ঢাকা ০৪:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষা অর্জন করে শান্তি ও প্রগতির পথে এগিয়ে যাবে ছাত্রলীগ: প্রধানমন্ত্রী

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৪:৩১:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ জানুয়ারী ২০২১ ৩৯৭ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে সংগঠনের মূলমন্ত্রের আলোকে আদর্শবান নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি এগোতে পারেনা। আর এই কথাটি মাথায় রেখে ছাত্রলীগকে চলতে হবে। ছাত্রলীগের মূলমন্ত্র শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির উদ্ধৃতি করে শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে শান্তির পথ ধরে প্রগতির পথে আমরা এগিয়ে চলবো। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে এটাই আমাদের ব্রত। ছাত্রলীগের কর্শীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী আহ্বান ‘আদর্শ নিয়ে না চললে কখনো বড় হতে পারবে না। দেশকে কিছু দিতে পারবেনা’। সোমবার অপরাহ্নে ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে একথা শেখ হাসিনা। গণভবনের বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশ গ্রহণ করেন এবং বক্তব্য রাখেন।

এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যে সংগঠন জাতির পিতা গড়ে তুলছিলেন মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের জন্য। যে সংগঠন এদেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছে, গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং এগিয়ে যাওয়ায় সংগ্রামী ভূমিকা পালন করছে, সে সংগঠনের নামই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এই ছাত্রলীগ এগিয়ে যাবে সেটাই আমার কামনা। শেখ হাসিনা বলেন, নিজের ঐতিহ্য মাথায় রেখে জাতির পিতার আদর্শ বুকে ধারণ করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তোমরা নিজেদেরকে গড়ে তুলবে। যেকোন রাজনীতিবিদের জন্য আদর্শ নিয়ে চলাটাই সবথেকে বড় কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সততা এবং আদর্শের পাশাপাশি লক্ষ্য স্থির থাকলে পরে যেকোন অর্জনই সম্ভব। আর এটা জাতির পিতা দেখিয়ে গিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, বিশ^ দরবারে বাঙালি জাতি মাথা উঁচু করে চলবে। সেটাই আমাদের আজকের দিনে প্রতিজ্ঞা। ছাত্রলীগের সাবেক এবং আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণমূলক বক্তৃতা করেন জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। এছাড়া বকত্ব্য রাখেন ছাত্রীলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাটার্য বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরে ভিডিও ডকুমেন্টারি পরিবেশিত হয়। প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংক এবং স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার সহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আলোচনা সভাটি সরাসরি সম্প্রচার করে। এছাড়া, দেশের সকল জেলা, মহানগর ও উপজেলার দলীয় কার্যালয়ে প্রজেক্টর এবং সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সম্প্রচারের ব্যবস্থা নেয়া হয়।

 


প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে জাতির পিতার লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী,’ ‘কারাগারের রোজনামচা’, ‘আমার দেখা নয়াচীন’ এবং ‘সিক্রেট ডকুমেন্ট অব ইন্টালিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অবদি নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’এর বিভিন্ন খন্ডগুলো পড়ে দেখার আহবান জানান। ‘সে সময়ে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ডিক্লাসিফাইড রিপোর্ট শেখ রেহানার সহযোগিতায় খুঁজে বের করার,’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘সময়মতো সেগুলোও প্রকাশ করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশে নয় পৃথিবীর ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের যে অবদান তা এসব রিপোর্ট থেকেই বের হয়ে আসে।’ জাতির পিতার ত্যাগ এবং দেশাত্মবোধ থেকে শিক্ষা গ্রহণের পাশপাশি দেশের প্রকৃত ইতিহাস অন্বেষণের জন্য ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রতি তিনি গুরুত্বারোপ করেন। দেশের বর্তমান স্বাক্ষরতার হার ৭৪ শতাংশ, উল্লেখ করে একে আরো বৃদ্ধিতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে স্কুল-কলেজ বন্ধ রয়েছে এবং স্কুল চালুর উদ্যোগ নেয়ার সময় করোনার সেকেন্ড ওয়েভ চলে আসার প্রসংগ টেনে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের সংসদ টিভির মাধ্যমে টেরিস্টোরিয়াল ব্যবহার করে এবং অনলাইনে শ্রেনী কার্যক্রম অব্যাহত রাখার উল্লেখ করেন।

তাঁর সরকার করোনার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিবারের মত এবারও প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রায় ৩৪ কোটি ১৬ লাখ ৬২ হাজার পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করেছে এবং প্রায় দুই কোটি বৃত্তি এবং উপবৃত্তির টাকা বিতরণ অব্যাহত রেখেছে বলেও সরকার প্রধান জানান। শেখ হাসিনা এ সময় পাঠ্যপুস্তকের বাইরের বিভিন্ন বই পড়ে জ্ঞান ভান্ডার সমৃদ্ধ করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এই সময়কে কাজে লাগানোর আহবান জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের ছাত্রদেরকে আমি বলবো বসে না থেকে যা পাও, নিজেরা কিছু পড়াশোনা কর। এখানে একটা সুযোগ তাই পাঠ্যপুস্তকতো পড়বেই। অন্যান্য বইও পড়তে হবে। কারণ জ্ঞান যত বেশি অর্জন করতে পার। ততই নিজেকে আরো সম্পদশালী মনে করবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ধন, সম্পত্তি থাকেনা। কিন্তু শিক্ষা এমন একটা সম্পদ যা কেউ কেড়ে নিতে পারবেনা। আর এই সম্পদ থাকলে জীবনে কোনদিন হোঁচট খাবেনা, আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে সে শিক্ষাই আমরা দিয়েছি।’ ‘কাজেই তোমরা সেভাবেই শিক্ষা নেবে এবং ছাত্রলীগেরও সেটাই কাজ থাকবে,নিজেরা পড়বে এবং অন্যকেও পড়াও’ বলেন তিনি।

নিজ গ্রামের নিরক্ষরকে অক্ষর জ্ঞান প্রদানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি তাঁর আহবানের পুনরোল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে গ্রামের স্কুল, আত্বীয়-স্বজন এবং পাড়া প্রতিবেশিকে পারলে পড়াশোনায় সহযোগিতা কর।’ প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলার এবং করোনা নামক সংক্রামক ব্যাধি থেকে নিরাপদ থাকার জন্য সকলের ফেস মাস্ক ব্যবহারের প্রতি তাঁর আহবান ও পুণর্ব্যক্ত করেন।

ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সংগ্রামে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দানকারী ঐতিহ্যবাহী ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। বাংলা, বাঙালির স্বাধিকার অর্জনের লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জন্ম হয়।

সংগঠনকে শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যদি সংগঠনটা শক্তিশালী না থাকে তাহলে কোন কাজই সফলভাবে করা যায়না। কারণ মানুষের শক্তিটাই সবথেকে বড় শক্তি। এই শক্তিই মানুষকে সাহস জোগায়, যেকোন পদক্ষেপ নেয়ার প্রেরণা জোগায়।’ তিনি ’৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর সে সময়কার সামরিক শাসনকে অগ্রাহ্য করে দেশে ফিরে এসে সংগঠন গড়ে তোলাতে মনোনিবেশ প্রসংগে আরো বলেন, ‘আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগই বেশি রক্ত দিয়েছে।’ তিনি বলেন,‘দেশের গণতান্ত্রিক অধিকার আদালয়ের আন্দোলন, ভোট ও ভাতের অধিকার আন্দোলন, স্বৈরাচার বিরোধি আন্দোলন থেকে যেকোন আন্দোলনেই যদি আমরা দেখি তাহলে সবথেকে বেশি রক্ত দিয়েছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

