ঢাকা ০৯:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মোদের পাকবে না চুল …

সংগ্রহ : সুস্মিতা মুখার্জী দাস
  • আপডেট সময় : ০৯:১০:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ মে ২০২১ ২৭২ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রবীন্দ্রনাথ একদিন উত্তরায়ণের বারান্দায় এক কোণে টেবিল চেয়ারে বসে লেখায় মগ্ন। এক সাঁওতাল মেয়ে বাগানের ঘাস পরিষ্কার করে বিকেলে রবীন্দ্রনাথের পাশটিতে এসে দাঁড়াল। কবি মুখ তুলে তার দিকে চাইতে সে বলল,
হ্যাঁরে, তুর কি কুন কাজ লাই? সেই সকালবেলা যখন কাজে এলাম দেখলাম এখানে বসে কি করছিস! দুপুরেও দেখলাম এখানে বসে আছিস আবার সনঝেবেলা আমাদের ঘরকে যাবার সময় হয়েছে — এখনও তুই এখানে বসে আছিস, তুকে কি কেউ কুন কাজ দেয় লা?
রবীন্দ্রনাথ নিজেই এই গল্পটি বলে বলতেন,
দেখছ সাঁওতাল মেয়ের কি বুদ্ধি! আমার স্বরূপটা ও ঠিক ধরে ফেলেছে।

বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় অর্থাৎ বনফুল এসেছেন ভাগলপুর থেকে শান্তিনিকেতনে। সকাল এগারোটা নাগাদ বনফুল এলেন উত্তরায়ণে রবীন্দ্রনাথের সাথে দেখা করতে। তিনি দেখলেন একটা বিরাট ঘরে বিরাট টেবিলে ঝুঁকে পড়ে কবিগুরু লিখে চলেছেন। বনফুলের দিকে চেয়ে গুরুদেব বললেন,
বস তোমরা, আমার এখুনি হয়ে যাবে।
বনফুল জিজ্ঞেস করলেন,
অত ঝুঁকে লিখতে আপনার কষ্ট হয় না? আজকাল তো নানারকম চেয়ার বেরিয়েছে, ঠেস দিয়ে বসে আরাম করে লেখা যায়।
গুরুদেব হাসতে হাসতে বললেন,
সবরকম চেয়ারই আমার আছে। কিন্তু ঝুঁকে না লিখলে লেখা বেরোয় না। কুঁজোর জল কমে গেছে তো, তাই উপুড় করতে হয়।

রবীন্দ্রনাথ আর বনফুল গেছেন এক সভায়। সেই সভায় বনফুলের বক্তৃতা শুনে প্রশংসা করলেন সবাই। রবীন্দ্রনাথ হেসে বললেন,
বলাই তো ভালোই বক্তৃতা দেবে, ওর নাম যে বলাই। বলাই তো ওর কাজ।

তেমনি এক গানের আসরে গেছেন রবীন্দ্রনাথ। সেখানে বিখ্যাত ধ্রুপদ গায়ক গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় গান গাইছেন। তাঁর গান শেষ হওয়ার পর উদ্যোক্তারা রবীন্দ্রনাথকে গাইতে অনুরোধ করলেন। রবীন্দ্রনাথ তখন তাঁর স্বভাবসিদ্ধ হাসিমুখে বললেন,
গোপেশ্বরের পর এবার কি দাড়ীশ্বরের পালা?

একবার শান্তিনিকেতনে ওজনের একটি মেশিন ক্রয় করা হয় এবং এতে ছেলেমেয়েদের একে একে ওজন নেওয়া হচ্ছিল। রবীন্দ্রনাথ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তা লক্ষ করছিলেন। এক একজনের ওজন শেষ হলেই কবি তাঁকে জিজ্ঞাসা করছিলেন,
কিরে তুই কত হলি!

এর মধ্যে একটি স্থুলকায় মেয়ে বলল, ‘দু’মন’। এই মেয়েটির সে সময় বিয়ের আলাপ চলছিল এবং কবি তা জানতেন। তাই তিনি পরিহাস করে বললেন,
তুই এখনো দু’মন,  এখনো এক মন হলি নে?

রবীন্দ্রনাথ একদিন বিকেলে ছেলেমেয়েদের নিয়ে নৃত্যনাট্যের রিহার্সাল করাচ্ছেন। একজন এসে বললেন,
গুরুদেব চা খাবেন?
রবীন্দ্রনাথ বললেন, আমি না-চা’র দলে।
সেই ব্যক্তি বুঝলেন রবীন্দ্রনাথের রসিকতা, ভাবলেন গুরুদেবকে ইংরেজীতে প্রশ্ন করে জব্দ করবেন। তিনি বললেন, Wont you have tea?

রবীন্দ্রনাথ তেমনই মুচকি হেসে বললেন,
আমি no-teai (নটির) দলে।

এক গ্রীষ্মকালের রাতে কবি শুয়ে আছেন বিছানায়। জ্যোৎস্না এসে পড়ছে তাঁর চোখে-মুখে। তিনি ভৃত্য মহাদেবকে ডেকে বললেন,
ওরে, চাঁদটা ঢেকে দে তো, ঘুম হচ্ছে না।
মহাদেব ভেবে পেলনা কিভাবে চাঁদকে সে ঢাকবে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মাথা চুলকোতে লাগল। কবি বললেন,
পারছিস না তো? আচ্ছা এক কাজ কর। ওই জানালাটা বন্ধ করে দে।
মহাদেব জানালা বন্ধ করতেই ঘর অন্ধকার হয়ে গেল। কবি এবার বললেন,
কিরে এবার চাঁদ ঢাকা পড়ল?

মহাদেব ছাড়াও তাঁর খাসভৃত্য বনমালীর সাথে তিনি নানা বিষয় নিয়ে গল্পগুজব ও হাসিঠাট্টা করতেন। একবার এক ভদ্রমহিলা বিরক্ত হয়ে রবীন্দ্রনাথকে প্রশ্ন করলেন,
আপনি বনমালীকে চাকর বলেন কেন?
রবীন্দ্রনাথ মৃদু হেসে জবাব দিলেন,
চা খেতে ইচ্ছে করলে কি আমি তাকে চা-কর বলবো না?
কবির উত্তর শুনে সেই ভদ্রমহিলা বিব্রত বোধ করলেন, খানিকটা লজ্জাও পেলেন।

রবীন্দ্রনাথ একবার বেড়াতে এসেছেন বেয়াই বাড়িতে। তিনি আসতেই তাঁকে যথারীতি আপ্যায়ন করে একটি গদিমোড়া কেদারায় বসতে দেওয়া হল। কেদারার দিকে তাকিয়ে কবি বললেন,

এটা সজীব না তো?

এ কথা শুনে সবাই হতবাক — ভাবছেন কেদারা তো জড় পদার্থ, তা আবার সজীব কি করে হতে পারে? কবি সকলের মনের কথা বুঝতে পেরে হা হা করে হেসে বললেন,
আমি বলছি চেয়ারটা সজীব মানে ছারপোকা ভর্তি নয় তো?

রবীন্দ্রনাথ তখন অসুস্থ, শান্তিনিকেতনেই আছেন। পুত্রবধূ প্রতিমাদেবী দুপুরবেলা তাঁর কাছে এসে বসেছেন। হঠাৎ রবীন্দ্রনাথ বললেন,
বাঁদরটা বড় জ্বালাচ্ছে!
প্রতিমাদেবী তো চারিদিকে ভালো করে তাকালেন, কোনো বাঁদর তার চোখে পড়ল না, তাহলে বাঁদর তাড়াবেন কি করে? কিন্তু গুরুদেবকে সে কথা বলেন কি করে? রবীন্দ্রনাথ আবার বিরক্ত হয়ে বললেন,

কি হল, দেখছ না, বাঁদরটা জ্বালাচ্ছে?

