ঢাকা ০১:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাকিস্তানিদের বর্বরতার সাফাই গায় হামুদুর রেহমান কমিশন

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:৩৮:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ মার্চ ২০২১ ২৪৮ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ভয়েস ডিজিটাল যেস্ক 

১৯৭১ সালের যুদ্ধে লজ্জাজনক পরাজয়ের পর পাকিস্তান সরকার সেই হারের কারণ খুঁজতে গঠন করেছিল জাস্টিস হামুদুর রেহমান কমিশন। পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি হামুদুর রেহমানের নেতৃত্বে আরও দুজন শীর্ষ বিচারপতি, আনোয়ারুল হক ও তুফায়লায়লি আবদুর রেহমান খতিয়ে দেখেছিলেন কোন ঘটনাপ্রবাহের পরিণতিতে পাকিস্তানের সেই শোচনীয় পরিণতি। পাকিস্তান সরকার সেই কমিশনের রিপোর্ট ‘ডিক্লাসিফাই’ করে মাত্র বছর কুড়ি আগে। 

একাত্তরের মার্চ থেকে শুরু করে পরের সাড়ে নয় মাস ধরে পাকিস্তানি সেনারা দেশের পূর্বপ্রান্তে যে নির্বিচার গণহত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণ চালিয়েছিল, বিশ্বের নানা প্রান্তে যে তার‘তীব্র সমালোচনা হয়েছে, হামুদুর রেহমান কমিশনের রিপোর্ট সেটা স্বীকার করেছে। কিন্তু কেন এই ‘কথিত নির্যাতন’, তার পরিপ্রেক্ষিত বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তারা যে ব্যাখ্যা পেশ করেছে, সেটাকে ওই চরম বর্বরতা ও অত্যাচারের হয়ে এক ধরনের সাফাই-ই বলা চলে।

ক) রিপোর্টের বক্তব্য : ‘একাত্তরের ১ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হাতে তুলে নিয়েছিল। এই সময়টায় তাদের দুষ্কৃতি ও গুন্ডারা যে পাকিস্তানপন্থী জনতার ওপর ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও ধর্ষণ চালিয়েছিল তার অনেক বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ আছে। এই অরাজকতা চলেছিল ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, চন্দ্রঘোনা, রাঙামাটি, খুলনা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, কুষ্ঠিয়া, ঈশ্বরদী, নোয়াখালী, সিলেট, মৌলভীবাজার, রংপুর, সৈয়দপুর, যশোর, ময়মনসিংহ, বরিশাল, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বগুড়া, নওগাঁ ও আরও অনেক ছোট শহরজুড়ে।’

খ) ‘যে সব পশ্চিম পাকিস্তানি ও বিহারিরা এই তাণ্ডবলীলা থেকে বেঁচে কোনওক্রমে পশ্চিম পাকিস্তানে আসতে পেরেছিলেন তাদের কাছ থেকেই এই নির্যাতনের মর্মবিদারক কাহিনি আমরা শুনেছি। আসার আগে তারা সেনা-নিয়ন্ত্রিত ঢাকা বিমানবন্দরে দিনের পর দিন গাদাগাদি করে অপেক্ষা করেছেন, কবে তাদের পশ্চিমে যাওয়ার বিমানে চাপার সুযোগ আসবে। পশ্চিম পাকিস্তানি যে কর্মকর্তারা পূর্বে কর্মরত ছিলেন তাদের অনেককেই অমানবিক যন্ত্রণার শিকার হতে হয়েছে, বাঙালি সহকর্মীদের হাতে তাদের অনেককে খুন পর্যন্ত হতে হয়েছে।’

Outlook-ikejwlqyপাকিস্তানীদের বর্বরতার চিত্রগ) ‘কিন্তু এই সব নির্যাতনের খবর তখন পাকিস্তান সম্পূর্ণ ব্ল্যাকআউট করে দিয়েছিল। কারণ তাতে তখন পশ্চিম পাকিস্তানে বসবাসকারী বাঙালিদের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য পাল্টা আঘাত আসতে পারত। পাকিস্তানের ফেডারেল সরকার বিষয়টাকে দেশ-বিদেশের মিডিয়ায় মোটেই তুলে ধরতে পারেনি।’

