শোকাবহ জেলহত্যা দিবস বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যার নেপথ্য কুশীলবদের বিচারের দাবি
- আপডেট সময় : ০৩:৪৪:৩৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর ২০২০ ৪৩৭ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক
৩ নভেম্বর শোকাবহ জেলহত্যা দিবস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর দ্বিতীয় কলঙ্কজনক অধ্যায় কারাগারে জাতীয় চারনেতাকে হত্যা। নয় মাস রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা প্রাপ্তির মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে চার জাতীয় নেতা বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের যে কয়টি দিন চিরকাল কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে, তার একটি ৩ নভেম্বর। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ড ছিল একই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা। বঙ্গবন্ধুকে হতার পর খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে ষড়যন্ত্রকারীরা জাতীয় চার নেতাকে তাদের সরকারে যোগদানের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় চার নেতা প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। এ কারণে তাদের নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়।
জেল হত্যার পরদিন তৎকালীন উপ-কারা মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) কাজী আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ ২১ বছর এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার জেলহত্যা মামলার প্রক্রিয়া পুনরুজ্জীবিত করে। ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত মামলাটির রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ২০ আসামির মধ্যে ১৫ সাবেক সেনা কর্মকর্তার শাস্তি এবং অন্য পাঁচ জনকে খালাস দেওয়া হয়। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে পলাতক তিন জনের মৃত্যুদণ্ড এবং অন্য ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছে রিসালদার মোসলেম উদ্দিন ওরফে হিরন খান, দফাদার মারফত আলী শাহ এবং এলডি দফাদার মো. আবুল হাসেম মৃধা। খালাসপ্রাপ্তরা হলেন, সাবেক মন্ত্রী কে এম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, নূরুল ইসলাম মঞ্জুর এবং মেজর (অব.) খায়রুজ্জামান।
২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট হাইকোর্টের রায়ে কেবল রিসালদার মোসলেমউদ্দিনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দফাদার মারফত আলী শাহ ও এলডি দফাদার মো. আবুল হাসেম মৃধা এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য চার আসামি লে. কর্নেল (বরখাস্ত) সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল (অব.) শাহরিয়ার রশীদ খান, মেজর (অব.) বজলুল হুদা ও লে. কর্নেল (অব.) এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদকে মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
জেল হত্যা দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, ঘাতক চক্রের উদ্দেশ্য ছিল দেশে অগণতান্ত্রিক স্বৈরশাসনের উত্থানের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের কাছ থেকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে মুছে ফেলা। কিন্তু তাদের সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার আদর্শ চির অম্লান থাকবে।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ৩ নভেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত দিন। কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ড ছিল জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতা। এ ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি, দেশবিরোধী চক্র বাংলার মাটি থেকে আওয়ামী লীগের নাম চিরতরে মুছে ফেলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস এবং বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল। আমরা জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচারকাজ সম্পন্ন করেছি। জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচারও সম্পন্ন হয়েছে।
কর্মসূচি
আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে আজ মঙ্গলবার সূর্য উদয় ক্ষণে ভবন ও দলীয় কার্যালয়সহ দেশের সর্বত্র সংগঠনের শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন।
সকাল ৮টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবে আওয়ামী লীগ। এছাড়া ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠনসহ মহানগরের প্রতিটি শাখার নেতাকর্মীরা যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। সকাল পৌনে ৯টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের কালরাতে নিহত সব শহিদ ও কারাগারে নির্মমভাবে নিহত জাতীয় নেতৃবৃন্দের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত হবে।
জাতীয় চার নেতার
প্রতি জেপির শ্রদ্ধা
জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে শাহাদতবরণকারী জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর ভালোবাসা জানিয়েছেন।
এক যৌথ বিবৃতিতে জেপির নেতৃদ্বয় বলেন, বঙ্গন্ধুর অনুপস্থিতে এই জাতীয় চার নেতা, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এবং মন্ত্রী হিসাবে এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের সদস্য হিসেবে দেশ এবং জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
সেদিন তারা অসীম সাহসিকতা ও দক্ষতার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ এবং সরকার পরিচালনা করেছিলেন। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ঘাতকরা জাতীয় চার নেতাকে কারাগারের অভ্যন্তরে ইতিহাসের এক নৃশংসতম অধ্যায় সংযোজন করে হত্যা করে। আমরা মনে করি জাতীয় এই চার নেতার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে দেশমাতৃকা সেদিন তার গৌরবদৃপ্ত সন্তানকে হারিয়েছিল।
আমরা জাতীয় এই চার নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলতে চাই, যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং অশুভ শক্তির কাছে মাথানত করেননি তারা আমাদের কাছে চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাদের এই দেশপ্রেম এবং আদর্শের প্রতি আনুগত্য আমাদের চলার পথে সাহায্য করবে। জেপি নেতৃদ্বয় বলেন, আমরা এই জাতীয় চার নেতার রুহের মাগফেরাত কামনা করি এবং পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তারা যেন জান্নাতবাসী হন।