ঢাকা ০৯:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভারতে সংক্রমণ চূড়া ছুঁয়েছে

ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১০:১২:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মে ২০২১ ২২০ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ছবি সংগৃহিত

ভারতে করোনার সংক্রমণ চূড়া ছুঁয়েছে! সরকার দাবি করছে, ভারতের কোনো কোনো অঞ্চলে সংক্রমণ কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। আসলেই কি তাই? ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ চূড়ায় (পিক) পৌঁছেছে।

ভারতে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি শুরু হয়, গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি। পরে তা দ্রুত বাড়তে থাকে। দেশটিতে গত ৩০ এপ্রিল প্রথম এক দিনে চার লাখের বেশি করোনা শনাক্ত হয়। এদিন শনাক্ত হয় ৪ লাখ ১ হাজার ৯৯৩ জন।

পরে কয়েক দিন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল চার লাখের নিচে। যেমন ১ মে শনাক্ত হয় ৩ লাখ ৯২ হাজারের কিছু বেশি রোগী। ২ মে ৩ লাখ ৬৯ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়। ৩ মে শনাক্ত হয় ৩ লাখ ৫৭ হাজার ২২৯ জন। ৪ মে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৩১৫ জন শনাক্ত হয়। এ প্রবণতার ভিত্তিতে ভারতে এমন ধারণা তৈরি হয়, দেশটিতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ইতিমধ্যে চূড়ায় পৌঁছেছে।

৫ মে করোনা সংক্রমণের ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। এদিন ভারতে ৪ লাখ ১২ হাজার ২৬২ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। পরদিন ৬ মে রেকর্ড ৪ লাখ ১৪ হাজার ১৮৮ জন শনাক্ত হয়। ভারতে আগে কখনো এক দিনে এত রোগী শনাক্ত হয়নি। কোনো দেশে এক দিনে শনাক্ত রোগীর দিক দিয়ে তা বিশ্ব রেকর্ডও। ৭ মে শনাক্ত হয় ৪ লাখ ১ হাজার জন। ৮ মে ৪ লাখ ৩ হাজার ৭৩৮ জন শনাক্ত হয়।

ভারতে দু’দিন ধরে করোনায় মৃত্যুও চার হাজারের ওপরে। ৭ মে দেশটিতে ৪ হাজার ১৮৭ জনের মৃত্যু হয়। এদিনই ভারতে প্রথম এক দিনে চার হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। ৮ মে দেশটিতে করোনায় মারা যান ৪ হাজার ৯২ জন। অর্থাৎ, পরপর দুই দিন চার হাজারের বেশি মানুষ করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন।

যেকোনো দেশে করোনা সংক্রমণের প্রকৃত পরিস্থিতি জানার একমাত্র উপায় হলো ব্যাপকভিত্তিক পরীক্ষা। ভারতে এখন দিনে প্রায় ২০ লাখ করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু চলতি মাসের শুরুর দিকে পরীক্ষার সংখ্যা ১৫ লাখে নেমে এসেছিল। ৫ মে ফের দৈনিক পরীক্ষার সংখ্যা বেড়ে প্রায় ২০ লাখে।

মাঝে এই পরীক্ষার সংখ্যা কমল, তার কারণে দেশটিতে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কমে থাকতে পারে। ভারতের কোনো কোনো অঞ্চলে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা তাৎপর্যপূর্ণভাবে কম হতে দেখা গেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) কনসালট্যান্ট রিজো জন বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভারতে প্রথম দফা সংক্রমণ যখন চূড়ায় পৌঁছেছিল, তখনো এমনটা হয়েছিল। সে সময় দেশটিতে যখন প্রতিদিন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক লাখ ছুঁই ছুঁই, তখন পরীক্ষা কমে গিয়েছিল।

ভারতীয় কর্তৃপক্ষ যখন মহারাষ্ট্র, গুজরাট, তেলেঙ্গানা ও দিল্লিতে করোনা শনাক্তের হার কমার কথা বলছে, তখন এসব রাজ্যে পরীক্ষার সংখ্যাও কমতে দেখা গেছে।

এপ্রিল মাসের মাঝামাঝিতে নয়াদিল্লিতে দিনে প্রায় এক লাখ করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছিল। তখন দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১৬ হাজারের মতো। কিন্তু এপ্রিলের শেষ দিকে যখন শনাক্তের হার ৫৫ শতাংশের বেশি বেড়ে যায়, তখন পরীক্ষা ২০ শতাংশ কমে যায়। এ থেকে সংক্রমণের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার বিষয়টিকেই ইঙ্গিত করে। গুজরাট ও তেলেঙ্গানায়ও একই প্রবণতা দেখা গেছে।

ভারতে প্রয়োজনের তুলনায় করোনা পরীক্ষার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কনসালট্যান্ট রিজো জন বলেন, করোনা পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোতে অতিরিক্ত ভিড় হওয়ায় অনেক মানুষ পরীক্ষা করতে পারছেন না।

ভারতে করোনা পরীক্ষার হার প্রতি এক হাজার মানুষে ১ দশমিক ৩। সে তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে তা ৩, আর যুক্তরাজ্যে ১৫।

জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি বলছে, করোনা পরীক্ষায় উচ্চ ‘পজিটিভ’ ফলের হার কমিউনিটির অনেক মানুষের সংক্রমণ শনাক্তের বাইরে থাকার বিষয়টিকেই ইঙ্গিত করে।

ভারতের অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ ও জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক গৌতম মেনন একজন গাণিতিক মডেলার। তিনি বলেন, ভারতে করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ হওয়ার হার এখনো অনেক বেশি। তা ২০ শতাংশের ওপরে। তাই তিনি মনে করেন যে ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ পেরিয়ে গেছে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ভারতে সংক্রমণ চূড়া ছুঁয়েছে

