বিএসএমএমইউতে নকল মাস্ক সরবরাহ কান্ডে গ্রেফতার শারমিন জাহান
- আপডেট সময় : ০২:৫৫:৪৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ জুলাই ২০২০ ৫১৭ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক : তারা সমাজের পরিচিত মুখ। পেয়েছেন সবার গ্রহণযোগ্যতাও। বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে গলা ফাটিয়ে নিজের যোগ্যতার বিশালত্ব তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। এসব বিষয়কে কাজে লাগিয়ে নিজে স্বার্থে হাসিলে কাজে লাগিয়েছেন। করোনাকে পূঁজি করে দায়িত্বহীন কাজ করেছেন। মানুষকে ঠেলে দিয়েছেন সাক্ষাত বিপদের মুখে। মানুষের কথা বলে, সমাজের বলে তারা কৌশলে মানুষের ক্ষতির করে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত রয়েছেন। অবশেষে শেষ রক্ষা হয়নি। সাহেদ, আরিফ এবং ডা. সাবরিনার মতোই জালিয়াতের খাতায় নাম লেখালেন শারমিন জাহান। তিনি প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন-১ শাখায় সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত। ছিলেন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্র লীগের বিভিন্ন দায়িত্বে। দেশের সেবা করার জন্য ছিলেন অঙ্গিকারাবদ্ধ। কিন্তু পরিচয় দিলেন সম্পূর্ণ অমানবিক।
গ্রেফতার শারমিন জাহান :
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নকল মাস্ক সরবাহের অভিযোগে দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে অবশেষে গ্রেফতার হলেন শারমিন জাহান। শুক্রবার রাত সাড়ে ১০ টা নাগাদ শাহবাগ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মিন্টু রোড কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া শাখার উপ-কমিশনার ওয়ালিদ হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বর্তমান করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রীসহ নীতিনির্ধারনী সকল স্তরের মানুষরা যেখানে রাতদিন এক করে মহামারি থেকে দেশের মানুষকে রক্ষার সংগ্রামে নিয়োজিত, ঠিক সেই সময় করোনামাহামারিকে পূঁজি করে নকল মাস্ক সরবরাহ করলেন শারমিন জাহান। যেই চিকিৎসকরা করোনা যুদ্ধে নিয়োজিত, সেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের ব্যবহারের জন্য নকল মাস্ক কি করে সরবরাহ করতে পারলেন তিনি? এসব কাজেরই কি শিক্ষা পেয়েছেন সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়ন করে? প্রচার মাধ্যমে গলা ফাটিয়েছেন কি এসব অপকর্ম করার পূঁজি অর্জন করেছেন? তিনি কোন মানুষিকতার পরিচয় দিলেন নকল মাস্ক সরবরাহ করে? এমনটা কি তার কাছে প্রত্যাশা ছিলো? বা তিনি নিজেই কেন এতো নিচু মানুষিকতার পরিচয় দিলেন? তিনি সম্ভব বুঝে নিয়েছিলেন, যে এমনটি করে তিনি পার পেয়ে যাবেন। বর্তমান সরকার প্রধান শেখ হাসিনা যে কোন অপরাধীকেই ছাড় দেন না, ক্যাসিনো থেকে শুরু করে শক্ত হাতে অন্যান্য অপরাধ দমন করা থেকেও কি শিক্ষা নেননি শারমিন জাহান। তিনি যেসব অবস্থানে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন, সেই শারমিন জাহানের কাছ থেকে এমনটি তো সমাজ প্রত্যাশা করেনি।
মামলা :
নকল মাস্ক সরবরাহের অভিযোগে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রক্টর মো. মোজাফফর আহমেদ। বৃহস্পতিবার রাতে করা মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, শারমিন জাহানের প্রতিষ্ঠান অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালকে ১১ হাজার এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহের কার্যাদেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়। শারমিন সেই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী। গত ২৭ জুন সরবরাহের জন্য দেয়া কার্যাদেশের বিপরীতে ৩০ জুন প্রথম ধাপে ১ হাজার ৩০০টি, ২ জুলাই দ্বিতীয় ধাপে ৪৬০টি ও তৃতীয় ধাপে ১ হাজার এবং ১৩ জুলাই চতুর্থ ধাপে ৭০০টি মাস্ক সরবরাহ করা হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে সরবরাহ করা মাস্কে কোনো সমস্যা ছিল না। তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে সরবরাহকৃত মাস্কে ত্রুটি ধরা পড়ে। সরবরাহকৃত মাস্কের গুণগত মান বিএসএমএমইউ’র স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী পাওয়া যায়নি। কোনো মাস্কের বন্ধনী ফিতা ছিঁড়ে য়ায়। আবার কোনোটির ছাপানো ইংরেজি লেখায় ত্রুটিপূর্ণ। কোনো কোনোটির নিরাপত্তা কোড ও লট নম্বর প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে গিয়ে নকল বলে জানা গেছে। এ কারণে কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারেন যে মাস্কের গুণগত মান নিম্নমানের ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছেন, এই মাস্কের কারণে কোভিড-১৯ সম্মুখযোদ্ধাদের জীবন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে।
মামলায় আরও অভিযোগ আনা হয়েছে যে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শারমিন জাহানকে ১৮ জুলাই কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল। ২০ জুলাই দেওয়া জবাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন শারমিন জাহান। যা দোষ স্বীকারের শামিল। মামলায় বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ শারমিন জাহানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার অভিযোগ এনেছেন দায়ের করা মামলায়। অবশ্য মামলার বিষয়ে শারমিন জাহান সংবাদমাধ্যমকে আত্মপক্ষ সমর্থন করে জানিয়েছেন, নকল মাস্ক সরবরাহ তিনি করেননি। বিএসএমএমইউ’র একজন সহকারী পরিচালক পণ্যগুলো যাচাই করে সরবরাহকৃত মাস্ক গ্রহণ করেছেন। এত দিন পর এসে বলা হচ্ছে ত্রুটিপূর্ণ। শারমিন জাহানের দাবি, মাস্ক তিনি প্রস্তুত করেন না। অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে এনে সরবরাহ করেন। পরিবর্তনের কথা না বলে মামলা করে দেওয়ায় ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন বলে মনে করেন।