বঙ্গবন্ধুর ফাঁসি আটকাতে ৩0টি দেশে ছুটে বেড়িয়েছেন ইন্দিরা গান্ধী : তথ্যমন্ত্রী
- আপডেট সময় : ০৪:২৩:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১ ২২৮ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস রিপোর্ট, ঢাকা
বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী তথা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ সংবাদমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কযুক্ত সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে যত্নবান থাকতে হবে। যাতে করে দু’দেশের সম্পর্কে অহেতুক বিরূপ প্রভাব না ফেলে। বঙ্গবন্ধুর ফাঁসি আটকাতে ৩০টি দেশে ছুটে বেড়িয়েছেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ভারতের নজির গড়া এই ঋণকে মনে রেখেছে বাংলাদেশ।
‘ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী দু’দের নাগরিকদের সম্পর্কের ওপর জোর দিয়ে বলেন, পরস্পরের সন্দেহ ও সংশয় দূরে রেখে একসঙ্গে চলার মধ্য দিয়ে দুই দেশই সমৃদ্ধির পথে এগোতে পারবে। তিনি বলেন, আমাদের সম্পর্ক টেকসই হওয়ার মূলনীতি ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে আছে। বাংলাদেশ-ভারতের মানুষের আকাঙ্খার জায়গা এক।’
বাংলাদেশে ও ভারত সাধারণ নাগরিকদের সম্পর্কের উপর জোর দিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী। তিনি বলেছেন, পরস্পরের সন্দেহ ও সংশয় দূরে ঠেলে একসঙ্গে চলার মধ্য দিয়ে দুই দেশই সমৃদ্ধির পথে এগোতে পারবে। মঙ্গলবার ঢাকায় ইন্ডিয়ান মিডিয়া করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ইমক্যাব) আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু: বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক’ আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে এসব কথা বলেন ভারতীয় হাইকমিশনার। এসময় তিনি আরও বলেন, আমাদের সম্পর্ক টেকসই হওয়ার মূলনীতি ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে আছে। এখন আমাদের উচিৎ সন্দেহ ও সংশয় দূর করে কাজ করা। কারণ সন্দেহ ও অবিশ্বাসের কোনো জায়গা এখানে নেই।
আর বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক রেখে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। নির্বাচন এলে বিএনপি ও কিছু দল ভারত বিরোধিতাকে সামনে রেখে প্রচারণা চালায়। যাদের সহযোগিতা ছাড়া এদেশের স্বাধীনতা সম্ভব ছিল না, তাদের বিরোধিতা করে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বৈরিতা করে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। একথা তারা বুঝেও না বোঝার ভান করে। আবার বুঝলেও রাজনীতির স্বার্থে অপরাজনীতি করেন। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
বাংলাদেশে কর্মরত ভারতের সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের সংগঠন ‘ইমক্যাব’ সভাপতি বাসুদেব ধরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর প্রাক্তন তথ্য উপদেষ্টা ও অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের প্রথম নারী সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ।
বিষয়বস্তুর ওপর মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করবেন সিনিয়র সাংবাদিক ও সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব। আলোচনায় অংশ নেন ইমক্যাবের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সবুজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদ দীপ আজাদ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহিদুল হাসান খোকন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় হাই কমিশনের দ্বিতীয় সচিব (ভিসা ও জনকূটনীতি) দীপ্তি আলংঘট, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব আব্দুল জলিল ভুইয়া ও ওমরফারুক, ডিক্যাব সভাপতি পান্থ রহমান, ইমক্যাব এর কোষাধ্যক্ষ মাছুম বিল্লা, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর আফরোজ জামান, নির্বাহী সদস্য আমিনুল হক ভুইয়া ও লায়েকুজ্জামান।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এমন কোনো খবর প্রচার করা উচিত না, যাতে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতার কারণে ১৯৭৪ সালে ভারতের সঙ্গে মৈত্রী চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তির কারণেই আমরা ভারতের কাছ থেকে ছিটমহলের অধিকার ফিরে পেয়েছি। অথচ এই চুক্তি নিয়ে একটি মহল বিরূপ প্রচারণা চালিয়েছিল। তবে, তাদের অপ্রচারে দেশের সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করেনি। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণকে ভারতের সহযোগিতা এবং বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত করতে দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকার কথা স্মরণ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের জেল থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করতে ইন্দিরা গান্ধী বিশ্বব্যাপী জনমত গঠন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে যেন ফাঁসি দেওয়া না হয়, সেজন্য ৩০টি দেশে তিনি ছুটে গিয়েছেন।
ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, পৃথিবী খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে আমরা যত দ্রুত এগোতে পারব, তত দ্রুতই আমরা একসঙ্গে সমৃদ্ধি লাভ করতে পারব। দুই দেশের সহযোগিতার উপর গুরুত্বারোপ করে দোরাইস্বামী বলেন, আমি দেখেছি, সহযোগিতা বাড়লে উন্নতিও বাড়ে। সুতরাং আমার জন্য যেটা ভালো নয়, সেটা আপনার জন্য যেটা ভালো নয়। আমরা যদি এটা অনুসরণ করি, তাহলে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের আদর্শ অনুসরণ করা হবে। ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক যেমন বৃদ্ধি হয়েছে, তেমনি সে সম্পর্ক ধ্বংসেরও চেষ্টা হয়েছে। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট করেছেন। প্রতিবেশীদের মধ্যে নানা সমস্যা থাকে। সে সমস্যা আন্তরিকতার সঙ্গে সমাধান করতে হবে।
ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক এখন সবচেয়ে উচ্চমাত্রায়। তবে দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে আরও কাজ করতে হবে। কিছু বিষয়ে এখনও অমীমাংসিত। তিস্তা চুক্তি নিয়ে হতাশা রয়েছে। সীমান্তে হত্যা হলে আমাদের সম্পর্ক অম্ল-মধুর হয়ে যায়।
মনজরুল আহসান বুলবুল বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু প্রথম ভারত সফরে গিয়ে ইন্দিয়া গান্ধীকে বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে তার সৈন্যদের প্রত্যাহার করেছিলেন। এটি ছিলো কূটনৈতিক ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের প্রমাণ। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের শ্রদ্ধার ও সম্মানের সম্পর্ক। এটিই আমাদের পথরেখা। এগিয়ে যাওয়ার জায়গা।