বিশেষকরে ’৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যার পর জিয়াউর রহমানের সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতা দখলের সময়।’ তিনি বলেন, ‘খন্দকার মোস্তাককে আগে সে (জিয়া) মদদ দেয় এবং এরপর মোস্তাককে হটিয়ে নিজেই রাষ্ট্রপতি বনে যায়। আর দেশে হত্যা, ক্যু, ষড়ন্ত্রের রাজনীতির গোড়াপত্তন করে।’
এরপর জিয়ার কাজই ছিল ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দকে প্রলোভন দিয়ে দলে টানার চেষ্টা এবং সেটা না হলে গুম,খুন, হত্যা, বলেন তিনি। এ সময় শিঙ্গাঙ্গণে মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার মাধ্যমে তাদের বিপথগামী করে জিয়াউর রহমান- এমন অভিযোগও আওয়ামী লীগ সভাপতির। পক্ষান্তরে তিনি ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে বই-কাগজ কলম তুলে দেন, বলেও উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেই আদর্শের বিচ্যুতি ঘটে ’৭৫ এর ১৫ আগষ্টের পর থেকে। যে কারণে বাংলাদেশ তাঁর কাঙ্খিত উন্নতি অর্জনে ব্যর্থ হয়। ক্ষমতাকে নিষ্কন্টক করার জন্য দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যা,নির্যাতন,গুম ও খুনে মেতে ওঠে সামরিক জান্তা। শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তান থেকে আলাদা হবার পর বাংলাদেশ আবার উন্নতি করতে পারে, এটা তারা মানতে চায়নি। বরং বাংলাদেশকে ব্যর্থ করতে চেয়েছিল। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের বিজয় যেন একেবারে নস্যাৎ হয়ে যায়- সেটাই তাদের লক্ষ্য ছিল এবং যে চক্রান্ত এখনও চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ুর অভিঘাত থেকে বাংলাদেশের মুক্তির জন্য মুজিববর্ষ উপলক্ষে তঁর সরকার গৃহীত বৃক্ষরোপন কর্মসূচিতে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণের জন্যও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানান।

মুজিবর্ষে দেশের সকল ভূমিহীন-গৃহহীনকে ঘরে করে দেয়ায় তাঁর সরকারের চলমান কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্যও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেক গৃহহীনকে আমরা ঘর করে দেব এবং মুজিবর্ষ এবং স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনকালে প্রত্যেক ঘরে বিদ্যুৎ দিয়ে সমগ্র দেশকে আমরা আলোকিত করবো।’ ‘মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি স্বাস্থ্য সহ মোলিক সেবাগুলো যেন সকলে পেতে পারে এবং মাথা উঁচু করে দেশের মানুষ বাঁচতে পারে সে পদক্ষেপও নেব’, যোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা প্রকৃতি ও পরিবেশকে রক্ষা করবো। পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদনের দিকেও আমাদের বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।
যার যেখানে যে জমি রয়েছে বা পরিত্যক্ত জমিতে তিনি ফসল ফলানোর মাধ্যমে করোনার প্রাদুর্ভাবে বিশ্বে খাদ্য সংকট দেখা দিলে তা মোকাবেলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করায় এসময় তিনি দেশের মানুষের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতার কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

শিক্ষা অর্জন করে শান্তি ও প্রগতির পথে এগিয়ে যাবে ছাত্রলীগ: প্রধানমন্ত্রী

আপডেট সময় : ০৪:৩১:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ জানুয়ারী ২০২১

ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে সংগঠনের মূলমন্ত্রের আলোকে আদর্শবান নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি এগোতে পারেনা। আর এই কথাটি মাথায় রেখে ছাত্রলীগকে চলতে হবে। ছাত্রলীগের মূলমন্ত্র শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির উদ্ধৃতি করে শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে শান্তির পথ ধরে প্রগতির পথে আমরা এগিয়ে চলবো। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে এটাই আমাদের ব্রত। ছাত্রলীগের কর্শীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী আহ্বান ‘আদর্শ নিয়ে না চললে কখনো বড় হতে পারবে না। দেশকে কিছু দিতে পারবেনা’। সোমবার অপরাহ্নে ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে একথা শেখ হাসিনা। গণভবনের বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশ গ্রহণ করেন এবং বক্তব্য রাখেন।

এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যে সংগঠন জাতির পিতা গড়ে তুলছিলেন মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের জন্য। যে সংগঠন এদেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছে, গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং এগিয়ে যাওয়ায় সংগ্রামী ভূমিকা পালন করছে, সে সংগঠনের নামই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এই ছাত্রলীগ এগিয়ে যাবে সেটাই আমার কামনা। শেখ হাসিনা বলেন, নিজের ঐতিহ্য মাথায় রেখে জাতির পিতার আদর্শ বুকে ধারণ করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তোমরা নিজেদেরকে গড়ে তুলবে। যেকোন রাজনীতিবিদের জন্য আদর্শ নিয়ে চলাটাই সবথেকে বড় কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সততা এবং আদর্শের পাশাপাশি লক্ষ্য স্থির থাকলে পরে যেকোন অর্জনই সম্ভব। আর এটা জাতির পিতা দেখিয়ে গিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, বিশ^ দরবারে বাঙালি জাতি মাথা উঁচু করে চলবে। সেটাই আমাদের আজকের দিনে প্রতিজ্ঞা। ছাত্রলীগের সাবেক এবং আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণমূলক বক্তৃতা করেন জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। এছাড়া বকত্ব্য রাখেন ছাত্রীলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাটার্য বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরে ভিডিও ডকুমেন্টারি পরিবেশিত হয়। প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংক এবং স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার সহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আলোচনা সভাটি সরাসরি সম্প্রচার করে। এছাড়া, দেশের সকল জেলা, মহানগর ও উপজেলার দলীয় কার্যালয়ে প্রজেক্টর এবং সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সম্প্রচারের ব্যবস্থা নেয়া হয়।

