বিদেশ ফিরতি বাংলাদেশিরা কোয়ারেন্টিন মানতে চােইছেন না!
- আপডেট সময় : ০৮:৪১:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ এপ্রিল ২০২১ ২১৪ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক
শ’ শ’ বাংলাদেশি আসছে যুক্তরাজ্য থেকে। করোনার উর্ধমুখি সংক্রমণ রুখতে সরকারের ব্যবস্থা কিছুতেই মানতে চাইছেন না। বৃহস্পতিরবার এসব প্রবাসীরা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌছোন। এরপর কোয়ারেন্টিনের বিষয়টি আসতেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা জড়িয়ে পড়েন। তারা কিছুতেই কোয়ারেন্টিনে যাবেন না।
বিমান বন্দরে চিৎকার চেঁচামেচি জুড়ে দেন এসব প্রবাসী। শেষ অবদি অবস্থান নেন হেলথ ডেস্কের সামনে। যাত্রীদের এমন আচরণে বিব্রত হন বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা। ৩ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন স্বাস্থ্যকর্মী ও অন্যরা। কোয়ারেন্টিন নিয়ে এমন পরিস্থিতিতেই পড়তে হচ্ছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে।
বাগবিতণ্ডার মধ্যেই শেষ নয়। কেউ আবার কোয়ারেন্টিন সেন্টার থেকে পালিয়ে বাড়িতে চলে গেছেন। এমন পরিস্থিতিতে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো থেকে যাত্রী পরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
এখানেই শেষ নয়, কোয়ারিন্টিনে থাকা অবস্থায় অতিথিদের দাওয়াত দিয়ে রীতিমত আনন্দ-উল্লাস করে বিয়ে করার ঘটনা পর্যন্ত ঘটছে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএম তৌহিদ-উল আহসান সংবাদমাধ্যমকে এসব তথ্য তুলে ধরে বলেন, তাদের প্রায় সময়ই যাত্রীদের কোয়ারেন্টিনে পাঠানো নিয়ে এমনি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। অনেকে আবার পাগলামো শুরু করেন।
বিমানবন্দরে ভাঙচুরের চেষ্টাও যে চলে তা কিন্তু নয়। তাদের কোয়ারেন্টিনে পাঠানোর বিষয়ে বারবার বোঝানোয় প্রচন্ড বিরক্তবোধ করেন।
আরও একটা বিষয় হচ্ছে, সরকার যেসব কোয়ারেন্টিন সেন্টার নিয়ন্ত্রণ করেন, অনেকে আবার সেখানে থাকতে নারাজ। একারণে ২৫টি হোটেল নির্ধারণ করে দিওয়া হয়েছে সরকারের তরফে। প্রবাসীরা নিজ খরচায় সেখানে কোয়ারেন্টিনে থাকতে পারবেন। এ অবস্থা থেকেও পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
৩১ মার্চ সিলেটের হোটেল স্টার প্যাসিফিকে কোয়ারেন্টিন থেকে পালিয়ে যাওয়ায় যুক্তরাজ্য প্রবাসী দু’জনকে ৭ দিনের কারাদণ্ডসহ ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। দুজনই ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী বাংলাদেশি। কোয়ারেন্টিনে থাকাকালীন করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন তারা। কিন্তু রিপোর্ট আসার আগেই পালিয়ে যান।
এর আগে ২০ মার্চ সিলেটের হোটেল ব্রিটানিয়া থেকে এক পরিবারের নয় সদস্য কোয়ারেন্টিন অবস্থায় পালিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে যান। ১৮ মার্চ যুক্তরাজ্য থেকে সিলেটে আসেন মা ও ছেলে। কোয়ারেন্টিনে থাকতে তারা লা ভিস্তা হোটেলে ওঠেন। দুদিন পরেই সেই হোটেলে অর্ধশতাধিক অতিথিকে দাওয়াত করে এনে বিয়ে করেন সেই ছেলে।
বেবিচকের এক কর্মকর্তা বলেন, যাত্রীরা দেশে এসে ঠিকভাবে কোয়ারেন্টিন পালন করলে ফ্লাইট বাতিলের প্রয়োজন হতো না। কেউই প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে যেতে চান না। তারা বলেন হোম কোয়ারেন্টিনে যাবেন। কিন্তু আমরা দেখেছি হোম কোয়ারেন্টিনও কোনও প্রবাসী মানেননি। এখন ফ্লাইট বাতিল ছাড়া বিকল্প নেই।
যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের দেশগুলোতে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন শনাক্ত হলে ১ জানুয়ারি থেকে যুক্তরাজ্য ফেরত যাত্রীদের সঙ্গে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকলেও ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন থাকার নির্দেশনা আসে। পরে ১৫ জানুয়ারি ৪ দিন ও পরে ৭ দিনের কোয়ারেন্টিনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
করোনার ঊর্ধমুখি সংক্রমণ রুখতে ২৯ মার্চ দুই সপ্তাহের জন্য ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করে সরকার। সেখানে বলা হয়, অবশ্যই বিদেশ ফেরত যাত্রীদের ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। পরের দিন ৩০ মার্চ শুধু যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের যেকোনও দেশ থেকে এলে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনের নির্দেশনা আসে।
তবে ৩১ মার্চ আসে নতুন নির্দেশনা। তাতে বলা হয়, যুক্তরাজ্য ছাড়া ইউরোপের সব দেশ এবং আরও ১২টি দেশ থেকে যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ। ওই ১২টি দেশ হচ্ছে, আর্জেন্টিনা, বাহরাইন, ব্রাজিল, চিলি, জর্দান, কুয়েত, লেবানন, পেরু, কাতার, সাউথ আফ্রিকা, তুরস্ক ও উরুগুয়ে। ৩ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে।
এ বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকা অনুসরণ করেই যাত্রী পরিবহনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি ভালো হলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে। পরিস্থিতি বুঝে ফ্লাইট কমানো কিংবা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে।