ঢাকা ০২:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৪ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হলো জামায়াত-শিবির

ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৮:০২:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ অগাস্ট ২০২৪ ১৪৮ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

বাংলাদেশ নিষিদ্ধ হলো স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য জামায়াতসহ বাংলাদেশে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় স্থান পাওয়া রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ১০টি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর ধারা ১৮(১)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর সব অঙ্গসংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলো। এই আইনের তফসিল-২-এ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর সব অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করলো।

নিষিদ্ধ সংগঠনের মধ্যে ২০০৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি চারদলীয় জোট সরকার প্রথমে শাহাদাত-ই-আল হিকমা নামে জঙ্গি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে। এরপর ২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশকে (জেএমজেবি) এবং ওই বছরের ১৭ অক্টোবর হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামীকে বাংলাদেশে (হুজিবি) নিষিদ্ধ করা হয়। বোমা হামলা চালিয়ে বিচারক হত্যার দায়ে জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আব্দুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। চারদলীয় জোট সরকারের সময় নিষিদ্ধ এসব জঙ্গি সংগঠনের কয়েকটিকে তৎকালীন সরকারের এমপি মন্ত্রীরা পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিল বলে অভিযোগ।

জামায়াত ইসলামীসহ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছয়টি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে উগ্রপন্থী হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করা হয় ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর। ২০১৫ সালের ২২ মে মাসে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে নিষিদ্ধ করা হয়।

আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নিষিদ্ধ হওয়ার পর এর সদস্যরাই সেনাবাহিনীতে ব্যর্থ অভ্যুত্থান চেষ্টার পরিকল্পনাকারী বরখাস্ত মেজর জিয়াউল হকের নেতৃত্বে আনসার আল ইসলাম নামে তৎপরতা শুরু করে। একের পর এক জঙ্গি হামলা ও হত্যার প্রেক্ষাপটে ২০১৭ সালের মার্চে আনসার আল ইসলামকে সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সামরিক ফরমান বলে আবারও বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করলে আওয়ামী লীগসহ পুরনো দলগুলো কার্যক্রম শুরু করে। পাশাপাশি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পথ তৈরি হয়।

ব্রিটিশ আমলে ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট লাহোরের ইসলামিয়া পার্কে সামাজিক-রাজনৈতিক ইসলামি আন্দোলনের অংশ হিসেবে জামায়াতে ইসলামী গঠন হয়। জামায়াত ভারতের মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান সৃষ্টির বিরোধিতা করেছিল। স্বাধীনতা ও ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পর দলটির প্রতিষ্ঠাতা আবুল আ’লা মওদুদী ভারত থেকে পাকিস্তানে চলে যান।

পাকিস্তান আমলে জামায়াত ইসলামী একবার নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছিল। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খান প্রণীত মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশের বিরোধিতা করার কারণে ১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জামায়াত ইসলামী পাকিস্তান ভাঙার জোরালো বিরোধিতা করে। দলটির সদস্যরা শান্তি কমিটি, রাজাকার ও আলবদর গঠনে নেতৃত্ব দেয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলে জামায়াতে ইসলামীও এর আওতায় পড়ে। তখন গোলাম আজমসহ জামায়াতের কিছু নেতা পাকিস্তানে নির্বাসনে চলে যান।

বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পর ১৯৭৬ সালের আগস্টে জিয়াউর রহমান সরকার সব ধরনের রাজনৈতিক দলের রাজনীতি উন্মুক্ত করে রাজনৈতিক দল অধ্যাদেশ ঘোষণা করে। এ সময় আবার রাজনীতির ময়দানে ফেরে জামায়াত। ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক পার্টি নামক একটি দলের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী যুক্ত হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হলো জামায়াত-শিবির

আপডেট সময় : ০৮:০২:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ অগাস্ট ২০২৪

 

বাংলাদেশ নিষিদ্ধ হলো স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য জামায়াতসহ বাংলাদেশে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় স্থান পাওয়া রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ১০টি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর ধারা ১৮(১)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর সব অঙ্গসংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলো। এই আইনের তফসিল-২-এ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর সব অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করলো।

নিষিদ্ধ সংগঠনের মধ্যে ২০০৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি চারদলীয় জোট সরকার প্রথমে শাহাদাত-ই-আল হিকমা নামে জঙ্গি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে। এরপর ২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশকে (জেএমজেবি) এবং ওই বছরের ১৭ অক্টোবর হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামীকে বাংলাদেশে (হুজিবি) নিষিদ্ধ করা হয়। বোমা হামলা চালিয়ে বিচারক হত্যার দায়ে জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আব্দুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। চারদলীয় জোট সরকারের সময় নিষিদ্ধ এসব জঙ্গি সংগঠনের কয়েকটিকে তৎকালীন সরকারের এমপি মন্ত্রীরা পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিল বলে অভিযোগ।

জামায়াত ইসলামীসহ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছয়টি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে উগ্রপন্থী হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করা হয় ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর। ২০১৫ সালের ২২ মে মাসে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে নিষিদ্ধ করা হয়।

আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নিষিদ্ধ হওয়ার পর এর সদস্যরাই সেনাবাহিনীতে ব্যর্থ অভ্যুত্থান চেষ্টার পরিকল্পনাকারী বরখাস্ত মেজর জিয়াউল হকের নেতৃত্বে আনসার আল ইসলাম নামে তৎপরতা শুরু করে। একের পর এক জঙ্গি হামলা ও হত্যার প্রেক্ষাপটে ২০১৭ সালের মার্চে আনসার আল ইসলামকে সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সামরিক ফরমান বলে আবারও বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করলে আওয়ামী লীগসহ পুরনো দলগুলো কার্যক্রম শুরু করে। পাশাপাশি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পথ তৈরি হয়।

ব্রিটিশ আমলে ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট লাহোরের ইসলামিয়া পার্কে সামাজিক-রাজনৈতিক ইসলামি আন্দোলনের অংশ হিসেবে জামায়াতে ইসলামী গঠন হয়। জামায়াত ভারতের মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান সৃষ্টির বিরোধিতা করেছিল। স্বাধীনতা ও ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পর দলটির প্রতিষ্ঠাতা আবুল আ’লা মওদুদী ভারত থেকে পাকিস্তানে চলে যান।

পাকিস্তান আমলে জামায়াত ইসলামী একবার নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছিল। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খান প্রণীত মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশের বিরোধিতা করার কারণে ১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জামায়াত ইসলামী পাকিস্তান ভাঙার জোরালো বিরোধিতা করে। দলটির সদস্যরা শান্তি কমিটি, রাজাকার ও আলবদর গঠনে নেতৃত্ব দেয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলে জামায়াতে ইসলামীও এর আওতায় পড়ে। তখন গোলাম আজমসহ জামায়াতের কিছু নেতা পাকিস্তানে নির্বাসনে চলে যান।

বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পর ১৯৭৬ সালের আগস্টে জিয়াউর রহমান সরকার সব ধরনের রাজনৈতিক দলের রাজনীতি উন্মুক্ত করে রাজনৈতিক দল অধ্যাদেশ ঘোষণা করে। এ সময় আবার রাজনীতির ময়দানে ফেরে জামায়াত। ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক পার্টি নামক একটি দলের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী যুক্ত হয়।