পর্যটকদের ভীড়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পা রাখার জায়গা নেই
- আপডেট সময় : ০৬:৪৫:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২১ ৩০৬ বার পড়া হয়েছে
ঋদ্ধিমান চৌধুরী, ঢাকা
ক্যালেন্ডারে ছুটির তালিকাটা দেখে ব্যাপারটা অনুমান করা গিয়েছিলো সপ্তাহের শুরুতেই। অবশেষে তাই হলো। মনের বালুচরে রোদ চিকচিক করার বিষয়টি বাস্তবরূপ নিয়েছে বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত কক্সবাজার। এখানের সমুদ্র সৈকত পা ফেলার জায়গা নেই। দিগন্ত প্রসারিত সৈকতজুড়ে সকল বয়সী মানুষ বাধন হারা। আর হবেই কেন বলুন তো? করোনা মহামারি কারণে গোটা একটা বছর মানুষ ঘরবন্দি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মানুষিক যন্ত্রণায় কাবু কচিকাঁচারা। একি সহ্য হয়। তারপরও হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়ে সহ্য করে নিয়েছেন স্বজনরা। সবই যে নিয়তি।
কক্সবাজার
টানা তিনদিনের ছুটি
বুধবার থেকে মানুষজন সপরিবারে ইটপাথরের হৃদয়হীন রাজধানী ঢাকা ছাড়তে থাকে একদন্ড খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে নিঃশ্বাস নেবার জন্য। কমলাপুর রেলওয়ে টামির্নাল, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, মহাখালি, সায়বাদ এবং গাবতলী এই তিনটি আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালসহ সকল স্থানে মানুষের জায়গা ধরে না। সবাই ছুটছেন। প্রতিটি ফেরিঘাটে ছিল মানুষের ঢল। আর বৃহস্পতিবার রাত ৯টার পরতো রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র ফকিরেরপুলে দীর্ঘ যানজট। মধ্যরাত পেরিয়ে এখানের যানজট স্বাভাবিক হয়েছে।
উৎসবের বাড়ি বাংলাদেশ
উৎসবের বাড়ি বাংলাদেশ। বছরজুড়ে এখানে নানা অনুষ্ঠানের দিল খোলা আয়োজন। করোনা এবারের সকল উৎসব কেড়ে নিয়েছে। সর্বশেষ বসন্ত উৎসব পালন করা হয়ে ওঠেনি। এক জায়গায় সীমিত আকারে করতে হয়েছে। বাংলাদেশে শুক্র ও শনিবার দু’দিনের সরকারী ছুটি। এবারে রবিবারে মহান ভাষা দিবস ২১ ফেব্রুযারি। বাঙালির প্রাণের আবেগ। এদিন সরকার ছুটি। তাই শুক্র থেকে রবিবার টানা তিনদিনের ছুটি উপভোগ করতে রাজধানী খালি করে কাতারে কাতারে মানুষ ছুটে গিয়েছেন পছন্দের জায়গায়। এই তিন দিনের ছুটিতে
পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজার হয়ে উঠেছে মানুষের সমুদ্র। এখানের ট্যুর অপারেটরদের ধারণা তিনদিনের ছুটি কাটাতে কক্সবাজারে ৫ লাখেরও অধিক পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। ফাল্গুনের তপ্তরোদ ও সন্ধ্যার শীতল হাওয়ার স্পর্শ নিতে লোকারণ্য সৈকতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভীড়
কোথায় জায়গা নেই
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত দুই সপ্তাহ আগেই প্রায় হোটেল মোটেল বুকিং সম্পন্ন। তারা কেবল অপেক্ষায় রয়েছেন, কখন গেষ্ট আসবেন। টানা এক বছর পর কক্সবাজার হাসলো। অনেকে আবার পনেরো দিন আগে থেকে বুকিং দিয়ে রেখেছেন। কক্সবাজারে সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট রয়েছে। এসব হোটেল-রিসোর্টে দেড় লাখ মানুষের রাত্রি যাপনের সুযোগ থাকলেও বাকি পর্যটকরা কোথায় রাত্রি যাপন করবেন তা নিয়ে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
ঠাঁই নেই কক্সবাজারে, নিরাপত্তা ট্যুরিষ্ট ও জেলা পুলিশ
