ঢাকা ০৩:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, ১৪ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

মুছে যাবে না ভয়াল ২৯ এপ্রিল!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০২:২৬:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ এপ্রিল ২০২১ ১৯১ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ছবি সংগৃহিত

‘১৯৯১ সালের ঘূর্নিঝড়ে নিহতের সংখ্যা বিচারে স্মরনকালের ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড়গুলির মধ্যে একটি’ এছাড়াও ‘বাকেরগঞ্জ, ঘূর্ণিঝড় ভোলা, ঘূর্ণিঝড় ১৯৯১, সিডর, আইলা, রোয়ানু, আকাশ, মহাসেন, মোরা’ বয়ে যায় বাংলাদেশের ওপর দিয়ে’

 

ঋদ্ধিমান, ঢাকা

১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিল রাতে বাংলাদেশে দক্ষিণপূর্ব চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলে ঘণ্টায় প্রায় ২৫০কিলোমিটার বেগে আঘাত করে। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ৬ মিটার (২০ ফুট) উচ্চতার জলোচ্ছ্বস উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়। এতে প্রাণ হারায় প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে প্রায় ১ কোটি মানুষ তাদের সর্বস্ব হারায়।

এদের বেশিরভাগই নিহত হয় চট্টগ্রাম জেলার উপকূল ও উপকূলীয় দ্বীপসমূহে। সন্দ্বীপ, মহেশখালী, হাতিয়া ইত্যাদী দ্বীপে নিহতের সংখ্যা সর্বাধিক। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল শিশু ও বৃদ্ধ। ১৯৭০ সালে ভোলা ঘূর্নিঝড়ের পর অনেক সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হলেও সচেতনতা ও অজ্ঞাতার কারণে অনেকেই সাইক্লোনের মাত্র ঘণ্টাখানেক আগে গিয়ে সেখানে আশ্রয় নেয়।

আবার অনেকেই ঝড়ের ভয়াবহতা বেশি হবে না এমন ভেয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে অনিহা রয়েছে। ধারণা করা হয় প্রায় ২০ লক্ষ লোক আশ্রয়কেন্দ্রে না গিয়ে বিপদজনক স্থানে অবস্থানের কারণে ঘূর্নিঝড়ে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

ক্ষয় ক্ষতি

ধারণা করা হয় ঘূর্নিঝড়ের কারণে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়। সাগর ও নদীর উপকূল প্লাবিত হয়। কর্নফুলি নদীর তীরে কক্রিংটের বাঁধ ধ্বংস হয়ে যায়। চট্টগ্রাম বন্দরের ১০০টন ওজনের একটি ক্রেন ঘূর্নিঝড়ে আঘাতে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।

বন্দরে নোঙর করা বিভিন্ন ছোট বড় জাহাজ, লঞ্চ ও অন্যান্য জলযান নিখোঁজ ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার মধ্যে নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর অনেক যানও বিদ্যমান।

প্রায় ১০ লক্ষ ঘড়-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এতে ১ কোটি মানুষ বাস্তুহারা হয়ে পরে।

মৌসুমি বায়ুর

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ২২শে এপ্রিল বঙ্গোপসাগরে একটি গভীর নিম্মচাপের সৃষ্টি হয়। বাতাসে গতিবেগের ও নিম্মচাপের আকার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ২৪শে এপ্রিল এটি ঘুর্নিঝড়ে রূপ নেয়। ঘুর্নিঝড়টি উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও শক্তি সঞ্চয় করে।

২৮ ও ২৯ এপ্রিল এটির তীব্রতা প্রচন্ড বৃদ্ধি পায় এবং গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ মাইল পৌছায় যা একটি ক্যাটাগরী-৫ ঘূর্নিঝড়ের সমতুল্য।

২৯শে এপ্রিল রাতে ঝড়টি চট্টগ্রামের উপকূলবর্তি অঞ্চলে ২৫৫ ঘন্টা মাইল বেগে আঘাত করে যা ক্যাটাগরী-৪ ঘূর্নিঝড়ের সমতুল্য। স্থলভাগে আক্রমণের পর এর গতিবেগ ধীরে ধীরে তমতে থাকে। সে রাতে প্রাণ হারিয়েছিল লক্ষাধিক মানুষ।

আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা

২৯ এপ্রিলের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার পর দেশে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ছিল যেখানে ৪০০টি। সেখানে বর্তমান সংখ্যা ৫ হাজার ৬৬৫টি। সরকারি হিসাবেই দক্ষিণ চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানা ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে নিহত হয়েছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৫৩৯ জন। সম্পদ নষ্ট হয়েছিল কয়েক হাজার কোটি টাকার।

১৯৯১ এর ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির বড় কারণ হিসেবে গবেষণকদের অভিমত, ঝড়ের সময় জোয়ার মিলে গিয়েছিল। বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতের উন্নয়নের কারণে পরবর্তীতে সিডর, আইলার মতো অনেক বেশি গতিবেগে ঝড় হলেও তাতে প্রাণহানির সংখ্যা অনেক কম।

১৯৭০ এর ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ঘূর্ণিঝড়। প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ সেবার মারা যায়। ঝড়ের গতিবেগের নিরিখে ১৯৯১ ও ১৯৭০ এর মধ্যে তেমন পার্থক্য ছিল না। তবে ১৯৭০ এ বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড় হয়নি দেশে। এর মাঝখানে একটি শুধু বড় ঘূর্ণিঝড় হয় ১৯৮৫ সালে, উড়িরচরে। তবে তা একটি এলাকা ঘিরে সীমাবদ্ধ ছিল।

২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে চট্টগ্রামের তিন উপজেলা আনোয়ারা, বাঁশখালী ও পটিয়ায় পাওয়া গিয়েছিল ৪২ হাজার মানুষের লাশ।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

মুছে যাবে না ভয়াল ২৯ এপ্রিল!

