বাংলাদেশে লকডাউনে অফিস-মার্কেট-আদালত বন্ধ
- আপডেট সময় : ০৭:৩৩:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ এপ্রিল ২০২১ ২৫০ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশে লকডাউন কমপক্ষে ১৪ দিন হওয়া উচিৎ : ডা. লেলিন চৌধুরী
ভয়েস রিপোর্ট, ঢাকা
করোনার উর্ধমুখি সংক্রমণ রুখতে সোমবার থেকে বাংলাদেশে একসপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। শনিবার আন্তঃমন্ত্রক সচিব পর্যায়ের বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় এসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রক। লকডাউনে বন্ধ থাকবে অফিস-আদালত-মার্কেট। বাংলাদেশে কারাগারগুলোতে বন্দীদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাতে দেওয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
তবে, শিল্পকারখানা খোলা থাকবে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, জরুরি সেবার আওতায় ডিসি অফিস, ইউএনও অফিস, ফায়ার সার্ভিস, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অফিস, সংবাদপত্র খোলা থাকবে। মানুষের চলাফেরা একেবারে সীমিত করতে লকডাউন ঘোষণা করতে হয়েছে। যাতে মানুষ ঘর থেকে বের না হয়।
শিল্প-কলকারখানা চালু থাকলেও সেখানে একাধিক শিফট করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রমিকরা কাজ করবেন। কলকারখানা বন্ধ করে দিলে অধিক সংক্রমিত জেলা থেকে মানুষ বাড়িতে যাবে। এতে নতুন নতুন এলাকাগুলোতে সংক্রমিত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গত দু’দিন আগেই পর্যটন এবং বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। তাছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বার বার দেশবাসীর সহায়তা চেয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণের ঘোষণা আসার পর ২৬ মার্চ থেকে পর্যায়ক্রমে ৬৬ দিনের লকডাউন (সাধারণ ছুটি) ছিল। এই সময়ে জরুরি ছাড়া সকল প্রকারের যানবাহন বন্ধ ছিল। করোনা সংক্রমণের কারণে গত বছরের ১৮ মার্চ থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
এর আগে শনিবার করোনার ঊর্ধমুখি সংক্রমণ ঠেকাতে ৫ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা আসতে পারে বলে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এতথ্য জানিয়েছিলেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এসময় তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার। আর এদিন ভোর থেকেই সারাদেশে লকডাউন কার্যকর হচ্ছে।
জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। বাস, ট্রেনসহ সকল প্রকারের গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। জরুরি সেবায় নিয়োজিত এমন প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে। শিল্প-কলকারখানা খোলা থাকবে।
লকডাউন কমপক্ষে ১৪ দিন হওয়া উচিৎ : ডা. লেলিন চৌধুরী
বাংলাদেশে থেকে শিগগিরই যাচ্ছে না করোনা। বরং প্রতিনিয়ত করোনার ধরণ পাল্টাচ্ছে। আগামী দুই মাসে এটি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠতে পারে! বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা এমন আশঙ্কার বার্তা দিচ্ছেন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেছেন, বৈজ্ঞানিক বিবেচনা থেকে লকডাউন দেয়া হলে সেটা কমপক্ষে ২ সপ্তাহ হওয়া উচিত। এক সপ্তাহের লকডাউন স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে উল্লেখ করেছেন এই বিশেষ চিকিৎসক।
ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, সোমবার থেকে সারাদেশে এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা কার্যকর হবে। করোনা ভাইরাসের সুপ্তিকাল অর্থাৎ ভাইরাসটি কারো শরীরে ১৪ দিন পর্যন্ত ঘাপটি মেরে থাকতে সমর্থ। শরীরে প্রবেশের ১৪তম দিনেও ভাইরাসটি রোগ তৈরিতে সক্ষম। এজন্য বৈজ্ঞানিক বিবেচনা থেকে লকডাউন দিলে কমপক্ষে ২ সপ্তাহ হওয়া উচিত।
ছুটির দিনে এমনি উপচে পড়া ভিড় ছিলো বইমেলায়
একসপ্তাহের লকডাউন স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। তিনি বলেন, করোনার ভয়াবহতা রুখতে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি সুবিন্যস্ত পরিকল্পনার অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। গত ২৮ মার্চ সরকার ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করে।
সেখানে ব্যাপক অস্পষ্টতা লক্ষ্যনীয়। সরকারি কর্মকান্ডে স্ববিরোধীতা বিদ্যমান। একদিকে সমাবেশকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে, অন্যদিকে লক্ষমানুষের সমাবেশ ঘটিয়ে সরকারি উদ্যোগে মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হলো। নানা নামে বিশাল বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
পর্যটকদের এমন ভিড় লক্ষ্য করা গিয়েছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে
স্বাস্থ্যবিধি মানায় বাধ্য করার দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিস্তাররোধে সরকার একদিকে যেমন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, অন্যদিকে আবার বিস্তারসহায়ক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দিয়েছে। সবমিলিয়ে করোনার সংক্রমণ সুনামিতে রূপ নিয়েছে।
এদিকে প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৮ জন মৃত্যু এবং ৫ হাজার ৬৮৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা দাঁদিয়েছে ৯ হাজার ২১৩ জনে। আক্রান্ত-মৃত্যুর দুঃস্বপের সঙ্গের আসলো এক সপ্তাহের লকডাউন।