শুনেছেন তুলসীমালার কথা?
- আপডেট সময় : ১২:২৫:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ এপ্রিল ২০২১ ২৪১ বার পড়া হয়েছে
তুলসীমালা ধান গাছ : সংগ্রহ
ঋদ্ধিমান, ঢাকা
মাঠময় ছড়িয়ে পড়ে তার সুগন্ধি। দিনে দিনে কদর বাড়ছে তার। কিছুই তার ফেলনা নয়। সকল সন্দেহ উড়িয়ে লবণাক্ত উপকূলীয় এলাকায়ও নিজের দাপট দেখিয়েছে। শখের বসে তার লালন-পালন শুরু হলেও এখন অনেকেরই স্থায়ী আসন পেতে বসেছে। নাম তার তুলসীমালা বলে কথা। আকারে খুব ছোট। যখন সোনালী রঙ ধারণ করে, তখন সত্যিই মনে হয়, যত্ন করে কেউ মালা গেঁথে রেখেছে।
তুলসীমালার ক্ষেতে সার ছিটানো : সংগ্রহ
জানাতে চাই তুলসীমার কথা। আসলে এটি সুগন্ধি চাল। পোলাওয়ের জন্য চাই কালিজিরা চাল। কিন্তু তুলসীমা তার চেয়েও ভালো। কালোজিরার চেয়েও আকারে ছোট সুগন্ধী তুলসীমালা। এ ধানের খড় থেকেও মাঠময় সুগন্ধ ছড়ায়।
পল্লীকবি জসীমউদ্দীন তার কবিতায় শালি ও বিন্নি ধানসহ যে কয়টি প্রাচীন সুগন্ধী ধানের উল্লেখ করেছেন, তুলসীমালা তারই একটি এমন ধারণা কৃষিবিদদের। তুলসীমার চাষ শুরু হয় ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও পাশ্ববর্তী শেরপুর জেলায়। গাড়হাড়ের পাদদেশে হালুয়াঘাট ঘুরতে গিয়ে তুলসীমালার ক্ষেত দেখে মুগ্ধ হয়েছি।
আর ক’দিন পরই সোনালী রঙ নিবে তুলসীমালা : সংগ্রহ
হালুয়াঘাটের গাড়সম্প্রদায় বিন্নি ধানের চাষও করেন। জমিনের কিছু অংশে তারা বিন্নিধানের চাষ করে থাকেন ‘তাদের চু’ বানাতে। বিন্নিধানের চাল সিদ্ধ করে তা পিষে নিয়ে মন্ড তৈরি করে রাখেন। এরপর একটি হাঁড়িতে বিন্নি চালের ভাতে জল দিয়ে তার ওপরে পরিমাণমত শুকনো মন্ড ছড়িয়ে দেন। এরপর ডাকনার চাদিকে ভালো করে বন্ধ করে রেখে দেন।
এক সপ্তাহ পড় পাত্রের মুখ খোলেন। তাপর ছেকে নিয়ে সম্মিলিত ভাবে পান করেন আর খোশ গল্পে মেতে ওঠেন। আগামী গাড়রোদের বয়স, জীবন-জীবিকা এবং সাংস্কৃতি জানাবো।
সোনালী রঙ তুলসীমালার : সংগ্রহ
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের হিসাব মতে, গেল আমন মৌসুমে ২১ হাজার ৩০৩ হেক্টর জমিতে তুলসীমালার চাষ করেন কৃষকরা। শেরপুরে চাষ হয় সর্বোচ্চ ১২ হাজার ১৬ হেক্টরে। তুলসীমালা মূলত উচ্চফলনশীল নয়। এই দরুন হেক্টর প্রতি ১ দশমিক ৫৭ মেট্রিক টন। উচ্চফলনশীল না হলেও তুলসীমার কদর বেশ।
উত্তরাঞ্চল শেরপুর-মংমনসিংহের পর তুলসীমার ব্যাপক আবাদ হচ্ছে, দক্ষিণের জনপদ খুলনার বটিয়াঘাটায়। এসব এলাকা মূলত লবণাত্মক। কিন্তু তুলসীমা তাতে থোরাই কেয়ার। এখন এ অঞ্চলের চাষীদের আশার আলো দেখাছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মতে, তুলসীমালা ধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ধানে ফুল আসার পর থেকে পাকা পর্যন্ত পাঁচবার রং বদলায়। প্রথমে হালকা সবুজাভ, এরপর ছাই রং, এরপর হালকা জাম রং, এরপর গাঢ় জাম রং এবং শেষে কালো ও ছাই রং মিশে আরেক রকম হয়।
তুলসীমালা চাল সংগ্রহ
তুলসীর উচ্চতা ৫০-৫২ ইঞ্চির মতো হয়। এর আয়ু ১১০-১২০ দিন। একটি শীষে ৯০-১২০টি ধান পাওয়া যায়। ৫ শতক জমিতে দেড় মণ পর্যন্ত উৎপাদন হয়ে থাকে। একর প্রতি ৩০ মণ।
ময়মনসিংহ বিভাগে পাওয়া যায় বেশি মেলে। প্রতিকেজি চাল ১২০-১৪০ টাকায় বিক্রি হয়। দেশি জাতের মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ দামে বিক্রিত চাল।
তুলসীমার ক্ষেতের পাশ দিয়ে হেচে যাচ্ছেন এক নারী : সংগ্রহ
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মো. মনিরুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে জানান, তাঁর ল্যাবে এই ধান নিয়ে অধিকতর গবেষণা করে চলেছেন। তুলসীমার যে বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তা অন্য কোনও জাতে প্রবেশ করানো যায় কিনা। তিনি তুলসীমালার টিস্যুকালচার করবেন বলেও উদ্যোগী নিয়েছেন।