প্রতিমাদেবী অবাক হয়ে কবির মুখের দিকে চেয়ে রইলেন। কবি পুত্রবধূর অবস্থা বুঝতে পেরে হেসে বললেন, বাঁ দোরটা বন্ধ কর, রোদ এসে মুখে বড্ড লাগছে।

১৯৪০ সাল, অসুস্থ রবীন্দ্রনাথ জোড়াসাঁকোয় আছেন। একদিন সকালবেলা তাঁকে বিছানায় শোয়া অবস্থায় হাতমুখ ধুইয়ে চুল আঁচড়ে দেওয়ার পর অনিলকুমার চন্দ তাঁর সাথে দেখা করতে এলেন। কবি তখন উঠে বসতে পারেন না।

কিন্তু শারীরিক এই অসুস্থতার মধ্যেও তাঁর রসিকতায় এতটুকুও কম পড়েনি। অনিলকুমার তাঁকে প্রণাম করার পর তিনি গম্ভীর স্বরে বললেন,
রবীন্দ্র রচনাবলীর এখনকার ‘মুখ্য’ সংস্করণের খবর কি?
অনিলকুমার তক্ষুনি রবীন্দ্র রচনাবলীর প্রকাশের খবর বলতে শুরু করলেন। রবীন্দ্রনাথ তাকে ধমক দিয়ে বলে উঠলেন,
সিলেটি বাঙাল। আমি জানতে চেয়েছিলাম আমার আজ মুখের অবস্থা কি রকম?

এই সমস্ত টুকরো হাসির মধ্যেই আমরা খুঁজে পাই মানুষ রবীন্দ্রনাথকে। আসলে রসিক,  রঙ্গপ্রিয় না হলে হয়তো বড় মাপের মানুষ হওয়া যায় না। আর তাই কবি বলেন,

এত বুড়ো কোনোকালে হব নাকো আমি
হাসি-তামাশারে যবে কব ছ্যাব্লামি।

এ নিয়ে প্রবীণ যদি করে রাগারাগি
বিধাতার সাথে তারে করি ভাগাভাগি
হাসিতে হাসিতে লব মানি।

তথ্যসূত্র -শান্তা শ্রীমানী। রবীন্দ্র রসিকতা; পত্রলেখা,

বি.দ্র. (অসংখ্য হাসির ঘটনা থেকে বাছাই করে মাত্র কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।)

 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

মোদের পাকবে না চুল …

আপডেট সময় : ০৯:১০:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ মে ২০২১

রবীন্দ্রনাথ একদিন উত্তরায়ণের বারান্দায় এক কোণে টেবিল চেয়ারে বসে লেখায় মগ্ন। এক সাঁওতাল মেয়ে বাগানের ঘাস পরিষ্কার করে বিকেলে রবীন্দ্রনাথের পাশটিতে এসে দাঁড়াল। কবি মুখ তুলে তার দিকে চাইতে সে বলল,
হ্যাঁরে, তুর কি কুন কাজ লাই? সেই সকালবেলা যখন কাজে এলাম দেখলাম এখানে বসে কি করছিস! দুপুরেও দেখলাম এখানে বসে আছিস আবার সনঝেবেলা আমাদের ঘরকে যাবার সময় হয়েছে — এখনও তুই এখানে বসে আছিস, তুকে কি কেউ কুন কাজ দেয় লা?
রবীন্দ্রনাথ নিজেই এই গল্পটি বলে বলতেন,
দেখছ সাঁওতাল মেয়ের কি বুদ্ধি! আমার স্বরূপটা ও ঠিক ধরে ফেলেছে।

বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় অর্থাৎ বনফুল এসেছেন ভাগলপুর থেকে শান্তিনিকেতনে। সকাল এগারোটা নাগাদ বনফুল এলেন উত্তরায়ণে রবীন্দ্রনাথের সাথে দেখা করতে। তিনি দেখলেন একটা বিরাট ঘরে বিরাট টেবিলে ঝুঁকে পড়ে কবিগুরু লিখে চলেছেন। বনফুলের দিকে চেয়ে গুরুদেব বললেন,
বস তোমরা, আমার এখুনি হয়ে যাবে।
বনফুল জিজ্ঞেস করলেন,
অত ঝুঁকে লিখতে আপনার কষ্ট হয় না? আজকাল তো নানারকম চেয়ার বেরিয়েছে, ঠেস দিয়ে বসে আরাম করে লেখা যায়।
গুরুদেব হাসতে হাসতে বললেন,
সবরকম চেয়ারই আমার আছে। কিন্তু ঝুঁকে না লিখলে লেখা বেরোয় না। কুঁজোর জল কমে গেছে তো, তাই উপুড় করতে হয়।

