাজলক্ষী ঘোষ, শিক্ষাবিদ,  রবীন্দ্র গবেষক, পরিবেশ সংগঠক ও সম্পাদক ‘দ্য ওমেন ভয়েস’

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

Ambubachi :  অম্বুবাচী অলৌকিক নয়, লৌকিক

আপডেট সময় : ০৬:৪৯:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জুন ২০২২

ড. বিরাজলক্ষী ঘোষ

আমাদের ধর্মে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক ক্রিয়া, ধর্মকৃত্য বা লৌকিক আচার উদযাপিত হয় যেমন বিভিন্ন ব্রত একটু খতিয়ে দেখলে দেখা যায় এগুলোর মধ্যে কিছু আচার বেশ বিজ্ঞান সম্মত।আমাদের মধ্যে অম্বুবাচী নিয়ে অনেকরই মনে প্রশ্ন আছে । অম্বুবাচী বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় অমাবতি নামেও পরিচিত

শাস্ত্রে পৃথিবীকে মাতৃস্থানীয় বা ধরিত্রী মাতা বলা হয় । বেদে এই রকমই বলা হয়েছে বসুন্ধরা আমাদের মা । পৌরাণিক যুগেও পৃথিবীকে ধরিত্রী মাতা বলা হত । আবার আক্ষরিক অর্থে পৃথিবী সকল উদ্ভিদ ও জীব কুলের মাতা, কারণ সেখানেই আমাদের জন্ম, শুধু আমাদের কেন- ফুল, পাখি, প্রকৃতি এক কথায় সবাই আমরা পৃথিবীর সন্তান ।

প্রাচীন কালে চাষ আবাদ বা কৃষিকাজ বিশেষ কিছু তিথি নক্ষত্র অনুসারে শুরু করা হতো।তার কারণ মানুষের কাছে তেমন কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ছিলনা। আষাঢ় মাসে মৃগশিরা নক্ষত্রের তৃতীয় পাদ অতীত হলে চতুর্থ পাদে আর্দ্রা নক্ষত্রের প্রথম পাদের মধ‍্যে ধরিত্রীদেবী ঋতুমতী হতেন বলে মনে করা হতো। অম্বুবাচী শব্দের অর্থ জল বৃদ্ধি। সূর্য আদ্রা নক্ষত্রে গমন করলে বর্ষাকাল শুরু হয়। এই সময়কে অম্বুবাচী বলে।
কারণ এই মাসের শুরুতে বসুমতি মাতা যখন বর্ষা ঋতুর জলে সিক্ত হয়ে ওঠেন, তখন তাকে এক ঋতুমতী নারী রূপে গণ্য করা হয়। ঋতুকালে নারীরা রজঃস্বলা হওয়ার পর সন্তানধারণে সক্ষম হয়, বসুমতী মাতাকেও সেইভাবে গণ্য করা হয়।কারণ সিক্ত ধরা সহজেই ফসল উৎপাদন করতে পারে।আবার জল ধরনের ফলে কৃষিকাজের ও সেচের প্রয়োজনীয় জল ও সহজেই সংগৃহীত হয় বাড়ত ভূগর্ভস্থ জলস্তর।

সেকারণে অম্বুবাচী কটা দিন প্রকৃত পক্ষে ধরণীকে আরো বেশি উর্বর হবার সুযোগ দেবার জন্য কৃষকরা কৃষিকাজ থেকে বিরত থাকেন। প্রকৃত পক্ষে গ্রীষ্মের প্রখর তাপ প্রবাহের পর শুষ্ক ধরিত্রী কে বর্ষার জলসিঞ্চন এর মাধ্যমে উর্বর করার জন্য কিছুদিন বিশ্রাম প্রদান করা হয়। মৃত্তিকা হয়ে ওঠে উর্বর । উর্বর মৃত্তিকাই প্রদান করতে পারে উৎকৃষ্ট মানের ফসলের। শস্য শ্যামল উর্বর পৃথিবীর জন্য সন্তানগণ ধরণী মায়ের নিকট এই তিনদিন প্রার্থনা করেন। যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তার বুক থেকে উৎপন্ন শস্য খাদ্য হিসাবের গ্রহণ করে দুধে ভাতে বেচে থাকতে পারে।এবং অম্বুবাচী নিবৃত্তির পরেই প্রাচীনকালে জমিতে চাষ আবাদ শুরু করা হত।

তবে বাকি যেসমস্ত আচারগুলি কালক্রমে এই তিথিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে তার তেমন কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বা ভিত্তি নেই।আসলে সাধারণ মানুষ ধর্মের কথা যতটা বোঝেন বিজ্ঞানের কথা তার থেকে অনেকটা কম উপলব্ধি করতে পারেন।তাই বৈজ্ঞানিক কারণ গুলিকে ধর্মীয় আচার দ্বারা অনেকক্ষেত্রেই অতিরঞ্জিত করা হয়েছে।তবে সবশেষে বলা যায় আষাঢ় মাসের এই সময়টি চাষ আবাদ ও গাছ লাগানোর প্রকৃষ্ট সময়।এমনিতেই যথেচ্ছ বৃক্ষচ্ছেদন এর ফলে আমাদের পরিবেশ বিপর্যস্ত।তাই আসুন আমরা বসুন্ধরা কে তার ঋণ কিছুটা ফিরিয়ে দেই বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে।

লেখক : ড. বিরাজলক্ষী ঘোষ, শিক্ষাবিদ,  রবীন্দ্র গবেষক, পরিবেশ সংগঠক ও সম্পাদক ‘দ্য ওমেন ভয়েস’