আমিনুল হক, ঢাকা
উদীয়মান অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ। সময়ের পিঠ বেয়ে স্বপ্নের নয়, ‘বাস্তবের সোনার বাংলায়’ রূপ নিয়েছে। লাঙ্গল জোয়ালের বাংলা আজ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে স্বাধীনতা অর্জন এবং শেখ হাসিনার হাত ধরে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রাপ্তি। এই তল্লাটে নজির গড়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন, খড়স্রোতা পদ্মার বুকে দ্রুত সম্পন্নর পথে ‘পদ্মা সেতু’ সবই এসেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। বঙ্গবন্ধুর পর বাংলাদেশ উন্নয়নের রোলমডেলে পরিণত করার এই দুঃসাহ দেখিয়েছেন শেখ হাসিনা। যিনি বাংলাদেশের দিন বদলের ইতিহাস লিখিয়েছেন বিশ্ব দরবারে। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমেই হাত লাগান নৌপথ উন্নয়নে। কারণ, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, তার বাংলার মানুষ যে পণ্যউৎপাদন করেন তা যেন দ্রুত এবং স্বল্পমূল্যে পরিবহন করতে পারেন। নৌপরিবহন মন্ত্রকের অধীনে একাধিক সংস্থা করে এর উন্নয়নের পরিকল্পনা মাফিক কাজ শুরু করেন।
বিশ্বের ৮০ ভাগ পণ্য নৌপথে পরিবন হয়ে আসছে। এখনও পর্যন্ত এটাই সাশ্রয়ী। দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে নৌপথের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠছে বলে মনে করেন, বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কতৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক। মঙ্গলবার গোমতী নদীর বাংলাদেশ প্রান্তের ৯১ কিলোমিটার নৌপথ পরিদর্শনে এসে একথা বলেন। বাংলাদেশ-ভারত আন্তর্জাতিক নৌপ্রোটকলের আওতায় দাউদকান্দি থেকে এই গোমতী নদী দিয়েই ত্রিপুরার সোনামুড়ায় পণ্যপরিবাহিত হবে। নৌপথটি খননে একটা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
সকালে বাংলাদেশের বিবির বাজার চেকপোস্টে পৌছেই দেখা মিললো পণ্যবোঝাই ট্রাকের সারি। জানা গেল সিমেন্ট বোঝাই এই ট্রাকগুলো যাবে ভারতের প্রান্তিক রাজ্য ত্রিপুরার সোনামুড়ায়। বাংলাদেশের সীমান্তরেখা লাগোয়া ভারতের সোনামুড়া স্থলবন্দর। এটির অবস্থান ত্রিপুরার পূর্ব-পশ্চিম প্রান্তে। দু’দেশের স্থলবন্দরের পাশেই ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা গোমতী নদী। সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ-ভারত আন্তর্জাতিক নৌরুট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সোনামুড়া’। বাংলাদেশের দাউদকান্দি ল্যান্ডিং পোর্ট থেকে গোমতীর বুক চিরে পণ্য পরিবাহিত হবে এই সোনামুড়া নৌবন্দরে। গোমতী ত্রিপুরা প্রান্তে প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশ প্রান্তে ৯১ কিলোমিটার।
নৌপথটি পরিদর্শনে আসেন বিআইডব্লিউটিএ‘র চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল। সি-বোটে চেপে ৯১ কিলোমিটার নৌপথ পরিদর্শন করে বিকালে দাউদকান্দি পৌঁছোন। পরিদর্শনে এসে কমোডর গোলাম সাদেক বলেন, বিবির বাজার থেকে ৯১ কিলোমিটার নৌপথটি চালু করার ব্যাপারে কী করণীয় তা জানতেই তাঁরা এই নৌপথ পরিদর্শনে এসেছেন। কারণ নৌপথটি পরিদর্শন করা না হলে এর সর্বশেষ পরিস্থিতি বোঝা যাবে না। এটি খনন করতে একটা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সম্ভাবনার সঙ্গে কিছুটা সমস্যাও থাকে। উজানে জল কম। কারণ, বালিতে নদীর অনেকটাই ভরাট হয়ে গিয়েছে। গোমতীর বুক চিরে যতই ভাটির দিকে এগোনো যায় গোমতী যেন নিজেকে মেলে ধরেছে। এ দিকে চারিদিকে স্বচ্ছ জল। দাউদকান্দি-সোনামুড়া নৌরুটটি দ্রুত চালু করতে চায় বাংলাদেশ। এ কারণেই ছুটির দিনেও নৌরুটটি সরেজমিন পরিদর্শন করতে এসেছেন বিআইডব্লিউটিএ-র চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধিদল।
প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য বিআইডব্লিউটিএ-র পরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা) রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা এটি পরিদর্শন করে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করব। এ নৌপথটি খননকাজে হাত লাগানোর আগে তা পরিদর্শনের প্রয়োজন ছিল। এটি খনন করার জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রতিনিধিদলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন বিআইডব্লিউটিএ-র পরিচালক (নৌ-সংরক্ষণ) শাজাহান খান, আন্তর্জাতিক নৌ-প্রোটোকলের ডেপুটি ডাইরেক্টর শর্মিলা খানম প্রমুখ।
বিবির বাজার স্থলবন্দর
এদিকে, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা পোর্ট ব্যবহার করে ত্রিপুরা ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্যে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিবির বাজার স্থলবন্দরও ব্যবহার করা হবে। বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে বিবির বাজার স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন প্রায় একশোর কাছাকাছি পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করে থাকে ত্রিপুরায়। বাংলাদেশ থেকেই বেশি পণ্য যায়। দিন দিন এই স্থলবন্দরটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। ভারত থেকে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে আসা পণ্য বিবিরবাজার স্থলবন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যে প্রবেশ করলে অন্তত ১৫০ কিলোমিটার পথ কমবে। এই বন্দরটি চালু হয়েছে অনেক আগে থেকেই। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বিবির বাজার স্থলবন্দর হয়ে ত্রিপুরার সোনামুড়া স্থলবন্দরে পণ্য পরিবাহিত হলে অন্তত দেড়শো কিলোমিটার পথ কমে যাওয়ার কথা জানালেন বিবির স্থলবন্দর প্রধান ফারজানা ইয়াসমিন। তিনি জানান, এটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি স্থলবন্দর। ১০ একর জায়গার ওপর বিবিরবাজার স্থলবন্দরটি নির্মাণ করে নৌপরিবহন মন্ত্রক।