ঘ) ‘আওয়ামী লীগের দুষ্কৃতীরা যে সব কুকর্ম ও অপরাধ করেছিল, তাতে পাকিস্তানি সেনাদের মনে ক্রোধ ও তিক্ততা জন্মানোটা স্বাভাবিক। বিশেষত যেহেতু সেনা অভিযানের আগের তিন সপ্তাহ বাহিনী কিন্তু ব্যারাকের ভেতরেই ছিল এবং তাদের চরম অবমাননার শিকার হতে হচ্ছিল। সেনারা দেখছিল তাদের সহকর্মীরা অপমানিত হচ্ছেন, খাবার ও রেশন ব্যারাকে আসতে দেওয়া হচ্ছে না, এমন কী বিনা কারণে তাদের হত্যাও করা হচ্ছে। কোনও কোনও পশ্চিম পাকিস্তানি সেনা অফিসারকে পুরো পরিবারশুদ্ধ খতম করে দেওয়া হয়েছে, এমন খবরও সেনাদের কানে পৌঁছেছিল।

ঙ) ‘পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে যে সব কথিত নির্যাতন বা কথিত অপরাধের উল্লেখ করা হয়, তার সাফাই বা ‘জাস্টিফিকেশন’ হিসেবে আমরা এ কথাগুলো বলছি না। কিন্তু এই অভিযোগগুলোর যাতে সঠিক পার্সপেকটিভ বা পটভূমিতে বিচার করে দেখা হয়, সেই ‘রেকর্ড স্ট্রেইট’ রাখার জন্যই আমরা এগুলো উল্লেখ করছি।’

এরপর কমিশন একটি তালিকা দিয়েছে, পাকিস্তানি সেনার বিরুদ্ধে ওই কয়েক মাসে ঠিক কী কী অভিযোগ উঠেছিল। তার মধ্যে ২৫/২৬ মার্চের রাতে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, গ্রামে গ্রামে হত্যালীলা ও বাড়িতে আগুন লাগানো, নির্বিচারে হত্যা, বুদ্ধিজীবী নিধন, প্রতিশোধ নিতে বাঙালি নারীদের ধর্ষণ, বেছে বেছে সংখ্যালঘু হিন্দুদের খুন এরকম আটটি বিষয় উল্লিখিত হয়েছে।

চ) পরক্ষণেই রিপোর্ট জানাচ্ছে : ‘লে. জেনারেল এ এ কে খান নিয়াজি কিন্তু এর জন্য দোষ চাপিয়েছেন টিক্কা খানের মতো তার পূর্বসূরীকে, যিনি ‘পূর্ব পাকিস্তানের কসাই’ নামেও পরিচিতি লাভ করেছিলেন। তিনি বলেছেন, যখন সেনা অভিযান চলছে তখনকার মার্শাল ল প্রশাসন কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান থেকে সব বিদেশি সাংবাদিককে তাড়িয়ে বের করে দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে বিরাগভাজন করে তুলেছিল। সেভাবেই কিন্তু আমরা ভারতের কাছে ‘প্রোপাগান্ডা যুদ্ধ’টায় পুরোপুরি হেরে যাই।’

ছ) কমিশনের রিপোর্ট আরও বলছে : ‘বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের দাবি অনুসারে, পাকিস্তানি সেনা প্রায় তিরিশ লক্ষ বাঙালির হত্যা এবং পূর্ব পাকিস্তানে দুই লক্ষ নারীর ধর্ষণের জন্য দায়ী। এই সংখ্যাগুলো যে ভীষণভাবে অতিরঞ্জিত, তা বোঝার জন্য বিশদে যুক্তি দেওয়ারও কোনও প্রয়োজন নেই। পূর্ব পাকিস্তানে তখন আমাদের যত সেনা তখন মোতায়েন ছিল, তাদের যদি আর কোনও কাজও না-থাকত, তাহলেও ওই কদিনে তারা এতগুলো হত্যা বা ধর্ষণ করে উঠতে পারত না। অথচ আমরা জানি পূর্ব পাকিস্তানে আমাদের সেনারা ক্রমাগত মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় অনুপ্রবেশকারী এবং পরে ভারতীয় সেনার সঙ্গেও যুদ্ধ করে গেছে।’

হামদূর রেহমান কমিশনের ডকুমেন্টেশনের প্রচ্ছদহামদূর রেহমান কমিশনের ডকুমেন্টেশনের প্রচ্ছদজ) ‘শেখ মুজিবুর রহমান বারে বারে অভিযোগ করেছেন ১৯৭১-এ পাকিস্তানি সেনা দুলক্ষ বাঙালি নারীকে ধর্ষণ করেছিল। এটা যে মিথ্যা, তা ধরা পড়ে যায় যখন ১৯৭২-র গোড়ায় ব্রিটেনের মাটি থেকেই তিনি যে ‘গর্ভপাত টিম’কে কমিশন করেছিলেন তাদেরকে শেষ পর্যন্ত মাত্র একশো বা তার সামান্য কিছু বেশি গর্ভপাতের কেস ডিল করতে হয়েছিল।’

স্পষ্টতই হামুদুর রেহমান কমিশন রিপোর্ট বিশ্ব মানবতার ইতিহাসে চরম কলঙ্কজনক একটি অধ্যায়কে নানাভাবে লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। এটাকে পাকিস্তানি বাহিনীর ‘বদনাম করার চেষ্টা’ হিসেবেও অভিহিত করেছেন তারা – এবং কারা, কীভাবে সেই বদনাম করেছিল তার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠনেরও সুপারিশ করেছেন।

এমন কী, ‘যেহেতু বাংলাদেশ সরকারকে পাকিস্তান এখন স্বীকৃতি দিয়ে দিয়েছে, তাই এ ব্যাপারে ঢাকার কাছে কী সাক্ষ্যপ্রমাণ আছে সেটা দেওয়ার জন্যও তাদের অনুরোধ করা যেতে পারে’, মন্তব্য করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। বাংলা ট্রিবিউনের সৌজণ্যে

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

পাকিস্তানিদের বর্বরতার সাফাই গায় হামুদুর রেহমান কমিশন

আপডেট সময় : ০৬:৩৮:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ মার্চ ২০২১

ভয়েস ডিজিটাল যেস্ক 

১৯৭১ সালের যুদ্ধে লজ্জাজনক পরাজয়ের পর পাকিস্তান সরকার সেই হারের কারণ খুঁজতে গঠন করেছিল জাস্টিস হামুদুর রেহমান কমিশন। পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি হামুদুর রেহমানের নেতৃত্বে আরও দুজন শীর্ষ বিচারপতি, আনোয়ারুল হক ও তুফায়লায়লি আবদুর রেহমান খতিয়ে দেখেছিলেন কোন ঘটনাপ্রবাহের পরিণতিতে পাকিস্তানের সেই শোচনীয় পরিণতি। পাকিস্তান সরকার সেই কমিশনের রিপোর্ট ‘ডিক্লাসিফাই’ করে মাত্র বছর কুড়ি আগে। 

একাত্তরের মার্চ থেকে শুরু করে পরের সাড়ে নয় মাস ধরে পাকিস্তানি সেনারা দেশের পূর্বপ্রান্তে যে নির্বিচার গণহত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণ চালিয়েছিল, বিশ্বের নানা প্রান্তে যে তার‘তীব্র সমালোচনা হয়েছে, হামুদুর রেহমান কমিশনের রিপোর্ট সেটা স্বীকার করেছে। কিন্তু কেন এই ‘কথিত নির্যাতন’, তার পরিপ্রেক্ষিত বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তারা যে ব্যাখ্যা পেশ করেছে, সেটাকে ওই চরম বর্বরতা ও অত্যাচারের হয়ে এক ধরনের সাফাই-ই বলা চলে।

