ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক
হিমালয়ের দেশ নেপালকে পক্ষে রাখতে একই সঙ্গে জোড়াল কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে ভারত-চীন। ধারণা করা হচ্ছে, বেইজিংয়ের কয়েকশত মিলিয়ন ডলারের জালে চীনের কাছে আটকে গেছে নেপাল। তবে ভারতীয় বিশ্লেষকরা বলছেন, এ জাল কতটুকু ছেদ করতে পারবে ভারত? যেখানে প্রশ্ন মিলিয়ন ডলারের। চলতি মাসের শেষ নাগাদ নেপাল সফরের কথা রয়েছে ভারতের বিদেশ সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার। প্রশ্ন উঠেছে নেপাল সফরে ভারতীয় বিদেশ সচিবের সফলতা নিয়ে। যেখানে চীনের চাপিয়ে দেওয়া ৩৩১ মিলিয়ন ডলারের ফলে নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে একটি গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে বেইজিংয়ের।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কাছে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলীর একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান রয়েছে, যেহেতু তিনি ভারতের বিহার এবং উত্তর প্রদেশের সঙ্গে নেপালের দক্ষিণ সমতল অঞ্চলে চীন প্রবেশের সুযোগ করে দিতে পারেন। আর হিমালয়ের দেশটির এই অঞ্চলে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ভাষা শিক্ষা স্কুল চালুও করেছে চীন।
যদিও সে দৌড়ে পিছিয়ে নেই ভারত। ভারত ওই অঞ্চল থেকে পাহারা কমিয়ে নিতে প্রস্তুত নয়।
কারণ ভারতের ওপর নেপালের প্রায় ৬৫ শতাংশ বাণিজ্য নির্ভর করে এবং সে কাজকে আরও মসৃণ করতে ২০৩০ সালের মধ্যে রাকসৌল (ভারত)-কাঠমন্ডু (নেপাল) রেলপথ চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আসছে ডিসেম্বরেই ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ জয়নগর (ভারত)-কুর্তা (নেপাল) রেল সংযোগটি চালু হবে এবং এ পথে ভারতের উপহার দেওয়া দুইটি ডেমু ট্রেন পরীক্ষামূলক চলাচল করবে। একইভাবে ভারতের দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরক্ষা এবং কৌশলগত দিক বিবেচনায় ৬৯ কিলোমিটার দীর্ঘ জয়নগর-জনকপুর (নেপাল)-বারদিবাস (নেপাল) রেলপথটি নির্মিত হচ্ছে। একই সঙ্গে ২০১৫ সালে নেপালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে দেশটির রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ির যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেগুলোর উন্নয়নে নিজেদের নিয়জিত রেখেছে ভারত।
ভারতীয় গণমাধ্যম ডেইলি-শিখ পত্রিকায় করা হয়েছে এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা। বলা হয়েছে, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির এই প্রধানমন্ত্রীর নিজের অবস্থান বেশ নড়বরে। নিজের প্রধানমন্ত্রীত্ব নিয়ে বেশ শঙ্কায় রয়েছে কে পি শর্মা অলি। এমন সংকটময় মুহূর্তে ভারতের কাছে সহায়তা চাইছেন তিনি। এই প্রেক্ষাপটে বিদেশ সচিবের এই নেপাল সফর কতটা কার্যকর হবে যখন নিজেই বিপদে রয়েছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী অলী। যেখানে নেপাল ও চীনের কমিউনিস্টদের মধ্যে সম্পর্ক চলে গেছে অনেকটা গভীরে।
ভারতের সেনা প্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারভেন সম্প্রতি নেপাল সফর করেছেন। এর আগে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর প্রধান সামন্ত গোয়েলকে নেপাল সফরে পাঠানো হয়েছিল। সে সময় তিনি নেপালের প্রধানমন্ত্রী অলি, নেপাল সেনা প্রধান এবং দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছিলেন। তখন ‘র’ প্রধানের ওই সফরের মাধ্যমে নেপালের সঙ্গে ভারতের রুক্ষ সম্পর্ক অনেকটা মসৃণ করতে সহায়তা করেছিল। এই ধরনের উচ্চ পর্যায়ের সফরগুলোকে স্বাভাবিকভাবে দেখছেন না বিশিষ্ট জনেরা।
চীনের সঙ্গে নেপালের ১৫টি সীমান্ত জেলা রয়েছে। নেপালের বিরোধী দলীয় নেতারা দেশটির ভূমি জোর করে দখল করার বিষয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন। তখন অলী সরকার কোন পদক্ষেপ নেয়নি। শুধু তাই নয় এসময় নেপালের সাংবাদিক বলরাম বানিয়াকে সন্দেহজনক ভাবে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। যদিও ওই সাংবাদিকের মৃত্যুর কারণ এখনও জানা যায়নি। কিন্তু ভারতীয় ‘র’ প্রধান নেপালের প্রধানমন্ত্রী অলীর সঙ্গে দেখা করার পরেই এ বিষয়টি তার মাথায় আসে। এবার দেখার বিষয় ভারতের বিদেশ সচিবের নেপাল সফরের ফলাফল কি আসে? এই মিলিয়ন ডলারের প্রশ্নে কতটা জয়ের মুখ দেখবে ভারত?