নিবন্ধন ছাড়া ভ্রমণ নয়, সেন্টমার্টিনে পর্যটক নিয়ন্ত্রণে কমিটি
- আপডেট সময় : ১০:৫৩:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪ ৪৯ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। পর্যটকদের ভ্রমণের তালিকায় অন্যতম নিশায় সেন্টমার্টিন। এই দ্বীপটিতে ভ্রমণে যাওয়ার জন্য আগে থেকেই পরিকল্পনা করা হয়। এক সময় পর্যটকদের সেন্টমার্টিন ভ্রমণ ছিল উন্মুক্ত।
কিন্তু সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ রক্ষায় রক্ষায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় পর্যটক ও অনুমোদিত জাহাজ নিয়ন্ত্রণে যৌথ কমিটি গঠন করেছে। এখন থেকে সেন্ট মার্টিনে যেতে হলে পর্যটকদের নিবন্ধনসহ নানা বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। মন্ত্রণালয়ের গঠন করা যৌথ কমিটি এসব বিষয় দেখভাল করবে।
মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সাবরীনা রহমান স্বাক্ষরিত এক আদেশে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে কক্সবাজার সদর ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও)। সদস্যসচিব পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক।
সদস্য হিসেবে থাকবেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের কক্সবাজারের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের কক্সবাজারের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের কক্সবাজারের প্রতিনিধি ও ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজারের প্রতিনিধি।
আদেশের চিঠিতে কমিটির কর্মপরিধিতে বলা হয়েছে, সেন্ট মার্টিনগামী জাহাজে ওঠার আগে পর্যটকদের জাহাজ ছাড়ার জায়গা; অর্থাৎ এন্ট্রি পয়েন্টে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের তৈরি করা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করে ট্রাভেল পাস নিতে হবে।
ট্রাভেল পাসধারী পর্যটকদের অনুমোদিত জাহাজে ভ্রমণ নিশ্চিত করবে কমিটি। পর্যটক ও অনুমোদিত জাহাজে নিষিদ্ধঘোষিত পলিথিন ব্যাগ ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের পণ্য পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে কমিটি কঠোর থাকবে।
পর্যটকেরা সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পৌঁছানোর পর কোন হোটেলে থাকবেন, তা লিপিবদ্ধ করার পাশাপাশি রেজিস্টারে সংরক্ষণ করা হবে। জাহাজ ছাড়ার স্থানে (পয়েন্টে) ও সেন্ট মার্টিনের প্রবেশের স্থানে (এন্ট্রি পয়েন্ট) পর্যটকদের জন্য করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়ে বিলবোর্ড স্থাপন করতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয় সার্বিক বিষয় ও যোগাযোগ সমন্বয় করবে। কাজের সুবিধার্থে কমিটি প্রয়োজনে সদস্য বাড়াতে পারবে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) নিজাম উদ্দিন আহমেদ কমিটি গঠনের বিষয়টি জানিয়ে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, গঠিত কমিটির সদস্যরা ইতিমধ্যে মাঠে নেমেছেন।
টেকনাফের ইউএনওর অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও কমিটির আহ্বায়ক আরিফ উল্লাহ নেজামী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বুধবার তারা আদেশের কপি পেয়েছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শ ও কমিটির অন্য ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, কখন থেকে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চালু করা হবে।
তিনি বলেন, কয়েক দিন বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার বিকেল থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির গোলাগুলি আবার শুরু হয়েছে। বুধবার বিকেল পর্যন্ত গোলাগুলি চলছে। নাফ নদী দুই দেশের সীমানা ভাগ করেছে। নদীর পূর্ব পাশে রাখাইন রাজ্য আর পশ্চিমে টেকনাফ।
টেকনাফ থেকে ১৭ কিলোমিটারের নাফ নদী অতিক্রম করে তারপর আরও ১৭ কিলোমিটারের বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যেতে হয়। নাফ নদী অতিক্রমের সময় অতীতে ওপার থেকে গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে নাফ নদী দিয়ে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের বিষয়ে ভাবছে কমিটি। পর্যটকের নিরাপত্তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। বিকল্প পথে জাহাজ চলাচলের স্থানও খোঁজা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২২ অক্টোবর পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের এক সভায় সেন্ট মার্টিন নিয়ে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আসমা শাহীন স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে পাঁচটি বিষয় কার্যকরের সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
এতে বলা হয়, সেন্ট মার্টিনে নৌযান বা জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি নিতে হবে। তারপর কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক সেন্ট মার্টিনগামী জাহাজ বা নৌযান চলাচলে অনুমতি দিতে পারবেন।
পরিপত্রে বলা হয়, নভেম্বর মাসে দ্বীপে পর্যটক গেলেও দিনেই ফিরে আসবেন। রাত যাপন করতে পারবেন না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে পর্যটকেরা সেন্ট মার্টিনে গিয়ে রাত যাপন করতে পারবেন। কিন্তু পর্যটকের সংখ্যা প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের বেশি হবে না। দ্বীপে রাতের বেলায় আলো জ্বালানো যাবে না, শব্দদূষণ সৃষ্টি ও বারবিকিউ পার্টি করা যাবে না।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ফিরোজ খানের মতে, প্রতিবছর অক্টোবরের শেষে টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল শুরু হয়। গত বছর রাখাইন রাজ্যের গোলাগুলির কারণে নাফ নদী দিয়ে জাহাজ চলাচলে সমস্যা দেখা দেয়। তখন কয়েকটি নৌযানে ওপার থেকে গুলি ছোড়া হয়।
এরপর বিকল্প হিসেবে কক্সবাজার শহর ও মেরিন ড্রাইভের ইনানী জেটি দিয়ে কয়েক মাস জাহাজ চলাচল করে। কিন্তু এবার নভেম্বর মাসের শেষ দিকেও জাহাজ চলাচল শুরু না হওয়ায় হতাশ দ্বীপের বাসিন্দারা।
বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, সরকারি বিধিনিষেধের কারণে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বাসিন্দারাও জরুরি প্রয়োজনে কাঠের ট্রলার বা স্পিডবোটে টেকনাফ আসা-যাওয়া করতে পারছেন না। তাদেরও টেকনাফে আসা বা যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসনের অনুমতি নিতে হচ্ছে।