 


প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে জাতির পিতার লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী,’ ‘কারাগারের রোজনামচা’, ‘আমার দেখা নয়াচীন’ এবং ‘সিক্রেট ডকুমেন্ট অব ইন্টালিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অবদি নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’এর বিভিন্ন খন্ডগুলো পড়ে দেখার আহবান জানান। ‘সে সময়ে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ডিক্লাসিফাইড রিপোর্ট শেখ রেহানার সহযোগিতায় খুঁজে বের করার,’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘সময়মতো সেগুলোও প্রকাশ করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশে নয় পৃথিবীর ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের যে অবদান তা এসব রিপোর্ট থেকেই বের হয়ে আসে।’ জাতির পিতার ত্যাগ এবং দেশাত্মবোধ থেকে শিক্ষা গ্রহণের পাশপাশি দেশের প্রকৃত ইতিহাস অন্বেষণের জন্য ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রতি তিনি গুরুত্বারোপ করেন। দেশের বর্তমান স্বাক্ষরতার হার ৭৪ শতাংশ, উল্লেখ করে একে আরো বৃদ্ধিতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে স্কুল-কলেজ বন্ধ রয়েছে এবং স্কুল চালুর উদ্যোগ নেয়ার সময় করোনার সেকেন্ড ওয়েভ চলে আসার প্রসংগ টেনে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের সংসদ টিভির মাধ্যমে টেরিস্টোরিয়াল ব্যবহার করে এবং অনলাইনে শ্রেনী কার্যক্রম অব্যাহত রাখার উল্লেখ করেন।

তাঁর সরকার করোনার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিবারের মত এবারও প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রায় ৩৪ কোটি ১৬ লাখ ৬২ হাজার পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করেছে এবং প্রায় দুই কোটি বৃত্তি এবং উপবৃত্তির টাকা বিতরণ অব্যাহত রেখেছে বলেও সরকার প্রধান জানান। শেখ হাসিনা এ সময় পাঠ্যপুস্তকের বাইরের বিভিন্ন বই পড়ে জ্ঞান ভান্ডার সমৃদ্ধ করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এই সময়কে কাজে লাগানোর আহবান জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের ছাত্রদেরকে আমি বলবো বসে না থেকে যা পাও, নিজেরা কিছু পড়াশোনা কর। এখানে একটা সুযোগ তাই পাঠ্যপুস্তকতো পড়বেই। অন্যান্য বইও পড়তে হবে। কারণ জ্ঞান যত বেশি অর্জন করতে পার। ততই নিজেকে আরো সম্পদশালী মনে করবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ধন, সম্পত্তি থাকেনা। কিন্তু শিক্ষা এমন একটা সম্পদ যা কেউ কেড়ে নিতে পারবেনা। আর এই সম্পদ থাকলে জীবনে কোনদিন হোঁচট খাবেনা, আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে সে শিক্ষাই আমরা দিয়েছি।’ ‘কাজেই তোমরা সেভাবেই শিক্ষা নেবে এবং ছাত্রলীগেরও সেটাই কাজ থাকবে,নিজেরা পড়বে এবং অন্যকেও পড়াও’ বলেন তিনি।

নিজ গ্রামের নিরক্ষরকে অক্ষর জ্ঞান প্রদানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি তাঁর আহবানের পুনরোল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে গ্রামের স্কুল, আত্বীয়-স্বজন এবং পাড়া প্রতিবেশিকে পারলে পড়াশোনায় সহযোগিতা কর।’ প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলার এবং করোনা নামক সংক্রামক ব্যাধি থেকে নিরাপদ থাকার জন্য সকলের ফেস মাস্ক ব্যবহারের প্রতি তাঁর আহবান ও পুণর্ব্যক্ত করেন।

ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সংগ্রামে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দানকারী ঐতিহ্যবাহী ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। বাংলা, বাঙালির স্বাধিকার অর্জনের লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জন্ম হয়।

সংগঠনকে শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যদি সংগঠনটা শক্তিশালী না থাকে তাহলে কোন কাজই সফলভাবে করা যায়না। কারণ মানুষের শক্তিটাই সবথেকে বড় শক্তি। এই শক্তিই মানুষকে সাহস জোগায়, যেকোন পদক্ষেপ নেয়ার প্রেরণা জোগায়।’ তিনি ’৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর সে সময়কার সামরিক শাসনকে অগ্রাহ্য করে দেশে ফিরে এসে সংগঠন গড়ে তোলাতে মনোনিবেশ প্রসংগে আরো বলেন, ‘আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগই বেশি রক্ত দিয়েছে।’ তিনি বলেন,‘দেশের গণতান্ত্রিক অধিকার আদালয়ের আন্দোলন, ভোট ও ভাতের অধিকার আন্দোলন, স্বৈরাচার বিরোধি আন্দোলন থেকে যেকোন আন্দোলনেই যদি আমরা দেখি তাহলে সবথেকে বেশি রক্ত দিয়েছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

বিশেষকরে ’৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যার পর জিয়াউর রহমানের সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতা দখলের সময়।’ তিনি বলেন, ‘খন্দকার মোস্তাককে আগে সে (জিয়া) মদদ দেয় এবং এরপর মোস্তাককে হটিয়ে নিজেই রাষ্ট্রপতি বনে যায়। আর দেশে হত্যা, ক্যু, ষড়ন্ত্রের রাজনীতির গোড়াপত্তন করে।’
এরপর জিয়ার কাজই ছিল ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দকে প্রলোভন দিয়ে দলে টানার চেষ্টা এবং সেটা না হলে গুম,খুন, হত্যা, বলেন তিনি। এ সময় শিঙ্গাঙ্গণে মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার মাধ্যমে তাদের বিপথগামী করে জিয়াউর রহমান- এমন অভিযোগও আওয়ামী লীগ সভাপতির। পক্ষান্তরে তিনি ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে বই-কাগজ কলম তুলে দেন, বলেও উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেই আদর্শের বিচ্যুতি ঘটে ’৭৫ এর ১৫ আগষ্টের পর থেকে। যে কারণে বাংলাদেশ তাঁর কাঙ্খিত উন্নতি অর্জনে ব্যর্থ হয়। ক্ষমতাকে নিষ্কন্টক করার জন্য দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যা,নির্যাতন,গুম ও খুনে মেতে ওঠে সামরিক জান্তা। শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তান থেকে আলাদা হবার পর বাংলাদেশ আবার উন্নতি করতে পারে, এটা তারা মানতে চায়নি। বরং বাংলাদেশকে ব্যর্থ করতে চেয়েছিল। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের বিজয় যেন একেবারে নস্যাৎ হয়ে যায়- সেটাই তাদের লক্ষ্য ছিল এবং যে চক্রান্ত এখনও চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ুর অভিঘাত থেকে বাংলাদেশের মুক্তির জন্য মুজিববর্ষ উপলক্ষে তঁর সরকার গৃহীত বৃক্ষরোপন কর্মসূচিতে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণের জন্যও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানান।

মুজিবর্ষে দেশের সকল ভূমিহীন-গৃহহীনকে ঘরে করে দেয়ায় তাঁর সরকারের চলমান কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্যও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেক গৃহহীনকে আমরা ঘর করে দেব এবং মুজিবর্ষ এবং স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনকালে প্রত্যেক ঘরে বিদ্যুৎ দিয়ে সমগ্র দেশকে আমরা আলোকিত করবো।’ ‘মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি স্বাস্থ্য সহ মোলিক সেবাগুলো যেন সকলে পেতে পারে এবং মাথা উঁচু করে দেশের মানুষ বাঁচতে পারে সে পদক্ষেপও নেব’, যোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা প্রকৃতি ও পরিবেশকে রক্ষা করবো। পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদনের দিকেও আমাদের বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।
যার যেখানে যে জমি রয়েছে বা পরিত্যক্ত জমিতে তিনি ফসল ফলানোর মাধ্যমে করোনার প্রাদুর্ভাবে বিশ্বে খাদ্য সংকট দেখা দিলে তা মোকাবেলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করায় এসময় তিনি দেশের মানুষের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতার কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন।