২ লাখ অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী বৈধতা পাচ্ছে মালয়েশিয়ায়
- আপডেট সময় : ০৪:২৩:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২০ ৫১০ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক
কাটছে অমানিশার ঘোর আন্ধকার! দীর্ঘ যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতির অবসান হতে চলেছে। চোখের সামনে ভেসে আসছে আবছা আলো। সময়ের পথ বেয়ে যা পরিস্ফুটিত হবে। এমনি প্রত্যাশা বুকে পুষে দিন, মাস বছর কেটেছে তাদের। কখন আধ পেট আবার কখনো পানীয়জল খেয়েই পরে থাকতে হয়েছে। অর্থাৎ বাধ্য হয়েছেন। কাজ করার শক্তি থাকলেও তারা তা করতে পারেননি। কারণ, তারা যে অবৈধ! সুন্দর জীবনের প্রত্যাশায় এদের অনেকেই সহায়সম্বল বিক্রি করে চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে পারি জমিয়েছিলেন মালয়েশিয়ায়। কিন্তু কিছু দিন যেতেই সেখানে তারা অবৈধ হয়ে যান। তারপরও প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে মাটি কামড়ে অপেক্ষায় ছিলেন সুদিনের আশায়। অবশেষে বহু প্রতীক্ষিত সেই দিনটির কথা ঘোষণা করে মালয়েশিয়া সরকার। তারা ঘোষণায় বলা হয়, দেশটিতে থাকা ২ লাখ অবৈধ বাংলাদেশি অভিভাসীকে পর্যায়ক্রমে বৈধ করার। বৃহস্পতিবার দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজা বিন জয়নুদ্দিন শর্তসাপেক্ষে অবৈধদের এই বৈধতা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি হিসেবে মালয়েশিয়ায় ২০ লাখেরও বেশি বিদেশি কর্মী বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় কাজ করছেন। তিনি দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানানের সঙ্গে আলোচনা শেষে কুয়ালালামপুরে এক সাংবাদিক বৈঠকে জানান, অনিবন্ধিত অভিবাসীদের বৈধতার বিষয়ে দেশটির সরকারের নেওয়া একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যা কার্যকর থাকবে আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। সোমবার থেকে বৈধকরণ প্রক্রিয়া শুরু করবে দেশটি। যা ইমিগ্রেশন বিভাগ, মালয়েশিয়ার শ্রম বিভাগ এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থা বাস্তবায়ন করবে। শর্তসাপেক্ষে দেশটিতে অবস্থান করা অবৈধ অভিবাসীরা বৈধ হতে পারবেন। চারটি সেক্টরে অর্থাৎ কন্সট্রাকশন, ফ্যাক্টরি, পাম অয়েল ও কৃষি বৈধতা দেয়া হবে। মূলত থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, নেপাল, মিয়ানমার ও বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশের অবৈধ অভিবাসী শ্রমিকরা এর আওতাভুক্ত। এক্ষেত্রে কোনো এজেন্ট গ্রহণযোগ্য হবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ অক্টোবর শ্রমবাজার খুলে দেওয়ার বিষয়ে মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশের মন্ত্রী পর্যায়ে ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। নতুন করে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে দুই মন্ত্রীর মধ্যে ইতিবাচক আলোচনা হয়। দুই দেশের মধ্যে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ও কর্মী নিয়োগের বিষয়ে সমঝোতা সইয়ের বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। করোনা মহামারিতে মালয়েশিয়ায় অসংখ্য অভিবাসী শ্রমিক কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। সম্প্রতি তাদের কাজের সুযোগ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রক। মানবসম্পদ মন্ত্রক এও বলেছিলো যে, করোনাকালীন চাকরি হারানো ব্যক্তিরা ‘মাই ফিউচার জবস’ অনলাইনে নিয়োগকর্তার মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। বিদেশি কর্মীদের ক্ষেত্রেও এ প্রক্রিয়া প্রযোজ্য।
অভিবাসন খাত নিয়ে কাজ করা এশিয়ার ২০টি দেশের আঞ্চলিক সংগঠন ‘ক্যারাম এশিয়া’ ধারণা করছে এই ঘোষণার ফলে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের ২০ থেকে ৩০ লাখ অবৈধ অভিবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরবে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ-‘বায়রা’ বলছে, বাংলাদেশের কর্মীদের দ্বিতীয় প্রধান গন্তব্য মালয়েশিয়া। মালয়েশিয়ায় থাকা অবৈধ বাংলাদেশির সংখ্যা দেড় লাখ থেকে ২ লাখের কম হবে না। তারাও এই সুযোগ পাবেন। তাছাড়া অবৈধ কোন ব্যক্তি নিজ দেশে ফিরে যেতে চাইলে সে সুযোগও রয়েছে। এ অবস্থায় অবৈধ অভিবাসীদের আটক করতে আর কোনো অভিযান পরিচালনা না করারও আহ্বান জানিয়েছে মালয়েশিয়ার মানবাধিকার কমিশন সুহাকাম।
সর্বশেষ প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুয়ায়ী, দেশটিতে কর্মরত বিদেশি কর্মীদের ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ ইন্দোনেশিয়ার, ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ নেপালের, ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ বাংলাদেশের, ৬ দশমিক ৯ শতাংশ মায়ানমার, ৫ দশমিক ১ শতাংশ ভারতের, ৩ দশমিক ১ শতাংশ ফিলিপাইনের, ২ দশমিক ৫ শতাংশ পাকিস্তানের, শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ থাইল্যান্ডের এবং ৪ শতাংশ শ্রমিক অন্যান্য দেশের। জানা গেছে, মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের একটি সংঘবদ্ধ চক্রের অনৈতিক ব্যবসা পরিচালনার কারণে ২০১৮ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে দেশটিতে নতুন কর্মী নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। অবশ্য তখন সব দেশ থেকেই শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করে দেয় দেশটির সরকার। কর্মী নিয়োগ বন্ধ হওয়ার পূর্বাব্দি মালয়েশিয়ার একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী মহলকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির একটি চক্র সেখানকার শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণ করছিল।