ঢাকা ০৫:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ৭ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পদ্মায় নাব্য সংকট : ফরিদপুর নৌবন্দরে ভিড়তে পারছে না পণ্যবাহী জাহাজ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:৩১:৪৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২১ ২৯৮ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক

বর্ষায় বাংলার আনাকানাচে জলমগ্ন হবার ঘটনা প্রতিবছরের। তবে, শুষ্কমৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে জল কমতে। তখন বড় নদ-নদীগুলোতে জেগে ওছে চর। সময়ে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হেঁটে পদ্মা পারের ঘটনার চিত্রও কিন্তু আমাদের দেখতে হয়। নৌপথে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করতে গিয়ে রাতের আঁধারে চরে আটকে থাকার খবরও প্রচার হয়। এ অবস্থায় নদী রক্ষণ তথা খননের কাজে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো দিনরাত কাজ করে চলেছে। কিন্তু তার পরও নাব্য সংকটে ধুকছে দেশের বিভিন্ন নদী।

এরই ধারাবাহিকতায় ফরিদপুরে সিঅ্যান্ডবি ঘাট নৌবন্দরে ভিড়তে পারছে না পণ্যবাহী নৌযান। ভুঁইয়াবাড়ী ঘাটকে  বিকল্প হিসেবে নিতে হয়েছে পণ্যবাহী জাহাজকে।

ঘাটটির অবস্থা কতটা করুন তা ওঠে আসে স্বয়ং বিআইডব্লিউটিএ’র সংশ্লিষ্টদের কথায়। ফরিদপুরের সিঅ্যান্ডবি ঘাটে শুল্ক আদায়ের দায়িত্বে রয়েছেন মো. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বন্দরে জাহাজ, কার্গো ও বড় ট্রলার ভিড়তে না পারায় তাদের শুল্ক আদায়ও কমে গেছে। তিনি জানান, আগে ঘাটটি ইজারা দেওয়া হতো। তবে এখন সরাসরি বিআইডব্লিউটিএ সরাসরি শুল্ক আদায় করছে।

এদিকে শুষ্ক মৌসুমে ফরিদপুরে পদ্মা নদীতে দেখা দিয়েছে নাব্য সংকট। ফলে পণ্যবাহী জাহাজ, কার্গো ও বড় ট্রলার চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। পানি কম থাকায় দূরদূরান্ত হতে আসা এসব পণ্যবাহী জাহাজ নির্ধারিত বন্দরে ভিড়তে পারছে না। এতে করে নৌবন্দরের শুল্ক আদায়ও কমে গেছে। পাশাপাশি নৌযান থেকে পণ্য খালাস করতে অতিরিক্ত মাশুল গুনছেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গেল ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ পদ্মা নদীর পানি কমতে শুরু করে। তখন থেকেই এসব নৌযান নাব্য সংকটের কবলে পড়ে সিঅ্যান্ডবি ঘাটের বন্দরে ভিড়তে পারছে না। বর্তমানে দুরবস্থা চরমে। অবশ্য নাব্য সংকট রক্ষায় কয়েকটি স্থানে বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং মেশিন বসিয়ে খনন কাজ চালানো হচ্ছে। কিন্তু খননের কয়েক দিনের মধ্যেই ফের তা ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

দক্ষিণবঙ্গসহ বৃহত্তর ফরিদপুরের নানা প্রান্ত থেকে নৌপথে পণ্যপরিবহণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নৌবন্দরটি শত বছরের প্রাচীন। ২০১৭ সালে সরকার এটি তৃতীয় শ্রেণির নৌবন্দর হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়। চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর এবং সিলেট, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে নৌপথে পণ্য আসে এই বন্দরে।