আপডেট সময় : ০২:২৬:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ এপ্রিল ২০২১

ছবি সংগৃহিত

‘১৯৯১ সালের ঘূর্নিঝড়ে নিহতের সংখ্যা বিচারে স্মরনকালের ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড়গুলির মধ্যে একটি’ এছাড়াও ‘বাকেরগঞ্জ, ঘূর্ণিঝড় ভোলা, ঘূর্ণিঝড় ১৯৯১, সিডর, আইলা, রোয়ানু, আকাশ, মহাসেন, মোরা’ বয়ে যায় বাংলাদেশের ওপর দিয়ে’

 

ঋদ্ধিমান, ঢাকা

১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিল রাতে বাংলাদেশে দক্ষিণপূর্ব চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলে ঘণ্টায় প্রায় ২৫০কিলোমিটার বেগে আঘাত করে। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ৬ মিটার (২০ ফুট) উচ্চতার জলোচ্ছ্বস উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়। এতে প্রাণ হারায় প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে প্রায় ১ কোটি মানুষ তাদের সর্বস্ব হারায়।

এদের বেশিরভাগই নিহত হয় চট্টগ্রাম জেলার উপকূল ও উপকূলীয় দ্বীপসমূহে। সন্দ্বীপ, মহেশখালী, হাতিয়া ইত্যাদী দ্বীপে নিহতের সংখ্যা সর্বাধিক। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল শিশু ও বৃদ্ধ। ১৯৭০ সালে ভোলা ঘূর্নিঝড়ের পর অনেক সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হলেও সচেতনতা ও অজ্ঞাতার কারণে অনেকেই সাইক্লোনের মাত্র ঘণ্টাখানেক আগে গিয়ে সেখানে আশ্রয় নেয়।

আবার অনেকেই ঝড়ের ভয়াবহতা বেশি হবে না এমন ভেয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে অনিহা রয়েছে। ধারণা করা হয় প্রায় ২০ লক্ষ লোক আশ্রয়কেন্দ্রে না গিয়ে বিপদজনক স্থানে অবস্থানের কারণে ঘূর্নিঝড়ে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

ক্ষয় ক্ষতি

ধারণা করা হয় ঘূর্নিঝড়ের কারণে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়। সাগর ও নদীর উপকূল প্লাবিত হয়। কর্নফুলি নদীর তীরে কক্রিংটের বাঁধ ধ্বংস হয়ে যায়। চট্টগ্রাম বন্দরের ১০০টন ওজনের একটি ক্রেন ঘূর্নিঝড়ে আঘাতে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।

বন্দরে নোঙর করা বিভিন্ন ছোট বড় জাহাজ, লঞ্চ ও অন্যান্য জলযান নিখোঁজ ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার মধ্যে নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর অনেক যানও বিদ্যমান।

প্রায় ১০ লক্ষ ঘড়-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এতে ১ কোটি মানুষ বাস্তুহারা হয়ে পরে।

মৌসুমি বায়ুর

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ২২শে এপ্রিল বঙ্গোপসাগরে একটি গভীর নিম্মচাপের সৃষ্টি হয়। বাতাসে গতিবেগের ও নিম্মচাপের আকার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ২৪শে এপ্রিল এটি ঘুর্নিঝড়ে রূপ নেয়। ঘুর্নিঝড়টি উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও শক্তি সঞ্চয় করে।

২৮ ও ২৯ এপ্রিল এটির তীব্রতা প্রচন্ড বৃদ্ধি পায় এবং গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ মাইল পৌছায় যা একটি ক্যাটাগরী-৫ ঘূর্নিঝড়ের সমতুল্য।

২৯শে এপ্রিল রাতে ঝড়টি চট্টগ্রামের উপকূলবর্তি অঞ্চলে ২৫৫ ঘন্টা মাইল বেগে আঘাত করে যা ক্যাটাগরী-৪ ঘূর্নিঝড়ের সমতুল্য। স্থলভাগে আক্রমণের পর এর গতিবেগ ধীরে ধীরে তমতে থাকে। সে রাতে প্রাণ হারিয়েছিল লক্ষাধিক মানুষ।

আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা

২৯ এপ্রিলের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার পর দেশে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ছিল যেখানে ৪০০টি। সেখানে বর্তমান সংখ্যা ৫ হাজার ৬৬৫টি। সরকারি হিসাবেই দক্ষিণ চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানা ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে নিহত হয়েছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৫৩৯ জন। সম্পদ নষ্ট হয়েছিল কয়েক হাজার কোটি টাকার।

১৯৯১ এর ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির বড় কারণ হিসেবে গবেষণকদের অভিমত, ঝড়ের সময় জোয়ার মিলে গিয়েছিল। বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতের উন্নয়নের কারণে পরবর্তীতে সিডর, আইলার মতো অনেক বেশি গতিবেগে ঝড় হলেও তাতে প্রাণহানির সংখ্যা অনেক কম।

১৯৭০ এর ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ঘূর্ণিঝড়। প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ সেবার মারা যায়। ঝড়ের গতিবেগের নিরিখে ১৯৯১ ও ১৯৭০ এর মধ্যে তেমন পার্থক্য ছিল না। তবে ১৯৭০ এ বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড় হয়নি দেশে। এর মাঝখানে একটি শুধু বড় ঘূর্ণিঝড় হয় ১৯৮৫ সালে, উড়িরচরে। তবে তা একটি এলাকা ঘিরে সীমাবদ্ধ ছিল।

২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে চট্টগ্রামের তিন উপজেলা আনোয়ারা, বাঁশখালী ও পটিয়ায় পাওয়া গিয়েছিল ৪২ হাজার মানুষের লাশ।