রবীন্দ্রনাথ আর বনফুল গেছেন এক সভায়। সেই সভায় বনফুলের বক্তৃতা শুনে প্রশংসা করলেন সবাই। রবীন্দ্রনাথ হেসে বললেন,
বলাই তো ভালোই বক্তৃতা দেবে, ওর নাম যে বলাই। বলাই তো ওর কাজ।

তেমনি এক গানের আসরে গেছেন রবীন্দ্রনাথ। সেখানে বিখ্যাত ধ্রুপদ গায়ক গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় গান গাইছেন। তাঁর গান শেষ হওয়ার পর উদ্যোক্তারা রবীন্দ্রনাথকে গাইতে অনুরোধ করলেন। রবীন্দ্রনাথ তখন তাঁর স্বভাবসিদ্ধ হাসিমুখে বললেন,
গোপেশ্বরের পর এবার কি দাড়ীশ্বরের পালা?

একবার শান্তিনিকেতনে ওজনের একটি মেশিন ক্রয় করা হয় এবং এতে ছেলেমেয়েদের একে একে ওজন নেওয়া হচ্ছিল। রবীন্দ্রনাথ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তা লক্ষ করছিলেন। এক একজনের ওজন শেষ হলেই কবি তাঁকে জিজ্ঞাসা করছিলেন,
কিরে তুই কত হলি!

এর মধ্যে একটি স্থুলকায় মেয়ে বলল, ‘দু’মন’। এই মেয়েটির সে সময় বিয়ের আলাপ চলছিল এবং কবি তা জানতেন। তাই তিনি পরিহাস করে বললেন,
তুই এখনো দু’মন,  এখনো এক মন হলি নে?

রবীন্দ্রনাথ একদিন বিকেলে ছেলেমেয়েদের নিয়ে নৃত্যনাট্যের রিহার্সাল করাচ্ছেন। একজন এসে বললেন,
গুরুদেব চা খাবেন?
রবীন্দ্রনাথ বললেন, আমি না-চা’র দলে।
সেই ব্যক্তি বুঝলেন রবীন্দ্রনাথের রসিকতা, ভাবলেন গুরুদেবকে ইংরেজীতে প্রশ্ন করে জব্দ করবেন। তিনি বললেন, Wont you have tea?

রবীন্দ্রনাথ তেমনই মুচকি হেসে বললেন,
আমি no-teai (নটির) দলে।

এক গ্রীষ্মকালের রাতে কবি শুয়ে আছেন বিছানায়। জ্যোৎস্না এসে পড়ছে তাঁর চোখে-মুখে। তিনি ভৃত্য মহাদেবকে ডেকে বললেন,
ওরে, চাঁদটা ঢেকে দে তো, ঘুম হচ্ছে না।
মহাদেব ভেবে পেলনা কিভাবে চাঁদকে সে ঢাকবে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মাথা চুলকোতে লাগল। কবি বললেন,
পারছিস না তো? আচ্ছা এক কাজ কর। ওই জানালাটা বন্ধ করে দে।
মহাদেব জানালা বন্ধ করতেই ঘর অন্ধকার হয়ে গেল। কবি এবার বললেন,
কিরে এবার চাঁদ ঢাকা পড়ল?