বৃহস্পতিবার থেকে কক্সবাজারের পথে একের পর এক বিশালবহুল কোচ ভর্তি পর্যটক। শুক্রবার ভোরে ঢাকা পৌছানো কোচের রীতিমত দীর্ঘ লাইন। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্তক অবস্থায় রয়েছেন ট্যুরিস্ট ও জেলা পুলিশ। মোতায়েন রাখা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশও। যে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে পর্যটন স্পটগুলো। ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে দ্রুত সাধারণ চিকিৎসা ও খাবার পানির ব্যবস্থা রয়েছে সৈকতে। সমুদ্রে সাঁতার কাটার সময় বিপদাপন্ন পর্যটকদের রক্ষার্থে সর্তক অবস্থায় রয়েছে লাইফ গার্ড কর্মীরা। পাশাপাশি করোনার সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে পর্যটকদের সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে মাইকিং করছে জেলা প্রশাসনের বিচ কর্মীরা।
ছুটি কাটাতে পর্যটকদের ভীড় রাঙামাটিতে। আর এখানের
ঝুলন্ত সেতু পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ।: ছবি সংগ্রহ
কক্সবাজারেই ৫ লাখের বেশি পর্যটক
কক্সবাজারের আসা পর্যটকরা জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতির দীর্ঘদিন কোথাও যাওয়া হয়নি তাদের। বাসায় থাকতে গিয়ে পরিবারের সবাই বোরিং হয়ে গিয়েছেন। ভাষা দিবসের ছুটিসহ টানা বন্ধ পেয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন। পর্যটকরা ভাবতেও পারেননি এতো লোকের সমাগম হতে পারে! হোটেল ব্যবসায়ীরা জানান, হোটেল-মোটেলে যে পরিমাণ ধারণ ক্ষমতা তার চেয়েও লোকসমাগম বেশি বলে মনে হচ্ছে এবার। রুম বুকিং করে যারা এসেছেন, তারা ছাড়া বাকিরা ভোগান্তিতে পড়তে পারে বলে মনে হচ্ছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ
কক্সবাজার জোনের ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান জানিয়েছেন, পর্যটক নিরাপত্তায় সৈকত ও আশপাশে পোশাকধারী পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের বিশেষ রেসকিউ টিম, ইভটিজিং কন্ট্রোল টিম, ড্রিংকিং জোন, দ্রুত চিকিৎসাসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে পর্যটকদের নিরাপত্তায়। সৈকতে বীচ বাইক নিয়েও রয়েছে টহল। রয়েছে ৩টি বেসরকারি লাইফ গার্ড সংস্থার অর্ধশতাধিক প্রশিক্ষিত লাইফ গার্ড কর্মী। কন্ট্রোল রুম, পর্যবেক্ষণ টাওয়ারসহ পুরো সৈকত পুলিশের নজরদারির আওতায় রয়েছে।
সুনামগঞ্জের শিমুলবাগানের টানে পর্যটকরা ছুটে যান সেখানে।
সিলেট, মৌলভীবাজা, শ্রীমঙ্গলের দৃষ্টি নন্দন চা বাগান পর্যটকদের
বিমোহিত করে। ছবি সংগ্রহ
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক
জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ জানিয়েছেন, পর্যটন সম্ভাবনাময় শিল্প। কক্সবাজারে আসা পর্যটকদের সেবা দিতে প্রশাসন সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকে। সৈকতের লাবনী, সুগন্ধা, কলাতলীসহ ১১টি পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে তথ্য কেন্দ্র। পর্যটকদের করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মানতে সর্বদা সচেতনতা মূলক মাইকিং ও প্রয়োজনে ভ্রমমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। পর্যটক হয়রানি বন্ধে মাঠে রয়েছে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত। আর কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোঃ হাসানুজ্জামান বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সবসময় সর্তকাবস্থায় রয়েছে পুলিশ। পর্যটকদের অনাকাঙ্খিত হয়রানি রোধে, পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোষাকে এবং পর্যটক বেশেও পুলিশের নারী সদস্য সৈকতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।