ঢাকা ১১:৫৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নারায়ণগঞ্জে জুস কারাখানায় বিধ্বংসী আগুন ৫৩ মরদেহ উদ্ধার

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৫:৫৬:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ জুলাই ২০২১ ১৯৭ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

‘ভবনের ছাদের ওঠার একটি দরজা তালাবদ্ধ ছিলো, না হলেও অনেককে বাচানো যেতো জানালেন ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা, মৃদদের ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া চিহ্নিত করা কঠিন’

বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের একটি জুস কারখানায় বিধ্বংসী আগুনে এখনও পর্যন্ত ৫৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আগুন লাগার পর কারখানার সিঁড়ি বন্ধ না থাকলে অনেক প্রাণ বাঁচানো যেত বলে মনে করছেন ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক দেবাশিষ বর্ধন। বৃহস্পতিবার রূপগঞ্জে সেজান জুন কারাখানায় বিধ্বংসী আগ্নিকান্ডের ঘটনা। ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইঞ্জিন টানা ২০ ঘন্টার অধিক সময় চেষ্টা করে শুক্রবার বিকাল নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

কারখানাটিতে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক কাজ করতো। তাদের অধিকাংশ তরুন। আগুন লাগার সময় বিকালের শিপ্ট চলছিল। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর পোড়া ভবনে তল্লাশিতে নামেন ফায়ার সাভির্সের কর্মীরা। তারা পর্যায়ক্রমে ৫০টি মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাপাতালে পাঠায়। মরদেহগুলোর আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গিয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া চিহ্নিত করা কঠিন। বাকী ৩জন বৃহস্পতিবার রাতেই মা গিয়েছে।

দেবাশিষ বাবু জানান, আমরা গাড়ির মই সেট করে ছাদ থেকে ২৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছি। বাকিরা যদি ছাদে উঠতে পারত, আমরা কিন্তু বাঁচাতে পারতাম। কারখানার ছয় তলা ভবনের ছাদে ওঠার জন্য দুটি সিঁড়ি রয়েছে। যার একটির ছাদের দরজা বন্ধ পেয়েছেন জানালেন দেবাশিষ বর্ধন।

এখনও পর্যন্ত ৫৩জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যার আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের অধিকারীকরা বলছেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ছয়তলা ভবনের চতুর্থ তলা পর্যন্ত তারা প্রবেশ করতে পেরেছেন। সেখান থেকেই এতোগুলো মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের তল্লাশি এখনও শেষ হয়নি।

ফায়ার সার্ভিসের আধিকারীকরা এসব তথ্য জানিয়ে বলেছেন, ভবনের ছাদের তালাবদ্ধ থাকায় হতাহত বেড়েছে। কারাখানার আগুন লাগার পর নিরাপত্তা প্রহরী তিনতলার ফ্লোরের তালা ঝুলিয়ে দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। তালাবদ্ধ থাকার কারণেই শ্রমিকদের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। কারাখানাটিতে রাসায়নিক দ্রব্য থাকায় ফায়ার সাভিসের ১৮ ইঞ্জিন ২০ ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে।

ঢাকা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাছে রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের সেজান জুস কারখানায় বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টার নাগাদ কারখানায় বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড ঘটে।

ভবনের নিচতলায় আগুনের সূত্রপাত। মুহূর্তেই আগুনের লেলিহান শিখা ভবনের অন্যান্য তলায় ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কে বিভিন্ন তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে অনেক শ্রমিক আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতেই তিনজনের মৃত্যুর ঘটে। আহতও হন বেশ কিছু শ্রমিক। স্বজনদের খুঁজতে আসা মানুষের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে। কেউ ছুটছেন স্বজনের খোঁজে।

শোকে কেউ কেউ অজ্ঞান হয়ে পড়েন। কেউবা নিরবে দাঁড়িয়ে আছেন ভবনের পাশে। আবার কেউ কেউ মুর্ছে যাওয়া স্বজনদের পার্শবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন। এখানে শান্তনার বাণী অচল। নিখোঁজ শ্রমিকদের খুঁজতে আসা স্বজনরা ছুটাছুটি করছেন। কেউবা উত্তেজিত হয়ে কারখানার কর্মকর্তাদের খোঁজ করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

নারায়ণগঞ্জে জুস কারাখানায় বিধ্বংসী আগুন ৫৩ মরদেহ উদ্ধার

আপডেট সময় : ০৫:৫৬:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ জুলাই ২০২১

‘ভবনের ছাদের ওঠার একটি দরজা তালাবদ্ধ ছিলো, না হলেও অনেককে বাচানো যেতো জানালেন ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা, মৃদদের ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া চিহ্নিত করা কঠিন’

বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের একটি জুস কারখানায় বিধ্বংসী আগুনে এখনও পর্যন্ত ৫৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আগুন লাগার পর কারখানার সিঁড়ি বন্ধ না থাকলে অনেক প্রাণ বাঁচানো যেত বলে মনে করছেন ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক দেবাশিষ বর্ধন। বৃহস্পতিবার রূপগঞ্জে সেজান জুন কারাখানায় বিধ্বংসী আগ্নিকান্ডের ঘটনা। ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইঞ্জিন টানা ২০ ঘন্টার অধিক সময় চেষ্টা করে শুক্রবার বিকাল নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

কারখানাটিতে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক কাজ করতো। তাদের অধিকাংশ তরুন। আগুন লাগার সময় বিকালের শিপ্ট চলছিল। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর পোড়া ভবনে তল্লাশিতে নামেন ফায়ার সাভির্সের কর্মীরা। তারা পর্যায়ক্রমে ৫০টি মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাপাতালে পাঠায়। মরদেহগুলোর আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গিয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া চিহ্নিত করা কঠিন। বাকী ৩জন বৃহস্পতিবার রাতেই মা গিয়েছে।

দেবাশিষ বাবু জানান, আমরা গাড়ির মই সেট করে ছাদ থেকে ২৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছি। বাকিরা যদি ছাদে উঠতে পারত, আমরা কিন্তু বাঁচাতে পারতাম। কারখানার ছয় তলা ভবনের ছাদে ওঠার জন্য দুটি সিঁড়ি রয়েছে। যার একটির ছাদের দরজা বন্ধ পেয়েছেন জানালেন দেবাশিষ বর্ধন।

এখনও পর্যন্ত ৫৩জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যার আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের অধিকারীকরা বলছেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ছয়তলা ভবনের চতুর্থ তলা পর্যন্ত তারা প্রবেশ করতে পেরেছেন। সেখান থেকেই এতোগুলো মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের তল্লাশি এখনও শেষ হয়নি।

ফায়ার সার্ভিসের আধিকারীকরা এসব তথ্য জানিয়ে বলেছেন, ভবনের ছাদের তালাবদ্ধ থাকায় হতাহত বেড়েছে। কারাখানার আগুন লাগার পর নিরাপত্তা প্রহরী তিনতলার ফ্লোরের তালা ঝুলিয়ে দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। তালাবদ্ধ থাকার কারণেই শ্রমিকদের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। কারাখানাটিতে রাসায়নিক দ্রব্য থাকায় ফায়ার সাভিসের ১৮ ইঞ্জিন ২০ ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে।

ঢাকা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাছে রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের সেজান জুস কারখানায় বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টার নাগাদ কারখানায় বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড ঘটে।

ভবনের নিচতলায় আগুনের সূত্রপাত। মুহূর্তেই আগুনের লেলিহান শিখা ভবনের অন্যান্য তলায় ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কে বিভিন্ন তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে অনেক শ্রমিক আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতেই তিনজনের মৃত্যুর ঘটে। আহতও হন বেশ কিছু শ্রমিক। স্বজনদের খুঁজতে আসা মানুষের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে। কেউ ছুটছেন স্বজনের খোঁজে।

শোকে কেউ কেউ অজ্ঞান হয়ে পড়েন। কেউবা নিরবে দাঁড়িয়ে আছেন ভবনের পাশে। আবার কেউ কেউ মুর্ছে যাওয়া স্বজনদের পার্শবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন। এখানে শান্তনার বাণী অচল। নিখোঁজ শ্রমিকদের খুঁজতে আসা স্বজনরা ছুটাছুটি করছেন। কেউবা উত্তেজিত হয়ে কারখানার কর্মকর্তাদের খোঁজ করেন।