বন্ধুত্ব উদ্যাপন, সাফল্য উদ্যাপন
- আপডেট সময় : ০২:৫১:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ মার্চ ২০২১ ২৬১ বার পড়া হয়েছে
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী
বছরব্যাপী বিস্তৃত কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত সম্মিলিতভাবে মুজিব বর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদ্যাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই উদ্যাপন দুই দেশের সীমানাও ছাড়িয়ে গেছে। এই উদ্যোগই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বলিষ্ঠ সম্পর্কের সাক্ষ্য দিচ্ছে। খুব সতর্কভাবে গৃহীত অনুষ্ঠানগুলোর জনগণের কাছে জোরালো আবেদন রয়েছে। প্রতিটি দেশে সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষের কাছে তা পৌঁছানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্য দিয়ে শুভকামনা, বন্ধুত্ব এবং অভিন্ন ঐতিহাসিক মূল্যবোধের বার্তা দেওয়া হয়েছে, যেগুলো আমাদের দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে তুলে ধরে।
বঙ্গবন্ধু বাপু ডিজিটাল প্রদর্শনীতে বিংশ শতাব্দীর দুই মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহাত্মা গান্ধীর জীবন ও দর্শন এক জায়গায় মিলেছে। দুই নেতাই তাঁদের জাতিকে নিপীড়ক শাসন থেকে মুক্তি এবং স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে ঢাকায় প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করবেন। এরপর এটি বাংলাদেশের অন্যান্য শহর, নিউইয়র্কে জাতিসংঘ এবং সর্বশেষ কলকাতায় প্রদর্শিত হবে। এটি একটি প্রযুক্তিনির্ভর প্রদর্শনী, ২১টি ডিজিটাল দেয়ালে তুলে ধরা হয়েছে তথ্য। দর্শকের ডিজিটাল সম্পৃক্ততার জন্য রয়েছে শতাধিক পয়েন্ট। বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় হচ্ছে এ প্রদর্শনী। এখন পর্যন্ত পাওয়া এক ফ্রেমে বঙ্গবন্ধু ও গান্ধীর একমাত্র ছবি দিয়ে প্রদর্শনীটি শুরু করা হয়েছে। ১৯৪৭ সালের ১৩ আগস্ট কলকাতায় একটি রাজনৈতিক সভায় তোলা হয়েছিল ছবিটি। বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বিভিন্ন সম্প্রদায় ও ধর্মের মানুষকে একত্র করার ক্ষেত্রে বাপুকে ‘জাদুকর’ হিসেবে বর্ণনা করেন। ভারতের বীরাদ ইয়াজনিক বাংলাদেশের জাতীয় আর্কাইভস, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর এবং ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের সহযোগিতায় প্রদর্শনীটি তৈরি করেছেন। এই প্রদর্শনী তরুণ এবং আমাদের অঞ্চলের ইতিহাস জানতে আগ্রহীদের কল্পনা শক্তিকে শাণিত করবে।
বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও দর্শন নিয়ে একটি বায়োপিক নির্মাণ করছে। উভয় দেশের তারকা অভিনেতাদের নিয়ে ভারতের শীর্ষস্থানীয় নির্মাতা শ্যাম বেনেগালের নির্দেশনায় ২০২১ সালের জানুয়ারিতে (কোভিড-১৯ মহামারির কারণে প্রায় এক বছর পিছিয়ে গেছে) এ চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
যৌথ অন্য আয়োজনের মধ্যে ভারত-বাংলাদেশের পুরো স্থলসীমানাজুড়ে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী (বিএসএফ) আয়োজিত ৬৬ দিনব্যাপী সাইকেল র্যালি (মৈত্রী র্যালি) সম্পন্ন হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার পনিতোর থেকে এই র্যালি শুরু হয়ে আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা হয়ে ১৭ মার্চ, ২০২১ বঙ্গবন্ধুর ১০১তম জন্মদিনে মিজোরামের শিলচরে গিয়ে শেষ হয়। তিন হাজার কিলোমিটারের এ সাইকেল র্যালিতে অংশগ্রহণকারীদের বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) সদস্য, স্থানীয় বাসিন্দা এবং স্কুলশিক্ষার্থীরা স্বাগত জানায়।
এ ছাড়া প্রথমবারের মতো ২০২১ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ১২২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নয়াদিল্লিতে ভারতের ৭৩তম প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডে অংশ নেয়। প্রথমবারের মতো ভারতীয় নৌবাহিনীর দুটি জাহাজ আইএনএস কুলিশ ও আইএনএস সুমেধা ৮ থেকে ১০ মার্চ মোংলা বন্দর ঘুরে গেছে। বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্ব উদ্যাপনের খুবই বিশেষ এই বছরে বিভিন্ন আয়োজনের কিছু ছোট নমুনা এগুলো।
সুপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের প্রতি ভারতের গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি দৃশ্যমান হয় কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে। ভারতের জনসংখ্যা ১৩৭ কোটি। নিজ দেশের এই বিপুলসংখ্যক মানুষকে টিকা দেওয়ার চাপ থাকলেও ভারত সরকার ‘ভ্যাকসিন মৈত্রী’ (টিকা বন্ধুত্ব) ক্যাম্পেইন চালু করে। এর আওতায় ৭০টির বেশি দেশে টিকা পাঠানো হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের বন্ধু ও প্রতিবেশীদের পিপিই, মাস্ক, চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহায়তা দেয় ভারত। সর্বশেষ ভারতে উৎপাদিত টিকাও পাঠানো হয়। বাংলাদেশের মানুষের জন্য উপহার হিসেবে ২০ লাখ ডোজ টিকা পাঠিয়েছে ভারত সরকার। কোনো একক দেশকে তাদের দেওয়া টিকার মধ্যে এটাই ছিল সবচেয়ে বড় চালান। এর বাইরে ভারতে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কিনেছে বাংলাদেশ।
দুই নেতার বৈঠক
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর সামগ্রিক ও বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ তৈরি হবে। সেখানে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব দিক পর্যালোচনা এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা বিষয়ে মতবিনিময়ের সুযোগ আসবে। এর মধ্য দিয়ে বেশ কিছু ইতিবাচক ফল ও সিদ্ধান্ত আসবে। তার মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক সই এবং দুটি দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন অংশীদারি প্রকল্পের উদ্বোধনের বিষয় রয়েছে। এগুলো নিয়ে মাত্র তিন মাস আগেই, ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনে একত্র হয়েছিলেন আমাদের নেতারা। ঘন ঘন শীর্ষ পর্যায়ের আলোচনা উভয় পক্ষের গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে গতি আনতে সহায়ক হয়। এর মধ্য দিয়ে সংলাপের ধারাবাহিকতা, অমীমাংসিত বিষয়গুলোতে অর্থবহ অগ্রগতি ত্বরান্বিত হয়। যেমনটি ঘটেছিল ছিটমহল বিনিময়সহ স্থলসীমান্ত চুক্তির ক্ষেত্রে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা দক্ষিণ এশিয়া এবং বাকি বিশ্বের জন্য সাফল্যের মডেল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। প্রথম আলোর সৌজন্যে
বীণা সিক্রি: বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার