পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ ধরার উৎসব
- আপডেট সময় : ০২:২৭:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ মে ২০২১ ১৩৭ বার পড়া হয়েছে
‘ইলিশের বাড়ি বাংলাদেশ। বিশ্বের মোট ইলিশ উৎপাদনের ৮৫ ভাগের বেশি উৎপাদন হয়ে থাকে বাংলাদেশে’
জাবীর আব্দুল্লাহ, ঢাকা
ষাট দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ। মৎস্য পল্লীতে আগাম ঈদের আমেজ। পদ্মা-মেঘনার জল তাদের মুখে হাসি ফোটাবে। ঘরে ঘরে হবে অন্নের যোগার। নিদানকালের ধারদেনা পরিশোধ করার সুযোগ পাবে। নিষেধাজ্ঞার পর পদ্মা-মেঘনাসহ দেশের সকল নদ-নদীতে ইলিশ ধরা উন্মুক্ত হয়েছে শনিবার থেকে।
মা ইলিশের নিরাপদ বিচরণ নিশ্চিত করতে সাগরের মোহনা ও ইলিশ চলাচলকারী নদ-নদীতে মাছ ধরায় দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করে আসছে সরকার। এসময়ে মৎস্যজীবীদের পরিবার পিছু বিনামূল্যে প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে চাল দিয়ে থাকে।
ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি এবং জাটকা সংরক্ষণের আওতায় ৬ জেলায় ৫টি ইলিশ অভয়াশ্রমে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সকল ধরণের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা করা হয়। আদেশ অমান্যকারীর বিরুদ্ধে কমপক্ষে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান থাকার কথা জানায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রক।
৬০ দিনে যে পাঁচটি অভয়াশ্রমে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল তার মধ্যে ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালীর চররুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকা, চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনা নদীর নিম্ন অববাহিকার ১০০ কিলোমিটার এলাকা, বরিশালের হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ ও বরিশাল সদর
উপজেলার কালাবদর, গজারিয়া ও মেঘনা নদীর প্রায় ৮২ কিলোমিটার এলাকা, ভোলার মদনপুর, চর ইলিশা থেকে চরপিয়াল পর্যন্ত মেঘনা নদীর শাহবাজপুর শাখা নদীর ৯০ কিলোমিটার এলাকা এবং শরীয়তপুরের নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা এবং চাঁদপুরের মতলব উপজেলার মধ্যে অবস্থিত পদ্মা নদীর ২০ কিলোমিটার এলাকা।
প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিলে এসব অভয়াশ্রমে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ থাকে। এ সময় সংশ্লিষ্ট ছয়টি জেলার তালিকাভুক্ত ২ লাখ ৪৩ হাজার ৭৭৮ জন মৎস্যজীবেিদর প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে দুই মাসে ৮০ কেজি করে ১৯ হাজার ৫০২ মেট্রিক টন ভিজিএফ চাল সহায়তা দেয় সরকার।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিসুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ১৫ হাজার মেট্রিক টন করে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারেও সরকারের নির্ধারিত স্থানে দুই মাস ইলিশসহ সকল প্রকারের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। নদীর জলও বেশ ভালো।
ড. আনিসুর রহামান আরও বলেন, একটি মা ইলিশ লাখ লাখ ডিম ছাড়ে। এবারও ডিম ছাড়ার উপযুক্ত সুযোগ পেয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে চলতি বছর ইলিশের উৎপাদন পৌনে ৬ লাখ মেট্রিক টন হবার প্রত্যাশা করছেন এই বিজ্ঞানি। গেল বছর ইলিশের উৎপাদন ছিলো সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন।
জানা গেছে নিষেধাজ্ঞা শেষে চাঁদপুরে মাছ ধরতে গিয়েছেন, অর্ধ লক্ষাধিক জেলে। করোনা মহামারির সুযোগে এবারও নদীতে প্রচুর জাটকা ধরা হয়েছে। এরপরও ইলিশের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম রেজাউল করিম জানিয়েছেন, দেশের মৎস্য সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব সকলের। অথচ অবৈধভাবে জাটকা ধরার নেপথ্যে কিছু মানুষ কাজ করছে। অবৈধ মৎস্য আহরণে যে ট্রলারগুলো পাওয়া যায় সেগুলো সাধারণ মৎস্যজীবীদের নয়, কিছু ধনী অসাধু ব্যক্তির। তারা সমাজ ও দেশের শত্রু।
মন্ত্রী আরও জানান, অনেক সময় বিষাক্ত দ্রব্য ও অবৈধ বালু উত্তোলনের জন্য মা ইলিশের ডিম ছাড়া বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে। এগুলো বন্ধে ইলিশের অভয়াশ্রম গড়া হয়েছে। এমনকি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।