ফরিদপুরের সোনালি আঁশ অর্থাৎ পাট এই বন্দর হয়েই চট্টগ্রাম বন্দরে যায় এবং রপ্তানি হয়। এছাড়া সিলেট থেকে কয়লা ও বালু, কুষ্টিয়া-চুয়াডাঙ্গা থেকে চাল এই পথে আমদানি হয়। নারায়ণগঞ্জ বন্দর থেকে আসা প্রচুর সিমেন্টবাহী জাহাজ ও কার্গো এই বন্দর হতে খালাস করা হয়। বর্তমানে নাব্যসংকটে জেগে ওঠেছে অসংখ্য ডুবোচর। এতে করে পণ্যবাহী নৌযান বন্দরে আসতে পারছে না।

 

নৌবন্দরে ভিড়তে না পেরে অনেক দূরে দির্ঘীর চর, ভুঁইয়াবাড়ি ঘাট, খুশির বাজার, বাইল্যা হাটা, হাজিগঞ্জের চর, চরভদ্রাসনের এমপিডাঙ্গি ও গোপালপুরসহ বিভিন্ন স্থানে নদীর তীরে পণ্যবাহী জাহাজ, কার্গো ও বড় ট্রলার ভেড়ানো রয়েছে। নারায়ণগঞ্জের মেঘনা ঘাট হতে এমন একটি সিমেন্টবাহী জাহাজের মাস্টার মো. দুলাল হাওলাদার বলেন, চরভদ্রাসনে এসে ঠেকে গেছি। নাব্যসংকটে ১২ হাজার ব্যাগ সিমেন্ট পরিবহনের পরিবর্তে ৮ হাজার ব্যাগ নিয়ে আসতে হয়েছে। তিনি বলেন, এতে পণ্যের ভাড়াও কমে গেছে।

 

নৌবন্দরে ভিড়তে পারলে প্রতি বস্তা হতে ১৪ টাকা করে পেতেন তারা। কিন্তু এখন এই ভাড়ার অর্ধেক দিয়ে আরেকটি ট্রলার ভাড়া করে মাল খালাস করতে হচ্ছে। এসব কারণে তাদের স্টাফ খরচ এবং অন্যান্য ব্যয়ও বেড়ে গেছে। এছাড়া জানমালের নিরাপত্তা নিয়েও তারা উদ্বিগ্ন। এমভি ছায়ানীড় নামের অপর জাহাজের মাস্টার মো. ফারুক বলেন, নাব্যতা না থাকায় জাহাজের ইঞ্জিনের পাখা ভেঙে যায়। সুখান আটকে যায়। জাহাজের অনেক ক্ষতি হয়। অন্তত পক্ষে ১০ হাত গভীর পানি থাকা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সেখানে কোথাওবা দুই-তিন হাত পানি রয়েছে।

 

ড্রেজিংয়ের পরেও কেন নাব্যতা আসছে না এর কারণ জানতে চাইলে সেখানে ড্রেজিংয়ের কাজে নিযুক্তরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ড্রেজিংয়ের পরপরই আবার নতুন বালু এসে ভরে যাচ্ছে। পানিতে প্রচুর পলি রয়েছে। ফরিদপুর নৌবন্দরের পণ্য খালাসে নিযুক্ত প্রতিষ্ঠান লাকি ট্রান্সপোর্টের ম্যানেজার মো. আব্দুস সালাম বলেন, প্রায় ৮ হাজার কুলি শ্রমিক এই নৌবন্দরে কাজ করেন। অনেক ট্রান্সপোর্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীও রয়েছেন। জাহাজ কার্গো না আসায় তারা কাজ পাচ্ছে না। বছরের পাঁচ মাসের মতো সময় এখানে পানি কম থাকায় বন্দরে পণ্য খালাসে সমস্যা হয়।

এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ’র পোর্ট অফিসার মাসুদ পারভেজ বলেন, নৌবন্দরটিকে সচল করতে নৌ চ্যানেলে ড্রেজিং করা হচ্ছে। তবে এখনো পথটি বড় নৌযান চলাচলের উপযুক্ত হয়নি। আশা করছি চলতি মৌসুমেই এই সংকট কেটে যাবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

পদ্মায় নাব্য সংকট : ফরিদপুর নৌবন্দরে ভিড়তে পারছে না পণ্যবাহী জাহাজ

আপডেট সময় : ০৩:৩১:৪৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২১

ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক

বর্ষায় বাংলার আনাকানাচে জলমগ্ন হবার ঘটনা প্রতিবছরের। তবে, শুষ্কমৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে জল কমতে। তখন বড় নদ-নদীগুলোতে জেগে ওছে চর। সময়ে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হেঁটে পদ্মা পারের ঘটনার চিত্রও কিন্তু আমাদের দেখতে হয়। নৌপথে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করতে গিয়ে রাতের আঁধারে চরে আটকে থাকার খবরও প্রচার হয়। এ অবস্থায় নদী রক্ষণ তথা খননের কাজে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো দিনরাত কাজ করে চলেছে। কিন্তু তার পরও নাব্য সংকটে ধুকছে দেশের বিভিন্ন নদী।

এরই ধারাবাহিকতায় ফরিদপুরে সিঅ্যান্ডবি ঘাট নৌবন্দরে ভিড়তে পারছে না পণ্যবাহী নৌযান। ভুঁইয়াবাড়ী ঘাটকে  বিকল্প হিসেবে নিতে হয়েছে পণ্যবাহী জাহাজকে।

ঘাটটির অবস্থা কতটা করুন তা ওঠে আসে স্বয়ং বিআইডব্লিউটিএ’র সংশ্লিষ্টদের কথায়। ফরিদপুরের সিঅ্যান্ডবি ঘাটে শুল্ক আদায়ের দায়িত্বে রয়েছেন মো. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বন্দরে জাহাজ, কার্গো ও বড় ট্রলার ভিড়তে না পারায় তাদের শুল্ক আদায়ও কমে গেছে। তিনি জানান, আগে ঘাটটি ইজারা দেওয়া হতো। তবে এখন সরাসরি বিআইডব্লিউটিএ সরাসরি শুল্ক আদায় করছে।

এদিকে শুষ্ক মৌসুমে ফরিদপুরে পদ্মা নদীতে দেখা দিয়েছে নাব্য সংকট। ফলে পণ্যবাহী জাহাজ, কার্গো ও বড় ট্রলার চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। পানি কম থাকায় দূরদূরান্ত হতে আসা এসব পণ্যবাহী জাহাজ নির্ধারিত বন্দরে ভিড়তে পারছে না। এতে করে নৌবন্দরের শুল্ক আদায়ও কমে গেছে। পাশাপাশি নৌযান থেকে পণ্য খালাস করতে অতিরিক্ত মাশুল গুনছেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গেল ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ পদ্মা নদীর পানি কমতে শুরু করে। তখন থেকেই এসব নৌযান নাব্য সংকটের কবলে পড়ে সিঅ্যান্ডবি ঘাটের বন্দরে ভিড়তে পারছে না। বর্তমানে দুরবস্থা চরমে। অবশ্য নাব্য সংকট রক্ষায় কয়েকটি স্থানে বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং মেশিন বসিয়ে খনন কাজ চালানো হচ্ছে। কিন্তু খননের কয়েক দিনের মধ্যেই ফের তা ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

দক্ষিণবঙ্গসহ বৃহত্তর ফরিদপুরের নানা প্রান্ত থেকে নৌপথে পণ্যপরিবহণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নৌবন্দরটি শত বছরের প্রাচীন। ২০১৭ সালে সরকার এটি তৃতীয় শ্রেণির নৌবন্দর হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়। চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর এবং সিলেট, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে নৌপথে পণ্য আসে এই বন্দরে।

