বঙ্গবন্ধুর ‘জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’ থিমে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
- আপডেট সময় : ০৭:১১:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ মার্চ ২০২১ ২২৬ বার পড়া হয়েছে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : সংগৃহীত
‘বইয়ের আনন্দ যন্ত্রে পাওয়া যায় না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বই পড়ার অভ্যাস আমাদের গড়ে তুলতে হবে। বই পড়ার মাধ্যমে নিজেকে যোগ্য করে তোলা যায়।’
আমিনুল হক, ঢাকা
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’ থিমকে সামনে রেখে এবারের অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন করলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে প্রতিবারের মতো তিনি উপস্থিত থেকে অমর একুশে বই মেলার উদ্বোধন করে থাকেন এবং মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। কিন্তু এবারে করোনা মহামারি সেই আনন্দ কেড়ে নিয়েছে। এবারের মেলা ব্যতিক্রম। একদিকে ভাষা মাস ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে মার্চ মাসের মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বাংলা একাডেমি তরফে জানানো হয়েছে, এবারে মোট ১৫ লাখ বর্গফুট জায়গা জুড়ে ইতিহাসের স্বচ্ছ বিস্তৃত পরিসরে এবারের বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে। অংশ নিয়েছে ৫৪০টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। বর্তমান করোনা বাস্তবতায় এবারের গ্রন্থমেলায় সর্বোচ্চ প্রাধান্য পাচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। মেলায় আগতদের জন্য মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক রাখা হয়েছে। ২৮ দিনব্যাপী মেলা শেষ হবে ১৪ এপ্রিল। প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে মেলা। শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ মেলার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রাণের মেলার উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বইয়ের আনন্দ যন্ত্রে পাওয়া যায় না’। ‘বই পড়ার অভ্যাস আমাদের গড়ে তুলতে হবে। বই পড়ার মাধ্যমে নিজেকে যোগ্য করে তোলা যায়।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকায় তার অনুরোধে এবারের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২০ প্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বঙ্গবন্ধু রচিত ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইটির ইংরেজিতে অনূদিত NEW CHINA ১৯৫২’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাহিত্যের মধ্য দিয়ে দেশ ও মানুষকে চেনা যায়। এমনকি ইতিহাস, অর্থনীতিসহ নানান বিষয়ে জানা যায়। যা অন্য কোনও মাধ্যমে এতটা সম্ভব নয়। অনুবাদ সাহিত্যের গুরুত্বও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। করোনাকালীন সাড়ে ৭ হাজার শিল্পীকে প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ তহবিল থেকে সহায়তা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, লেখক-প্রকাশকদেরও করোনাকালীন সহযোগিতা করা হয়েছে। এমনকি প্রান্তিক পর্যায়েও কল্যাণ তহবিল থেকে সহযোগিতা করা হয়েছে। করোনাকালীন বই মেলায় অংশগ্রহণ করায় লেখক-প্রকাশকদের শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন সংস্কৃতি সচিব মো. বদরুল আরেফীন। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান।
করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে বইমেলায় যাওয়ার অনুরোধও করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, টিকা দিয়েই মনে করবেন না সুরক্ষিত হয়ে গেছেন। নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন অন্যরাও সুরক্ষিত থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় বলেন, ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষার মর্যাদার আন্দোলনের সূতিকাগার হয়। বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্র সংগঠন গঠন করার প্রেক্ষিতে ১১ মার্চ সংগ্রাম পরিষদ গড়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধু জেলে থাকা অবস্থায় ছাত্রদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগও রাখতেন। বঙ্গবন্ধুর অবদান ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিলো।
এবারে একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০৭টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫৪টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৮০টি ইউনিটসহ মোট ৫৪০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৩৪টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেলায় ৩৩টি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। লিটল ম্যাগাজিন চত্বর বসানো হয়েছে উদ্যানের মূল মেলা প্রাঙ্গণে। সেখানে ১৩৫টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দের পাশাপাশি পাঁচটি উন্মুক্ত স্টলসহ ১৪০টি স্টল দেওয়া হয়েছে।
শিশু চত্বরও মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে রয়েছে। একক ক্ষুদ্র প্রকাশনা সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যারা বই প্রকাশ করেছেন তাদের বই বিক্রি ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের স্টলে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১৯ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।
এবারেই ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউ-সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্ব প্রান্তে নতুন একটি প্রবেশ পথ এবং পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া টিএসসি এবং বাংলা একাডেমির বিপরীত দিক মিলে সোহরাওয়ার্দীতে তিনটি প্রবেশ পথ ও তিনটি বের হবার পথ রয়েছে। প্রত্যেক প্রবেশ পথে রয়েছে সুরক্ষিত ছাউনি, যাতে বৃষ্টি ও ঝড়ের সময় মানুষ আশ্রয় নিতে পারেন। বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশের বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে।