ঢাকা ০৪:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

ভারত বিশ্বের ফার্মেসিতে পরিণত হবে

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:৩৫:৪৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২০ ৪৯৩ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক

ভ্যাকসিন উদ্ভাবন ও উৎপাদন প্রক্রিয়ার বিস্তৃত পর্যালোচনা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতের তিন শহর সফর করেছেন। তিনি আহমেদাবাদের জাইডাস বায়োটেক পার্ক, হায়দ্রাবাদের ভারত বায়োটেক এবং পুনের সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া পরিদর্শন করেন। এর মধ্যে দু’টি সাইটে ভারত দেশীয়ভাবে কোভিড ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করছে এবং অন্য সাইটে বিশ্বকে বাঁচাতে কোটি কোটি টিকা তৈরি করা হবে। ভারত মনে করে ভ্যাকসিন কেবল সুস্বাস্থ্যের জন্যই নয়, বিশ্বের মঙ্গলের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে সম্মিলিত লড়াইয়ে প্রতিবেশীসহ অন্যান্য দেশগুলিকে সহায়তা করা ভারতের কর্তব্য।
ভারত কেবল ভ্যাকসিন গবেষণায় বিশ্বের নেতৃত্ব দিচ্ছে না, সেইসাথে বিশ্বের ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্যও ভারত খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের ১০০টি দেশের রাষ্ট্রদূতদের ৪ ডিসেম্বর পুনে সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। তারা সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া এবং জেনোভা বায়োফার্মাসটিক্যালস লিমিটেড সফর করবেন। কেউ যখন প্রশ্ন করে যে, বিভিন্ন দেশ কীভাবে মহামারীর বিরুদ্ধে কাজ করেছে, তখন প্রতিটি দেশের মোট সংক্রমণের সংখ্যার দিকে লক্ষ্য করলে তা সহজেই বোঝা যায়।তবে কোনও দেশের পারফরম্যান্সের প্রকৃত পরিমাপ হল প্রতি মিলিয়নে আক্রান্ত মানুষ এবং মৃত্যুর সংখ্যা।

২৮ নভেম্বর পর্যন্ত, ভারতে প্রতি মিলিয়ন জনসংখ্যায় আক্রান্ত হয়েছে ৬,৭৩১ জন। বিপরীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি মিলিয়নে ৪০,০০০ জন, যুক্তরাজ্যে ২৩,৪৫৬ জন, ফ্রান্সে ৩৩,৪২৪ জন, ব্রাজিলের ২৯,১২৯ জন এবং ইতালিতে ২৫,৪৫৬ জন। এই দেশগুলির বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রতি মিলিয়নে আক্রান্তের হার ভারতের তুলনায় প্রায় ৪-৫ গুণ।
প্রতি মিলিয়নে মৃত্যুর ক্ষেত্রে ভারতে মারা গেছে ৯৮ জন।
প্রতিটি জীবন মূল্যবান, এমনকি একটি মৃত্যুও গ্রহণযোগ্য নয়। তবে এই তুলনা কেবল দেশগুলি মহামারী থেকে জীবন বাঁচাতে কতটা কার্যকর হয়েছে তার জন্যেই করা হচ্ছে।
২৮ নভেম্বর পর্যন্ত, ভারতে প্রতি মিলিয়ন জনসংখ্যায় মারা গেছে ৯৮ জন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৮১৩ জন, ব্রাজিলে ৮০৫, ফ্রান্সে ৭৮০, স্পেনে ৯৫৫, যুক্তরাজ্যে ৮৪৬ এবং ইতালিতে ৮৮৮ জন। প্রায় সব দেশেই প্রতি মিলিয়নে ভারতের চেয়ে প্রায় ৮-৯ গুণ বেশি মারা গেছে। এই দেশগুলির অনেকই ভারতের চেয়ে উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাসম্পন্ন দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
