ঢাকা ০৭:২১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাষ্ট্রপুঞ্জ শান্তিরক্ষী দিবস

ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৭:১৪:৫৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ মে ২০২১ ১৯৬ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ছবি: সংগৃহীত

‘৪০ দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশ। রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। এ পর্যন্ত শান্তিরক্ষা মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় বাংলাদেশের ১৫৯ জন শান্তিরক্ষী মৃত্যুবরণ করেছেন’

স্থায়ী শান্তি বজায় রাখার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির কার্যক্রমের অংশ শান্তিরক্ষা। গবেষণা বলছে, শান্তিরক্ষা সাম্প্রতিক সময়ে ঘটিত যুদ্ধবিগ্রহে সাধারণ জনগণ ও যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকদের মৃত্য ঝুঁকি কমিয়েছে।

রাষ্ট্রপুঞ্জ (জাতিসংঘ) জাতি-রাষ্ট্রের সরকার ও সংগঠনের গোষ্ঠীর মধ্যে একটি সাধারণ উপলব্ধি রয়েছে যে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শান্তিরক্ষীরা সংঘাত-পরবর্তীএলাকায় শান্তি প্রক্রিয়ার নিরীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ করে এবং শান্তি চুক্তির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রাক্তন যোদ্ধাদের সহায়তা করতে পারে যার প্রতিশ্রুতি তারা গ্রহণ করেছে।

যেমন নির্বাচনী সহায়তা, আইনের শাসনকে শক্তিশালী করা এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন। রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষীরা সৈন্য, পুলিশ কর্মকর্তা এবং বেসামরিক ব্যক্তিদের শান্তিরক্ষী হিসাবে অন্তর্ভুক্তির সুযোগ রয়েছে।

রাষ্ট্রপুঞ্জ একমাত্র শান্তিরক্ষী মিশন বাস্তবায়নের সংস্থা নয়। ন্যাটোর কসোভো মিশন (রাষ্ট্রপুঞ্জের অনুমোদন সাপাক্ষে) এবং সিনাই উপদ্বীপে বহুজাতিক বাহিনী ও পর্যবেক্ষকগণ অথবা ইইউআরএফআর এর মত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংগঠিত সংগঠন (রাষ্ট্রপুঞ্জের অনুমোদন সাপাক্ষে)।

আজ আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রপুঞ্জ শান্তিরক্ষী দিবস। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিশ্বের ৪০টি দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করেছে বাংলাদেশ। ৪০টি দেশে রাষ্ট্রপুঞ্জের ৫৪টি শান্তিরক্ষা মিশন সম্পন্ন করেছে। যেখানে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৬৬৯ জন বাংলাদেশি অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৫৩ জন এবং পুলিশের ২০ হাজার ৩১৬ জন সদস্য ছিলেন। সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সেনাবাহিনীর ১ লাখ ৪২ হাজার ৭৯০ জন, নৌবাহিনীর ৬ হাজার ১২ জন এবং বিমানবাহিনীর ৭ হাজার ৫৫১ জন ছিলেন।

এদের মধ্যে মহিলা শান্তি রক্ষী ছিলেন ২ হাজার ১৮৪ জন। তাদের মধ্যে সেনাবাহিনীর ৪২৯ জন, নৌবাহিনীর ২২ জন, বিমান বাহিনীর ১১০ ও পুলিশ বাহিনীর ১ হাজার ৬২৩ জন নারী সদস্য। বর্তমানে জাতিসংঘের ৯টি শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ৬ হাজার ৭৪২ জন শান্তিরক্ষী কর্মরত রয়েছেন। এরমধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর ৬ হাজার ২৪১ জন এবং পুলিশ সদস্য ৫০১ জন।

সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সেনাবাহিনীর ৫ হাজার ৩০৮ জন, নৌবাহিনীর ৩৪৫ জন এবং বিমান বাহিনীর ৫৮৮ জন শান্তিরক্ষী কর্মরত আছেন। বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে নিয়োজিত বাংলাদেশি মহিলা শান্তিরক্ষীর সংখ্যা ২৮৪ জন। এদের মধ্যে সেনাবাহিনীর ১১৯ জন, নৌবাহিনীর পাঁচ জন, বিমানবাহিনীর ১০ জন ও পুলিশের ১৫০ জন রয়েছেন।

বাংলাদেশ প্রথম অবস্থানে

রাষ্ট্রপুঞ্জ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ বর্তমানে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। এ পর্যন্ত শান্তিরক্ষা মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় বাংলাদেশের ১৫৯ জন শান্তিরক্ষী মৃত্যুবরণ করেছেন। তার পরও রাষ্ট্রপুঞ্জে শান্তিরক্ষা-মিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা। তারা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জনগণের সঙ্গে মিশে গিয়েছেন।

“বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ভূমিকায় প্রশংসিত হয়ে সিয়েরালিওন তাদের দেশের প্রধান ভাষা বাংলা করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের সংবিধান অনুযায়ী করতে না পারায় দেশটির দ্বিতীয় ভাষা এখন বাংলা।”

১৯৮৮ সাল থেকে রাষ্ট্রপুঞ্জে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অদ্যাবধি বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর সর্বোচ্চ পেশাদারি মনোভাব, আনুগত্য ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা। তাদের অনন্য অবদান আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা শান্তিরক্ষা-মিশনে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছেন।

দ্যাগ হ্যামারশোল্ড মেডেল

রাষ্ট্রপুঞ্জে শান্তিরক্ষা মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় আত্মোৎসর্গকারী আট বাংলাদেশিসহ বিশ্বের ৪৪টি দেশের ১২৯ জন শান্তিরক্ষীকে সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য ‘দ্যাগ হ্যামারশোল্ড মেডেল’ প্রদান করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জে। নিউইয়র্ক স্থানীয় সময় অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপুঞ্জের সদর দপ্তরে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ পদক দেওয়া হয়। পদকপ্রাপ্তদের মধ্যে বাংলাদেশের ৮ জন শান্তিরক্ষী রয়েছেন, যা একক দেশ হিসেবে সর্বোচ্চ। ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাষ্ট্রপুঞ্জ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ বাংলাদেশসহ ৪৪টি দেশের স্থায়ী প্রতিনিধিদের হাতে স্ব স্ব দেশের মেডেল তুলে দেন।

কর্তব্যরত অবস্থায় আত্মোৎসর্গকারী বাংলাদেশের আট জন শান্তিরক্ষীর মধ্যে রয়েছেন, মালিতে নিয়োজিত মিনুস্মা মিশনের ওয়ারেন্ট অফিসার আবদুল মো. হালিম, কঙ্গোতে নিয়োজিত মনুস্কো মিশনের ওয়ারেন্ট অফিসার মো. সাইফুল ইমাম ভূঁইয়া, সার্জেন্ট মো. জিয়াউর রহমান, সার্জেন্ট এমডি মোবারক হোসেন ও ল্যান্স কর্পোরাল মো. সাইফুল ইসলাম, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক-এ নিয়োজিত মিনুস্কা মিশনের ল্যান্স কর্পোরাল মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সার্জেন্ট মো. ইব্রাহীম এবং দক্ষিণ সুদানে নিয়োজিত আনমিস্ মিশনের ওয়াসারম্যান নুরুল আমিন। বাংলাদেশের তরফে মেডেল গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপুঞ্জে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠানটিতে আরও অংশগ্রহণ করেন মিশনের ডিফেন্স অ্যাডভাইজর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. ছাদেকুজ্জামান।

রাষ্ট্রপতির বাণী

‘আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রপুঞ্জ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২১’ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। এ উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপুঞ্জ শান্তিরক্ষা-মিশনে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের সকল শান্তিরক্ষীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিশ্বশান্তি রক্ষার মহান দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আত্মোৎসর্গকারী বীর শান্তিরক্ষী সদস্যদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন রাষ্ট্রপতি।

প্রধানমন্ত্রীর  বাণী

রাষ্ট্রপুঞ্জ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা গর্বভরে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শান্তিরক্ষা-মিশনে কর্মরত বাংলাদেশের সকল সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা। তিনি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছেন নিহত শান্তিরক্ষীদের। যারা বিশ্বশান্তির জন্য অকাতরে জীবন বিসর্জন দিয়ে বিশ্বদরবারে দেশের পতাকাকে সমুন্নত করেছেন। তিনি তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপুঞ্জে সদস্যপদ লাভ করে এবং ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলায় প্রদত্ত তার ঐতিহাসিক ভাষণে বিশ্বের সর্বত্র শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অব্যাহত সমর্থনের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তখন থেকেই বাংলাদেশ বিশ্বের শান্তি প্রিয় ও বন্ধু প্রতীম রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলছে এবং বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রপুঞ্জের অধীনে পরিচালিত সকল শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে আসছে।

আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য হলো ‘স্থায়ী শান্তির পথ : শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য তারুণ্যের শক্তি ব্যবহার’। শান্তিরক্ষীদের স্মরণে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শহিদ শান্তিরক্ষীদের নিকটাত্মীয় এবং আহত শান্তিরক্ষীদের জন্য সংবর্ধনা এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর বিশেষ উপস্থাপনার আয়োজন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

