ঢাকা ০৯:২৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতের প্রথম প্রতিরক্ষা প্রধান বিপিন রাওয়াত প্রয়াত

ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১১:৫৩:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২১ ১৬০ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ছবি সংগ্রহ

এক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে ভারতের প্রথম প্রতিরক্ষা প্রধান বিপিন রাওয়াতের

জীবনাবসান হলো। বুধবার তামিলনাডুতে তাঁকে বহনকারী কপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। ৬৩ বছর বয়সী

এই সামরিক কর্মকর্তা চার দশক ভারতের সামরিক বাহিনীর হয়ে কাজ করেছেন। প্রয়াত হলেন

ভারতের প্রথম সেনা সর্বাধিনায়ক তথা চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) বিপিন রাওয়ত। বুধবার

দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সেনার এমআই- ১৭ হেলিকপ্টার। তাতে ছিলেন সস্ত্রীক সিডিএস এবং

আরও কয়েকজন সেনা আধিকারিক। বায়ুসেনা সূত্রে খবর, মৃত ১৩ জনের মধ্যে রয়েছেন সস্ত্রীক

বিপিন রাওয়ত। বুধবার তামিলনাড়ুর কুন্নুরে নীলগিরি জঙ্গলে আচমকাই ভেঙে পড়ে সেনার

হেলিকপ্টার। অগ্নিদগ্ধ, গুরুতর আহত অবস্থায় বিপিন রাওয়তকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে

যাওয়া হয়। সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে খবর, হেলিকপ্টারে সওয়ার ১৪ জনের মধ্যে ১৩ জনেরই

মৃত্যু হয়েছে। এই ১৩ জনের মধ্যেই রয়েছেন বিপিন রাওয়ত ও তাঁর স্ত্রী মধুলিকা। গ্রুপ ক্যাপ্টেন

বরুণ সিংহ আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। এদিন বেলা ১২টা ৪০ মিনিট নাগাদ

নীলগিরির একটি চা বাগানের উপর ভেঙে পড়ে সেনাবাহিনীর এমআই-১৭ ভি-৫ হেলিকপ্টার।

কৃষ্ণস্বামী নামে কুন্নুরের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, প্রথমেই একটি বিকট আওয়াজ পান তিনি।

আওয়াজে চমকে উঠে ঘর থেকে বেরোতেই তাঁর চোখে পড়ে একটি হেলিকপ্টার ধাক্কা মারল

একটি গাছে। ধাক্কার অভিঘাতে মুহূর্তে আগুন জ্বলে যায় হেলিকপ্টারে। আগুনের গোলার মতো

তা ধাক্কা মারে আরও একটি গাছে। কৃষ্ণস্বামীর দাবি, এই ঘটনা দেখে তাঁরা হেলিকপ্টারের দিকে

ছোটেন। যখন সেখানে পৌঁছন, দেখতে পান কয়েকজন দুর্ঘটনাগ্রস্ত হেলিকপ্টারটি থেকে বেরিয়ে

আসার চেষ্টা করছেন। তাঁদের দেহের সিংহভাগই অগ্নিদগ্ধ। এর পরই উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে

পড়েন সকলে। আসে দমকল। এ দিকে বিপিনের দিল্লির বাসভবনে গিয়ে তাঁর পরিজনদের সঙ্গে

সাক্ষাৎ করেছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই রাওয়তের সরকারি

বাসভবনে ঢুকতে দেখা যায় সেনা প্রধানকে। তাঁর বাড়ির নিরাপত্তাও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

বিপিন রাওয়াতের বাবা লক্ষ্মণ সিংও ছিলেন সেনা কর্মকর্তা। ১৯৫৮ সালে জন্ম নেওয়া বিপিন

পড়াশোনা করেছেন হিমাচল প্রদেশের শিমলার সেন্ট এডওয়ার্ড স্কুলে। ১৯৭৮ সালে দেরাদুনের

ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমি থেকে কমিশন্ড লাভ করেন তিনি। যোগ দেন ফিফথ ব্যাটালিয়ন

অব ইলেভেন গোর্খা রাইফেলসে। ওই বছরই ‘সোর্ড অব অনার’ সম্মানে ভূষিত হন তিনি। ভারতীয়

সেনাবাহিনীর দেওয়া তথ্য অনুসারে, এ পর্যন্ত ১৪৮ জন এই সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। ভারতের

সামরিক বাহিনীর আরও কিছু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কমান্ড অ্যান্ড

জেনারেল স্টাফ কলেজে উচ্চতর সামরিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বিপিন রাওয়াত। ভারতের

উত্তরাঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ দমনের জন্য বিপিন রাওয়াতের খ্যাতি রয়েছে। ২০১৫ সালে সন্ত্রাস দমনে

মিয়ানমার সীমান্তের ভেতরে ঢুকে অভিযান চালিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। এই অভিযানে

সফলও হয়েছিল তারা। এ ছাড়া ২০১৬ সালে পাকিস্তান সীমান্তের ভেতরে যে হামলা চালানো

হয়েছিল, সেই পরিকল্পনাকারীদের একজন ছিলেন বিপিন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় কমান্ডার

হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। এগুলোর মধ্যে অন্যতম জম্মু-কাশ্মীর ও অরুণাচল প্রদেশ। এ

ছাড়া জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের হয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোতে কাজ করেছেন তিনি।

সেখানেও কাজের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন বিপিন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published.

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

ভারতের প্রথম প্রতিরক্ষা প্রধান বিপিন রাওয়াত প্রয়াত

আপডেট সময় : ১১:৫৩:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২১

ছবি সংগ্রহ

এক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে ভারতের প্রথম প্রতিরক্ষা প্রধান বিপিন রাওয়াতের

জীবনাবসান হলো। বুধবার তামিলনাডুতে তাঁকে বহনকারী কপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। ৬৩ বছর বয়সী

এই সামরিক কর্মকর্তা চার দশক ভারতের সামরিক বাহিনীর হয়ে কাজ করেছেন। প্রয়াত হলেন

ভারতের প্রথম সেনা সর্বাধিনায়ক তথা চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) বিপিন রাওয়ত। বুধবার

দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সেনার এমআই- ১৭ হেলিকপ্টার। তাতে ছিলেন সস্ত্রীক সিডিএস এবং

আরও কয়েকজন সেনা আধিকারিক। বায়ুসেনা সূত্রে খবর, মৃত ১৩ জনের মধ্যে রয়েছেন সস্ত্রীক

বিপিন রাওয়ত। বুধবার তামিলনাড়ুর কুন্নুরে নীলগিরি জঙ্গলে আচমকাই ভেঙে পড়ে সেনার

হেলিকপ্টার। অগ্নিদগ্ধ, গুরুতর আহত অবস্থায় বিপিন রাওয়তকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে

যাওয়া হয়। সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে খবর, হেলিকপ্টারে সওয়ার ১৪ জনের মধ্যে ১৩ জনেরই

মৃত্যু হয়েছে। এই ১৩ জনের মধ্যেই রয়েছেন বিপিন রাওয়ত ও তাঁর স্ত্রী মধুলিকা। গ্রুপ ক্যাপ্টেন

বরুণ সিংহ আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। এদিন বেলা ১২টা ৪০ মিনিট নাগাদ

নীলগিরির একটি চা বাগানের উপর ভেঙে পড়ে সেনাবাহিনীর এমআই-১৭ ভি-৫ হেলিকপ্টার।

কৃষ্ণস্বামী নামে কুন্নুরের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, প্রথমেই একটি বিকট আওয়াজ পান তিনি।

আওয়াজে চমকে উঠে ঘর থেকে বেরোতেই তাঁর চোখে পড়ে একটি হেলিকপ্টার ধাক্কা মারল

একটি গাছে। ধাক্কার অভিঘাতে মুহূর্তে আগুন জ্বলে যায় হেলিকপ্টারে। আগুনের গোলার মতো

তা ধাক্কা মারে আরও একটি গাছে। কৃষ্ণস্বামীর দাবি, এই ঘটনা দেখে তাঁরা হেলিকপ্টারের দিকে

ছোটেন। যখন সেখানে পৌঁছন, দেখতে পান কয়েকজন দুর্ঘটনাগ্রস্ত হেলিকপ্টারটি থেকে বেরিয়ে

আসার চেষ্টা করছেন। তাঁদের দেহের সিংহভাগই অগ্নিদগ্ধ। এর পরই উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে

পড়েন সকলে। আসে দমকল। এ দিকে বিপিনের দিল্লির বাসভবনে গিয়ে তাঁর পরিজনদের সঙ্গে

সাক্ষাৎ করেছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই রাওয়তের সরকারি

বাসভবনে ঢুকতে দেখা যায় সেনা প্রধানকে। তাঁর বাড়ির নিরাপত্তাও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

বিপিন রাওয়াতের বাবা লক্ষ্মণ সিংও ছিলেন সেনা কর্মকর্তা। ১৯৫৮ সালে জন্ম নেওয়া বিপিন

পড়াশোনা করেছেন হিমাচল প্রদেশের শিমলার সেন্ট এডওয়ার্ড স্কুলে। ১৯৭৮ সালে দেরাদুনের

ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমি থেকে কমিশন্ড লাভ করেন তিনি। যোগ দেন ফিফথ ব্যাটালিয়ন

অব ইলেভেন গোর্খা রাইফেলসে। ওই বছরই ‘সোর্ড অব অনার’ সম্মানে ভূষিত হন তিনি। ভারতীয়

সেনাবাহিনীর দেওয়া তথ্য অনুসারে, এ পর্যন্ত ১৪৮ জন এই সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। ভারতের

সামরিক বাহিনীর আরও কিছু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কমান্ড অ্যান্ড

জেনারেল স্টাফ কলেজে উচ্চতর সামরিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বিপিন রাওয়াত। ভারতের

উত্তরাঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ দমনের জন্য বিপিন রাওয়াতের খ্যাতি রয়েছে। ২০১৫ সালে সন্ত্রাস দমনে

মিয়ানমার সীমান্তের ভেতরে ঢুকে অভিযান চালিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। এই অভিযানে

সফলও হয়েছিল তারা। এ ছাড়া ২০১৬ সালে পাকিস্তান সীমান্তের ভেতরে যে হামলা চালানো

হয়েছিল, সেই পরিকল্পনাকারীদের একজন ছিলেন বিপিন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় কমান্ডার

হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। এগুলোর মধ্যে অন্যতম জম্মু-কাশ্মীর ও অরুণাচল প্রদেশ। এ

ছাড়া জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের হয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোতে কাজ করেছেন তিনি।

সেখানেও কাজের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন বিপিন।