বর্তমানে ভারতে সংক্রমণ নিম্নমুখী প্রবণতা দেখাচ্ছে। সেপ্টেম্বর মাঝামাঝিতে সংক্রমণের চূড়ান্ত পর্যায়ে দৈনিক আক্রান্ত ছিল প্রায় ৯৭,৮৯৪ সেখানে ২৬ নভেম্বর এই সংখ্যা প্রায় ৪৩,১৭৪ জন। দৈনিক সংক্রমণের ভিত্তিতে ৭ দিনের চলমান গড়ের সাথে বিবেচনা করলে দেখা যায় (২৫ নভেম্বর পর্যন্ত) ভারতে সংক্রমণ নিম্নমুখী।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর দ্রুত সিদ্ধান্তে ভারতের উন্নত প্রতিক্রিয়া এর অর্থ, প্রধানমন্ত্রী মোদী দ্রুত এবং সক্রিয় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং দেশে মহাবিপর্যয় হওয়ার আগেই এই মহামারী ঠেকানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। ভারত সরকারী এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানো দেশগুলির মধ্যে অন্যতম। চীন ৭ জানুয়ারিতে উহান ভাইরাস সম্পর্কে বিশ্বকে অবহিত করেছিল। পরের দিনই, ৮ জানুয়ারিতেই ভারত একটি মিশন সভা করেছিল। ভারত ১৭ জানুয়ারি থেকে যাত্রীদের স্ক্রিনিং শুরু করে। এক্ষেত্রেও বিশ্বে সর্বপ্রথম দেশগুলির মধ্যে অন্যতম ভারত।
৩০ জানুয়ারি ভারতে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয় এবং তারপর সেখানে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা চালু করা হয়। অন্যদিকে, আরটি-পিসিআর পরীক্ষার পাশাপাশি র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট প্রবর্তনকারী দেশ হিসেবে ভারত ছিল প্রথম। এই কৌশলটির জন্য প্রথমে ভারত সমালোচিত হলেও পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিজেই এই মডেলটি গ্রহণ করেছে।
ভারতের বেশিরভাগ অংশেই এপ্রিলের প্রথম দিকে মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল, মোদী নিজেই এপ্রিলের শুরু থেকেই প্রকাশ্যে মাস্ক পরেছিলেন যেখানে বিশ্বব্যাপী মাস্ক সুপারিশ করার আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিল। ব্যাপক সংক্রমণ রোধে প্রাথমিক লকডাউন
লকডাউন দেয়ার জন্য ভারত অপেক্ষা করতে পারত এবং ইউরোপ বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পথ অনুসরণ করার ঝুঁকি নিতে পারত। নতুন সংক্রমণ বৃদ্ধির হার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে ১০.৯ থেকে ১৯.৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল এবং দ্বিগুণ হওয়ার সময়টি ছিল মাত্র তিনদিন। যখন ভারত জাতীয় লকডাউন আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়, তখন পর্যন্ত অন্য কোনও দেশ এত তাড়াতাড়ি এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। এই এক সিদ্ধান্ত ভারতের চিত্র বদলে দিয়েছে।
তাছাড়া, মহামারীর চিকিৎসার জন্য সরকারের অবকাঠামো তৈরির জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় ছিল। এই সময়ে ১৫,৩৬২ ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যসুবিধা, ১৫.৪০ লাখ আইসোলেশন শয্যা, প্রায় ২.৭০ লাখ অক্সিজেন সহায়তাযুক্ত শয্যা এবং ৭৮ হাজার আইসিইউ শয্যা তৈরি হয়েছে। সারা দেশে সরকারী হাসপাতালে ৩২,৪০০ ভেন্টিলেটর সরবরাহ করা হয়েছে যেখানে গত ৭০ বছরে এই সরকারী হাসপাতালগুলিতে মাত্র ১২,০০০ ভেন্টিলেটর ছিল। রাজ্য সরকারগুলিকে ৩.৭০ কোটি এন ৯৫ মাস্ক এবং ১.