ভয়েস রিপোর্ট, ঢাকা
প্রথমবারের মতো জলপথে ভারতে খাদ্যপণ্য রপ্তানি শুরু করলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে নৌ-প্রোট্রোলকলের আওতায় কার্যক্রম শুরু পর এই প্রথম কলকাতায় খাদ্যপণ্য পরিবাহিত হচ্ছে। এটি মুজিববর্ষের এই মাইলফলক হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের শিল্পগোষ্ঠী যাদের ভারতেও ফ্যাক্টরী রয়েছে, সেই প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ জলপথে খাদ্যপণ্য রপ্তানির সূচলা করলো।১৯৯৭ সাল থেকে ভারতে ভাদ্যপণ্য রপ্তানি করে আসছে প্রাণ।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, জলপথে কম খরচে অনেক পণ্য একসঙ্গে পরিবহন করা যায়। সড়ক পথের তুলনায় খরচও অনেক কম। সড়কপথে পণ্য পরিবহনে একাধিকবার উঠানামা করানোয় পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও ভাড়া বেড়ে যায়। জলপথে রপ্তানিতে ৩০ শতাংশ খরচ কম এবং পণ্যের মানও ভালো থাকবে। এসব বিষয় বিবেচনা করে স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তীর আগের দিন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ তাদের উৎপাদিত একটি চালান জলপথে রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার ঢাকার অদূরে নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলায় অবস্থিত প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে এক অনুষ্ঠানে রপ্তানি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
ফিতা কেটে এবং সুইচ টিপে শুভযাত্রার উদ্বোধন করেন। এরপরই প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক জেটি থেকে রঙবেঙের বেলুনে সাজানো এবং ৪০ হাজার কার্টন লিচি ড্রিংক বোঝাই জাহাজটি শীতলক্ষ্যা নদীর বুক চিরে নারায়ণগঞ্জ অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। এসময় উপস্থিত বিপুল সংখ্যক মানুষ করতালির মধ্য দিয়ে শুভযাত্রাকে অভিনন্দন জানান।
নারায়ণগঞ্জ ও খুলনা হয়ে ভারতের টিটি বন্দরে পৌঁছাতে জাহাজটিকে অতিক্রম করতে হবে ৭১০ কিলোমিটার জলপথ। আর তাতে সময় লাগবে ৮দিন। উদ্যোগক্তারা জানালেন, সড়ক পথে এ পণ্য পরিবহণে কমপক্ষে ৪০টির ট্রাকের প্রয়োজন হতো।
এসময় নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, জলপথে ভারতে খাদ্যপণ্য রপ্তানির যে শুভ সূচনা হয়েছে, তাতে শুধু বাংলাদেশের মানুষ নয়, বরং সারা বিশ্বের সব বাঙালিদের জন্য এটি একটি গর্বের বিষয়। প্রধানমন্ত্রী জলপথে বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি। জলপথে বাড়ানো, নদীর নাব্যতা ফেরাতে আমাদের মন্ত্রক অব্যাহতভাবে কাজ করে চলেছে। মন্ত্রী আশা করছি, দেশপ্রেম নিয়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের মতো আরও শত শত প্রতিষ্ঠান দেশে গড়ে উঠবে এবং তাদের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে বিআইডব্লিউটি-এর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, বাংলাদেশ-ভারত অভ্যন্তরীণ জলপথ অতিক্রমণ ও বাণিজ্য প্রটোকলের (পিআইডব্লিউটিএন্ডটি) আওতায় অভ্যন্তরীণ নৌ বাণিজ্য প্রধানত ফ্লাইঅ্যাশ নির্ভর। শতকরা ৯৬ শতাংশ পণ্যই ফ্লাইঅ্যাশ, যা সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ বাণিজ্য কার্যক্রম মূলত একমুখী যা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নৌ-বাণিজ্যে ভারসাম্যহীন অবস্থান বিরাজমান রয়েছে। পিআইডব্লিউটিএন্ডটি আওতায় জলপথে খাদ্যপণ্যের মতো বহুমাত্রিক পণ্য পরিবহন চালু হলে তা নিশ্চিতভাবে উভয় দেশের পারস্পারিক সম্পর্ক সুদৃঢ়করণসহ অর্থনৈতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণেও ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- নরসিংদী-২ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আশরাফ খান, বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন, নৌ সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, নরসিংদী জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উপস্থিত ছিলেন।
প্রাণ গ্রুপ জানায়, ১৯৯৭ সাল থেকে ভারতে পণ্য রপ্তানি শুরু করেছে প্রাণ। বর্তমানে দেশটির ২৮টি রাজ্যে প্রাণের দেড় শতাধিক পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। এরমধ্যে ফ্রুট ড্রিংকস, চিপস, স্ন্যাকস, বিস্কুট, ক্যান্ডি, সস, কেচাপ, নুডলস, জেলি ও মশলা। সাতক্ষীরার ভোমরা, লালমনিরহাটের বুড়িমারী, সুতারকান্দি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও সিলেটের ডাউকি দিয়ে আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশ, বিহার, ত্রিপুরা, গুজরাট, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু ও কেরালায় যাচ্ছে এসব পণ্য।
ভারতে ডি-মার্ট, স্পেন্সর রিটেইল, মোর রিটেইল, মেট্রো ক্যাশ অ্যান্ড কারি, বিগ বাস্কেট অনলাইন, অ্যামাজন ইন্ডিয়া, গ্রোফারস ও উড়ান অনলাইন ও সুপারশপে বিক্রি হচ্ছে প্রাণের পণ্য। বর্তমানে বিশ্বের ১৪৫টি দেশে প্রায় ৫০০ ধরনের পণ্য রপ্তানি করছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ।