শহিদ দিবসে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, আলোচনা সভা, র্যালি ও মানববন্ধন কর্মসূচি
- আপডেট সময় : ০৪:৪১:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২১ ২৫২ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক
মহান শহিদ বিস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে দেশের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে। শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সভা-সেমিনার, প্রতিবাদী সাইকেল র্যালি ও মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি ছিল এই শহীদ দিবেস। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতেও ছিলো নানা আয়োজন। এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সংগঠনগুলো পাকিস্তান সরকারের দমন-পীড়ন ও ভাষার অধিকার কেড়ে নেওয়ার অপচেষ্টার নিন্দা ও প্রতিবাদ বিক্ষোভ জানান।
বাংলাদেশ সোশ্যাল এক্টিভিস্ট ফোরাম (বিএসএএফ) : জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা বাংলা করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সোস্যাল অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বিএসএএফ)। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক পথসভা ও র্যালি থেকে এ দাবি জানায় সংগঠনটি। পথসভায় বক্তারা বলেন, মাতৃভাষা মানুষের মৌলিক অধিকার। পাকিস্তান তা কেড়ে নিতে চেয়েছিল। উর্দূকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। তাদের এই অপপ্রয়াস চক্রান্তের বিরুদ্ধে বাংলা ভাষাভাষীরা গড়ে তুলেন তীব্র আন্দোলন। সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক মুফতি মাসুম বিল্লাহ নাফিয়ীসহ পথসভা ও র্যালিতে আরও উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ জলিল, ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূইয়া, যুবলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য মানিক লাল ঘোষ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু, মানবাধিকার সংগঠক মঞ্জুর হোসেন ইশা, বাংলাদেশ সোস্যাল অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বিএসএএফ) সমন্বয়ক শেখ জনি ইসলাম, রাহাত হুসাইন প্রমুখ।
ওপেন ডায়ালগ বাংলাদেশ : আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ঢাকায় ইকোনোমিকস রিপোর্টার’স ফোরাম হলে সেমিনার আয়োজন করে ওপেন ডায়ালগ বাংলাদেশ। সভায় ১৫০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন। ‘৫২’র ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা’ শীর্ষক সেমিনারে তারা বাঙালির মাতৃভাষাকে ছিনিয়ে নিতে পাকিস্তানের অপচেষ্টার কথা স্মরণ করে পাকিস্তানের প্রতি নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সাংবাদিক ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল। বক্তব্য রাখেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কন্ঠযোদ্ধা ড. মনোরঞ্জন ঘোষাল, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুল হাই, সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী গোবিন্দ্র চন্দ্র প্রামাণিক প্রমুখ। সভায় সভাপতিত্ব করেন ইন্ডিয়ান মিডিয়া করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের (ইমক্যাব) সভাপতি বাসুদেব ধর। সঞ্চানলনা করেন সাংবাদিক আমিনুল হক ভূইয়া।
প্রধান অতিথি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ৫২ তে উর্দুকে আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল এই বলে যে, উর্দু হচ্ছে মুসলমানদের ভাষা, ইসলাম ধর্মের ভাষা। বিষয়টি অসত্য। কিন্তু পাকিস্তানের কোনো প্রদেশেই কিন্তু প্রাদেশিক ভাষা উর্দু নয়। মুসলিম বিশ্বে আরবী মুসলিমদের ভাষা নয়। একটি অসত্য চিন্তা দিয়ে সাম্প্রদিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে এই ভাষাকে চিহিৃত করার চেষ্টা হয়েছিল। সংস্কৃতিগত ও জাতীয়তাবাদী চেতনার জায়গা থেকে তুলে ফেলা এবং সাম্প্রদায়িক চরিত্র দিয়ে একটি ভিনদেশি ভাষা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে ভাষা আন্দোলন হয়েছে এবং সেই পথ ধরেই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। ড. মনোরঞ্জন ঘোষাল বলেন, ভাষা শহিদদের উত্তসুরী হিসেবে আমাদের প্রথম কাজটি করতে হবে প্রথম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত স্বাধীনতার ইতিহাস সিলেবাসে অন্তুর্ভূক্ত করে আগামী প্রজন্মকে তৈরি করা। তা না হলে আগামীতে পাকিস্তানের পাসপোর্টধারীদের সঙ্গে বসবাস করতে হবে। সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, এখনও পরাজিত শক্তি পাকিস্তানের আচরণের পরিবর্তন হয়নি। তারা জঙ্গি ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইকে দিয়ে বিভিন্ন ধরণের ষড়যন্ত্র করছে। তাদের বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ড. মুহাম্মদ আব্দুল হাই বলেন, সুন্দর করে বাংলায় কথা বলা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ। ভাষা দিবসে আমাদের সুন্দর ও শুদ্ধ করে বাংলা ভাষার চর্চার অঙ্গীকার করতে হবে।
ভারত-বাংলাদেশ সম্প্রীতি সংস্থা (বিবিএসএস) : আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস উপলক্ষে ভারত-বাংলাদেশ সম্প্রীতি সংস্থা (বিবিএসএস) বাইসাইকেল র্যালির আয়োজন করে। এতে অংশ নেয় ১৩৫ জন স্বেচ্ছাসেবী। রাজধানীর গুলশানের নিকুঞ্জ (পুলিশপ্লাজা) থেকে গুলশান ২ ও পাকিস্তান হাইকমিশন হয়ে এই কর্মসূচি পুলিশ প্লাজায় এসে শেষ করা হয়। র্যালি শেষে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বক্তারা বলেন, পাকিস্তান তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মায়ের ভাষার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে স্বৈরাচারী আচরণ শুরু করে। এর বিরুদ্ধে এদেশে ব্যাপক গণবিক্ষোভ শুরু হলে তারা বল প্রয়োগের রাস্তা বেছে নেয়। বাঙ্গালীর আন্দোলন আরো বেগবান হলে ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাস্তায় প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণ শুরু করে। আর এতে সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার ও সফিউলরা শহিদ হন। আহত হন অসংখ্য নিরিহ মানুষ। কিন্তু তারপরও দমাতে পারেনি বাঙ্গালীর সেই আন্দোলনকে। বাঙ্গালী বিজয়ী হয়। রাষ্ট্রভাষা বাংলা স্বীকৃতি পায়। আজ আমাদের সেইদিনটি আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে।