মৃত্যুঞ্জয়ী ভাষাসৈনিকদের প্রতি অবনত মস্তকে জাতির শ্রদ্ধা
- আপডেট সময় : ০৩:৩১:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২১ ২১৯ বার পড়া হয়েছে
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন : ছবি সংগ্রহ
ভয়েস রিপোর্ট, ঢাকা
মায়ের ভাষাকে প্রতিষ্ঠার জন্য রাজপথে অকাতরে প্রাণ উৎসর্গের ঘটনা বিরল। নজির গড়ে একের পর এক সংগ্রামের মাধ্যমে বাঙালি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে, তাদের অধিকার। পৃথিবীর কাছে যার বড় প্রমাণ ‘অমর একুশে ফেব্রুয়ারি’। এই ফ্রেব্রুয়ারি নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের আবেগ চির অম্লান। বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় এবং র্চ্চায় প্রতিষ্ঠা করেন বাংলা একাডেমী। আজ বাংলাভাষা বিশ্বে মাথা উঁচু করে প্রমাণ করেছে, রক্তের বিনিময়ে আমার অর্জন। যা কোন ম্লান হবার নয়। অমর একুশে আজ বাংলাদেশের মানচিত্র ছাপিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বলোকে। এটি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস হিসেবে পালিত বিশ্বের নানা প্রান্তে। বাঙালির রক্ত ঝরানো এখানেই স্বার্থকতা। একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তরফে প্রথমে শহীদ বেধি ভাষাসৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। তাদের পক্ষে পৃথক শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শহিদ দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়েছে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিটি সংগঠনের পক্ষ হতে সর্বোচ্চ পাঁচ জন প্রতিনিধি হিসেবে ও ব্যক্তি পর্যায়ে একসঙ্গে সর্বোচ্চ দুই জন শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে পারছেন। একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার ঘিরে ছিল কঠোর নিরাপত্তা বলয়। শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী প্রদান করেছেন।
রাত ১২টা ১ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বশরীরে উপস্থিত হননি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। এ সময় নেপথ্যে বাজছিল অমর একুশের কালজয়ী গান, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি…’। ‘আমি কি ভুলিতে পারি।’
জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর পক্ষে শহিদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সংসদের সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস কমডোর এম এম নাঈম রহমান।
ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তথা সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনসহ মন্ত্রিপরিষদের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যরা।
বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে নেতৃত্বদানকারীদের সংগঠন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রথম প্রহরে। শহিদ মিনারে একে একে আরও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, জাতীয় পার্টি (জেপি), বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সহযোগী সংগঠন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ছাত্র, যুব, শ্রমিক, কৃষক সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ।
রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পরই শহিদ মিনার সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। পথ নির্দেশিকা অনুযায়ী সর্বস্তরের মানুষ পলাশী, জগন্নাথ হলের সামনে দিয়ে শহিদ মিনারে প্রবেশ করেন এবং শ্রদ্ধা জানান।
শহিদ মিনারের সব প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার জন্য বেসিন ও লিকুইড সাবান রাখা হয়েছে। মাস্ক না পরে কাউকেই শহিদ মিনার চত্বরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেওয়ার পর আন্তর্জাতিক পর্যায়েও দিবসটি পালিত হচ্ছে।
বিশ্বের সব জাতিসত্তার ভাষা রক্ষার দিন হিসেবে জাতিসংঘ বেছে নিয়েছে ১৯৫২ সালের বাঙালি জাতির ভাষার জন্য লড়াইয়ের দিন সেই ২১ ফেব্রুয়ারিকে।
কর্মসূচি :২১ ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটির দিন। এ দিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র করেছে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো একুশের বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনসমূহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি :দলটির কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ভোর সাড়ে ৬টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সারা দেশে সংগঠনের সব শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় কালোব্যাজ ধারণ, প্রভাতফেরি সহকারে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার ও আজিমপুর কবরস্থানে ভাষাশহিদদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন। সোমবার বিকাল ৪টায় বিশেষ আলোচনাসভার আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আলোচনায় ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।