৬০ কোটি পিপিই সরবরাহ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্ব – একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ভারতের প্রতিক্রিয়া পুরোপুরি বিজ্ঞানভিত্তিক। মার্চ মাসের প্রথম থেকেই তিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রতিদিন সকালে ভারতের পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করে আসছেন। তিনি টেস্টিং, সংক্রমণ, মৃত্যু, অঞ্চল, রাজ্য এবং এমনকি জেলাগুলির তথ্য দেখেছেন। তারপর পরিস্থিতি অনুধাবন করার জন্য তিনি মুখ্যমন্ত্রীদের তাদের জনগণের নজর থেকে দূরে থেকে কথা বলার জন্য (রাজনীতিকীকরণের সম্ভাবনা এড়াতে) আহ্বান জানান। তারপর থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদী সমস্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং মন্ত্রীদের তাদের নিজ নিজ এলাকার পরিস্থিতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী মোদী গত ৯ মাসে সপ্তাহে কমপক্ষে একবার কোভিড-১৯সম্পর্কিত বৈঠকের সভাপতিত্ব করেছেন এবং বেশিরভাগই জনগণের দৃষ্টি এড়িয়ে। তিনি স্বাস্থ্যসেবা পেশাদার, ক্রীড়াবিদ, মিডিয়া এমনকি রেডিও জকি পর্যন্ত সমাজের সমস্ত বিভাগের সাথে যোগাযোগ করেছেন, তাদের মাধ্যমে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে, তাদের কাছ থেকে শিখতে, তাদের অভিজ্ঞতা জানতে এবং তাদের দক্ষতার সদ্ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য।
আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি, প্রধানমন্ত্রী মোদী হোলির সময় মার্চের গোড়ার দিকে সামাজিক সমাবেশ থেকে বিরত থাকার পথে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এটি ইতোমধ্যে কয়েক মিলিয়ন লোককে পরিস্থিতিটির গুরুত্ব বুঝিয়েছে। এরপরে, তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন এবং ‘জনতা কারফিউ’ নামে একটি অনন্য জনঅংশীদারিত্বমূলক উদ্যোগ নিয়ে এলেন। তিনি জনগণকে দেশব্যাপী একদিনের লকডাউন পালনে উৎসাহিত করলেন এবং বিশ্বকে দেখালেন ভারতকে মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য কীভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে। জনগণ বেশ ইতিবাচক সাড়া দিয়েছিল। এটি আসন্ন লকডাউনের জন্য জাতিকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করেছে। এরপরে, প্রধানমন্ত্রী মোদী ২৪ মার্চ থেকে দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করলেন। একই ভাষণে পরিস্থিতির গুরুত্ব বোঝাতে তিনি ‘জান হ্যায় তো জাহাঁ হ্যায়’এই বার্তা দিয়েছেন।
তিনি জনগণকে নিয়মিত মাস্ক পরতে এবং হাত পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। তাতেও জনগণ সাড়া দিয়েছিল।
লকডাউন চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী মোদী মানুষকে প্রদীপ জ্বালানোর মাধ্যমে একে অপরের সাথে সংহতি প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি তাদের অনন্য উপায়ে স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের সহায়তা দেখাতে বলেছিলেন। এটি দেশজুড়ে এক ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। এরপরে, ‘আনলক পর্বের আগে প্রধানমন্ত্রী মোদী আবারো জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন এবং তাদেরকে ‘জান ভি জাহাঁ ভি’ দর্শন দিয়ে পরিচালনা করেছিলেন। ভারত তাড়াতাড়ি লকডাউনে চলে গিয়েছিল এবং আনলক পর্বেও তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছিলো।
এই পর্যায়গুলি জুড়ে, তাঁর ব্যক্তিগত নেতৃত্ব প্রত্যেক ভারতীয়কে আশ্বাস দিয়েছিল যে তারা নিরাপদ হাতে রয়েছে যা যথাযথ বৈজ্ঞানিক পরামর্শ অনুসরণ করে এবং জীবনকে বাঁচানোর লক্ষ্যকে অন্য সব কিছুর ঊর্ধ্বে রাখে। এই কারণে আজ ভারতের মিলিয়ন প্রতি সংক্রমণ এবং মৃত্যু উভয়ই অনেক উন্নত দেশের তুলনায় অনেক কম।  মহামারীকালে সরকারি সাহায্য মহামারীর সাথে লড়াই করার সময় দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করাটাও জরুরি ছিল। নিশ্চিত করার প্রয়োজন ছিল যে, এই পরিস্থিতি দরিদ্রদের জন্য কষ্ট বয়ে আনবে না। তাৎক্ষণিকভাবে মোদী সরকার দরিদ্রদের সহায়তা করার জন্য পদক্ষেপ নেয় ।
১.৭০ লক্ষ কোটি রুপি প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ প্যাকেজ (পিএমজিকেপি) এর মাধ্যমে সরকার নারী, দরিদ্র প্রবীণ নাগরিক ও কৃষকদের বিনামূল্যে খাদ্যশস্য এবং নগদ অর্থ প্রদানের ঘোষণা দেয় । এই প্রোগ্রামটি দ্বারা প্রাপ্ত সংখ্যাগুলি মনোমুগ্ধকর এবং বিশ্ব রেকর্ড তৈরি করার মতো! প্রায় ৪২ কোটি দরিদ্র মানুষ ৬৮,৮২০কোটি রুপি আর্থিক সহায়তা পেয়েছে।
প্রায় ৯ কোটি কৃষকের কাছে ১৭,৮৯১ কোটি রুপি স্থানান্তরিত হয়েছিল। প্রায় ৩১০০০ কোটি রুপি ২০ কোটি জনধন অ্যাকাউন্টধারী মহিলার কাছে তিন কিস্তিতে স্থানান্তরিত হয়েছিল। ২,৮১৪.৫০ কোটি রুপি প্রায় ২.৮১ কোটি বৃদ্ধা, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কাছে দুই কিস্তিতে স্থানান্তরিত হয়েছিল। ১.৮২ কোটি নির্মাণ শ্রমিকরা ৪,৯৮৭.১৮ কোটি রুপি আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। প্রায় ১৩ কোটি গ্যাস সিলিন্ডার দরিদ্র পরিবারগুলিতে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছিল। গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনার আওতায় নভেম্বর মাস থেকে মাসিক ভিত্তিতে প্রায় ৮০ কোটি মানুষ বিনামূল্যে খাদ্যশস্য এবং ডাল পেয়েছিলেন! সকল নগদ ট্রান্সফার সরাসরি সুবিধাভোগীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে গেছে কোনো প্রকার সমস্যা ছাড়াই!

 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ভারত বিশ্বের ফার্মেসিতে পরিণত হবে

আপডেট সময় : ০৩:৩৫:৪৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২০

ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক

ভ্যাকসিন উদ্ভাবন ও উৎপাদন প্রক্রিয়ার বিস্তৃত পর্যালোচনা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতের তিন শহর সফর করেছেন। তিনি আহমেদাবাদের জাইডাস বায়োটেক পার্ক, হায়দ্রাবাদের ভারত বায়োটেক এবং পুনের সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া পরিদর্শন করেন। এর মধ্যে দু’টি সাইটে ভারত দেশীয়ভাবে কোভিড ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করছে এবং অন্য সাইটে বিশ্বকে বাঁচাতে কোটি কোটি টিকা তৈরি করা হবে। ভারত মনে করে ভ্যাকসিন কেবল সুস্বাস্থ্যের জন্যই নয়, বিশ্বের মঙ্গলের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে সম্মিলিত লড়াইয়ে প্রতিবেশীসহ অন্যান্য দেশগুলিকে সহায়তা করা ভারতের কর্তব্য।
ভারত কেবল ভ্যাকসিন গবেষণায় বিশ্বের নেতৃত্ব দিচ্ছে না, সেইসাথে বিশ্বের ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্যও ভারত খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের ১০০টি দেশের রাষ্ট্রদূতদের ৪ ডিসেম্বর পুনে সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। তারা সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া এবং জেনোভা বায়োফার্মাসটিক্যালস লিমিটেড সফর করবেন। কেউ যখন প্রশ্ন করে যে, বিভিন্ন দেশ কীভাবে মহামারীর বিরুদ্ধে কাজ করেছে, তখন প্রতিটি দেশের মোট সংক্রমণের সংখ্যার দিকে লক্ষ্য করলে তা সহজেই বোঝা যায়।তবে কোনও দেশের পারফরম্যান্সের প্রকৃত পরিমাপ হল প্রতি মিলিয়নে আক্রান্ত মানুষ এবং মৃত্যুর সংখ্যা।

২৮ নভেম্বর পর্যন্ত, ভারতে প্রতি মিলিয়ন জনসংখ্যায় আক্রান্ত হয়েছে ৬,৭৩১ জন। বিপরীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি মিলিয়নে ৪০,০০০ জন, যুক্তরাজ্যে ২৩,৪৫৬ জন, ফ্রান্সে ৩৩,৪২৪ জন, ব্রাজিলের ২৯,১২৯ জন এবং ইতালিতে ২৫,৪৫৬ জন। এই দেশগুলির বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রতি মিলিয়নে আক্রান্তের হার ভারতের তুলনায় প্রায় ৪-৫ গুণ।
প্রতি মিলিয়নে মৃত্যুর ক্ষেত্রে ভারতে মারা গেছে ৯৮ জন।
প্রতিটি জীবন মূল্যবান, এমনকি একটি মৃত্যুও গ্রহণযোগ্য নয়। তবে এই তুলনা কেবল দেশগুলি মহামারী থেকে জীবন বাঁচাতে কতটা কার্যকর হয়েছে তার জন্যেই করা হচ্ছে।
২৮ নভেম্বর পর্যন্ত, ভারতে প্রতি মিলিয়ন জনসংখ্যায় মারা গেছে ৯৮ জন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৮১৩ জন, ব্রাজিলে ৮০৫, ফ্রান্সে ৭৮০, স্পেনে ৯৫৫, যুক্তরাজ্যে ৮৪৬ এবং ইতালিতে ৮৮৮ জন। প্রায় সব দেশেই প্রতি মিলিয়নে ভারতের চেয়ে প্রায় ৮-৯ গুণ বেশি মারা গেছে। এই দেশগুলির অনেকই ভারতের চেয়ে উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাসম্পন্ন দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
বর্তমানে ভারতে সংক্রমণ নিম্নমুখী প্রবণতা দেখাচ্ছে। সেপ্টেম্বর মাঝামাঝিতে সংক্রমণের চূড়ান্ত পর্যায়ে দৈনিক আক্রান্ত ছিল প্রায় ৯৭,৮৯৪ সেখানে ২৬ নভেম্বর এই সংখ্যা প্রায় ৪৩,১৭৪ জন। দৈনিক সংক্রমণের ভিত্তিতে ৭ দিনের চলমান গড়ের সাথে বিবেচনা করলে দেখা যায় (২৫ নভেম্বর পর্যন্ত) ভারতে সংক্রমণ নিম্নমুখী।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর দ্রুত সিদ্ধান্তে ভারতের উন্নত প্রতিক্রিয়া এর অর্থ, প্রধানমন্ত্রী মোদী দ্রুত এবং সক্রিয় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং দেশে মহাবিপর্যয় হওয়ার আগেই এই মহামারী ঠেকানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। ভারত সরকারী এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানো দেশগুলির মধ্যে অন্যতম। চীন ৭ জানুয়ারিতে উহান ভাইরাস সম্পর্কে বিশ্বকে অবহিত করেছিল। পরের দিনই, ৮ জানুয়ারিতেই ভারত একটি মিশন সভা করেছিল। ভারত ১৭ জানুয়ারি থেকে যাত্রীদের স্ক্রিনিং শুরু করে। এক্ষেত্রেও বিশ্বে সর্বপ্রথম দেশগুলির মধ্যে অন্যতম ভারত।
৩০ জানুয়ারি ভারতে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয় এবং তারপর সেখানে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা চালু করা হয়। অন্যদিকে, আরটি-পিসিআর পরীক্ষার পাশাপাশি র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট প্রবর্তনকারী দেশ হিসেবে ভারত ছিল প্রথম। এই কৌশলটির জন্য প্রথমে ভারত সমালোচিত হলেও পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিজেই এই মডেলটি গ্রহণ করেছে।
ভারতের বেশিরভাগ অংশেই এপ্রিলের প্রথম দিকে মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল, মোদী নিজেই এপ্রিলের শুরু থেকেই প্রকাশ্যে মাস্ক পরেছিলেন যেখানে বিশ্বব্যাপী মাস্ক সুপারিশ করার আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিল। ব্যাপক সংক্রমণ রোধে প্রাথমিক লকডাউন
লকডাউন দেয়ার জন্য ভারত অপেক্ষা করতে পারত এবং ইউরোপ বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পথ অনুসরণ করার ঝুঁকি নিতে পারত। নতুন সংক্রমণ বৃদ্ধির হার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে ১০.৯ থেকে ১৯.৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল এবং দ্বিগুণ হওয়ার সময়টি ছিল মাত্র তিনদিন। যখন ভারত জাতীয় লকডাউন আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়, তখন পর্যন্ত অন্য কোনও দেশ এত তাড়াতাড়ি এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। এই এক সিদ্ধান্ত ভারতের চিত্র বদলে দিয়েছে।
তাছাড়া, মহামারীর চিকিৎসার জন্য সরকারের অবকাঠামো তৈরির জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় ছিল। এই সময়ে ১৫,৩৬২ ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যসুবিধা, ১৫.৪০ লাখ আইসোলেশন শয্যা, প্রায় ২.৭০ লাখ অক্সিজেন সহায়তাযুক্ত শয্যা এবং ৭৮ হাজার আইসিইউ শয্যা তৈরি হয়েছে। সারা দেশে সরকারী হাসপাতালে ৩২,৪০০ ভেন্টিলেটর সরবরাহ করা হয়েছে যেখানে গত ৭০ বছরে এই সরকারী হাসপাতালগুলিতে মাত্র ১২,০০০ ভেন্টিলেটর ছিল। রাজ্য সরকারগুলিকে ৩.৭০ কোটি এন ৯৫ মাস্ক এবং ১.৬০ কোটি পিপিই সরবরাহ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্ব – একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ভারতের প্রতিক্রিয়া পুরোপুরি বিজ্ঞানভিত্তিক। মার্চ মাসের প্রথম থেকেই তিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রতিদিন সকালে ভারতের পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করে আসছেন। তিনি টেস্টিং, সংক্রমণ, মৃত্যু, অঞ্চল, রাজ্য এবং এমনকি জেলাগুলির তথ্য দেখেছেন। তারপর পরিস্থিতি অনুধাবন করার জন্য তিনি মুখ্যমন্ত্রীদের তাদের জনগণের নজর থেকে দূরে থেকে কথা বলার জন্য (রাজনীতিকীকরণের সম্ভাবনা এড়াতে) আহ্বান জানান। তারপর থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদী সমস্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং মন্ত্রীদের তাদের নিজ নিজ এলাকার পরিস্থিতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী মোদী গত ৯ মাসে সপ্তাহে কমপক্ষে একবার কোভিড-১৯সম্পর্কিত বৈঠকের সভাপতিত্ব করেছেন এবং বেশিরভাগই জনগণের দৃষ্টি এড়িয়ে। তিনি স্বাস্থ্যসেবা পেশাদার, ক্রীড়াবিদ, মিডিয়া এমনকি রেডিও জকি পর্যন্ত সমাজের সমস্ত বিভাগের সাথে যোগাযোগ করেছেন, তাদের মাধ্যমে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে, তাদের কাছ থেকে শিখতে, তাদের অভিজ্ঞতা জানতে এবং তাদের দক্ষতার সদ্ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য।
আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি, প্রধানমন্ত্রী মোদী হোলির সময় মার্চের গোড়ার দিকে সামাজিক সমাবেশ থেকে বিরত থাকার পথে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এটি ইতোমধ্যে কয়েক মিলিয়ন লোককে পরিস্থিতিটির গুরুত্ব বুঝিয়েছে। এরপরে, তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন এবং ‘জনতা কারফিউ’ নামে একটি অনন্য জনঅংশীদারিত্বমূলক উদ্যোগ নিয়ে এলেন। তিনি জনগণকে দেশব্যাপী একদিনের লকডাউন পালনে উৎসাহিত করলেন এবং বিশ্বকে দেখালেন ভারতকে মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য কীভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে। জনগণ বেশ ইতিবাচক সাড়া দিয়েছিল। এটি আসন্ন লকডাউনের জন্য জাতিকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করেছে। এরপরে, প্রধানমন্ত্রী মোদী ২৪ মার্চ থেকে দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করলেন। একই ভাষণে পরিস্থিতির গুরুত্ব বোঝাতে তিনি ‘জান হ্যায় তো জাহাঁ হ্যায়’এই বার্তা দিয়েছেন।