রাষ্ট্রপুঞ্জ শান্তিরক্ষী দিবস

আপডেট সময় : ০৭:১৪:৫৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ মে ২০২১

ছবি: সংগৃহীত

‘৪০ দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশ। রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। এ পর্যন্ত শান্তিরক্ষা মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় বাংলাদেশের ১৫৯ জন শান্তিরক্ষী মৃত্যুবরণ করেছেন’

স্থায়ী শান্তি বজায় রাখার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির কার্যক্রমের অংশ শান্তিরক্ষা। গবেষণা বলছে, শান্তিরক্ষা সাম্প্রতিক সময়ে ঘটিত যুদ্ধবিগ্রহে সাধারণ জনগণ ও যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকদের মৃত্য ঝুঁকি কমিয়েছে।

রাষ্ট্রপুঞ্জ (জাতিসংঘ) জাতি-রাষ্ট্রের সরকার ও সংগঠনের গোষ্ঠীর মধ্যে একটি সাধারণ উপলব্ধি রয়েছে যে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শান্তিরক্ষীরা সংঘাত-পরবর্তীএলাকায় শান্তি প্রক্রিয়ার নিরীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ করে এবং শান্তি চুক্তির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রাক্তন যোদ্ধাদের সহায়তা করতে পারে যার প্রতিশ্রুতি তারা গ্রহণ করেছে।

যেমন নির্বাচনী সহায়তা, আইনের শাসনকে শক্তিশালী করা এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন। রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষীরা সৈন্য, পুলিশ কর্মকর্তা এবং বেসামরিক ব্যক্তিদের শান্তিরক্ষী হিসাবে অন্তর্ভুক্তির সুযোগ রয়েছে।

রাষ্ট্রপুঞ্জ একমাত্র শান্তিরক্ষী মিশন বাস্তবায়নের সংস্থা নয়। ন্যাটোর কসোভো মিশন (রাষ্ট্রপুঞ্জের অনুমোদন সাপাক্ষে) এবং সিনাই উপদ্বীপে বহুজাতিক বাহিনী ও পর্যবেক্ষকগণ অথবা ইইউআরএফআর এর মত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংগঠিত সংগঠন (রাষ্ট্রপুঞ্জের অনুমোদন সাপাক্ষে)।

আজ আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রপুঞ্জ শান্তিরক্ষী দিবস। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিশ্বের ৪০টি দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করেছে বাংলাদেশ। ৪০টি দেশে রাষ্ট্রপুঞ্জের ৫৪টি শান্তিরক্ষা মিশন সম্পন্ন করেছে। যেখানে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৬৬৯ জন বাংলাদেশি অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৫৩ জন এবং পুলিশের ২০ হাজার ৩১৬ জন সদস্য ছিলেন। সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সেনাবাহিনীর ১ লাখ ৪২ হাজার ৭৯০ জন, নৌবাহিনীর ৬ হাজার ১২ জন এবং বিমানবাহিনীর ৭ হাজার ৫৫১ জন ছিলেন।

এদের মধ্যে মহিলা শান্তি রক্ষী ছিলেন ২ হাজার ১৮৪ জন। তাদের মধ্যে সেনাবাহিনীর ৪২৯ জন, নৌবাহিনীর ২২ জন, বিমান বাহিনীর ১১০ ও পুলিশ বাহিনীর ১ হাজার ৬২৩ জন নারী সদস্য। বর্তমানে জাতিসংঘের ৯টি শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ৬ হাজার ৭৪২ জন শান্তিরক্ষী কর্মরত রয়েছেন। এরমধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর ৬ হাজার ২৪১ জন এবং পুলিশ সদস্য ৫০১ জন।

সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সেনাবাহিনীর ৫ হাজার ৩০৮ জন, নৌবাহিনীর ৩৪৫ জন এবং বিমান বাহিনীর ৫৮৮ জন শান্তিরক্ষী কর্মরত আছেন। বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে নিয়োজিত বাংলাদেশি মহিলা শান্তিরক্ষীর সংখ্যা ২৮৪ জন। এদের মধ্যে সেনাবাহিনীর ১১৯ জন, নৌবাহিনীর পাঁচ জন, বিমানবাহিনীর ১০ জন ও পুলিশের ১৫০ জন রয়েছেন।

বাংলাদেশ প্রথম অবস্থানে

রাষ্ট্রপুঞ্জ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ বর্তমানে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। এ পর্যন্ত শান্তিরক্ষা মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় বাংলাদেশের ১৫৯ জন শান্তিরক্ষী মৃত্যুবরণ করেছেন। তার পরও রাষ্ট্রপুঞ্জে শান্তিরক্ষা-মিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা। তারা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জনগণের সঙ্গে মিশে গিয়েছেন।

“বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ভূমিকায় প্রশংসিত হয়ে সিয়েরালিওন তাদের দেশের প্রধান ভাষা বাংলা করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের সংবিধান অনুযায়ী করতে না পারায় দেশটির দ্বিতীয় ভাষা এখন বাংলা।”

১৯৮৮ সাল থেকে রাষ্ট্রপুঞ্জে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অদ্যাবধি বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর সর্বোচ্চ পেশাদারি মনোভাব, আনুগত্য ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা। তাদের অনন্য অবদান আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা শান্তিরক্ষা-মিশনে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছেন।

দ্যাগ হ্যামারশোল্ড মেডেল

রাষ্ট্রপুঞ্জে শান্তিরক্ষা মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় আত্মোৎসর্গকারী আট বাংলাদেশিসহ বিশ্বের ৪৪টি দেশের ১২৯ জন শান্তিরক্ষীকে সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য ‘দ্যাগ হ্যামারশোল্ড মেডেল’ প্রদান করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জে। নিউইয়র্ক স্থানীয় সময় অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপুঞ্জের সদর দপ্তরে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ পদক দেওয়া হয়। পদকপ্রাপ্তদের মধ্যে বাংলাদেশের ৮ জন শান্তিরক্ষী রয়েছেন, যা একক দেশ হিসেবে সর্বোচ্চ। ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাষ্ট্রপুঞ্জ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ বাংলাদেশসহ ৪৪টি দেশের স্থায়ী প্রতিনিধিদের হাতে স্ব স্ব দেশের মেডেল তুলে দেন।

কর্তব্যরত অবস্থায় আত্মোৎসর্গকারী বাংলাদেশের আট জন শান্তিরক্ষীর মধ্যে রয়েছেন, মালিতে নিয়োজিত মিনুস্মা মিশনের ওয়ারেন্ট অফিসার আবদুল মো. হালিম, কঙ্গোতে নিয়োজিত মনুস্কো মিশনের ওয়ারেন্ট অফিসার মো. সাইফুল ইমাম ভূঁইয়া, সার্জেন্ট মো. জিয়াউর রহমান, সার্জেন্ট এমডি মোবারক হোসেন ও ল্যান্স কর্পোরাল মো. সাইফুল ইসলাম, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক-এ নিয়োজিত মিনুস্কা মিশনের ল্যান্স কর্পোরাল মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সার্জেন্ট মো. ইব্রাহীম এবং দক্ষিণ সুদানে নিয়োজিত আনমিস্ মিশনের ওয়াসারম্যান নুরুল আমিন। বাংলাদেশের তরফে মেডেল গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপুঞ্জে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠানটিতে আরও অংশগ্রহণ করেন মিশনের ডিফেন্স অ্যাডভাইজর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. ছাদেকুজ্জামান।

রাষ্ট্রপতির বাণী

‘আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রপুঞ্জ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২১’ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। এ উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপুঞ্জ শান্তিরক্ষা-মিশনে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের সকল শান্তিরক্ষীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিশ্বশান্তি রক্ষার মহান দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আত্মোৎসর্গকারী বীর শান্তিরক্ষী সদস্যদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন রাষ্ট্রপতি।

প্রধানমন্ত্রীর  বাণী

রাষ্ট্রপুঞ্জ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা গর্বভরে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শান্তিরক্ষা-মিশনে কর্মরত বাংলাদেশের সকল সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা। তিনি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছেন নিহত শান্তিরক্ষীদের। যারা বিশ্বশান্তির জন্য অকাতরে জীবন বিসর্জন দিয়ে বিশ্বদরবারে দেশের পতাকাকে সমুন্নত করেছেন। তিনি তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপুঞ্জে সদস্যপদ লাভ করে এবং ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলায় প্রদত্ত তার ঐতিহাসিক ভাষণে বিশ্বের সর্বত্র শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অব্যাহত সমর্থনের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তখন থেকেই বাংলাদেশ বিশ্বের শান্তি প্রিয় ও বন্ধু প্রতীম রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলছে এবং বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রপুঞ্জের অধীনে পরিচালিত সকল শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে আসছে।

আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য হলো ‘স্থায়ী শান্তির পথ : শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য তারুণ্যের শক্তি ব্যবহার’। শান্তিরক্ষীদের স্মরণে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শহিদ শান্তিরক্ষীদের নিকটাত্মীয় এবং আহত শান্তিরক্ষীদের জন্য সংবর্ধনা এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর বিশেষ উপস্থাপনার আয়োজন।