লকডাউনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখতে ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ

- আপডেট সময় : ১১:৩৪:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ এপ্রিল ২০২১ ২৫৮ বার পড়া হয়েছে
জাবির আবদুল্লা, ঢাকা
গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণের ঘোষণা আসার পর ২৬ মার্চ থেকে পর্যায়ক্রমে ৬৬ দিন লকডাউন চলে। এসময় জরুরি সেবা ছাড়া সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। আর ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাতে করে ব্যবসায়ীরা যে পরিমাণ ক্ষতির মুখে পড়েছেন, তা পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করছিলেন তারা। লকডাউনে পড়ে অনেকে ঋণিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় দ্বিতীয় দফার লকডাউটনের ঘোষণাটা ব্যবসায়ীদের হ্রদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটে।
লকডাউনের বিরোধীতা করে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, গত বছর করোনা প্রদুর্ভাবে কারণে ৬৬দিন লকডাউন চলে। তাতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন তারা। সেই ক্ষতি কাটিতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর তখনই ফের লকডাউন। এ অবস্থায় লকডাউন বিরোধীতা করা ছাড়া তাদের সামনে আর কোন পথ খোলা নেই।
যদিও শনিবারই এক সপ্তাহের লকডাউনের কথা জানা গেছে সরকারের তরফে। সেদিন সরকারী ছুটি থাকায় রবিবার মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত জরুরি সেবা ছাড়া সব কিছ বন্ধ থাকবে। খোলা থাকবে শিল্পপ্রতিষ্ঠান। সেখানে শিফটিং কাজ চলবে। সরকারের বিভিন্ন আধিকারীকরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সাধারণের এতটাই উপেক্ষা, কারণে এ মুহূর্তে মানুষ রক্ষায় লকডউনের বিকল্প কিছু ছিলো না।
লকডাউনের বিরোধীতা করে ঢাকায় রাস্তায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েন বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। কম্পিউটার ব্যবসায়ী নাদিম উদ্দিন সোজাল বলেন, করোনার উর্ধমুখি বিস্তারকে রুখতে লকডাউন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যবসায়ীরাও দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে পড়ে যাবেন। ব্যবসায়ীদের বিষয়টি মাথায় রেখে কোন প্রকারের ছাড়া দেওয়া যায় কিনা সেই বিষয়ে ভেবে দেখার পরামর্শ দেন এই ব্যবসায়ীর। তিনি বলেন, গত লকডাউনে তারা যে ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন এবং অনেকেই ঋণগ্রস্ত। এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠতে যখন প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছিলেন, তখনই ফের লকডাউন। এতে করে দ্বিতীয়বার ক্ষতিরমুখে পড়তে হলো তাদের।
এদিন দুপুরে ঢাকা অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকায় ‘মতিঝিলে কম্পিউটার সোসাইটি’ লকডাউনের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখায়। সোসাইটির সভাপতি আমিনুল হক বলেন, তারা গত বছর দীর্ঘ সময় ব্যবসা বন্ধ থাকায় অর্থনৈতিক ভাবে তারা ঋণগ্রস্ত। ব্যাংকের টাকা শোধ করতে পারছেন না। যে মুহুর্তে কিছুটা ঘুচিয়ে নেবার চেষ্টা করছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে ফের লকডাউন। এতে করে প্রায় দেড় লাখ মানুষ কর্মহারা হবে। একই সময়ে লকডাউনের বিরোধীতা করে ঢাকার নিউ মার্কেট এলাকায় হাজারো ব্যবসায়ী-কর্মচারিরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে একদিনে অর্থাৎ ২৪ ঘন্টায় ৩০ হাজার ৭২৪টি নমুনা পরীক্ষায় ৭ হাজার ৮৭ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে। এটিই এযাবতকালের সর্বোচ্চ। যা নিয়ে আক্রান্ত সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৭ শতাংশ। একই সময়ে আরও ৫৩ জনের মৃত্যু ঘটেছে। যাতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ২৬৬ জনে। এখনও পর্যন্ত মোট করোনা আক্রান্ত সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৩৬৪ জন। রবিবার সুস্থহয়ে ওঠেন ২ হাজার ৭০৭ জন। যা নিয়ে মোট সুস্থতার সংখ্যা ৫ লাখ ৫২ হাজার ৪৮২ জন।
কাঁচাবাজারের পা ফেলে জায়গা নেই। লকডাউনের কারণে সবই বন্ধ থাকবে। তাই জ্বলন্ত সূর্য্য মাথায় নিয়ে হাজারো মানুষ ছুটে চলছে গন্তব্যে। নানা পেশাজীবী মানুষের মানুষের গন্তব্যস্থল বিভিন্ন বাস-লঞ্চ টার্মিনাল। দুপুরে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ঢুকতে গিয়েই দেখা গেল, টিকিট কাউন্টারে সামনে দীর্ঘ লাইন। সকলকে খুবই অসহায় মনে হচ্ছিল। উত্তর একটাই, সবতো বন্ধু। তারপর ঢাকায় থেকে বাড়তি খরচ টানা সম্ভব নয়। ঢাকার তিনটি বাস টামিনাল, সায়দাবাদ, গাবতলী ও মহাখালি এবং কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ছাড়াও সদরঘাট লঞ্চ টামিনালে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। অবশ্য লকডাউনের ঘোষণায় শনিবার রাত থেকেই ঢাকা ছাড়তে শুরু করেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।