আপডেট সময় : ১০:১২:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মে ২০২১

ছবি সংগৃহিত

ভারতে করোনার সংক্রমণ চূড়া ছুঁয়েছে! সরকার দাবি করছে, ভারতের কোনো কোনো অঞ্চলে সংক্রমণ কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। আসলেই কি তাই? ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ চূড়ায় (পিক) পৌঁছেছে।

ভারতে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি শুরু হয়, গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি। পরে তা দ্রুত বাড়তে থাকে। দেশটিতে গত ৩০ এপ্রিল প্রথম এক দিনে চার লাখের বেশি করোনা শনাক্ত হয়। এদিন শনাক্ত হয় ৪ লাখ ১ হাজার ৯৯৩ জন।

পরে কয়েক দিন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল চার লাখের নিচে। যেমন ১ মে শনাক্ত হয় ৩ লাখ ৯২ হাজারের কিছু বেশি রোগী। ২ মে ৩ লাখ ৬৯ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়। ৩ মে শনাক্ত হয় ৩ লাখ ৫৭ হাজার ২২৯ জন। ৪ মে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৩১৫ জন শনাক্ত হয়। এ প্রবণতার ভিত্তিতে ভারতে এমন ধারণা তৈরি হয়, দেশটিতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ইতিমধ্যে চূড়ায় পৌঁছেছে।

৫ মে করোনা সংক্রমণের ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। এদিন ভারতে ৪ লাখ ১২ হাজার ২৬২ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। পরদিন ৬ মে রেকর্ড ৪ লাখ ১৪ হাজার ১৮৮ জন শনাক্ত হয়। ভারতে আগে কখনো এক দিনে এত রোগী শনাক্ত হয়নি। কোনো দেশে এক দিনে শনাক্ত রোগীর দিক দিয়ে তা বিশ্ব রেকর্ডও। ৭ মে শনাক্ত হয় ৪ লাখ ১ হাজার জন। ৮ মে ৪ লাখ ৩ হাজার ৭৩৮ জন শনাক্ত হয়।

ভারতে দু’দিন ধরে করোনায় মৃত্যুও চার হাজারের ওপরে। ৭ মে দেশটিতে ৪ হাজার ১৮৭ জনের মৃত্যু হয়। এদিনই ভারতে প্রথম এক দিনে চার হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। ৮ মে দেশটিতে করোনায় মারা যান ৪ হাজার ৯২ জন। অর্থাৎ, পরপর দুই দিন চার হাজারের বেশি মানুষ করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন।

যেকোনো দেশে করোনা সংক্রমণের প্রকৃত পরিস্থিতি জানার একমাত্র উপায় হলো ব্যাপকভিত্তিক পরীক্ষা। ভারতে এখন দিনে প্রায় ২০ লাখ করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু চলতি মাসের শুরুর দিকে পরীক্ষার সংখ্যা ১৫ লাখে নেমে এসেছিল। ৫ মে ফের দৈনিক পরীক্ষার সংখ্যা বেড়ে প্রায় ২০ লাখে।

মাঝে এই পরীক্ষার সংখ্যা কমল, তার কারণে দেশটিতে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কমে থাকতে পারে। ভারতের কোনো কোনো অঞ্চলে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা তাৎপর্যপূর্ণভাবে কম হতে দেখা গেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) কনসালট্যান্ট রিজো জন বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভারতে প্রথম দফা সংক্রমণ যখন চূড়ায় পৌঁছেছিল, তখনো এমনটা হয়েছিল। সে সময় দেশটিতে যখন প্রতিদিন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক লাখ ছুঁই ছুঁই, তখন পরীক্ষা কমে গিয়েছিল।

ভারতীয় কর্তৃপক্ষ যখন মহারাষ্ট্র, গুজরাট, তেলেঙ্গানা ও দিল্লিতে করোনা শনাক্তের হার কমার কথা বলছে, তখন এসব রাজ্যে পরীক্ষার সংখ্যাও কমতে দেখা গেছে।

এপ্রিল মাসের মাঝামাঝিতে নয়াদিল্লিতে দিনে প্রায় এক লাখ করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছিল। তখন দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১৬ হাজারের মতো। কিন্তু এপ্রিলের শেষ দিকে যখন শনাক্তের হার ৫৫ শতাংশের বেশি বেড়ে যায়, তখন পরীক্ষা ২০ শতাংশ কমে যায়। এ থেকে সংক্রমণের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার বিষয়টিকেই ইঙ্গিত করে। গুজরাট ও তেলেঙ্গানায়ও একই প্রবণতা দেখা গেছে।

ভারতে প্রয়োজনের তুলনায় করোনা পরীক্ষার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কনসালট্যান্ট রিজো জন বলেন, করোনা পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোতে অতিরিক্ত ভিড় হওয়ায় অনেক মানুষ পরীক্ষা করতে পারছেন না।

ভারতে করোনা পরীক্ষার হার প্রতি এক হাজার মানুষে ১ দশমিক ৩। সে তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে তা ৩, আর যুক্তরাজ্যে ১৫।

জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি বলছে, করোনা পরীক্ষায় উচ্চ ‘পজিটিভ’ ফলের হার কমিউনিটির অনেক মানুষের সংক্রমণ শনাক্তের বাইরে থাকার বিষয়টিকেই ইঙ্গিত করে।

ভারতের অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ ও জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক গৌতম মেনন একজন গাণিতিক মডেলার। তিনি বলেন, ভারতে করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ হওয়ার হার এখনো অনেক বেশি। তা ২০ শতাংশের ওপরে। তাই তিনি মনে করেন যে ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ পেরিয়ে গেছে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। বিবিসি