ফরিদপুরের সোনালি আঁশ অর্থাৎ পাট এই বন্দর হয়েই চট্টগ্রাম বন্দরে যায় এবং রপ্তানি হয়। এছাড়া সিলেট থেকে কয়লা ও বালু, কুষ্টিয়া-চুয়াডাঙ্গা থেকে চাল এই পথে আমদানি হয়। নারায়ণগঞ্জ বন্দর থেকে আসা প্রচুর সিমেন্টবাহী জাহাজ ও কার্গো এই বন্দর হতে খালাস করা হয়। বর্তমানে নাব্যসংকটে জেগে ওঠেছে অসংখ্য ডুবোচর। এতে করে পণ্যবাহী নৌযান বন্দরে আসতে পারছে না।

 

নৌবন্দরে ভিড়তে না পেরে অনেক দূরে দির্ঘীর চর, ভুঁইয়াবাড়ি ঘাট, খুশির বাজার, বাইল্যা হাটা, হাজিগঞ্জের চর, চরভদ্রাসনের এমপিডাঙ্গি ও গোপালপুরসহ বিভিন্ন স্থানে নদীর তীরে পণ্যবাহী জাহাজ, কার্গো ও বড় ট্রলার ভেড়ানো রয়েছে। নারায়ণগঞ্জের মেঘনা ঘাট হতে এমন একটি সিমেন্টবাহী জাহাজের মাস্টার মো. দুলাল হাওলাদার বলেন, চরভদ্রাসনে এসে ঠেকে গেছি। নাব্যসংকটে ১২ হাজার ব্যাগ সিমেন্ট পরিবহনের পরিবর্তে ৮ হাজার ব্যাগ নিয়ে আসতে হয়েছে। তিনি বলেন, এতে পণ্যের ভাড়াও কমে গেছে।

 

নৌবন্দরে ভিড়তে পারলে প্রতি বস্তা হতে ১৪ টাকা করে পেতেন তারা। কিন্তু এখন এই ভাড়ার অর্ধেক দিয়ে আরেকটি ট্রলার ভাড়া করে মাল খালাস করতে হচ্ছে। এসব কারণে তাদের স্টাফ খরচ এবং অন্যান্য ব্যয়ও বেড়ে গেছে। এছাড়া জানমালের নিরাপত্তা নিয়েও তারা উদ্বিগ্ন। এমভি ছায়ানীড় নামের অপর জাহাজের মাস্টার মো. ফারুক বলেন, নাব্যতা না থাকায় জাহাজের ইঞ্জিনের পাখা ভেঙে যায়। সুখান আটকে যায়। জাহাজের অনেক ক্ষতি হয়। অন্তত পক্ষে ১০ হাত গভীর পানি থাকা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সেখানে কোথাওবা দুই-তিন হাত পানি রয়েছে।

 

ড্রেজিংয়ের পরেও কেন নাব্যতা আসছে না এর কারণ জানতে চাইলে সেখানে ড্রেজিংয়ের কাজে নিযুক্তরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ড্রেজিংয়ের পরপরই আবার নতুন বালু এসে ভরে যাচ্ছে। পানিতে প্রচুর পলি রয়েছে। ফরিদপুর নৌবন্দরের পণ্য খালাসে নিযুক্ত প্রতিষ্ঠান লাকি ট্রান্সপোর্টের ম্যানেজার মো. আব্দুস সালাম বলেন, প্রায় ৮ হাজার কুলি শ্রমিক এই নৌবন্দরে কাজ করেন। অনেক ট্রান্সপোর্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীও রয়েছেন। জাহাজ কার্গো না আসায় তারা কাজ পাচ্ছে না। বছরের পাঁচ মাসের মতো সময় এখানে পানি কম থাকায় বন্দরে পণ্য খালাসে সমস্যা হয়।

এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ’র পোর্ট অফিসার মাসুদ পারভেজ বলেন, নৌবন্দরটিকে সচল করতে নৌ চ্যানেলে ড্রেজিং করা হচ্ছে। তবে এখনো পথটি বড় নৌযান চলাচলের উপযুক্ত হয়নি। আশা করছি চলতি মৌসুমেই এই সংকট কেটে যাবে।