তিনি জনগণকে নিয়মিত মাস্ক পরতে এবং হাত পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। তাতেও জনগণ সাড়া দিয়েছিল।
লকডাউন চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী মোদী মানুষকে প্রদীপ জ্বালানোর মাধ্যমে একে অপরের সাথে সংহতি প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি তাদের অনন্য উপায়ে স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের সহায়তা দেখাতে বলেছিলেন। এটি দেশজুড়ে এক ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। এরপরে, ‘আনলক পর্বের আগে প্রধানমন্ত্রী মোদী আবারো জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন এবং তাদেরকে ‘জান ভি জাহাঁ ভি’ দর্শন দিয়ে পরিচালনা করেছিলেন। ভারত তাড়াতাড়ি লকডাউনে চলে গিয়েছিল এবং আনলক পর্বেও তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছিলো।
এই পর্যায়গুলি জুড়ে, তাঁর ব্যক্তিগত নেতৃত্ব প্রত্যেক ভারতীয়কে আশ্বাস দিয়েছিল যে তারা নিরাপদ হাতে রয়েছে যা যথাযথ বৈজ্ঞানিক পরামর্শ অনুসরণ করে এবং জীবনকে বাঁচানোর লক্ষ্যকে অন্য সব কিছুর ঊর্ধ্বে রাখে। এই কারণে আজ ভারতের মিলিয়ন প্রতি সংক্রমণ এবং মৃত্যু উভয়ই অনেক উন্নত দেশের তুলনায় অনেক কম।  মহামারীকালে সরকারি সাহায্য মহামারীর সাথে লড়াই করার সময় দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করাটাও জরুরি ছিল। নিশ্চিত করার প্রয়োজন ছিল যে, এই পরিস্থিতি দরিদ্রদের জন্য কষ্ট বয়ে আনবে না। তাৎক্ষণিকভাবে মোদী সরকার দরিদ্রদের সহায়তা করার জন্য পদক্ষেপ নেয় ।
১.৭০ লক্ষ কোটি রুপি প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ প্যাকেজ (পিএমজিকেপি) এর মাধ্যমে সরকার নারী, দরিদ্র প্রবীণ নাগরিক ও কৃষকদের বিনামূল্যে খাদ্যশস্য এবং নগদ অর্থ প্রদানের ঘোষণা দেয় । এই প্রোগ্রামটি দ্বারা প্রাপ্ত সংখ্যাগুলি মনোমুগ্ধকর এবং বিশ্ব রেকর্ড তৈরি করার মতো! প্রায় ৪২ কোটি দরিদ্র মানুষ ৬৮,৮২০কোটি রুপি আর্থিক সহায়তা পেয়েছে।
প্রায় ৯ কোটি কৃষকের কাছে ১৭,৮৯১ কোটি রুপি স্থানান্তরিত হয়েছিল। প্রায় ৩১০০০ কোটি রুপি ২০ কোটি জনধন অ্যাকাউন্টধারী মহিলার কাছে তিন কিস্তিতে স্থানান্তরিত হয়েছিল। ২,৮১৪.৫০ কোটি রুপি প্রায় ২.৮১ কোটি বৃদ্ধা, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কাছে দুই কিস্তিতে স্থানান্তরিত হয়েছিল। ১.৮২ কোটি নির্মাণ শ্রমিকরা ৪,৯৮৭.১৮ কোটি রুপি আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। প্রায় ১৩ কোটি গ্যাস সিলিন্ডার দরিদ্র পরিবারগুলিতে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছিল। গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনার আওতায় নভেম্বর মাস থেকে মাসিক ভিত্তিতে প্রায় ৮০ কোটি মানুষ বিনামূল্যে খাদ্যশস্য এবং ডাল পেয়েছিলেন! সকল নগদ ট্রান্সফার সরাসরি সুবিধাভোগীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে গেছে কোনো প্রকার সমস্যা ছাড়াই!