ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট’র থাবা!

- আপডেট সময় : ০৪:৩১:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ মে ২০২১ ১৭৫ বার পড়া হয়েছে
‘মিললো করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট’
মার্ছ মাসের শুরুতেই আছড়ে পড়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। তা সামাল দিতে সীমান্ত বন্ধ থেকে শুরু করে লকডাউন কিছুই বাদ যায়নি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বার বার বলে আসছিলেন, পরশি দেশে যে ভ্যারিয়েন্ট তা কিন্তু ভয়ানক! সবাইকে সজাগ থাকার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন তারা।
অবশেষে ঢুকে পড়লো ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট! ভারত থেকে ফেরা যাত্রীরা আক্রান্ত অবস্থায় ফিরে আসেন। এবার সব ভয়কে বাস্তবে রূপ দিয়ে দেশে শনাক্ত করা হলো করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট।
শনিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম এ তথ্য নিশ্চিত করে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট মিলেছে। ভারত থেকে ফেরা বাংলাদেশিদের নমুনা পরীক্ষায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গিয়েছে। তারা চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলেন এবং বর্তমানে যশোরে অবস্থান করছেন।
কিন্তু কোন কথা বা পরিস্থিতি কেয়ার না করেই গা ভাসিয়ে দিয়েছে বেহিসেবি মানুষ। নো মাস্ক নো সার্ভিস নানা ক্ষেত্রে অকার্যকর। মানুষ জীবন নিয়ে এতোটাই উদাসিন!
বুক চাপড়িয়ে হায় হায় করেও কোন লাভ হয়নি। অবশেষে বাংলাদেশে ঢুকে পড়লো ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট! ভারতের পরিস্থিতি যখন বিপর্যন্ত তখন বাংলাদেশের তরফে করোনা রুখতে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়। এসময় চালু থাকে পণ্যবাহী ট্রাক ও ট্রেন। পণ্যবাহী ট্রেনে চালকসহ তিন জনের বেশি লোকবল থাকে না।
ব্যতিক্রম সীমান্ত পেরিয়ে আসা ট্রাক। প্রতিটি ট্রাকে চালকসহ একাধিক লোকবল থাকে। বিভিন্ন সীমান্ত পথে কম করে হলেও প্রতিদিন প্রায় হাজার দুই ট্রাকের বেশি চলাচল করে থাকে।
সীমান্ত যাত্রী চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। বিভিন্ন স্থলবন্দরে আসা ভারতীয় শ’ শ’ ট্রাক চালক-হেলপার ফ্রি স্টাইল ঘুরে বেড়াচ্ছে। স্থানীয় হোটেলে খাওয়া-দাওয়া করছেন। স্থলবন্দরে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে চলছে চরম উদাসিনতা।
সাতক্ষীরা স্থলে বন্দরে আসা ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকের কোনো সেনিটাইজ করা হচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই পণ্য খালাস করছে শ্রমিকরা। ট্রাকের চালক ও হেলপারের জন্যও কোনো ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে।
ট্রাক চালকরা বন্দরে ট্রাক রেখে অবাধে ঘুরছে বেড়াচ্ছে। এতে করোনা সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় ফের লাগামছাড়া করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে!
বিশ্বের অন্তত ১৭টি দেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বা ধরন পাওয়া গিয়েছে। গেলো মাসের শেষের দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। এদিকে ভারতে সব রেকর্ড ভেঙে দিচ্ছে করোনা। শনিবার প্রথমবারের মতো একদিনে চার হাজার মৃত্যু দেখলো দেশটি।
গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে প্রাণ হারিয়েছেন ৪ হাজার ১৮৭ জন। একইসময়ে নতুন আক্রান্তর সংখ্যা ৪ লাখ এক হাজার। ভারতে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের একটি স্ট্রেনকে ইংল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য কর্তৃক ‘উদ্বেগের রূপ’ হিসেবে ঘোষণা করে। এটি অন্য স্ট্রেনগুলো থেকে বেশি দ্রুত ছড়ায় বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সেখানে বলা হয়, কোভিড-১৯ এর এই স্ট্রেনটি পিএইচই কর্তৃক বি১৬১৭.২ নামে পরিচিত। এ ছাড়া দেশজুড়ে ভাইরাসটির ৪৮টি ক্লাস্টার পাওয়া গেছে। যা মূলত ভ্রমণের সঙ্গে সম্পর্কিত। যদিও তুলনামূলকভাবে ক্ষেত্র কম রয়েছে। যাইহোক, বর্তমানে স্ট্রেনটি নিয়ে উদ্বেগের মাঝেই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কোভিড-১৯ এর স্ট্রেনটি ভ্যাকসিনকে এড়িয়ে যেতে পারে এমন কোনো কারণ এখন অবধি তাদের চোখে পড়েনি।
ভারতে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনার তিনটি ধরনের মধ্যে এই স্ট্রেন একটি। যা যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হয়েছে এবং পিএইচই কর্তৃক এটির তদন্ত চলছে। কোভিড-১৯ এর বাকি দুটি ধরন হলো বি১৬১৭.১ ও বি১৬১৭.৩। বি১৬১৭.২ স্ট্রেনটি পুরো ইংল্যান্ড জুড়ে এখন অবধি ৫০০ এর অধিক শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে লন্ডন এবং দেশের উত্তর-পশ্চিমে।