ক) রিপোর্টের বক্তব্য : ‘একাত্তরের ১ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হাতে তুলে নিয়েছিল। এই সময়টায় তাদের দুষ্কৃতি ও গুন্ডারা যে পাকিস্তানপন্থী জনতার ওপর ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও ধর্ষণ চালিয়েছিল তার অনেক বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ আছে। এই অরাজকতা চলেছিল ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, চন্দ্রঘোনা, রাঙামাটি, খুলনা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, কুষ্ঠিয়া, ঈশ্বরদী, নোয়াখালী, সিলেট, মৌলভীবাজার, রংপুর, সৈয়দপুর, যশোর, ময়মনসিংহ, বরিশাল, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বগুড়া, নওগাঁ ও আরও অনেক ছোট শহরজুড়ে।’

খ) ‘যে সব পশ্চিম পাকিস্তানি ও বিহারিরা এই তাণ্ডবলীলা থেকে বেঁচে কোনওক্রমে পশ্চিম পাকিস্তানে আসতে পেরেছিলেন তাদের কাছ থেকেই এই নির্যাতনের মর্মবিদারক কাহিনি আমরা শুনেছি। আসার আগে তারা সেনা-নিয়ন্ত্রিত ঢাকা বিমানবন্দরে দিনের পর দিন গাদাগাদি করে অপেক্ষা করেছেন, কবে তাদের পশ্চিমে যাওয়ার বিমানে চাপার সুযোগ আসবে। পশ্চিম পাকিস্তানি যে কর্মকর্তারা পূর্বে কর্মরত ছিলেন তাদের অনেককেই অমানবিক যন্ত্রণার শিকার হতে হয়েছে, বাঙালি সহকর্মীদের হাতে তাদের অনেককে খুন পর্যন্ত হতে হয়েছে।’

Outlook-ikejwlqyপাকিস্তানীদের বর্বরতার চিত্রগ) ‘কিন্তু এই সব নির্যাতনের খবর তখন পাকিস্তান সম্পূর্ণ ব্ল্যাকআউট করে দিয়েছিল। কারণ তাতে তখন পশ্চিম পাকিস্তানে বসবাসকারী বাঙালিদের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য পাল্টা আঘাত আসতে পারত। পাকিস্তানের ফেডারেল সরকার বিষয়টাকে দেশ-বিদেশের মিডিয়ায় মোটেই তুলে ধরতে পারেনি।’

ঘ) ‘আওয়ামী লীগের দুষ্কৃতীরা যে সব কুকর্ম ও অপরাধ করেছিল, তাতে পাকিস্তানি সেনাদের মনে ক্রোধ ও তিক্ততা জন্মানোটা স্বাভাবিক। বিশেষত যেহেতু সেনা অভিযানের আগের তিন সপ্তাহ বাহিনী কিন্তু ব্যারাকের ভেতরেই ছিল এবং তাদের চরম অবমাননার শিকার হতে হচ্ছিল। সেনারা দেখছিল তাদের সহকর্মীরা অপমানিত হচ্ছেন, খাবার ও রেশন ব্যারাকে আসতে দেওয়া হচ্ছে না, এমন কী বিনা কারণে তাদের হত্যাও করা হচ্ছে। কোনও কোনও পশ্চিম পাকিস্তানি সেনা অফিসারকে পুরো পরিবারশুদ্ধ খতম করে দেওয়া হয়েছে, এমন খবরও সেনাদের কানে পৌঁছেছিল।

ঙ) ‘পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে যে সব কথিত নির্যাতন বা কথিত অপরাধের উল্লেখ করা হয়, তার সাফাই বা ‘জাস্টিফিকেশন’ হিসেবে আমরা এ কথাগুলো বলছি না। কিন্তু এই অভিযোগগুলোর যাতে সঠিক পার্সপেকটিভ বা পটভূমিতে বিচার করে দেখা হয়, সেই ‘রেকর্ড স্ট্রেইট’ রাখার জন্যই আমরা এগুলো উল্লেখ করছি।’

এরপর কমিশন একটি তালিকা দিয়েছে, পাকিস্তানি সেনার বিরুদ্ধে ওই কয়েক মাসে ঠিক কী কী অভিযোগ উঠেছিল। তার মধ্যে ২৫/২৬ মার্চের রাতে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, গ্রামে গ্রামে হত্যালীলা ও বাড়িতে আগুন লাগানো, নির্বিচারে হত্যা, বুদ্ধিজীবী নিধন, প্রতিশোধ নিতে বাঙালি নারীদের ধর্ষণ, বেছে বেছে সংখ্যালঘু হিন্দুদের খুন এরকম আটটি বিষয় উল্লিখিত হয়েছে।

