‘ধর নির্ভয় গান’ কবিগুরুর জন্মদিন আজ

- আপডেট সময় : ১১:০৪:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ মে ২০২১ ২২২ বার পড়া হয়েছে
‘হে নূতন, দেখা দিক আর-বার জন্মের প্রথম শুভক্ষণ, তোমার প্রকাশ হোক কুহেলিকা করি উদ্ঘাটন সূর্যের মতন…।’ নিজের জন্মদিন পঁচিশে বৈশাখকে এভাবেই ডাক দিয়েছিলেন কবিগুরু। মহাকালের যাত্রায় ব্যতিক্রমী এক ‘রবি’র কিরণে উজ্জ্বল এই পঁচিশে বৈশাখ। ওই মহামানব আসে/ দিকে দিকে রোমাঞ্চ লাগে/ মর্ত্য ধূলির ঘাসে ঘাসে’। জীবন সায়াহ্নে এসে শান্তিনিকেতনে বসে পক্সিক্তগুলো লিখেছিলেন বাংলা সাহিত্যের অনন্যপুরুষ বাঙালির রবি ঠাকুর। দিনটি ছিল ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ। জীবনের ৮০টি বসন্ত পার করে কবি লিখেছিলেন এই বাণী। যার উদ্দেশেই রচনা করে থাকুন না কেন, ২৫ বৈশাখকে কিন্তু বাঙালি স্মরণ করে তাকেই। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৯তম জন্মজয়ন্তী আজ। ১৮৬১ খৃষ্টাব্দের এদিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোয় জন্মগ্রহণ বাঙালির প্রাণের কবি, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ। করোনার থাবায় এবারেও বন্ধই থাকলো মহাধুমধামে কবি স্মরণ অনুষ্ঠানমালা। শিলাইদহের কৃষ্ণচুড়ার তলায় সকাল জাগেনি কবিগরুর গানের আহ্বানে। সারা বাঙলাজুড়ে রবীন্দ্র প্রেমিদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ। মানুষ কবে ফিরে পাবে মুক্ত আকাশের নিচে কবি স্মরণের আয়োজন? এই দিনটিতে বাঙলার চিরায়ত পোশাকে অনুষ্ঠানমালায় যোগ দিয়ে থাকেন লাখো মানুষ। নিষ্ঠুর প্রকৃতি কেড়ে নিয়েছে সেই অধিকার। মহামারি সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ভয়! তাই চোখের জল মুছে ‘তথ্যপ্রযুক্তির’ ফ্রেমের সীমানার মধ্যেই কবি প্রণাম।

নিস্তবদ্ধ শাহজাদপুর কবিগুরুর কাচারিবাড়ীর
দিবসটি উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এবার সরকারি পর্যায়ে কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে না। এবারে ব্যক্তিগত বা সাংগঠনিকভাবেও অনুষ্ঠানের আয়োজন বন্ধ।সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রক কবির জন্মদিন উপলক্ষ্যে এক ঘণ্টার একটি অনুষ্ঠান বানিয়েছে। টিভি চ্যানেলগুলোয় তা প্রচার হবে। রয়েছে রাত ন’টা নাগাদ ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেলে রবীন্দ্রস্মরণ স্মরণ।
কবিগুরুর জন্মদিনে প্রতিথযশা বাচিকশিল্পী সুস্মিতা মুখার্জী দাসের নিবেদন
রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একাধারে কবি, গল্পকার, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ ও চিত্রশিল্পী। তবে প্রধানত তিনি কবি। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। বাঙালি সমাজে তার রচিত সংগীতের জনপ্রিয়তা এত বছর পরেও তুলনাহীন। দেশ-বিদেশের বহু গবেষকরা অব্যাহতভাবে কবিকে নিয়ে গবেষণা করে চলেছেন। কবির প্রায় ২ হাজার গান রয়েছে। তার সমগ্র গান নিয়ে ‘গীতবিতান’।
‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ কবির লেখা গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। ভারতের জাতীয় সংগীতটিও কবিগুরুই। জীবিতকালে তার প্রকাশিত মৌলিক কবিতাগ্রন্থ সংখ্যা ৫২টি, উপন্যাস ১৩, ছোটগল্পের বই ৯৫, প্রবন্ধ ও গদ্যগ্রন্থ ৩৬ এবং নাটকের বই ৩৮টি। কবির মৃত্যুর পর বিশ্বভারতী থেকে ৩৬ খণ্ডে ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ প্রকাশ পেয়েছে। এছাড়া ১৯ খণ্ডের রয়েছে ‘রবীন্দ্র চিঠিপত্র’।
১৯২৮ থেকে ১৯৩৯ পর্যন্ত কবির আঁকা চিত্রকর্মের সংখ্যা আড়াই হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৭৪টি চিত্রকর্ম শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত। কবির প্রথম চিত্র প্রদর্শনী দক্ষিণ ফ্রান্সের শিল্পীদের উদ্যোগে ১৯২৬ সালে প্যারিসের পিগাল আর্ট গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হয়।
শিলাইদাহ কুঠিবাড়ি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মাতা সারদা সুন্দরী দেবী। রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী দীর্ঘ রোগভোগের পর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ১৩৪৮ সালের বাইশে শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১ খৃষ্টাব্দ) কলকাতায় পৈতৃক নিবাসে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। ১৮৭৮ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কবিকাহিনী’ প্রকাশিত হয়। ১৯১০ সালে প্রকাশিত হয় তার ‘গীতাঞ্জলী’। এই বইয়ের জন্য কবি ১৯১৩ খৃষ্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৮৯১ সাল থেকে পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নির্দেশে তিনি নিজেদের পরিবারের জমিদারি দেখা শুরু করেন।কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, পাবনার শাহজাদপুর, নওগাঁর পতিসর এবং উড়িষ্যার জমিদারি। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান।
কবি বিশ্বভ্রমণ করেন বারো বার। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন। ১৮৭৮ সালে মাত্র সতেরো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ ইংল্যান্ডে যান। প্রায় দেড় বছর কাটিয়ে ১৮৮০ সালে কোনো ডিগ্রি না নিয়েই ফিরে আসেন। ১৮৮৩ সালের ভবতারিণীর সঙ্গে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। যার নামকরণ হয়েছিল মৃণালিনী দেবী। জীবনের পাশাপাশি চলতে থাকে সাহিত্যচর্চা।
ছায়ানটের রবীন্দ্রজয়ন্তীর নিবেদন ‘ধর নির্ভয় গান’ :দুঃসময় অতিক্রমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা গান গেয়ে জন্মদিন উদ্যাপন করবে ছায়ানট। ‘ধর নির্ভয় গান’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি শনিবার রাত ৯টায় ছায়ানটের ফেসবুক পেজ (facebook.com/groups/chhayanaut) ও ইউটিউব চ্যানেলে youtube.com/ ChhayanautDigitalPlatform) সম্প্রচারিত হবে। নৃত্যগীত ও কবিতার সম্মিলনে সাজানো এ আয়োজনে পরিবেশিত হবে এগারোটি রবীন্দ্রসংগীত।