রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন : হঠাৎ উদ্যোগী মিয়ানমার, নেপথ্যে চাপ চীনের
- আপডেট সময় : ০১:২৪:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ মার্চ ২০২৩ ৪৫ বার পড়া হয়েছে

গত সপ্তাহে আট দেশের কূটনীতিককে রাখাইনে নিয়ে যায় মিয়ানমারের জান্তা সরকার : ছবি মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার-এর সৌজন্যে
গত সপ্তাহে আট দেশের কূটনীতিককে রাখাইনে নিয়ে যায় মিয়ানমারের জান্তা সরকার : ছবি মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার-এর সৌজন্যে
মিয়ানমার এখন পাইলট প্রকল্পের আওতায় এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি সামনে এনেছে। ঢাকা ও ইয়াঙ্গুনের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, মূলত চীনের চাপে মিয়ানমার এ উদ্যোগ নিয়েছে
অনলাইন ডেস্ক
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে হঠাৎ উদ্যোগী হয়েছে মিয়ানমার। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ, ভারত ও চীনের কূটনীতিকসহ ইয়াঙ্গুনে নিযুক্ত আট দেশের কূটনীতিককে রাখাইনে নিয়ে যাওয়া হয়।
রাখাইন থেকে রোহিঙ্গা বিতাড়নের তিন মাসের মাথায় ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ চুক্তি সই করেছিল। এ চুক্তির নেপথ্যে ছিল চীন। কিন্তু গত প্রায় ছয় বছরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
২০১৮ সালে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বেঁধে দেওয়া সময়ে এক দফা প্রত্যাবাসন শুরুর চেষ্টা ব্যর্থ হয়। পরে চীনের মধ্যস্থতায় ২০১৯ সালে আবার প্রত্যাবাসন শুরুর চেষ্টা হলেও শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। এ ঘটনার পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসংক্রান্ত আলোচনা কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, প্রত্যাবাসনসংক্রান্ত আলোচনায় চীন যুক্ত হওয়ার পর ২০২০ সাল থেকে ছোট পরিসরে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। কয়েক মাস ধরে এ বিষয়ে মিয়ানমারকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে চীন।
রোহিঙ্গা সমস্যার গভীরে না গেলেও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানও চাইছে, ছোট পরিসরে হলেও প্রত্যাবাসন শুরু হোক। এরই অংশ হিসেবে মিয়ানমারের মংডু ও সিটুওয়ে শহরে অন্তর্র্বতীকালীন শিবিরসহ আশপাশের এলাকা ৮ দেশের ১১ কূটনীতিককে সরেজমিন দেখানো হয়েছে।
রাখাইন সফর করা কূটনীতিকদের পর্যবেক্ষণ হলো, ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের তুলনায় রাখাইনের পরিস্থিতি এখন কিছুটা ভালো। সেখানকার অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত লোকজনের শিবিরে (আইডিপি) থাকা রোহিঙ্গারা এখন সিটুওয়ে শহরে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। অথচ বছর দুয়েক আগেও শিবিরের আশপাশে কাউকে ঘেঁষতে দেওয়া হতো না।
এ ছাড়া গত বছর সিটুওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২৩০ রোহিঙ্গা ছাত্র ভর্তি হন। ২০১২ সালের পর এই প্রথম এত সংখ্যক রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন। পাশাপাশি রাখাইনে রোহিঙ্গারা স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ পাচ্ছেন।
বেইজিংয়ের মধ্যস্থতায় তিন বছর আগে নির্দিষ্ট গ্রাম ধরে পরিবারভিত্তিক রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু করোনা মহামারি ও মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের জেরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া থমকে যায়।
দীর্ঘ বিরতির পর এখন মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে তৎপর হতে দেখা গেল। এ তৎপরতার আসল উদ্দেশ্য কী, প্রত্যাবাসন শুরু আদৌ সম্ভব কি না, এসব প্রশ্ন সামনে আসছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এ মুহূর্তে রাখাইনের পরিস্থিতি ভালো। আরাকান আর্মি কয়েক মাস আগে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে তুমুল লড়াইয়ে ছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত। এ অবস্থায় হাজারখানেক রোহিঙ্গাকে দিয়ে প্রত্যাবাসন শুরু করা একেবারেই অসম্ভব নয়। আগামী জুনে পুরোদমে বর্ষাকাল শুরুর আগে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে চীনের তাগিদ আছে। আসিয়ানও চায়, ছোট পরিসরে হলেও প্রত্যাবাসন শুরু হোক।