মহাদেব ছাড়াও তাঁর খাসভৃত্য বনমালীর সাথে তিনি নানা বিষয় নিয়ে গল্পগুজব ও হাসিঠাট্টা করতেন। একবার এক ভদ্রমহিলা বিরক্ত হয়ে রবীন্দ্রনাথকে প্রশ্ন করলেন,
আপনি বনমালীকে চাকর বলেন কেন?
রবীন্দ্রনাথ মৃদু হেসে জবাব দিলেন,
চা খেতে ইচ্ছে করলে কি আমি তাকে চা-কর বলবো না?
কবির উত্তর শুনে সেই ভদ্রমহিলা বিব্রত বোধ করলেন, খানিকটা লজ্জাও পেলেন।

রবীন্দ্রনাথ একবার বেড়াতে এসেছেন বেয়াই বাড়িতে। তিনি আসতেই তাঁকে যথারীতি আপ্যায়ন করে একটি গদিমোড়া কেদারায় বসতে দেওয়া হল। কেদারার দিকে তাকিয়ে কবি বললেন,

এটা সজীব না তো?

এ কথা শুনে সবাই হতবাক — ভাবছেন কেদারা তো জড় পদার্থ, তা আবার সজীব কি করে হতে পারে? কবি সকলের মনের কথা বুঝতে পেরে হা হা করে হেসে বললেন,
আমি বলছি চেয়ারটা সজীব মানে ছারপোকা ভর্তি নয় তো?

রবীন্দ্রনাথ তখন অসুস্থ, শান্তিনিকেতনেই আছেন। পুত্রবধূ প্রতিমাদেবী দুপুরবেলা তাঁর কাছে এসে বসেছেন। হঠাৎ রবীন্দ্রনাথ বললেন,
বাঁদরটা বড় জ্বালাচ্ছে!
প্রতিমাদেবী তো চারিদিকে ভালো করে তাকালেন, কোনো বাঁদর তার চোখে পড়ল না, তাহলে বাঁদর তাড়াবেন কি করে? কিন্তু গুরুদেবকে সে কথা বলেন কি করে? রবীন্দ্রনাথ আবার বিরক্ত হয়ে বললেন,

কি হল, দেখছ না, বাঁদরটা জ্বালাচ্ছে?

প্রতিমাদেবী অবাক হয়ে কবির মুখের দিকে চেয়ে রইলেন। কবি পুত্রবধূর অবস্থা বুঝতে পেরে হেসে বললেন, বাঁ দোরটা বন্ধ কর, রোদ এসে মুখে বড্ড লাগছে।

১৯৪০ সাল, অসুস্থ রবীন্দ্রনাথ জোড়াসাঁকোয় আছেন। একদিন সকালবেলা তাঁকে বিছানায় শোয়া অবস্থায় হাতমুখ ধুইয়ে চুল আঁচড়ে দেওয়ার পর অনিলকুমার চন্দ তাঁর সাথে দেখা করতে এলেন। কবি তখন উঠে বসতে পারেন না।

কিন্তু শারীরিক এই অসুস্থতার মধ্যেও তাঁর রসিকতায় এতটুকুও কম পড়েনি। অনিলকুমার তাঁকে প্রণাম করার পর তিনি গম্ভীর স্বরে বললেন,
রবীন্দ্র রচনাবলীর এখনকার ‘মুখ্য’ সংস্করণের খবর কি?
অনিলকুমার তক্ষুনি রবীন্দ্র রচনাবলীর প্রকাশের খবর বলতে শুরু করলেন। রবীন্দ্রনাথ তাকে ধমক দিয়ে বলে উঠলেন,
সিলেটি বাঙাল। আমি জানতে চেয়েছিলাম আমার আজ মুখের অবস্থা কি রকম?

এই সমস্ত টুকরো হাসির মধ্যেই আমরা খুঁজে পাই মানুষ রবীন্দ্রনাথকে। আসলে রসিক,  রঙ্গপ্রিয় না হলে হয়তো বড় মাপের মানুষ হওয়া যায় না। আর তাই কবি বলেন,

এত বুড়ো কোনোকালে হব নাকো আমি
হাসি-তামাশারে যবে কব ছ্যাব্লামি।

এ নিয়ে প্রবীণ যদি করে রাগারাগি
বিধাতার সাথে তারে করি ভাগাভাগি
হাসিতে হাসিতে লব মানি।

তথ্যসূত্র -শান্তা শ্রীমানী। রবীন্দ্র রসিকতা; পত্রলেখা,

বি.দ্র. (অসংখ্য হাসির ঘটনা থেকে বাছাই করে মাত্র কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।)