চ) পরক্ষণেই রিপোর্ট জানাচ্ছে : ‘লে. জেনারেল এ এ কে খান নিয়াজি কিন্তু এর জন্য দোষ চাপিয়েছেন টিক্কা খানের মতো তার পূর্বসূরীকে, যিনি ‘পূর্ব পাকিস্তানের কসাই’ নামেও পরিচিতি লাভ করেছিলেন। তিনি বলেছেন, যখন সেনা অভিযান চলছে তখনকার মার্শাল ল প্রশাসন কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান থেকে সব বিদেশি সাংবাদিককে তাড়িয়ে বের করে দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে বিরাগভাজন করে তুলেছিল। সেভাবেই কিন্তু আমরা ভারতের কাছে ‘প্রোপাগান্ডা যুদ্ধ’টায় পুরোপুরি হেরে যাই।’

ছ) কমিশনের রিপোর্ট আরও বলছে : ‘বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের দাবি অনুসারে, পাকিস্তানি সেনা প্রায় তিরিশ লক্ষ বাঙালির হত্যা এবং পূর্ব পাকিস্তানে দুই লক্ষ নারীর ধর্ষণের জন্য দায়ী। এই সংখ্যাগুলো যে ভীষণভাবে অতিরঞ্জিত, তা বোঝার জন্য বিশদে যুক্তি দেওয়ারও কোনও প্রয়োজন নেই। পূর্ব পাকিস্তানে তখন আমাদের যত সেনা তখন মোতায়েন ছিল, তাদের যদি আর কোনও কাজও না-থাকত, তাহলেও ওই কদিনে তারা এতগুলো হত্যা বা ধর্ষণ করে উঠতে পারত না। অথচ আমরা জানি পূর্ব পাকিস্তানে আমাদের সেনারা ক্রমাগত মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় অনুপ্রবেশকারী এবং পরে ভারতীয় সেনার সঙ্গেও যুদ্ধ করে গেছে।’

হামদূর রেহমান কমিশনের ডকুমেন্টেশনের প্রচ্ছদহামদূর রেহমান কমিশনের ডকুমেন্টেশনের প্রচ্ছদজ) ‘শেখ মুজিবুর রহমান বারে বারে অভিযোগ করেছেন ১৯৭১-এ পাকিস্তানি সেনা দুলক্ষ বাঙালি নারীকে ধর্ষণ করেছিল। এটা যে মিথ্যা, তা ধরা পড়ে যায় যখন ১৯৭২-র গোড়ায় ব্রিটেনের মাটি থেকেই তিনি যে ‘গর্ভপাত টিম’কে কমিশন করেছিলেন তাদেরকে শেষ পর্যন্ত মাত্র একশো বা তার সামান্য কিছু বেশি গর্ভপাতের কেস ডিল করতে হয়েছিল।’

স্পষ্টতই হামুদুর রেহমান কমিশন রিপোর্ট বিশ্ব মানবতার ইতিহাসে চরম কলঙ্কজনক একটি অধ্যায়কে নানাভাবে লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। এটাকে পাকিস্তানি বাহিনীর ‘বদনাম করার চেষ্টা’ হিসেবেও অভিহিত করেছেন তারা – এবং কারা, কীভাবে সেই বদনাম করেছিল তার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠনেরও সুপারিশ করেছেন।

এমন কী, ‘যেহেতু বাংলাদেশ সরকারকে পাকিস্তান এখন স্বীকৃতি দিয়ে দিয়েছে, তাই এ ব্যাপারে ঢাকার কাছে কী সাক্ষ্যপ্রমাণ আছে সেটা দেওয়ার জন্যও তাদের অনুরোধ করা যেতে পারে’, মন্তব্য করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। বাংলা ট্রিবিউনের সৌজণ্যে